আল্লাহ ক্ষমাকারীকে পছন্দ করেন
মূল: মওলানা ওয়াহিদুদ্দিন খান, তর্জমা: মওলবি আশরাফ
২৫ মে ২০২২, ১৮:১২:৩১ | অনলাইন সংস্করণ
এক মাওলানা সাহেব এক মুসলিম উকিলের সঙ্গে কথা বলছিলেন। কথায় কথায় উকিল এমন কিছু বলে ফেলেছিলেন যেখান থেকে বোঝা যায় মাওলানা সাহেবের ধর্মীয় চিন্তার সঙ্গে তার চিন্তায় অনেক তফাৎ।
মাওলানা সাহেব খেপে গিয়ে উকিলকে বেয়াদব, ভণ্ড ইত্যাদি বলে ফেললেন। উকিল সাহেব একদম চুপচাপ সব শুনলেন। মাওলানা সাহেব সব বলে যখন নিস্তার হলেন, উকিল সাহেব হেসে বললেন, আর কিছু বলার আছে?
উকিলের মুখ থেকে একথা শুনে মাওলানা সাহেব একদম নরম হয়ে গেলেন। তার ক্রোধ থেমে গেল। উকিলের একটা ঠাণ্ডা বাক্য মাওলানার রাগের আগুন নিভিয়ে দিল। এরপর যে আলাপ-আলোচনা হলো, তা সম্পূর্ণ ভিন্নরকম ছিল। আলাপের শুরু যেমন খুশি খুশি মুখে ছিল, আলাপের শেষটাও তা-ই হলো।
আমাদের সামাজিক জীবনে অধিকাংশ ঝগড়াই ছোটখাটো কথা থেকে শুরু হয়। কারও একটি কথা শুনে আমাদের দিলে ধাক্কা লাগে, ভেতরে প্রতিশোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে, এবং আমরা ওই লোকের মোকাবেলায় নেমে পড়ি।
কিন্তু বাস্তবতা হলো ক্ষমা করে দেওয়া সবচেয়ে বড় প্রতিশোধ। কারও অনর্থক কথা শুনেও কেউ যদি চুপ থাকে, তাহলে তার এমন এক কিসিমের খুশি মিলে, যেই খুশি সবরকমের আনন্দ ছাপিয়ে যায়। অন্যদিক থেকে সেই শত্রুকেও একধরনের চিন্তায় ফেলে দেওয়া হয়, সে সারাক্ষণ মনের ভেতর খচখচানি নিয়ে কাটায়। ‘কাজটা আসলেই ঠিক করলাম কিনা’— এই ভাবনা তাকে ঘিরে রাখে।
বেশিরভাগ মানুষই মনে করে— ‘ইট মারলে তার জবাবে পাথর মারতে হয়’। যদি তুমি এমনটি না করো, তাহলে সে বড্ড বাড়া বেড়ে যাবে, ভবিষ্যতে এরচেয়ে বেশি খারাবি করবে। কিন্তু এই ধারণা একদম ভিত্তিহীন।
ইটের জবাবে পাথর না মারলে যদি শত্রুর বাড়াবাড়ির মাত্রা বেড়ে যায়, তাহলে পাথর মারলে তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি বাড়বে। তখন তার মধ্যে একধরনের প্রতিশোধের স্পৃহা জেগে উঠবে। সে প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত হয়ে আগের থেকে অনেক অনেক বেশি খারাবি করতে শুরু করবে।
প্রকৃত সত্য হলো মাফ করে দেওয়া বা দেখেও না দেখার ভাণ করা খুবই ভালো গুণ। ক্ষমাকারী ব্যক্তি নিজে প্রতিশোধ না নিয়ে বিচারের দায়িত্ব আল্লাহর কাছে হাওয়ালা করে দেন। তিনি প্রবৃত্তির অনুসরণের বদলে বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করেন। নিঃসন্দেহে এই ধরনের আচরণ মানুষকে বেশি প্রভাবিত করে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
আল্লাহ ক্ষমাকারীকে পছন্দ করেন
এক মাওলানা সাহেব এক মুসলিম উকিলের সঙ্গে কথা বলছিলেন। কথায় কথায় উকিল এমন কিছু বলে ফেলেছিলেন যেখান থেকে বোঝা যায় মাওলানা সাহেবের ধর্মীয় চিন্তার সঙ্গে তার চিন্তায় অনেক তফাৎ।
মাওলানা সাহেব খেপে গিয়ে উকিলকে বেয়াদব, ভণ্ড ইত্যাদি বলে ফেললেন। উকিল সাহেব একদম চুপচাপ সব শুনলেন। মাওলানা সাহেব সব বলে যখন নিস্তার হলেন, উকিল সাহেব হেসে বললেন, আর কিছু বলার আছে?
উকিলের মুখ থেকে একথা শুনে মাওলানা সাহেব একদম নরম হয়ে গেলেন। তার ক্রোধ থেমে গেল। উকিলের একটা ঠাণ্ডা বাক্য মাওলানার রাগের আগুন নিভিয়ে দিল। এরপর যে আলাপ-আলোচনা হলো, তা সম্পূর্ণ ভিন্নরকম ছিল। আলাপের শুরু যেমন খুশি খুশি মুখে ছিল, আলাপের শেষটাও তা-ই হলো।
আমাদের সামাজিক জীবনে অধিকাংশ ঝগড়াই ছোটখাটো কথা থেকে শুরু হয়। কারও একটি কথা শুনে আমাদের দিলে ধাক্কা লাগে, ভেতরে প্রতিশোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে, এবং আমরা ওই লোকের মোকাবেলায় নেমে পড়ি।
কিন্তু বাস্তবতা হলো ক্ষমা করে দেওয়া সবচেয়ে বড় প্রতিশোধ। কারও অনর্থক কথা শুনেও কেউ যদি চুপ থাকে, তাহলে তার এমন এক কিসিমের খুশি মিলে, যেই খুশি সবরকমের আনন্দ ছাপিয়ে যায়। অন্যদিক থেকে সেই শত্রুকেও একধরনের চিন্তায় ফেলে দেওয়া হয়, সে সারাক্ষণ মনের ভেতর খচখচানি নিয়ে কাটায়। ‘কাজটা আসলেই ঠিক করলাম কিনা’— এই ভাবনা তাকে ঘিরে রাখে।
বেশিরভাগ মানুষই মনে করে— ‘ইট মারলে তার জবাবে পাথর মারতে হয়’। যদি তুমি এমনটি না করো, তাহলে সে বড্ড বাড়া বেড়ে যাবে, ভবিষ্যতে এরচেয়ে বেশি খারাবি করবে। কিন্তু এই ধারণা একদম ভিত্তিহীন।
ইটের জবাবে পাথর না মারলে যদি শত্রুর বাড়াবাড়ির মাত্রা বেড়ে যায়, তাহলে পাথর মারলে তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি বাড়বে। তখন তার মধ্যে একধরনের প্রতিশোধের স্পৃহা জেগে উঠবে। সে প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত হয়ে আগের থেকে অনেক অনেক বেশি খারাবি করতে শুরু করবে।
প্রকৃত সত্য হলো মাফ করে দেওয়া বা দেখেও না দেখার ভাণ করা খুবই ভালো গুণ। ক্ষমাকারী ব্যক্তি নিজে প্রতিশোধ না নিয়ে বিচারের দায়িত্ব আল্লাহর কাছে হাওয়ালা করে দেন। তিনি প্রবৃত্তির অনুসরণের বদলে বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করেন। নিঃসন্দেহে এই ধরনের আচরণ মানুষকে বেশি প্রভাবিত করে।