Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

বিশ বছর পর একমঞ্চে মহারাষ্ট্রের দুই ঠাকরে

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১০:২৯ পিএম

বিশ বছর পর একমঞ্চে মহারাষ্ট্রের দুই ঠাকরে

রাজ ঠাকরে ও উদ্ধব ঠাকরে। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ২০ বছরের বৈরিতা ঘুচিয়ে শনিবার এক মঞ্চে উঠলেন ভারতের মহারাষ্ট্রের একসময়কার ‘নীতিনির্ধারক’ ঠাকরে পরিবারের দুই ভাই। বালাসাহেব ঠাকরের ছেলে উদ্ধব ঠাকরে (শিবসেনা) এবং ভাতিজা রাজ ঠাকরে (মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা, এমএনএস)। 

এদিন দুপুরে মুম্বাইয়ের ওরলি পার্ক অডিটোরিয়ামের মঞ্চে উঠেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। সামনে থাকা বিপুল জমায়েতে ঐক্যের বার্তা দেন দুভাই-ই। ২০০৫ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়। এর আগে ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালা ঠাকরের দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবসে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছিল উদ্ধব এবং রাজকে। যদিও তা ছিল পুরোপুরি অরাজনৈতিক অনুষ্ঠান। এনডিটিভি। 

মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকারের ‘হিন্দি চাপিয়ে’ দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধ এই সমাবেশকে কেন্দ্র করেই ‘ঐক্যবদ্ধ’ হলেন ঠাকরে পরিবার। মহারাষ্ট্র সরকারের তৃতীয় ভাষা হিসাবে ‘হিন্দি’ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আয়োজিত হয় এই অনুষ্ঠান। এই সিদ্ধান্ত ঘিরে রাজ্যজুড়ে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। 

অনুষ্ঠানে রাজ বলেন, ‘আমার মহারাষ্ট্র, যে কোনো রাজনীতি কিংবা লড়াইয়ের চেয়েও বড়। আজ আমরা একসঙ্গে হয়েছি, আজ আবার ২০ বছর পর এক সঙ্গে এক মঞ্চে। যেটা বালাসাহেব পারেননি, সেটাই ফড়নবীস (মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী) করে দেখালেন। আমাদের একত্রিত করলেন।’ 

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘যখন মহারাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন এর প্রভাব পুরো দেশে দেখা যায়। কে কোনো ভাষা শিখবে, এটি জনগণের অধিকার, এটি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। ক্ষমতার জোরে নেওয়া সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক চেতনার বিরুদ্ধে।’ 

আরও বলেন, ‘যদি কেউ মহারাষ্ট্রের দিকে চোখ তোলে, তাহলে তাকে আমাদের মুখোমুখি হতে হবে। বিশ বছর পর আমরা একত্রিত হয়েছি। কাউকে জিজ্ঞাসা না করে কেবল ক্ষমতার ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি। ওরা শুরুতে আমাদের ওপর হিন্দি চাপিয়ে পরীক্ষা করছিল। আমরা প্রতিবাদ না করলে, একদিন মুম্বাইকেও মহারাষ্ট্র থেকে আলাদা করার ষড়যন্ত্র হতো। মারাঠি ভাষা ও স্বার্থ নিয়ে কোনো আপস চলবে না। হিন্দি নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই, কোনো ভাষাই খারাপ নয়। একটি ভাষা তৈরি করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আমরা মারাঠিরা মারাঠা সাম্রাজ্যের সময় অনেক রাজ্য শাসন করেছি, কিন্তু আমরা কখনই সেই অঞ্চলে মারাঠি প্রয়োগ করিনি।’ 

রাজের বক্তব্যে সহমত প্রকাশ করে উদ্ভব বলেন, আমার ছোট ভাই অসামান্য বক্তব্য দিয়েছে। আমার আর বিশেষ কিছু বলার নেই। আরও বলেন, ‘আজকের মঞ্চে রাজ আমাকে ‘মাননীয় উদ্ধব ঠাকরে’ বলে সম্বোধন করেছে। আজকের সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমরা একত্রিত হয়েছি এবং এই ঐক্য ভবিষ্যতেও থাকবে। ক্ষমতা আসবে যাবে, কিন্তু ঐক্য থাকাটাই আসল শক্তি। আমাদের একসঙ্গে থেকেই লড়াই চালাতে হবে। হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের পাশাপাশি ওরা মরাঠিদের মধ্যেও ভাঙন ধরিয়েছে। ‘ভাষার প্রশ্নে রাজ, আমি এবং এখানে সবাই একজোট। হ্যাঁ, আমরা গুন্ডা; ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য যদি আমাদের গুন্ডা হতে হয়, আমরা গুন্ডাগিরি করব। রাস্তায় আমাদের ক্ষমতা আছে। আপনাদের ক্ষমতা আইনসভায়।’ 

উল্লেখ্য, মারাঠি ভাষায় কথা না বলার জন্য রাজ ও উদ্ধব ঠাকরের অনুগামীরা রাস্তায় দোকানদারদের মারছে এবং ভয় দেখাচ্ছে। মহারাষ্ট্রের পৌরসভা নির্বাচনের আগে এদিনের এই সমাবেশকে বিরাট রাজনৈতিক বার্তা হিসাবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞমহল। শিবসেনা (ইউবিটি) ও এমএনএসের এই ঐক্য রাজ্যের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ভাষা, আত্মপরিচয় এবং রাজ্যের সম্মানের ইস্যুতে দুই দলের একসঙ্গে আসা রাজনীতির নতুন সমীকরণ তৈরি করছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এটি শুধুই প্রতীকী ঐক্য নয়, বরং ভবিষ্যতের নির্বাচনী জোটের ইঙ্গিতও হতে পারে।

ঘটনাচক্রে, ষাটের দশকে হিন্দুত্ববাদী আদর্শ এবং মারাঠি মানুষের স্বার্থরক্ষার অঙ্গীকার করে প্রয়াত বালাসাহেব যে শিবসেনা গড়েছিলেন, তার নাম এবং নির্বাচনি প্রতীক তির-ধনুক তার পুত্র উদ্ধব বা ভ্রাতুষ্পুত্র রাজের দখলে নেই। বালাসাহেব জমানায় দলের দ্বিতীয় সারির নেতা একনাথ শিন্ডে (ফঢ়ণবিস সরকারের আবাসন মন্ত্রী) তিন বছর বিজেপির মদতে তা করায়ত্ত করেছেন। গত নভেম্বরে বিধানসভা নির্বাচনের ফল বলছে, শিবসেনার ভোটব্যাংকের বড় অংশও শিন্ডে সেনার দখলে।  

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম