Logo
Logo
×

ভারত

ভারতে ওয়াকফ বোর্ডে আপাতত অমুসলিম নিয়োগ স্থগিত

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৯ পিএম

ভারতে ওয়াকফ বোর্ডে আপাতত অমুসলিম নিয়োগ স্থগিত

ভারতে ওয়াকফ বোর্ডে আপাতত অমুসলিম নিয়োগ স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার ওয়াকফ মামলার শুনানি হয় দেশটির শীর্ষ আদালতে। সেখানে এ রায় দেন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। 

রায়ে বলা হয়, পরবর্তী শুনানির আগ পর্যন্ত ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম নিয়োগ দেওয়া যাবে না। 

সেইসঙ্গে এ নিয়ে জবাব দিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে সাত দিন সময় বেঁধে দেন সুপ্রিম কোর্ট। পরবর্তী শুনানি আগামী ৫ মে। 

সম্প্রতি সংসদে সংশোধিত হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ওয়াকফ আইন। বুধবার এ আইনের ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ বিধান নিয়ে প্রশ্ন তোলে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। পাশাপাশি, কেন্দ্রের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ওয়াকফ কাউন্সিলে যে অমুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে, সেই একই পদ্ধতিতে কোনও হিন্দু চ্যারিটিতে কি মুসলিমদের অংশ হতে দেবে তারা?

এরপরই বৃহস্পতিবার সেই ওয়াকফ নিয়োগ স্থগিতের নির্দেশ দেয় আদালত। এই মর্মে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা শুনানি চলাকালীন বলেন, সরকার আপাতত নতুন আইনের ধারার ভিত্তিতে কোনও নিয়োগ করবে না। আগামী সাত দিনের মধ্যে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সংক্ষিপ্ত জবাব দাখিল করা হবে। পাশাপাশি আদালতের আরও নির্দেশ, পরবর্তী শুনানির দিন পর্যন্ত যে সকল ওয়াকফ বাই ইউজার সম্পত্তির অন্তর্গত, সেগুলোতে কোনও পরিবর্তন করা যাবে না।

প্রসঙ্গত, আরবি ভাষায় ‘ওয়াকাফা’ শব্দটি থেকে এসেছে ‘ওয়াকফ’ থেকে– যার অর্থ হল সম্পত্তির হাতবদল। ভারতে যখন কোনো ব্যক্তি মুসলিম আইনের আওতায় ধর্মীয় বা দাতব্য কারণে তার সম্পত্তি দান করেন, তখন সেটাকেই বলে ওয়াকফ সম্পত্তি। এর মধ্যে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, আশ্রয়কেন্দ্র বা শুধু জমি– সব কিছুই থাকতে পারে।

যে কাজের জন্য সেটি দান করা হয়েছে, সেটি ছাড়া অন্য কোনো কাজে ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবহার করা যায় না, এবং এটি কাউকে বিক্রি বা হাতবদলও করা যায় না।

অন্যভাবে বললে, ভারতে হিন্দু সমাজের মধ্যে যেটাকে ‘দেবোত্তর সম্পত্তি’ বলে গণ্য করা হয়, মুসলিম সমাজে মোটামুটি তারই অনুরূপ সংস্করণ হলো ওয়াকফ।

সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্ট উত্তপ্ত তর্কবিতর্কের পর যে মুসলিম ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলটি পাশ করেছে। শেষমেশ আইনেও পরিণত হয়েছে এটি। আর এ নিয়ে উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদসহ ভারতের অনেক জায়গা। বেশ কয়েকজন নিহতের ঘটনাও ঘটেছে। 

ইসলামী পরম্পরা অনুসারে যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি সমাজের উপকারের স্বার্থে ধর্মীয় বা দাতব্য কারণে তার সম্পত্তি আল্লাহ্র নামে দান করেন, সেটাকে ওয়াকফ সম্পত্তি বলে চিহ্নিত করা হয়।

ভারতে বসবাসকারী প্রায় ২০ কোটি মুসলিমের জন্য এই ওয়াকফ সম্পত্তির গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা বা কবরস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

ভারতে রয়েছে বিপুল পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তি – যার বাজার মূল্য শত শত কোটি ডলারের সমপরিমাণ বলে ধারণা করা হয়।

এসব সম্পত্তি নিয়ন্ত্রিত হত ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ অ্যাক্ট অনুসারে, যাতে প্রতিটি রাজ্য স্তরে এই সম্পত্তিগুলোর পরিচালনার জন্য ওয়াকফ বোর্ড গঠনের কথা বলা আছে।

