২৩৯ যাত্রীর সেই বিমানটিকে চালকরাই ধ্বংস করেছিল!
যুগান্তর ডেস্ক
১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:৫৯:৩৯ | অনলাইন সংস্করণ
আট বছরেরও বেশি আগে ২৩৯ যাত্রী নিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ৩৭০। এ নিয়ে সেই সময় নানা বিশ্লেষণ হলেও সম্প্রতি নতুন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’র দাবি— বোয়িং ৭৭৭ বিমানটিকে চালকরাই ধ্বংস করেছিলেন। ওই বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে যে নতুন প্রমাণ পাওয়া গেছে, তা পরীক্ষার পর এ ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বোয়িং ৭৭৭ বিমানের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা উঠলে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ প্রসঙ্গ উঠে আসে। ওই এয়ারলাইন্সের ইতিহাসেও এটি অন্যতম বড় দুর্ঘটনা বলে মনে করা হয়।
২০১৪ সালের ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ফ্লাইট এমএইচ-৩৭০। আকাশে ওড়ার প্রায় ৩৮ মিনিট পর সেটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)। সেই সময় বিমানটি দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর দিয়ে উড়ছিল। এর কয়েক সেকেন্ড পর বিমানটির সঙ্গে এটিসির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ঘণ্টাখানেক পর যদিও মালয়েশিয়া সেনাবাহিনীর রাডারে ধরা পড়েছিল বিমানটি। তবে সেই সময় তা পরিকল্পিত পথে এগোচ্ছিল না। বরং তা পরিকল্পিত পথ থেকে পশ্চিম দিকে সরে মালয় উপদ্বীপ এবং আন্দামান সাগর অতিক্রম করছিল বিমানটি।
সেনার রাডার ছেড়ে সরে যাওয়ার পর চিরতরে গায়েব হয়ে যায় ফ্লাইট এমএইচ৩৭০। বিমানে তখন ছিলেন ২২৭ যাত্রী এবং চালক মিলিয়ে ১২ জন কর্মী। তার মধ্যে ভারতের ৫ যাত্রীও ছিলেন।
বিমানটির খোঁজে দক্ষিণ চীন সাগর এবং আন্দামান সাগরে তল্লাশি অভিযান শুরু করে মালয়েশিয়া সরকার। তবে ফ্লাইট এমএইচ৩৭০-এর কিছু অংশ পাওয়া গেলেও বিমানটির ধ্বংসাবশেষের বেশিরভাগ মেলেনি। অসামরিক বিমান পরিবহণের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়সাপেক্ষ এই অভিযানকে কার্যত ব্যর্থই বলা চলে।
উপগ্রহের মাধ্যমে বিমানের স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগব্যবস্থার পরীক্ষায় ইঙ্গিত মেলেছে, বিমানটি হয়তো ভারত মহাসাগরের দক্ষিণে ভেঙে পড়েছিল। যদিও এই দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে যুক্তিগ্রাহ্য তত্ত্ব প্রকাশ্যে আসেনি।
আট বছর পর দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে নতুন দাবি উঠছে। ২৫ দিন আগে মাদাগাস্কারের এক মৎস্যজীবীর ঘরে ওই বিমানের ১টি ল্যান্ডিং গিয়ার ডোর পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, সাগরে পড়ে যাওয়ার সময় বোয়িং ৭৭৭ বিমানটির ল্যান্ডিং গিয়ার নিচু করা ছিল। তা থেকেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা— হয়তো ইচ্ছা করেই বিমানটিতে দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।
ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার রিচার্ড গডফ্রের মতোই ফ্লাইট এমএইচ৩৭০-এর ধ্বংসাবশেষ সন্ধানী আমেরিকার ব্লেইন গিবসনের দাবি, বিমানটিকে ইচ্ছা করে ধ্বংস করেছিলেন এর চালকরা।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ওই বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার ডোরটি পরীক্ষার পর সর্বপ্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, বিমানটিকে ধ্বংস করা হয়েছিল।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ২০১৭ সালে মাদাগাস্কারের উপকূলে ওই ল্যান্ডিং গিয়ার ডোরটি দেখতে পেয়েছিলেন টাটালি নামে এক মৎস্যজীবী। ‘ফার্নান্দো’ নামে উপকূলীয় ঝড়ে মাদাগাস্কারের সমুদ্র উপকূলে ভেসে এসেছিল ওই ডোরটি।
ল্যান্ডিং গিয়ার ডোরটি যে মালয়েশীয় বিমানের অংশ, তা নিয়ে কোনো ধারণাই ছিল না টাটালির। বছর পাঁচেক ধরে সেটিকে জামাকাপড় পরিষ্কার করার বোর্ড হিসাবে ব্যবহার করছিলেন মৎস্যজীবীর স্ত্রী।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে গডফ্রে বলেছেন, ‘ওই ল্যান্ডিং গিয়ার ডোরটির চারপাশে ফাটল এবং তা যে মাত্রায় ক্ষতি হয়েছে, তা দেখে বোঝা যায় বিমানটিতে আর যা-ই হোক, সেটি ধীরে ধীরে সাগরে ডুবে যায়নি। বরং অত্যন্ত উচ্চগতিতে পানিতে গোঁত্তা খেয়েছিল বিমানটি। এবং সেটি এমন ভাবে করা হয়েছিল, যাতে বিমানটি যতটা সম্ভব টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
দুর্ঘটনা নিয়ে এমন তত্ত্ব কেন দিলেন গডফ্রে ও গিবসন? তারা জানিয়েছেন, ওই ল্যান্ডিং গিয়ার ডোরে ৪টি আধা সমান্তরাল দাগ পাওয়া গেছে, যা দেখে গডফ্রেদের ধারণা, দুর্ঘটনার সময় বিমানের দুটি ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, অত্যন্ত বেশি গতির প্রভাবে বিমানটিকে যত দ্রুত সম্ভব টুকরো টুকরো করা হয়েছিল। অন্যদিকে দুর্ঘটনার প্রমাণ লুকোনোর যে চেষ্টা করা হয়েছিল, তা ল্যান্ডিং গিয়ারটিকে পরীক্ষা করলে স্পষ্ট বোঝা যায়।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
২৩৯ যাত্রীর সেই বিমানটিকে চালকরাই ধ্বংস করেছিল!
আট বছরেরও বেশি আগে ২৩৯ যাত্রী নিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ৩৭০। এ নিয়ে সেই সময় নানা বিশ্লেষণ হলেও সম্প্রতি নতুন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’র দাবি— বোয়িং ৭৭৭ বিমানটিকে চালকরাই ধ্বংস করেছিলেন। ওই বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে যে নতুন প্রমাণ পাওয়া গেছে, তা পরীক্ষার পর এ ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বোয়িং ৭৭৭ বিমানের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা উঠলে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ প্রসঙ্গ উঠে আসে। ওই এয়ারলাইন্সের ইতিহাসেও এটি অন্যতম বড় দুর্ঘটনা বলে মনে করা হয়।
২০১৪ সালের ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ফ্লাইট এমএইচ-৩৭০। আকাশে ওড়ার প্রায় ৩৮ মিনিট পর সেটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)। সেই সময় বিমানটি দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর দিয়ে উড়ছিল। এর কয়েক সেকেন্ড পর বিমানটির সঙ্গে এটিসির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ঘণ্টাখানেক পর যদিও মালয়েশিয়া সেনাবাহিনীর রাডারে ধরা পড়েছিল বিমানটি। তবে সেই সময় তা পরিকল্পিত পথে এগোচ্ছিল না। বরং তা পরিকল্পিত পথ থেকে পশ্চিম দিকে সরে মালয় উপদ্বীপ এবং আন্দামান সাগর অতিক্রম করছিল বিমানটি।
