পাকিস্তানের আকাশসীমায় অনুপ্রেবশকারী ইসরাইলের তৈরি ২৫টি ভারতীয় ড্রোন আটক করে সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়ার দাবি করেছে পাকিস্তান। ড্রোনগুলো ধ্বংস করার সময় অন্তত ৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন, চারজন সৈন্যসহ সাতজন আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে পাকিস্তানের অন্যতম গণমাধ্যম ডনের খবরে।

সেনাবাহিনীর মতে, যেসব স্থানে এই ড্রোনগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে লাহোর, অ্যাটক, গুজরানওয়ালা, চকওয়াল, রাওয়ালপিন্ডি এবং পাঞ্জাবের বাহাওয়ালপুর, পাশাপাশি সিন্ধুর সুক্কুর, উমেরকোট এবং করাচি।

সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন যে মিয়ানোতে একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং অন্য একজন আহত হয়েছেন। আর পুলিশের জানিয়েছে, অ্যাটক এবং রাওয়ালপিন্ডিতে একজন করে ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেছেন, ‘একটি ড্রোন লাহোরের কাছে একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আংশিকভাবে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে। লাহোরের কাছে এই হামলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চারজন সদস্য আহত হয়েছেন এবং একটি সরঞ্জামের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।’

বাকি ড্রোনগুলো স্পষ্টতই তাদের সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু মিস করেছে এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার ক্ষতি করেছে বলে জানানো হয়েছে ডনের প্রতিবেদনে।

লাহোরের কাছে ওয়ালটন এবং বুরকিতে তিনটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, দুটো ড্রোন ওয়ালটনে বিধ্বস্ত হয়েছে, এবং নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বাধা দেওয়ার পরপরই আরেকটি বুরকিতে বিধ্বস্ত হয়েছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, তারা পুরাতন ওয়ালটন বিমানবন্দর এলাকায় একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন, যার ফলে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।

রাওয়ালপিন্ডিতে, মুরি রোডের পিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কাছে একটি ড্রোন বিধ্বস্ত হওয়ার পর একজন লাহোরের বাসিন্দা প্রাণ হারিয়েছেন এবং দুজন আহত হয়েছেন।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্টেডিয়ামের ফুড স্ট্রিট সম্পূর্ণ খোলা ছিল না এবং আশেপাশে খুব বেশি লোক ছিল না; অন্যথায়, আরও বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারত।

গ্যারিসন শহরের ওয়েস্ট্রিজ এলাকায় ছাদে বিধ্বস্ত হওয়ার পর আরেকটি ড্রোন একটি বাড়ির ক্ষতি করেছে। তবে, কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

অ্যাটকে, একটি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার পর ফতেহ জং তহসিলের জাব্বি কাসরানের কাছে একজন কৃষক নিহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনিও মারা গেছেন বলে জানা গেছে।

গুজরানওয়ালায়, জেলার বিভিন্ন স্থানে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। স্থানীয়রা শহরের উপকণ্ঠে ওয়াহন্দোর টোকরিয়ান গ্রাম এবং সোলাখানাবাদ গ্রামে ড্রোনগুলির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে। গুজরানওয়ালার আইমানাবাদের আগু ভান্ডার গ্রামের কাছে একটি মাঠে আরেকটি ড্রোন পাওয়া গেছে।

গুজরাটে, ডিঙ্গা থানার আওতাধীন পীর ঝান্ড গ্রামে একটি ভারতীয় ড্রোনের কিছু অংশ পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ড্রোনটির কিছু অংশ মাঠে পড়েছিল এবং কিছু অংশ একটি বাড়ির উপর বিধ্বস্ত হয়েছিল, যার ছাদ ভেঙে নিচতলার একটি ঘরে পড়েছিল। তবে, সবাই নিরাপদে ছিলেন।

বাহাওয়ালপুরে, চোলিস্তান মরুভূমিতে একটি ভারতীয় ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। ড্রোনটি ইয়াজমান তহসিলের সীমানার মরুভূমির চাপুওয়ালা এলাকায় আঘাত হানে।

করাচিতে, মালির জেলার উপকণ্ঠে দুটি ড্রোন পড়ে, যার ফলে একটি বাড়ির ছাদ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলাকার পুলিশের এসএইচও সদরউদ্দিন মিরানি বলেন, প্রথম ড্রোনটি শরাফি গোথ বস্তির একটি বাড়িতে পড়ে। এতে ছাদ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে কেউ আহত হয়নি। তিনি বলেন, ঘটনাটি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘটে। আর ড্রোনটি আড়াই ফুট লম্বা ছিল।

এর কিছুক্ষণ পরেই, গুলশান-ই-হাদিদের আবাসিক এলাকার কাছে আরেকটি ড্রোন পড়ে।

মালির এসপি মনসুর গুলজার বোজদার ডনকে বলেন, ড্রোনটি লিংক রোডের কাছে একটি পাহাড়ি এলাকায় পড়েছিল। এতে কোনও প্রাণহানি বা সম্পত্তির ক্ষতি হয়নি।

এছাড়াও উমেরকোটে, ছোর সেনানিবাসের কাছে সুফি আকবর গ্রামের কাছে একটি ভারতীয় ড্রোন বিধ্বস্ত হয়েছে। সৌভাগ্যবশত, সেখানে কোনও হতাহত বা আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এর আগে গত বুধবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় ভারত পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করলেও এবার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

ভারতের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে ‘পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি স্থানে সামরিক স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল। তবে, বেশিরভাগ আক্রমণই ঘটেছে বেসামরিক জনবহুল এলাকায়।’

ড্রোন ভূপাতিত করার অভিযানের বিবরণ শেয়ার করার সময়, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের সফট-স্কিল (কারিগরি) এবং হার্ড-স্কিল (অস্ত্র) দক্ষতা সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করে ২৫টি ইসরাইলি তৈরি হারোপ ড্রোন ভূপাতিত করেছে।’

ভারতীয় হামলার প্রতি পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে আইএসপিআর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘পাঁচটি আধুনিক জেট, ড্রোন এবং বেশ কয়েকটি পোস্ট ধ্বংস করার পাশাপাশি সৈন্য নিহত হওয়ার পর, ভারত আতঙ্কে এই ইসরাইলি তৈরি হারোপ ড্রোন ব্যবহার করে পাকিস্তানে আক্রমণ করছে। এই কাপুরুষোচিত আক্রমণ ভারতের উদ্বেগ এবং আতঙ্কের লক্ষণ। ইসরাইলের তৈরি এই হারোপ ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে।’

বিবিৃতিতে তারা জোর দিয়ে বলেছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী শত্রুদের উপযুক্ত জবাব দিচ্ছে এবং তাদের সমস্ত ঘৃণ্য পরিকল্পনা ধ্বংস করছে।