পাকিস্তানে গাছের মাথায় দ্রব্যমূল্য, জনগণের মাথায় হাত
অনলাইন ডেস্ক
০১ এপ্রিল ২০২৩, ২১:৪০:৪৮ | অনলাইন সংস্করণ
মার্চ মাসে পাকিস্তানের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর গত ৭৬ বছরে এই পরিমাণ মূল্যস্ফীতি দেখেনি দেশটির জনগণ। খবর জিও নিউজের।
শনিবার দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তর পাকিস্তান ব্যুরো অব স্ট্যাটিকটিক্স (পিবিএস) এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাইকারি বাজারে দাম নিরীক্ষণকারী পাইকারি মূল্যসূচক হোলসেল প্রাইস ইনডেক্স (ডব্লিউপিআই) মার্চ মাসে ৩৭.৫% বেড়েছে। এক বছর আগের এই মাসে ছিল ২৩.৮% ছিল।
পৃথক এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা, ডলারের বিপরীতে রুপির ধারাবাহিক পতন এবং জ্বালানি তেলের দামের ক্ষেত্রে সংস্কার আনা এই মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ। সরকার দরিদ্র ও ধনীদের জন্য জ্বালানির পৃথক দাম নির্ধারণ করেছে। এই ব্যাপারটিকেই ‘তেলের দাম সংস্কার’ বলে উল্লেখ করেছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়।
দেশটির অর্থনীতিবিদদের মতে, পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা।
সবচেয়ে বেশি বেড়েছে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম। পরিসংখ্যান দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্চ মাসে পাকিস্তানের নগরাঞ্চলে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে শতকরা হিসাবে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা, চলতি এপ্রিল বা আগামী মে মাসের মধ্যেই গড় হিসাবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির (হাইপার ইনফ্ল্যামেশন) স্তরে প্রবেশ করবে পাকিস্তান। সে সময় দেশটির মূল্যস্ফীতি পৌঁছাবে ৫০ বা তারও বেশি হারে। শহরাঞ্চলের তুলনায় পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির হার বেশি।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে দেশটির শহরগুলোতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩৩ শতাংশ, একই সময় গ্রামাঞ্চলে এই হার ছিল ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ। গত বছর ইতিহাসের ভয়াবহ বন্যায় পাকিস্তানে লাখ লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
অন্যদিকে, ডলারের মজুত নেমে যাওয়ায় খাদ্যশস্য আমদানিও করতে পারছে না দেশটি। ফলে মূল্যস্ফীতির কারণে খাদ্য কিনতে গিয়ে রীতিমতো নাকাল হচ্ছেন মানুষ এবং এ ক্ষেত্রেও মূল ভুক্তভোগী গ্রামের মানুষরাই।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত মার্চ মাসে পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৫০ দশমিক ২ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে বেড়েছে ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলগুলোতে খাদ্যত্রাণ পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকার। কিন্তু সেখানেও ত্রাণের গাড়ি লুটপাট ও খাদ্য নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মানুষ নিহতের ঘটনা ঘটছে দেশটিতে।
কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ত্রাণ সহায়তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অদূরভবিষ্যতে তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। দেশটির জনগণের জন্য এখন সবচেয়ে বড় ভোগান্তির নাম খাদ্যের মূল্য। পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের তুলনায় চলতি বছর এপ্রিলে পাকিস্তানে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম গড়ে বেড়েছে ৪৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পাকিস্তানে গাছের মাথায় দ্রব্যমূল্য, জনগণের মাথায় হাত
মার্চ মাসে পাকিস্তানের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর গত ৭৬ বছরে এই পরিমাণ মূল্যস্ফীতি দেখেনি দেশটির জনগণ। খবর জিও নিউজের।
শনিবার দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তর পাকিস্তান ব্যুরো অব স্ট্যাটিকটিক্স (পিবিএস) এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাইকারি বাজারে দাম নিরীক্ষণকারী পাইকারি মূল্যসূচক হোলসেল প্রাইস ইনডেক্স (ডব্লিউপিআই) মার্চ মাসে ৩৭.৫% বেড়েছে। এক বছর আগের এই মাসে ছিল ২৩.৮% ছিল।
পৃথক এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা, ডলারের বিপরীতে রুপির ধারাবাহিক পতন এবং জ্বালানি তেলের দামের ক্ষেত্রে সংস্কার আনা এই মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ। সরকার দরিদ্র ও ধনীদের জন্য জ্বালানির পৃথক দাম নির্ধারণ করেছে। এই ব্যাপারটিকেই ‘তেলের দাম সংস্কার’ বলে উল্লেখ করেছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়।
দেশটির অর্থনীতিবিদদের মতে, পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা।
সবচেয়ে বেশি বেড়েছে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম। পরিসংখ্যান দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্চ মাসে পাকিস্তানের নগরাঞ্চলে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে শতকরা হিসাবে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা, চলতি এপ্রিল বা আগামী মে মাসের মধ্যেই গড় হিসাবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির (হাইপার ইনফ্ল্যামেশন) স্তরে প্রবেশ করবে পাকিস্তান। সে সময় দেশটির মূল্যস্ফীতি পৌঁছাবে ৫০ বা তারও বেশি হারে। শহরাঞ্চলের তুলনায় পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির হার বেশি।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে দেশটির শহরগুলোতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩৩ শতাংশ, একই সময় গ্রামাঞ্চলে এই হার ছিল ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ। গত বছর ইতিহাসের ভয়াবহ বন্যায় পাকিস্তানে লাখ লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
অন্যদিকে, ডলারের মজুত নেমে যাওয়ায় খাদ্যশস্য আমদানিও করতে পারছে না দেশটি। ফলে মূল্যস্ফীতির কারণে খাদ্য কিনতে গিয়ে রীতিমতো নাকাল হচ্ছেন মানুষ এবং এ ক্ষেত্রেও মূল ভুক্তভোগী গ্রামের মানুষরাই।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত মার্চ মাসে পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৫০ দশমিক ২ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে বেড়েছে ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলগুলোতে খাদ্যত্রাণ পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকার। কিন্তু সেখানেও ত্রাণের গাড়ি লুটপাট ও খাদ্য নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মানুষ নিহতের ঘটনা ঘটছে দেশটিতে।
কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ত্রাণ সহায়তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অদূরভবিষ্যতে তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। দেশটির জনগণের জন্য এখন সবচেয়ে বড় ভোগান্তির নাম খাদ্যের মূল্য। পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের তুলনায় চলতি বছর এপ্রিলে পাকিস্তানে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম গড়ে বেড়েছে ৪৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।