সেনার রাডার ছেড়ে সরে যাওয়ার পর চিরতরে গায়েব হয়ে যায় ফ্লাইট এমএইচ৩৭০। বিমানে তখন ছিলেন ২২৭ যাত্রী এবং চালক মিলিয়ে ১২ জন কর্মী। তার মধ্যে ভারতের ৫ যাত্রীও ছিলেন।
বিমানটির খোঁজে দক্ষিণ চীন সাগর এবং আন্দামান সাগরে তল্লাশি অভিযান শুরু করে মালয়েশিয়া সরকার। তবে ফ্লাইট এমএইচ৩৭০-এর কিছু অংশ পাওয়া গেলেও বিমানটির ধ্বংসাবশেষের বেশিরভাগ মেলেনি। অসামরিক বিমান পরিবহণের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়সাপেক্ষ এই অভিযানকে কার্যত ব্যর্থই বলা চলে।
উপগ্রহের মাধ্যমে বিমানের স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগব্যবস্থার পরীক্ষায় ইঙ্গিত মেলেছে, বিমানটি হয়তো ভারত মহাসাগরের দক্ষিণে ভেঙে পড়েছিল। যদিও এই দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে যুক্তিগ্রাহ্য তত্ত্ব প্রকাশ্যে আসেনি।
আট বছর পর দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে নতুন দাবি উঠছে। ২৫ দিন আগে মাদাগাস্কারের এক মৎস্যজীবীর ঘরে ওই বিমানের ১টি ল্যান্ডিং গিয়ার ডোর পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, সাগরে পড়ে যাওয়ার সময় বোয়িং ৭৭৭ বিমানটির ল্যান্ডিং গিয়ার নিচু করা ছিল। তা থেকেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা— হয়তো ইচ্ছা করেই বিমানটিতে দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।
ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার রিচার্ড গডফ্রের মতোই ফ্লাইট এমএইচ৩৭০-এর ধ্বংসাবশেষ সন্ধানী আমেরিকার ব্লেইন গিবসনের দাবি, বিমানটিকে ইচ্ছা করে ধ্বংস করেছিলেন এর চালকরা।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ওই বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার ডোরটি পরীক্ষার পর সর্বপ্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, বিমানটিকে ধ্বংস করা হয়েছিল।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ২০১৭ সালে মাদাগাস্কারের উপকূলে ওই ল্যান্ডিং গিয়ার ডোরটি দেখতে পেয়েছিলেন টাটালি নামে এক মৎস্যজীবী। ‘ফার্নান্দো’ নামে উপকূলীয় ঝড়ে মাদাগাস্কারের সমুদ্র উপকূলে ভেসে এসেছিল ওই ডোরটি।
ল্যান্ডিং গিয়ার ডোরটি যে মালয়েশীয় বিমানের অংশ, তা নিয়ে কোনো ধারণাই ছিল না টাটালির। বছর পাঁচেক ধরে সেটিকে জামাকাপড় পরিষ্কার করার বোর্ড হিসাবে ব্যবহার করছিলেন মৎস্যজীবীর স্ত্রী।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে গডফ্রে বলেছেন, ‘ওই ল্যান্ডিং গিয়ার ডোরটির চারপাশে ফাটল এবং তা যে মাত্রায় ক্ষতি হয়েছে, তা দেখে বোঝা যায় বিমানটিতে আর যা-ই হোক, সেটি ধীরে ধীরে সাগরে ডুবে যায়নি। বরং অত্যন্ত উচ্চগতিতে পানিতে গোঁত্তা খেয়েছিল বিমানটি। এবং সেটি এমন ভাবে করা হয়েছিল, যাতে বিমানটি যতটা সম্ভব টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
দুর্ঘটনা নিয়ে এমন তত্ত্ব কেন দিলেন গডফ্রে ও গিবসন? তারা জানিয়েছেন, ওই ল্যান্ডিং গিয়ার ডোরে ৪টি আধা সমান্তরাল দাগ পাওয়া গেছে, যা দেখে গডফ্রেদের ধারণা, দুর্ঘটনার সময় বিমানের দুটি ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, অত্যন্ত বেশি গতির প্রভাবে বিমানটিকে যত দ্রুত সম্ভব টুকরো টুকরো করা হয়েছিল। অন্যদিকে দুর্ঘটনার প্রমাণ লুকোনোর যে চেষ্টা করা হয়েছিল, তা ল্যান্ডিং গিয়ারটিকে পরীক্ষা করলে স্পষ্ট বোঝা যায়।