মুসলমানের সামাজিক জীবন যেমন হবে
মূল: মওলানা ওয়াহিদুদ্দিন খান, তর্জমা: আহনাফ তাহমিদ প্রাতঃ
০৮ জুন ২০২২, ১৮:৩৫:৪৭ | অনলাইন সংস্করণ
রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, তোমরা নিজেদের মধ্যে শত্রুতা লালন করো না, পরস্পরকে হিংসার চোখে দেখো না, একে অন্যের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আল্লাহর সব বান্দা ভাই-ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলমানের জন্য তার (অপর মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখা জায়েজ নেই।
বান্দা যখন আল্লাহ তায়ালাকে প্রকৃত অর্থেই নিজের মাবুদ বানিয়ে নেয়, তখন তার মধ্য থেকে সবধরনের নেতিবাচক প্রবণতা হ্রাস পায়। যাদের অন্তর সর্বক্ষণ আল্লাহর মহিমা প্রকাশে ব্যস্ত তারা দুনিয়ার নীচতায় গড়াগড়ি খেতে পারে না।
এই ধরনের মানুষ সমাজে এমনভাবে জীবনযাপন করেন যেভাবে ফুলের সুবাস সর্বত্রই চলাফেরা করে কিন্তু কারও সঙ্গে সংঘাত বাঁধায় না। সবার কাছে পৌঁছে, কারো প্রতি নেই অন্যায় পক্ষপাত। কিংবা তাদের তুলনা দেওয়া যায় আলোর সঙ্গে। আলো তার নিজেকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়, তার মধ্যে কারো থেকে খুশি হওয়া বা কাউকে ভয় করার ব্যাপার নেই।
বাগানের গাছপালা যেমন একে অপরের গলা জড়িয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে, এই ধরনের লোকেরাও তেমন পরস্পরের পরিপূরক হয়ে পাশে থাকে।
ইসলামের জ্ঞান একজন মানুষ পরিপূর্ণভাবে হাসিল করুক বা না করুক, সে যখন মুসলিম পরিচয় বহন করে তখন তাকে আপন মুসলিম ভাইদের মাঝে এমনভাবে বসবাস করতে হবে যে তার কারো সাথে শত্রুতা নেই এবং কাউকে সে হিংসা করে না।
কখনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও তারা সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে না। সবাইকে আল্লাহর সৃষ্টি মনে করে এমনভাবে থাকবে, যেমন থাকে এক বাবার সন্তানেরা মিলেমিশে থাকে। এমন মানসিকতা যিনি নিজের মধ্যে তৈরি করবেন, তার স্বভাবই এমন হয়ে যাবে যে, কোনো ভাইয়ের সঙ্গে তার যদি ঝগড়া বেঁধেও যায়, এমনকি ঘটনার রেশ ধরে আলাদা হয়ে যাবার সিদ্ধান্তও নেন, তবু তিন দিন যেতে না যেতেই তার বুক ফেটে যাবে।
সাময়িক রাগ তাকে যে ভাই থেকে আলাদা করেছিল, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তিনি ওই ভাইকে এমনভাবে বুকে জড়িয়ে নেবেন যে তার সাথে কোনোদিন ঝগড়া-বিবাদ ঘটেনি।
বর্তমানে (১৯৯৮ সাল) মুসলমানদের তেতাল্লিশটি স্বাধীন ভূখণ্ড রয়েছে। যার জনসংখ্যা প্রায় ৬০ কোটি। ভৌগোলিক অবস্থান হিসেবে দুনিয়ার একুশ শতাংশ অঞ্চলে মুসলমানদের ক্ষমতা আছে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় তেইশ ভাগ তারা। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক প্রাকৃতিক সম্পদ তাদের হাতে।
কিন্তু শিক্ষাদীক্ষা, পারস্পরিক মিল-মহব্বত, শিল্পোন্নয়নে তারা বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। হাদিস থেকে শিক্ষা নিয়ে এত বড় একটা জনগোষ্ঠী যদি ভ্রাতৃত্ববোধে আবদ্ধ হয়ে যায়, সত্যিকার অর্থেই ভাই-ভাই হয়ে, তাহলে তারা এতবেশি শক্তিশালী হবে যে, তাদের দমিয়ে রাখার সাহস কিংবা শক্তি—শত্রুদের হাতের নাগালে তার কোনোটাই থাকবে না।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
