জাতিসংঘের ‘মানব উন্নয়নে’ গতি নেই
সদস্য দেশগুলোর ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অন্যান্য সংকট নিরসনে ২০১৫ সালে ১৭টি বিস্তৃত ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে জাতিসংঘ। এর মধ্যে রয়েছে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নিরসন, পানীয়জলের অ্যাক্সেস প্রদান, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। নাম দেওয়া হয় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)। ২০৩০ সালের মধ্যে পূরণ করার প্রতিশ্রুতিতে এ পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা সমস্যায় পড়েছে বলে জানায় জাতিসংঘ।
জুলাই মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হুমকির মধ্যে রয়েছে। এসডিজির লক্ষ্য পূরণের অগ্রগতি বেশ মন্থর হয়ে পড়েছে।’ প্রত্যাশিত নির্মূলের থেকে বিশ্ব রয়েছে অনেক দূরে। ৮ বছরেও মানব উন্নয়নে কোনো গতি নেই। কিছু ক্ষেত্রে, পরিস্থিতি এখন ২০১৫ সালের তুলনায় আরও খারাপ হয়েছে বলে জানা যায়। এএফপি।
লক্ষ্যগুলো পূরণের জন্য রোববার নিউইয়র্কে সদর দপ্তরে জরুরি বৈঠকে বসছে জাতিসংঘ। সাধারণ পরিষদের এ অধিবেশনে যোগ দেবেন বিশ্ব নেতারা। সেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে মানবতার উন্নতির জন্য মূল লক্ষ্যগুলো পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করা হবে। খসড়া অনুসারে, মানুষ, গ্রহ, সমৃদ্ধি, শান্তি ও অংশীদারত্বের জন্য সবাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্য
কোভিড-১৯ মহামারি চরম দারিদ্র্য মোকাবিলায় অগ্রগতি স্থগিত করেছে। একই গতিতে চলতে থাকলে ২০৩০ সালের পরও সাড়ে ৫৭ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার মধ্যে বাস করবে। আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চল বেশির ভাগই এ দুর্দশার সম্মুখীন হবে।
করোনা মহামারি জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। দারিদ্র্যের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে অনেকটা। যেটা ২০০৫ সালের পর আর দেখা যায়নি। এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোও ক্রমবর্ধমান ধ্বংসাত্মক মাত্রা বাড়িয়ে দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, বিশ্বে বর্তমানে ১১০ কোটি মানুষ শহরাঞ্চলের বস্তিতে বাস করছে। ২০০ কোটির বেশি মানুষ সুপেয় পানি পায় না। হাজারে ৩৮ জন শিশু তাদের পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগেই মারা যায়।
ঋণের বোঝা
কোভিড মহামারি থেকে শুরু করে ইউক্রেনের যুদ্ধ সব কিছুর ভারেই পঙ্গু হয়ে পড়েছে বিশ্বের অর্থনীতি। ঋণের ভারে ভেঙে পড়ছে অনেক দেশ। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য পূরণের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৫০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-২০-এর শীর্ষ সম্মেলনে তার পরিকল্পনা ইতিবাচক সমর্থন পেয়েছে।
দুষ্ট না সদাচারী চক্র?
দারিদ্র্য থেকে মুক্তি, শিক্ষার, সুপেয় পানি ও সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা এবং শান্তিতে বসবাস এসব উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো মূলত পরস্পর নির্ভরশীল। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো বেশির ভাগ উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোকে ক্ষুণ্ন করে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়, অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস হয়। এজন্য ব্যাপক পরিবর্তন দরকার। ইউএনডিপির প্রধান আচিম স্টেইনারের মতে, আমরা যদি দারিদ্র্য দূর করার কথা চিন্তা করি, তাহলে আমাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টিও ভাবতে হবে।’ কারণ বিদ্যুৎ সরবরাহের দিকে মনোযোগ দিলে কার্বন নিঃসরণের হার কমানোর সঙ্গে সঙ্গে দারিদ্র্য দূর করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়াও সম্ভব হবে বলে জানান।
জাতিসংঘের ‘মানব উন্নয়নে’ গতি নেই
যুগান্তর ডেস্ক
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:২১:৫০ | অনলাইন সংস্করণ
সদস্য দেশগুলোর ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অন্যান্য সংকট নিরসনে ২০১৫ সালে ১৭টি বিস্তৃত ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে জাতিসংঘ। এর মধ্যে রয়েছে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নিরসন, পানীয়জলের অ্যাক্সেস প্রদান, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। নাম দেওয়া হয় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)। ২০৩০ সালের মধ্যে পূরণ করার প্রতিশ্রুতিতে এ পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা সমস্যায় পড়েছে বলে জানায় জাতিসংঘ।
জুলাই মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হুমকির মধ্যে রয়েছে। এসডিজির লক্ষ্য পূরণের অগ্রগতি বেশ মন্থর হয়ে পড়েছে।’ প্রত্যাশিত নির্মূলের থেকে বিশ্ব রয়েছে অনেক দূরে। ৮ বছরেও মানব উন্নয়নে কোনো গতি নেই। কিছু ক্ষেত্রে, পরিস্থিতি এখন ২০১৫ সালের তুলনায় আরও খারাপ হয়েছে বলে জানা যায়। এএফপি।
লক্ষ্যগুলো পূরণের জন্য রোববার নিউইয়র্কে সদর দপ্তরে জরুরি বৈঠকে বসছে জাতিসংঘ। সাধারণ পরিষদের এ অধিবেশনে যোগ দেবেন বিশ্ব নেতারা। সেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে মানবতার উন্নতির জন্য মূল লক্ষ্যগুলো পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করা হবে। খসড়া অনুসারে, মানুষ, গ্রহ, সমৃদ্ধি, শান্তি ও অংশীদারত্বের জন্য সবাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্য
কোভিড-১৯ মহামারি চরম দারিদ্র্য মোকাবিলায় অগ্রগতি স্থগিত করেছে। একই গতিতে চলতে থাকলে ২০৩০ সালের পরও সাড়ে ৫৭ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার মধ্যে বাস করবে। আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চল বেশির ভাগই এ দুর্দশার সম্মুখীন হবে।
করোনা মহামারি জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। দারিদ্র্যের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে অনেকটা। যেটা ২০০৫ সালের পর আর দেখা যায়নি। এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোও ক্রমবর্ধমান ধ্বংসাত্মক মাত্রা বাড়িয়ে দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, বিশ্বে বর্তমানে ১১০ কোটি মানুষ শহরাঞ্চলের বস্তিতে বাস করছে। ২০০ কোটির বেশি মানুষ সুপেয় পানি পায় না। হাজারে ৩৮ জন শিশু তাদের পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগেই মারা যায়।
ঋণের বোঝা
কোভিড মহামারি থেকে শুরু করে ইউক্রেনের যুদ্ধ সব কিছুর ভারেই পঙ্গু হয়ে পড়েছে বিশ্বের অর্থনীতি। ঋণের ভারে ভেঙে পড়ছে অনেক দেশ। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য পূরণের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৫০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-২০-এর শীর্ষ সম্মেলনে তার পরিকল্পনা ইতিবাচক সমর্থন পেয়েছে।
দুষ্ট না সদাচারী চক্র?
দারিদ্র্য থেকে মুক্তি, শিক্ষার, সুপেয় পানি ও সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা এবং শান্তিতে বসবাস এসব উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো মূলত পরস্পর নির্ভরশীল। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো বেশির ভাগ উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোকে ক্ষুণ্ন করে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়, অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস হয়। এজন্য ব্যাপক পরিবর্তন দরকার। ইউএনডিপির প্রধান আচিম স্টেইনারের মতে, আমরা যদি দারিদ্র্য দূর করার কথা চিন্তা করি, তাহলে আমাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টিও ভাবতে হবে।’ কারণ বিদ্যুৎ সরবরাহের দিকে মনোযোগ দিলে কার্বন নিঃসরণের হার কমানোর সঙ্গে সঙ্গে দারিদ্র্য দূর করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়াও সম্ভব হবে বলে জানান।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023