কোন ধরনের মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ?
মুফতি সাদেকুর রহমান
১০ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:১৫:৪৩ | অনলাইন সংস্করণ
প্রশ্ন: আমাদের দেশের জনগণ অনেক ধরনের মোজা পরিধান করে থাকেন। কেউ চামড়ার মোজা পরেন। কেউ সুতার পাতলা মোজা পরেন। কেউ নাইলনের মোজা বা তুলার মোজা পরিধান করেন। এখন আমার জানার বিষয় হলো- কোন ধরনের মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ?
উত্তর: আমাদের অনুসন্ধান অনুযায়ী মোজা তিন ধরনের হতে পারে।
১. চামড়ার মোজা। এ ধরনের মোজার উপর সর্বসম্মতভাবে মাসেহ করা জায়েজ। বুট জুতা এবং গামবুটের উপর মাসেহ করা জায়েজ আছে।
ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেছেন, আমি ততক্ষণ পর্যন্ত মোজার উপর মাসাহের প্রবক্তা হইনি, যতক্ষণ পর্যন্ত না বিষয়টি আমার কাছে দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয়েছে। (আলবাহরুর রায়েক-১/২৮৮, জাকারিয়া)
হাসান বসরী (রহ.) বলেন, সত্তরজন বদরী সাহাবীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। তাদের প্রতিজনকেই চামড়ার মোজার উপর মাসেহ করতে দেখেছি। (বাদায়েউস সানায়ে-১/৭৭, জাকারিয়া আহকামুল কুরআন, ইমাম জাসসাসকৃত-২/৪২৫)
২. এমন পাতলা মোজা, যা চামড়ারও নয়, আবার চামড়ার মোজার কোন গুণাগুণও তাতে পাওয়া যায় না। যেমন আজকালকার সুতার মোজা, নাইলনের মোজা বা তুলার মোজা ইত্যাদি। এসব মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ হবে না।
আল্লামা কাসানী (রহ.) বলেন, মোজা যদি এতটা পাতলা হয় যে, তা ভেদ করে পানি ভেতরে প্রবেশ করে, তাহলে তার উপর সবার ঐকমত্যে মাসেহ করা জায়েজ নেই। (বাদায়েউস সানায়ে-১/৮৩, জাকারিয়া বুক ডিপো)
৩. এমন মোজা যা চামড়ার নয়; কিন্তু মোটা হবার কারণে চামড়ার মোজার গুণ পাওয়া যায়। এমন মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ আছে, যদি তিনটি শর্ত পাওয়া যায়।
ক. মোজাটি এতটুকু মোটা হতে হবে যে, এর মাঝে পানি পড়লে তা পায়ে পৌঁছে না।
খ. উক্ত মোজা এতটুকুই মোটা যে, মোজাকে কোন কিছু দিয়ে বাঁধা ছাড়াই শুধু মোজা পা দিয়ে দুই-আড়াই কিলোমিটারের মতো হাঁটা যাবে, কিন্তু মোজা ছিঁড়বে না।
গ. মোজা এতটুকু বড় হতে হবে যে, টাখনুসহ ঢাকা থাকতে হবে।
সুতরাং উপরের আলোচনায় স্পষ্ট হলো যে, আমাদের দেশের প্রচলিত কাপড়ের পাতলা মোজার উপর মাসেহ করা কোনোভাবেই জায়েজ নয়।
ইবনে নুজাইম (রহ.) বলেন, সুতা বা চুলের পাতলা মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ নেই সর্বসম্মত মতানুসারে। (আলবাহরুর রায়েক-১/৩১৮, জাকারিয়া)
উল্লেখ্য, ১. ওজু করার পর মোজা পরিধান করলে পরবর্তীতে ওজু নষ্ট হয়ে গেলে তার উপর মাসেহ করতে পারবে। মোজা পরিধান করার পর গোসল ফরজ হয়ে গেলে সেই মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ হবে না।
২.মুকিম হলে একদিন এক রাত, আর মুসাফির হলে তিন দিন তিন রাত মোজার উপর মাসেহ করতে পারবেন।
সূত্র: সহিহ বুখারি -২০২. সুনানে তিরমিজি-৯৩ হেদায়া-১/৬১.বাদায়েউস সানায়ে-১/৭৫-৮৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া-১/৮৫. মাজমাউল আনহুর-১/৭৪
উত্তর দিয়েছেন- মুফতি সাদেকুর রহমান, মুফতি ও মুহাদ্দিস, শেখ জনূরুদ্দীন (র.) দারুল কুরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
কোন ধরনের মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ?
প্রশ্ন: আমাদের দেশের জনগণ অনেক ধরনের মোজা পরিধান করে থাকেন। কেউ চামড়ার মোজা পরেন। কেউ সুতার পাতলা মোজা পরেন। কেউ নাইলনের মোজা বা তুলার মোজা পরিধান করেন। এখন আমার জানার বিষয় হলো- কোন ধরনের মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ?
উত্তর: আমাদের অনুসন্ধান অনুযায়ী মোজা তিন ধরনের হতে পারে।
১. চামড়ার মোজা। এ ধরনের মোজার উপর সর্বসম্মতভাবে মাসেহ করা জায়েজ। বুট জুতা এবং গামবুটের উপর মাসেহ করা জায়েজ আছে।
ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেছেন, আমি ততক্ষণ পর্যন্ত মোজার উপর মাসাহের প্রবক্তা হইনি, যতক্ষণ পর্যন্ত না বিষয়টি আমার কাছে দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয়েছে। (আলবাহরুর রায়েক-১/২৮৮, জাকারিয়া)
হাসান বসরী (রহ.) বলেন, সত্তরজন বদরী সাহাবীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। তাদের প্রতিজনকেই চামড়ার মোজার উপর মাসেহ করতে দেখেছি। (বাদায়েউস সানায়ে-১/৭৭, জাকারিয়া আহকামুল কুরআন, ইমাম জাসসাসকৃত-২/৪২৫)
২. এমন পাতলা মোজা, যা চামড়ারও নয়, আবার চামড়ার মোজার কোন গুণাগুণও তাতে পাওয়া যায় না। যেমন আজকালকার সুতার মোজা, নাইলনের মোজা বা তুলার মোজা ইত্যাদি। এসব মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ হবে না।
আল্লামা কাসানী (রহ.) বলেন, মোজা যদি এতটা পাতলা হয় যে, তা ভেদ করে পানি ভেতরে প্রবেশ করে, তাহলে তার উপর সবার ঐকমত্যে মাসেহ করা জায়েজ নেই। (বাদায়েউস সানায়ে-১/৮৩, জাকারিয়া বুক ডিপো)
৩. এমন মোজা যা চামড়ার নয়; কিন্তু মোটা হবার কারণে চামড়ার মোজার গুণ পাওয়া যায়। এমন মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ আছে, যদি তিনটি শর্ত পাওয়া যায়।
ক. মোজাটি এতটুকু মোটা হতে হবে যে, এর মাঝে পানি পড়লে তা পায়ে পৌঁছে না।
খ. উক্ত মোজা এতটুকুই মোটা যে, মোজাকে কোন কিছু দিয়ে বাঁধা ছাড়াই শুধু মোজা পা দিয়ে দুই-আড়াই কিলোমিটারের মতো হাঁটা যাবে, কিন্তু মোজা ছিঁড়বে না।
গ. মোজা এতটুকু বড় হতে হবে যে, টাখনুসহ ঢাকা থাকতে হবে।
সুতরাং উপরের আলোচনায় স্পষ্ট হলো যে, আমাদের দেশের প্রচলিত কাপড়ের পাতলা মোজার উপর মাসেহ করা কোনোভাবেই জায়েজ নয়।
ইবনে নুজাইম (রহ.) বলেন, সুতা বা চুলের পাতলা মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ নেই সর্বসম্মত মতানুসারে। (আলবাহরুর রায়েক-১/৩১৮, জাকারিয়া)
উল্লেখ্য, ১. ওজু করার পর মোজা পরিধান করলে পরবর্তীতে ওজু নষ্ট হয়ে গেলে তার উপর মাসেহ করতে পারবে। মোজা পরিধান করার পর গোসল ফরজ হয়ে গেলে সেই মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ হবে না।
২.মুকিম হলে একদিন এক রাত, আর মুসাফির হলে তিন দিন তিন রাত মোজার উপর মাসেহ করতে পারবেন।
সূত্র: সহিহ বুখারি -২০২. সুনানে তিরমিজি-৯৩ হেদায়া-১/৬১.বাদায়েউস সানায়ে-১/৭৫-৮৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া-১/৮৫. মাজমাউল আনহুর-১/৭৪
উত্তর দিয়েছেন- মুফতি সাদেকুর রহমান, মুফতি ও মুহাদ্দিস, শেখ জনূরুদ্দীন (র.) দারুল কুরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।