মুসলমানের সামাজিক জীবন যেমন হবে
রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, তোমরা নিজেদের মধ্যে শত্রুতা লালন করো না, পরস্পরকে হিংসার চোখে দেখো না, একে অন্যের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আল্লাহর সব বান্দা ভাই-ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলমানের জন্য তার (অপর মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখা জায়েজ নেই।
বান্দা যখন আল্লাহ তায়ালাকে প্রকৃত অর্থেই নিজের মাবুদ বানিয়ে নেয়, তখন তার মধ্য থেকে সবধরনের নেতিবাচক প্রবণতা হ্রাস পায়। যাদের অন্তর সর্বক্ষণ আল্লাহর মহিমা প্রকাশে ব্যস্ত তারা দুনিয়ার নীচতায় গড়াগড়ি খেতে পারে না।
এই ধরনের মানুষ সমাজে এমনভাবে জীবনযাপন করেন যেভাবে ফুলের সুবাস সর্বত্রই চলাফেরা করে কিন্তু কারও সঙ্গে সংঘাত বাঁধায় না। সবার কাছে পৌঁছে, কারো প্রতি নেই অন্যায় পক্ষপাত। কিংবা তাদের তুলনা দেওয়া যায় আলোর সঙ্গে। আলো তার নিজেকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়, তার মধ্যে কারো থেকে খুশি হওয়া বা কাউকে ভয় করার ব্যাপার নেই।
বাগানের গাছপালা যেমন একে অপরের গলা জড়িয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে, এই ধরনের লোকেরাও তেমন পরস্পরের পরিপূরক হয়ে পাশে থাকে।
ইসলামের জ্ঞান একজন মানুষ পরিপূর্ণভাবে হাসিল করুক বা না করুক, সে যখন মুসলিম পরিচয় বহন করে তখন তাকে আপন মুসলিম ভাইদের মাঝে এমনভাবে বসবাস করতে হবে যে তার কারো সাথে শত্রুতা নেই এবং কাউকে সে হিংসা করে না।
কখনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও তারা সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে না। সবাইকে আল্লাহর সৃষ্টি মনে করে এমনভাবে থাকবে, যেমন থাকে এক বাবার সন্তানেরা মিলেমিশে থাকে। এমন মানসিকতা যিনি নিজের মধ্যে তৈরি করবেন, তার স্বভাবই এমন হয়ে যাবে যে, কোনো ভাইয়ের সঙ্গে তার যদি ঝগড়া বেঁধেও যায়, এমনকি ঘটনার রেশ ধরে আলাদা হয়ে যাবার সিদ্ধান্তও নেন, তবু তিন দিন যেতে না যেতেই তার বুক ফেটে যাবে।
সাময়িক রাগ তাকে যে ভাই থেকে আলাদা করেছিল, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তিনি ওই ভাইকে এমনভাবে বুকে জড়িয়ে নেবেন যে তার সাথে কোনোদিন ঝগড়া-বিবাদ ঘটেনি।
বর্তমানে (১৯৯৮ সাল) মুসলমানদের তেতাল্লিশটি স্বাধীন ভূখণ্ড রয়েছে। যার জনসংখ্যা প্রায় ৬০ কোটি। ভৌগোলিক অবস্থান হিসেবে দুনিয়ার একুশ শতাংশ অঞ্চলে মুসলমানদের ক্ষমতা আছে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় তেইশ ভাগ তারা। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক প্রাকৃতিক সম্পদ তাদের হাতে।
কিন্তু শিক্ষাদীক্ষা, পারস্পরিক মিল-মহব্বত, শিল্পোন্নয়নে তারা বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। হাদিস থেকে শিক্ষা নিয়ে এত বড় একটা জনগোষ্ঠী যদি ভ্রাতৃত্ববোধে আবদ্ধ হয়ে যায়, সত্যিকার অর্থেই ভাই-ভাই হয়ে, তাহলে তারা এতবেশি শক্তিশালী হবে যে, তাদের দমিয়ে রাখার সাহস কিংবা শক্তি—শত্রুদের হাতের নাগালে তার কোনোটাই থাকবে না।