এই বোর্ডগুলোতে থাকেন সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের মনোনীত প্রার্থীরা, মুসলিম আইনপ্রণেতারা (এমপি বা এমএলএ), স্টেট বার কাউন্সিলের সদস্যরা এবং ওয়াকফ সম্পত্তির ম্যানেজার বা পরিচালকরা।

গত বছরের আগস্ট মাসে এই ওয়াকফ আইনটি সংশোধন করার জন্য বিজেপি জোট সরকার পার্লামেন্টে একটি বিল আনে।

সরকারের তখন বক্তব্য ছিল, ওয়াকফ প্রশাসনের আধুনিকীকরণ নিশ্চিত করতে এবং এ পদ্ধতির ‘আইনি ফাঁকফোকরগুলো’ বন্ধ করতেই এই বিলটির প্রস্তাবনা। কিন্তু ভারতের মুসলিম নেতারা ও বিরোধী দলগুলো তখন থেকেই বলে আসছে, মুসলিমদের সম্পত্তির ওপর সরকার যাতে আরও বেশি ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পারে একমাত্র সেই কারণেই এই সংশোধনীগুলো আনা হয়েছে।

এরপর বিলটিকে আরও যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিলটিতে সামান্য কিছু পরিবর্তন করে সেই কমিটি ছাড়পত্র দেওয়ার পর চলতি মাসে সেটি সভায় পেশ করা হয়।

নতুন আইনে কী কী সংশোধনী আনা হল?

নতুন ওয়াকফ আইনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হল কোনটাকে ওয়াকফ সম্পত্তি বলে চিহ্নিত করা হবে, সেই সংজ্ঞাটাই পাল্টে দেওয়া!

ঐতিহাসিকভাবে ভারতে বহু ভবন ও জমিজমা এতকাল আইনগতভাবে বৈধ ওয়াকফ সম্পত্তি বলে স্বীকৃতি পেয়ে এসেছে, যেগুলো হয়তো শুধু মুখের কথায় (ওরাল ডিক্লারেশন) বা সামাজিক রীতিনীতি মেনে দান করা হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু সেগুলো বহুদিন ধরে একটানা মুসলিম সমাজ ব্যবহার করে আসছে, তাই তাদের ওয়াকফ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে অসুবিধা হয়নি।

এখন নতুন আইনে বলা হয়েছে, কোনো সম্পত্তিকে ওয়াকফ বলে দাবি করতে হলে সংশ্লিষ্ট ওয়াকফ বোর্ডকে তার স্বপক্ষে বৈধ নথিপত্র জমা দিতে হবে।

বিতর্কিত কেসগুলোতে – বিশেষ করে সেই জমিটা যদি সরকারি মালিকানাধীন ‘খাস জমি’ বলে দাবি থাকে – সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপরেই ন্যস্ত থাকবে।

দ্বিতীয়ত, নতুন আইনে মুসলিম নন, এমন ব্যক্তিরাও ওয়াকফ বোর্ড ও ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবেন।

তৃতীয়ত, এতদিন ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে কোনো বিতর্কের ক্ষেত্রে ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত। কিন্তু নতুন আইনে বিচারবিভাগীয় হস্তক্ষেপেরও সুযোগ রাখা হয়েছে – যার অর্থ যে কোনো পক্ষ চাইলে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন।

এছাড়া নতুন আইনে দেশের সব ওয়াকফ সম্পত্তির জন্য একটি ‘সেন্ট্রালাইজড রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম’ গঠনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে – আইনটি বলবৎ হওয়ার ছ’মাসের মধ্যে সব বিদ্যমান ওয়াকফ সম্পত্তিকে ওই রেজিস্টারে নথিভুক্ত করাতে হবে।

নতুন করে কোনো সম্পত্তিকে যদি ওয়াকফ হিসেবে নথিভুক্ত করাতে হয়, তাহলে সেটার জন্য আবেদনও এই সিস্টেমের মাধ্যমেই সংশ্লিষ্ট ওয়াকফ বোর্ডের কাছে পেশ করতে হবে।

কোনো ওয়াকফ সম্পত্তির সার্ভে বা সমীক্ষা করানোর দরকার হলে তাতেও সরকারের ভূমিকা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি থাকবে, বস্তুত তারা এ ক্ষেত্রে ওয়াকফ বোর্ডের চেয়েও বেশি ক্ষমতাশালী হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম