সংসারের হাল ধরতে বাস চালাচ্ছেন নাইজেরিয়ার নারীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৪ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
ফলো করুন |
|
---|---|
নাইজেরিয়ার বাসিন্দা আমাকা ওকোলি (৩৮)। তিন বছর আগেই হঠাৎই ব্যাংকের চাকরি হারান তিনি। দিশেহারা ওকোলি কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। সামনের সব পথই ছিল বন্ধ। এরপর সংসারের হাল ধরতে প্রথা ভেঙে বাস চালানো শুরু করেন তিনি। তবে এখন শুধু ওকোলিই নয়, রুটি-রুজির আশায় এ পেশার এসেছে হাজারো নারী। দেশটির লেডিস অন হুইলস অ্যাসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়া (এলওডব্লিউএএন) এর সভাপতি ভিক্টোরিয়া ওয়েমি জানান, ২০১৮ সালে ছয়জন নারী নিয়ে বাস চালানোর এই গ্রুপটি চালু হয়েছিল। এখন ৫,০০০ এরও বেশি সেখানে সদস্য রয়েছে। এএফপি।
নারীরা ক্রমবর্ধমানভাবে শুধুমাত্র বাসই নয় উবার ও বোল্টের মতো কোম্পানিতে নিজেদের নিবন্ধন করছে। নাইজেরিয়ার সমাজে সাধারণত পুরুষেরাই এ ধরনের পেশায় নিয়োজিত। তবে ধীরে ধীরে আফ্রিকার এই দেশটিতে পরিবর্তন আসছে। দেশের বিরূপ অর্থনৈতিক সংকটে একজনের সংসার চালাতে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছিলেন তাই বাধ্য হয়েও অনেকে এ কাজ করছেন।
তিন সন্তানের মা ওকোলি জানান, সকাল ৫টা ৩০ মিনিটে তার দিন শুরু করেন এবং শেষ বিকালে তিনি বাড়ি ফেরেন। তিনি বলেন, ‘রাজধানী লাগোসে একজন নারী ড্রাইভার আগে কল্পনাই করা যেত না কিন্তু এখন সমাজ পরিবর্তন হচ্ছে কারণ আমাদের অর্থ উপার্জন করতে হবে।’ তিনি আরও জানান, শুল্ক ও জ্বালানি বাদে নিজ আয়ের ৪০ শতাংশ বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন।
কাজের পাশাপাশি সংসার চালানোর বিষয়ে ওকোলি জানান, ‘আমি মনে করি আমি দুটি জীবনযাপন করছি। একটি হলো একজন বাসচালক যেখানে আমাকে সাহসী হতে হবে এবং যাত্রীদের ডাকতে হবে। অন্যটি হলো একজন গৃহিণীর শান্ত জীবন যিনি তার স্বামী এবং সন্তানদের দায়িত্বশীল।’
তবে এই পেশার কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও জানান ওকোলি। তার মতে, নারী হওয়ার কারণে অনেকেই তার সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা করে। অনেক যাত্রী অনেকসময় আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। এছাড়াও মাঝে মাঝে রাতে ডাকাতির ঝুঁকিও থাকে।
তবে ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে ওকোলি এও বলেন, ‘যাত্রীরা এখন মহিলা চালকদের বাসে চড়তে পছন্দ করেন কারণ তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং গাড়ি চালানোর সময় আরও সতর্কতা অবলম্বন করে।’
এছাড়াও মাঝে মাঝে যাত্রীরা কিছু টিপস দেন যাতে করে সন্তানদের স্কুলের ফি দেওয়াটা সহজ হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, নাইজেরিয়ার অর্থনৈতিক টালমাটাল ভোগান্তিতে থাকে সাধারণ জনগণ। অনেকেই সাধ অনুযায়ী সাধ্য পূরণ করতে পারে না পরিবারের। এ বিষয়ে লাগোস স্টেট ইউনিভার্সিটির পরিবহণ পরিকল্পনা ও নীতির অধ্যাপক স্যামুয়েল ওডেউমি বলেন, ‘পরিবারগুলো আর একক আয়ের ওপর নির্ভর করতে পারে না। তাই নারীরা উপার্জনকারী হয়ে উঠেছে। ফলে অনেক নারীরা এমন পেশাগুলো বেছে নিচ্ছে যা ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষদের জন্য বরাদ্দ ছিল।’