কানাডায় ভারতবিরোধী দুর্গ গড়ছে শিখরা

 যুগান্তর ডেস্ক 
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৪ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

নিজেদের অধিকার ও দাবি আদায়ে বহু আগ থেকেই লড়াই চালাচ্ছে শিখরা। নিজ ভূখণ্ডকে (পাঞ্জাবসহ ভারতের বেশ কয়েকটি অঞ্চল) স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে আগেই প্রাণ হারিয়েছেন পূর্বসূরিরা। এমনকি বিদেশের মাটিতেও নিজেকে বাঁচাতে পারলেন না শিখদের ‘খালিস্তান’ আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার (৪৫)। এ হত্যাকাণ্ডে বেশ ক্ষেপেছে কানাডা প্রবাসী শিখরা। ক্ষোভ এত তীব্র হয়ে উঠেছে যে, ভারতবিরোধী দুর্গ গড়তে কানাডার সব রাজনৈতিক দলকে ‘ঐক্যফ্রন্ট গঠন’র আহ্বান জানাচ্ছে শিখদের দুদল ‘অন্টারিও গুরুদ্বার কমিটি’ এবং ‘ব্রিটিশ কলম্বিয়া গুরুদ্বার কমিটি’। 

শনিবার একটি যৌথ বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান দল দুটির নেতারা। তাদের মতে, জুনে নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে সম্ভাব্য বিদেশি হস্তক্ষেপের বিষয়ে ‘সব কানাডিয়ান দলকে দ্ব্যর্থহীনভাবে স্পষ্ট হবে’। টরেন্টো স্টার, দ্য হিন্দু। 

ফেডারেল নেতারা ইতোমধ্যেই নিজ্জারের মৃত্যুতে সম্ভাব্য ভারতীয় সম্পৃক্ততার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। ‘কনজারভেটিভ পার্টি’র পিয়েরে পোইলিভর ট্রুডোর ঘোষণার পরপরই বলেছিলেন, ‘আমাদের ঘরের জন্য এবং একে অপরের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে’ এবং প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে ‘আরও তথ্য’ উপস্থাপনের আহ্বান জানান। শিখদের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা জগমিত সিং বলেছেন, কানাডার তদন্তে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তিনি সরাসরি কুইবেক কোর্ট অব আপিল বিচারপতি মেরি-জোসি হোগকে চিঠি দিয়েছেন। 

এদিকে ভারত-কানাডার তিক্ততায় দিল্লির মুখে ফুলকি ছুটলেও পাঞ্জাবের বেশ সাবধানতার সঙ্গেই এগোচ্ছেন ‘পদ্ম-ভ্রমররা’। গুনে গুনে পা ফেলছে কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধী দলগুলোও। আসন্ন ২০২৪ সালের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে দলগুলো ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। 

বিজেপি: হিন্দুদের প্রতি আবেদন
ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কানাডার মন্তব্যে বেশ পালটাপালটি আক্রমণ চালিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনি প্রচারণায় বিজেপি পাঞ্জাবের সংখ্যালঘু হিন্দুদের কাছে আবেদন করবে। জাতীয় নিরাপত্তার পটভূমিতে দেশের বাকি অংশে জাতীয়তাবাদের অনুভূতি জাগিয়ে তুলবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

কংগ্রেস: দুপক্ষেই অবস্থান রাখছে
কংগ্রেস তার বৃহত্তর জাতীয় এজেন্ডার অংশ হিসাবে খালিস্তানবিরোধী অবস্থানও নিয়েছে। অন্যদিকে আঞ্চলিক নির্বাচনি রাজনীতিতেও ফোকাস রাখতে দলটি নিরাপদে পা ফেলছে। পাঞ্জাব কংগ্রেসের প্রধান অমরিন্দর সিং রাজা ওয়ারিং বলেছেন, পার্টির রাজ্য ইউনিট খালিস্তানের ধারণার তীব্র বিরোধিতা করছে। কেউ পাঞ্জাবের পক্ষে কথা বললে তাকে ‘বিরোধী’ হিসাবে ডাকা হচ্ছে। ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, কানাডায় প্রায় ৭.৭১ লাখ শিখ রয়েছে। পাঞ্জাব নির্বাচনি রাজনীতিতে এর প্রভাব এবং আর্থিক প্রভাবও বেড়েছে।

এসএডি : শিখ ভোট একত্রিত করা 
শিরোমণি আকালি দল (এসএডি) একটি প্রাচীন আঞ্চলিক দল। অন্য রাজ্যে তাদের কোনো অংশ নেই। এটি ভারত ও কানাডার মধ্যকার সংঘর্ষের বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছে। দলটি পাঞ্জাব এবং শিখ প্রবাসীদের মধ্যে জনগণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। দলটি গত দুটি বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের শিকার হয়েছে। তাই সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের অবস্থানকে সুসংহত করার চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। 

আম আদমি পার্টি 
আম আদমি পার্টি (এএপি) অন্যান্য রাজ্যে এই বিষয়ে নীরবতা পালন করছে। তবে এই ধরনের বিতর্কিত ইস্যুতে তাদের এ নীরবতা পাঞ্জাবে তাদের অবস্থানকে নষ্ট করতে পারে। ভারত-কানান্দা দ্বন্দ্বের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন অবস্থান দেশের সাধারণ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে একটি নতুন আকৃতি দিতে পারে। 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন