ইসলামে শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা
তুর্কি দার্শনিক বদিউজ্জামান সাইদ নুরসি বলেন, ‘যখন রাষ্ট্রে আইনকানুন ও নীতিনৈতিকতার বালাই না থাকে, মানুষ তখন সামাজিক জীবনে ধর্মের প্রতি ভরসা হারিয়ে ফেলে।’
ইসলাম যেহেতু ভরসার কেন্দ্র ও সব সময় প্রাসঙ্গিক, তাই কেবল পয়লা মে নয়, বছরের প্রত্যেকদিনই শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
মানুষের ইতিহাসে চারটা যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে—আদি যুগ, যাযাবরী যুগ, রাজ-রাজড়া ও দাসত্বের যুগ, সর্বশেষে সামন্তবাদী যুগ। উনিশ শতক থেকে মানুষ নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে, একে বলা হয় শ্রমিকের যুগ।
কিন্তু এই যুগেও ছেয়ে আছে ভয়াবহ অবিচার আর অন্যায্যতা। হয়তো এরপর মানুষ নতুন এক যুগে প্রবেশ করবে, কিন্তু বসে বসে তো আর নিজেদের ধ্বংস দেখা যায় না, তাই সমাধানকল্পে এগিয়ে না আসার উপায় নাই।
আঠারো শতকের প্রথমার্ধেই, তখনও শ্রমিকের যুগ শুরু হয়নি, শাহ ওলিউল্লাহ দেহলবি (১৭০৩-১৭৬২) ভবিষ্যৎ আন্দাজ করে কিছু প্রস্তাবনা হাজির করেছিলেন।
তার মতে দুই-দুইটা ক্ষেত্রে যদি আমরা কাজ করি, তাহলে মানবজাতি এই ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকে রেহাই পাবে-
এক. কোরআনকে কার্যত বাস্তবায়ন করা। দুই. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা।
আদতে এই দুটো সমাধান ছিল বান্দাকে শিখিয়ে দেওয়া আল্লাহর দোয়া—‘রব্বানা আ-তিনা ফিদ দুনিয়া হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ’ -এর তফসির।
এই আয়াত অনুসারে আখেরাতে কল্যাণ পেতে হলে আমাদের একমাত্র লা-শরিক আল্লাহর এবাদত, আর দুনিয়াতে তা পেতে হলে কায়েম করতে হবে আল্লাহর নির্দেশমাফিক সমাজ।
উভয় জাহানে কল্যাণলাভের জন্য শাহ সাহেব চারটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য অর্জনের শর্ত দিয়েছেন:
ক. তহারাত বা মনোদৈহিক পবিত্রতা।
খ. ইখবাত বা পরমসত্তার সাথে মিলনের জযবা।
গ. সামাহাত বা প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রিত রাখবার শক্তিমত্তা।
ঘ. আদালাত বা ইনসাফ কায়েম করা।
এই চার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সর্বপ্রধান বা কেন্দ্র হলো ‘ইনসাফ কায়েম করা।’ কোনো সমাজে ততক্ষণ পর্যন্ত ইনসাফ কায়েম করা সম্ভব নয়, যতক্ষণ না শ্রমিকের উপর শ্রমমূল্যের চেয়ে বেশি শ্রম চাপিয়ে দেওয়ার নিয়ম ভেঙে খানখান করা হয়। (শুউর ও আগাহি, মাকালা ৮, পৃষ্ঠা ১৫৮)
ওলিউল্লাহি আন্দোলনের অন্যতম রাহবার মওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধি বলেন, শাহ সাহেব তার দর্শনে মানব সংক্রান্ত আলোচনায় মন প্রাণ ও মস্তিষ্কের সাথে অঙ্গপ্রত্যঙ্গও (পেট ও যৌনাঙ্গ) যুক্ত করেছেন, এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে জীবনের বনিয়াদ আখ্যা দিয়ে তিনি দর্শনশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধান দিয়েছেন।
সাধারণত অধিবিদ্যা ও দর্শনের আলোচনা শুরু হয় বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্র থেকে, যদিও মানুষের জীবনযাপনে অর্থনীতির ক্ষেত্রকে গুরুত্বের সাথে দেখা হয়, কিন্তু উচ্চতর ভাবনার জগতে অর্থনীতির অনুপ্রবেশকে মোটেও স্বাগত জানানো হয় না।
মানুষের জীবনকে এরকম ‘মস্তিষ্ককেন্দ্রিক’ দেখার ফলে আমাদের রাজনীতি আজ অন্তসারশূন্য। যারা রাজনীতির নাগাল থেকে শত হাত দূরে গিয়ে জ্ঞানচর্চা করেন, আমাদের দেশে সাধারণত তাদেরকেই পণ্ডিত ভাবা হয়, এবং তাদের অরাজনৈতিক মনোভাবকে উচ্চতর গুণ ভাবা হয়।
এ ধরনের পণ্ডিতদের দৃষ্টিতে রাজনীতি, অর্থাৎ যেসব জিনিসের সাথে আমজনতার জীবনের প্রাত্যহিক কাজকর্ম জুড়ে আছে, তা ‘ছোটখাটো’ ও ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’ জিনিস। এর বিপরীতে শাহ সাহেব এই দিকটায় সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন।
তার মতে মানুষের আত্মিক ও মানসিক বিকাশের প্রায় সবটাই নির্ভর করে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার ওপর।
তিনি বলেন, ‘মানুষের স্বাভাবিক জীবনের সব ছন্দ ওই সময় বরবাদ হয়ে যায়, যখন কোনো জালেম অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্যতা সৃষ্টি করে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তোলে, আর মানুষ গরু-গাধার মতো স্রেফ দুই লুকমা খাবারের জন্য সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খাটে।...’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা, ষষ্ঠ অধ্যায়, আস সিয়াসাতুল মিল্লিয়াহ)
যদি মানুষের জীবনকে পেট ও পিঠের প্রয়োজন থেকে শুরু করে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ পর্যন্ত একই ধারা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়, তখন যেই দর্শন তৈরি হবে তাকে ‘পরিপূর্ণ’ বলা সম্ভব। ...যখন মানুষ জৈবিক চাহিদা থেকে নিশ্চিন্ত হবে, তার কাছে ভাত-কাপড়ের ফিকির করার বাইরেও সময় থাকবে, তখনই গিয়ে মাস্তিষ্কিক কাজে মনোনিবেশ করার ফুরসত পাবে।...
মানুষ যখন অর্থনৈতিক অন্যায্যতার ভারে অসহায় হয়ে পড়ে, তখন আল্লাহ তাআলা নবী-রসুলদের ওহির মাধ্যমে, কখনো-বা প্রিয় বান্দা ও দার্শনিকদের মনে ইলহাম (বার্তা) পাঠিয়ে, সেখান থেকে মানুষদের উদ্ধার করেন। তারপর যখন অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে কদম ফেলার সুযোগ পায়, এভাবে একে-একে উন্নতির পর্যায় অতিক্রম করে। (শুউর ও আগাহি, মাকালা ১৯, পৃষ্ঠা ৩৪০)
বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক মুক্তির আন্দোলনকে কার্ল মার্কসের একার সম্পত্তি বানিয়ে ফেলা হয়েছে, কোনো মুসলিম এবিষয়ে কথা বললে আকারে-ইঙ্গিতে মার্কসবাদী কিংবা বামঘেঁষা ঠাওরানো হয়।
মওলানা সিন্ধি আফসোস করে বলতেন, ভাবতেও কষ্ট লাগে যে, ফরাসি বিপ্লবের অর্ধশতক আগে এবং রুশ বিপ্লবের দেড়শ বছর আগে শাহ ওলিউল্লাহ দেহলবি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইসলামের যুগোপযোগী রাজনৈতিক ব্যাখ্যা, অর্থনৈতিক সাম্যতা, সমাজব্যবস্থা ও সভ্যতার মূলনীতি তার কিতাবে বাৎলে গেছেন—যা একটি পতনোন্মুখ রাজত্বকে উঠে দাঁড়াবার এবং দুনিয়ার সমস্ত মানুষের মুক্তির জামিন হবার জন্য যথেষ্ট ছিল।
দুঃখের বিষয় হলো সংবাদমাধ্যম আর বুদ্ধিজীবীকূল কেবল মার্কস ও ফরাসি বিপ্লবের গৌরবগাথা বয়ান করে। যদি শাহ সাহেবের চিন্তাধারারও সেভাবে প্রচার-প্রসার হতো, তাহলে হয়তো আজকে পৃথিবীর ইতিহাস ভিন্নভাবে লিখতে হতো। (শুউর ও আগাহি, মাকালা ১৮, পৃষ্ঠা ৩১৪)
প্রকৃতপক্ষে অর্থনৈতিক ন্যায্যতার আন্দোলন মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের মৌলিক অংশ। এ বিষয়ে আল্লাহ ও তার রসুলের (স) পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে, যা কোনো মুসলমানের এড়িয়ে যাবার উপায় নেই।
শ্রমিকের পাওনা প্রসঙ্গে আল্লাহর রসুল (স) বলেন, ‘শ্রমিকেরা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার ভাইকে তার অধীনস্থ করেছেন সে যেন তাকে তা-ই খাওয়ায় যা সে খায়, সেই কাপড় পরিধান করায়, যা সে পরিধান করে। তাকে সামর্থ্যের অধিক কোনো কাজের দায়িত্ব দেবে না। যদি এমনটা করতেই হয়, তাহলে মালিক যেন তাকে সাহায্য করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৬১৭ )
শ্রমিককে যদি ঠিকঠাকমতো পাওনা না দেওয়া হয়, তার পরিণতি কী হতে পারে, আল্লাহর রসুল (স) সেই সতর্কবাণীও দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘যে জাতির দুর্বল লোকেরা জোর-জবরদস্তি ছাড়া তাদের পাওনা আদায় করতে পারে না, সেই জাতি কখনো পবিত্র হতে পারে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৪২৬)
সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগীরের ইন্তেকালের পরে, শাহ সাহেব চোখের সামনে মোগল সালতানাতের পতন দেখতে পাচ্ছিলেন। রাষ্ট্রব্যবস্থার মূলে যদিও ‘ইসলাম’ নাম ছিল, কিন্তু আদতে তা ছিল জুলুমশাহি। ওই সময়কালে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোরআন-সুন্নাহর কোনো বিধানই যথাযথ অনুসৃত হতো না।
সাধারণ জনতার সিংহভাগ ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে, এবং নির্যাতিত ও নিপীড়িত; অন্যদিকে তাদের শ্রমের ফসল গিয়ে জমা হতো ধনী ও শাসকশ্রেণির খাজাঞ্চিখানায়। তিনি দেখতে পেলেন অর্থনৈতিক অন্যায্যতা ধর্মের আকাশছোঁয়া দূর্গও ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। তাই অর্থনৈতিক ন্যায্যতার বিষয়ে জোর দিতে গিয়ে একে তিনি নবী-রসুলদের তালিমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ আখ্যায়িত করেন।
তিনি বলেন, ‘হজরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়তপ্রাপ্তির সময় পৃথিবীর অবস্থা ছিল এমন—মানুষ আরাম-আয়েশ, মৌজ-মাস্তি আর সীমাতিরিক্ত রাজকীয় ভোগবিলাসের রোগে আক্রান্ত। (যা রাষ্ট্র ও জাতির অর্থনৈতিক ভিত্তি ধ্বংস করে ফেলেছিল।)
এই রোগ পারস্য, রোম ও অন্যান্য সাম্রাজ্যে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। আল্লাহ তাআলা তখন তার রসুলের মনে এই বার্তা দিলেন—এই রোগের কেবল চিকিৎসা নয়, যেই বিষাক্ত জিনিস থেকে এর উৎপত্তি, তাকে সমূলে ধ্বংস করে ফেলো। আল্লাহর রসুল (স) সেই জিনিসগুলো নিয়ে চিন্তা-ফিকির করেন যেগুলোর কারণে এর জন্ম, তারপর এক এক করে চিহ্নিত করে সবগুলোকে নিষিদ্ধ করেন।’
এরপর শাহ সাহেব উপমহাদেশের অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়ের দিকে ইশারা করে বলেন, ‘পারস্য ও রোম সাম্রাজ্যের ইতিহাস আমাদের জন্য সুস্পষ্ট উদাহরণ। যে পরিস্থিতি তোমরা তোমাদের দেশে কায়েম করেছো, তার পরিণতি পারস্য ও রোম থেকে আন্দাজ করে নাও।’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা, ষষ্ঠ অধ্যায়, বাবু ইকামাতিল ইরতিফাকাত ও ইসলাহির রুসুম)
শুধু সতর্ক করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, তিনি শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে ‘ফুক্কা কুল্লে নেজাম’ প্রোগ্রাম শুরু করেন এবং আশু সমস্যার সমাধানে কিছু মূলনীতি তৈরি করেন:
এক. সম্পদের মূল হলো শ্রম।
কৃষক ও শ্রমিকের মূলধন হলো শ্রমশক্তি, আর অর্থের সাথে সেই শ্রমশক্তির পারস্পরিক বিনিময় হলো নগরসভ্যতার মূল উপাদান। যতক্ষণ মানুষ রাষ্ট্র ও জাতির জন্য কাজ করবে না, রাষ্ট্রের সম্পদে তার কোনো হিস্যা নাই।
দুই. সমাজ থেকে জুয়া, জালিয়াতি ও ভোগবাদ নির্মূল করতে করতে হবে। কারণ এসব জিনিস সমাজে সম্পদের যথাযথ বণ্টনে বাধাগ্রস্ত করে। শ্রমিকের কষ্টের কামাই তখন গুটিকয়েক পুঁজিপতির পকেটে গিয়ে জমা হয়।
তিন. যেসব কৃষক ও শ্রমিক কায়িকশ্রম দেন এবং জাতির উন্নয়নে যারা মেধাশ্রম দেন—রাষ্ট্রীয় সম্পদের প্রকৃত হকদার তারাই। যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় শ্রমশক্তিকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না, ওই রাষ্ট্রের কোনো ভবিষ্যৎ নাই।
চার. যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় শ্রমিককে যথাযথ শ্রমমূল্য দেওয়া হয় না এবং কৃষক-শ্রমিকের ওপর অতিরিক্ত খাজনা/আয়কর আরোপ করা হয়—এমন রাষ্ট্রের সরকার জনতার দুশমন, তার ভাঙ্গন অনিবার্য।
পাঁচ. মজুরির প্রশ্নে কেবল শ্রমিকের ‘হাসিমুখ’ গ্রহণযোগ্য নয়, বরং তার মজুরির সাথে ব্যবসায়িক মুনাফাও যোগ করা হবে।
ছয়. কাজের সময় নির্ধারিত হবে। শ্রমিকরা যেন আত্মিক ও মানসিক বিকাশের সময় পায় এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে যেন চিন্তা করতে পারে—এই পরিমাণ সময় দিতে হবে।(শুউর ও আগাহি, মাকালা ১৮, পৃষ্ঠা ৩১৯)
সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বিপরীতে বেতন ও জীবনের মান কমে যাওয়ার প্রসঙ্গ উঠেছে। শ্রমিকের অধিকার প্রসঙ্গে একটি হাদিস বহুল প্রচলিত—‘তোমরা শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে তার মজুরি দিয়ে দাও। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৪৪৩)
অনেক প্রতিষ্ঠানই যথাসময়ে বেতন/মজুরি দিয়ে দেয়, কিন্তু তার পরিমাণ কম হওয়ায় শ্রমিকেরা মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হন। এখন প্রশ্ন হলো বেতন একটা নির্ধারণ করলেই কি সেটা ইনসাফ হয়ে যায়?
শাহ সাহেবের প্রস্তাবনা হলো বেতন/মজুরির প্রশ্নে কেবল ‘হাসিমুখ’ গ্রহণযোগ্য নয়, তাদেরকে মুনাফা থেকেও বড় অঙ্কের পার্সেন্টিজ দিতে হবে।
কোরআনে আছে—‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের আদেশ করছেন ইনসাফ ও ইহসান কায়েম করতে।’ (সুরা নাহল, আয়াত ৯০)
এই আদেশের দাবি হলো শ্রমিকের ন্যায্য পাওনার ইস্যুতে আমাদের আওয়াজ তোলা, এবং শাহ সাহেবের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে অংশ নেওয়া।
অন্যথায় কোরআনে না-ইনসাফির কারণে আল্লাহর রোষানলে পড়ার যে ধমক দেওয়া হয়েছে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে জুলুম করি বা না করি, সামগ্রিকভাবে আসা আজাব থেকে আমরা নিজেদের রক্ষা পারব না। (সুরা আনফাল, আয়াত ২৫)
ইসলামে শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা
মওলবি আশরাফ
০৬ জুন ২০২৩, ২২:২৭:২০ | অনলাইন সংস্করণ
তুর্কি দার্শনিক বদিউজ্জামান সাইদ নুরসি বলেন, ‘যখন রাষ্ট্রে আইনকানুন ও নীতিনৈতিকতার বালাই না থাকে, মানুষ তখন সামাজিক জীবনে ধর্মের প্রতি ভরসা হারিয়ে ফেলে।’
ইসলাম যেহেতু ভরসার কেন্দ্র ও সব সময় প্রাসঙ্গিক, তাই কেবল পয়লা মে নয়, বছরের প্রত্যেকদিনই শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
মানুষের ইতিহাসে চারটা যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে—আদি যুগ, যাযাবরী যুগ, রাজ-রাজড়া ও দাসত্বের যুগ, সর্বশেষে সামন্তবাদী যুগ। উনিশ শতক থেকে মানুষ নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে, একে বলা হয় শ্রমিকের যুগ।
কিন্তু এই যুগেও ছেয়ে আছে ভয়াবহ অবিচার আর অন্যায্যতা। হয়তো এরপর মানুষ নতুন এক যুগে প্রবেশ করবে, কিন্তু বসে বসে তো আর নিজেদের ধ্বংস দেখা যায় না, তাই সমাধানকল্পে এগিয়ে না আসার উপায় নাই।
আঠারো শতকের প্রথমার্ধেই, তখনও শ্রমিকের যুগ শুরু হয়নি, শাহ ওলিউল্লাহ দেহলবি (১৭০৩-১৭৬২) ভবিষ্যৎ আন্দাজ করে কিছু প্রস্তাবনা হাজির করেছিলেন।
তার মতে দুই-দুইটা ক্ষেত্রে যদি আমরা কাজ করি, তাহলে মানবজাতি এই ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকে রেহাই পাবে-
এক. কোরআনকে কার্যত বাস্তবায়ন করা। দুই. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা।
আদতে এই দুটো সমাধান ছিল বান্দাকে শিখিয়ে দেওয়া আল্লাহর দোয়া—‘রব্বানা আ-তিনা ফিদ দুনিয়া হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ’ -এর তফসির।
এই আয়াত অনুসারে আখেরাতে কল্যাণ পেতে হলে আমাদের একমাত্র লা-শরিক আল্লাহর এবাদত, আর দুনিয়াতে তা পেতে হলে কায়েম করতে হবে আল্লাহর নির্দেশমাফিক সমাজ।
উভয় জাহানে কল্যাণলাভের জন্য শাহ সাহেব চারটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য অর্জনের শর্ত দিয়েছেন:
ক. তহারাত বা মনোদৈহিক পবিত্রতা।
খ. ইখবাত বা পরমসত্তার সাথে মিলনের জযবা।
গ. সামাহাত বা প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রিত রাখবার শক্তিমত্তা।
ঘ. আদালাত বা ইনসাফ কায়েম করা।
এই চার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সর্বপ্রধান বা কেন্দ্র হলো ‘ইনসাফ কায়েম করা।’ কোনো সমাজে ততক্ষণ পর্যন্ত ইনসাফ কায়েম করা সম্ভব নয়, যতক্ষণ না শ্রমিকের উপর শ্রমমূল্যের চেয়ে বেশি শ্রম চাপিয়ে দেওয়ার নিয়ম ভেঙে খানখান করা হয়। (শুউর ও আগাহি, মাকালা ৮, পৃষ্ঠা ১৫৮)
ওলিউল্লাহি আন্দোলনের অন্যতম রাহবার মওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধি বলেন, শাহ সাহেব তার দর্শনে মানব সংক্রান্ত আলোচনায় মন প্রাণ ও মস্তিষ্কের সাথে অঙ্গপ্রত্যঙ্গও (পেট ও যৌনাঙ্গ) যুক্ত করেছেন, এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে জীবনের বনিয়াদ আখ্যা দিয়ে তিনি দর্শনশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধান দিয়েছেন।
সাধারণত অধিবিদ্যা ও দর্শনের আলোচনা শুরু হয় বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্র থেকে, যদিও মানুষের জীবনযাপনে অর্থনীতির ক্ষেত্রকে গুরুত্বের সাথে দেখা হয়, কিন্তু উচ্চতর ভাবনার জগতে অর্থনীতির অনুপ্রবেশকে মোটেও স্বাগত জানানো হয় না।
মানুষের জীবনকে এরকম ‘মস্তিষ্ককেন্দ্রিক’ দেখার ফলে আমাদের রাজনীতি আজ অন্তসারশূন্য। যারা রাজনীতির নাগাল থেকে শত হাত দূরে গিয়ে জ্ঞানচর্চা করেন, আমাদের দেশে সাধারণত তাদেরকেই পণ্ডিত ভাবা হয়, এবং তাদের অরাজনৈতিক মনোভাবকে উচ্চতর গুণ ভাবা হয়।
এ ধরনের পণ্ডিতদের দৃষ্টিতে রাজনীতি, অর্থাৎ যেসব জিনিসের সাথে আমজনতার জীবনের প্রাত্যহিক কাজকর্ম জুড়ে আছে, তা ‘ছোটখাটো’ ও ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’ জিনিস। এর বিপরীতে শাহ সাহেব এই দিকটায় সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন।
তার মতে মানুষের আত্মিক ও মানসিক বিকাশের প্রায় সবটাই নির্ভর করে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার ওপর।
তিনি বলেন,‘মানুষের স্বাভাবিক জীবনের সব ছন্দ ওই সময় বরবাদ হয়ে যায়, যখন কোনো জালেম অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্যতা সৃষ্টি করে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তোলে, আর মানুষ গরু-গাধার মতো স্রেফ দুই লুকমা খাবারের জন্য সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খাটে।...’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা, ষষ্ঠ অধ্যায়, আস সিয়াসাতুল মিল্লিয়াহ)
যদি মানুষের জীবনকে পেট ও পিঠের প্রয়োজন থেকে শুরু করে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ পর্যন্ত একই ধারা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়, তখন যেই দর্শন তৈরি হবে তাকে ‘পরিপূর্ণ’ বলা সম্ভব। ...যখন মানুষ জৈবিক চাহিদা থেকে নিশ্চিন্ত হবে, তার কাছে ভাত-কাপড়ের ফিকির করার বাইরেও সময় থাকবে, তখনই গিয়ে মাস্তিষ্কিক কাজে মনোনিবেশ করার ফুরসত পাবে।...
মানুষ যখন অর্থনৈতিক অন্যায্যতার ভারে অসহায় হয়ে পড়ে, তখন আল্লাহ তাআলা নবী-রসুলদের ওহির মাধ্যমে, কখনো-বা প্রিয় বান্দা ও দার্শনিকদের মনে ইলহাম (বার্তা) পাঠিয়ে, সেখান থেকে মানুষদের উদ্ধার করেন। তারপর যখন অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে কদম ফেলার সুযোগ পায়, এভাবে একে-একে উন্নতির পর্যায় অতিক্রম করে। (শুউর ও আগাহি, মাকালা ১৯, পৃষ্ঠা ৩৪০)
বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক মুক্তির আন্দোলনকে কার্ল মার্কসের একার সম্পত্তি বানিয়ে ফেলা হয়েছে, কোনো মুসলিম এবিষয়ে কথা বললে আকারে-ইঙ্গিতে মার্কসবাদী কিংবা বামঘেঁষা ঠাওরানো হয়।
মওলানা সিন্ধি আফসোস করে বলতেন, ভাবতেও কষ্ট লাগে যে, ফরাসি বিপ্লবের অর্ধশতক আগে এবং রুশ বিপ্লবের দেড়শ বছর আগে শাহ ওলিউল্লাহ দেহলবি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইসলামের যুগোপযোগী রাজনৈতিক ব্যাখ্যা, অর্থনৈতিক সাম্যতা, সমাজব্যবস্থা ও সভ্যতার মূলনীতি তার কিতাবে বাৎলে গেছেন—যা একটি পতনোন্মুখ রাজত্বকে উঠে দাঁড়াবার এবং দুনিয়ার সমস্ত মানুষের মুক্তির জামিন হবার জন্য যথেষ্ট ছিল।
দুঃখের বিষয় হলো সংবাদমাধ্যম আর বুদ্ধিজীবীকূল কেবল মার্কস ও ফরাসি বিপ্লবের গৌরবগাথা বয়ান করে। যদি শাহ সাহেবের চিন্তাধারারও সেভাবে প্রচার-প্রসার হতো, তাহলে হয়তো আজকে পৃথিবীর ইতিহাস ভিন্নভাবে লিখতে হতো। (শুউর ও আগাহি, মাকালা ১৮, পৃষ্ঠা ৩১৪)
প্রকৃতপক্ষে অর্থনৈতিক ন্যায্যতার আন্দোলন মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের মৌলিক অংশ। এ বিষয়ে আল্লাহ ও তার রসুলের (স) পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে, যা কোনো মুসলমানের এড়িয়ে যাবার উপায় নেই।
শ্রমিকের পাওনা প্রসঙ্গে আল্লাহর রসুল (স) বলেন, ‘শ্রমিকেরা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার ভাইকে তার অধীনস্থ করেছেন সে যেন তাকে তা-ই খাওয়ায় যা সে খায়, সেই কাপড় পরিধান করায়, যা সে পরিধান করে। তাকে সামর্থ্যের অধিক কোনো কাজের দায়িত্ব দেবে না। যদি এমনটা করতেই হয়, তাহলে মালিক যেন তাকে সাহায্য করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৬১৭ )
শ্রমিককে যদি ঠিকঠাকমতো পাওনা না দেওয়া হয়, তার পরিণতি কী হতে পারে, আল্লাহর রসুল (স) সেই সতর্কবাণীও দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘যে জাতির দুর্বল লোকেরা জোর-জবরদস্তি ছাড়া তাদের পাওনা আদায় করতে পারে না, সেই জাতি কখনো পবিত্র হতে পারে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৪২৬)
সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগীরের ইন্তেকালের পরে, শাহ সাহেব চোখের সামনে মোগল সালতানাতের পতন দেখতে পাচ্ছিলেন। রাষ্ট্রব্যবস্থার মূলে যদিও ‘ইসলাম’ নাম ছিল, কিন্তু আদতে তা ছিল জুলুমশাহি। ওই সময়কালে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোরআন-সুন্নাহর কোনো বিধানই যথাযথ অনুসৃত হতো না।
সাধারণ জনতার সিংহভাগ ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে, এবং নির্যাতিত ও নিপীড়িত; অন্যদিকে তাদের শ্রমের ফসল গিয়ে জমা হতো ধনী ও শাসকশ্রেণির খাজাঞ্চিখানায়। তিনি দেখতে পেলেন অর্থনৈতিক অন্যায্যতা ধর্মের আকাশছোঁয়া দূর্গও ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। তাই অর্থনৈতিক ন্যায্যতার বিষয়ে জোর দিতে গিয়ে একে তিনি নবী-রসুলদের তালিমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ আখ্যায়িত করেন।
তিনি বলেন,‘হজরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়তপ্রাপ্তির সময় পৃথিবীর অবস্থা ছিল এমন—মানুষ আরাম-আয়েশ, মৌজ-মাস্তি আর সীমাতিরিক্ত রাজকীয় ভোগবিলাসের রোগে আক্রান্ত। (যা রাষ্ট্র ও জাতির অর্থনৈতিক ভিত্তি ধ্বংস করে ফেলেছিল।)
এই রোগ পারস্য, রোম ও অন্যান্য সাম্রাজ্যে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। আল্লাহ তাআলা তখন তার রসুলের মনে এই বার্তা দিলেন—এই রোগের কেবল চিকিৎসা নয়, যেই বিষাক্ত জিনিস থেকে এর উৎপত্তি, তাকে সমূলে ধ্বংস করে ফেলো। আল্লাহর রসুল (স) সেই জিনিসগুলো নিয়ে চিন্তা-ফিকির করেন যেগুলোর কারণে এর জন্ম, তারপর এক এক করে চিহ্নিত করে সবগুলোকে নিষিদ্ধ করেন।’
এরপর শাহ সাহেব উপমহাদেশের অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়ের দিকে ইশারা করে বলেন, ‘পারস্য ও রোম সাম্রাজ্যের ইতিহাস আমাদের জন্য সুস্পষ্ট উদাহরণ। যে পরিস্থিতি তোমরা তোমাদের দেশে কায়েম করেছো, তার পরিণতি পারস্য ও রোম থেকে আন্দাজ করে নাও।’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা, ষষ্ঠ অধ্যায়, বাবু ইকামাতিল ইরতিফাকাত ও ইসলাহির রুসুম)
শুধু সতর্ক করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, তিনি শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে ‘ফুক্কা কুল্লে নেজাম’ প্রোগ্রাম শুরু করেন এবং আশু সমস্যার সমাধানে কিছু মূলনীতি তৈরি করেন:
এক. সম্পদের মূল হলো শ্রম।
কৃষক ও শ্রমিকের মূলধন হলো শ্রমশক্তি, আর অর্থের সাথে সেই শ্রমশক্তির পারস্পরিক বিনিময় হলো নগরসভ্যতার মূল উপাদান। যতক্ষণ মানুষ রাষ্ট্র ও জাতির জন্য কাজ করবে না, রাষ্ট্রের সম্পদে তার কোনো হিস্যা নাই।
দুই. সমাজ থেকে জুয়া, জালিয়াতি ও ভোগবাদ নির্মূল করতে করতে হবে। কারণ এসব জিনিস সমাজে সম্পদের যথাযথ বণ্টনে বাধাগ্রস্ত করে। শ্রমিকের কষ্টের কামাই তখন গুটিকয়েক পুঁজিপতির পকেটে গিয়ে জমা হয়।
তিন. যেসব কৃষক ও শ্রমিক কায়িকশ্রম দেন এবং জাতির উন্নয়নে যারা মেধাশ্রম দেন—রাষ্ট্রীয় সম্পদের প্রকৃত হকদার তারাই। যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় শ্রমশক্তিকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না, ওই রাষ্ট্রের কোনো ভবিষ্যৎ নাই।
চার. যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় শ্রমিককে যথাযথ শ্রমমূল্য দেওয়া হয় না এবং কৃষক-শ্রমিকের ওপর অতিরিক্ত খাজনা/আয়কর আরোপ করা হয়—এমন রাষ্ট্রের সরকার জনতার দুশমন, তার ভাঙ্গন অনিবার্য।
পাঁচ. মজুরির প্রশ্নে কেবল শ্রমিকের ‘হাসিমুখ’ গ্রহণযোগ্য নয়, বরং তার মজুরির সাথে ব্যবসায়িক মুনাফাও যোগ করা হবে।
ছয়. কাজের সময় নির্ধারিত হবে। শ্রমিকরা যেন আত্মিক ও মানসিক বিকাশের সময় পায় এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে যেন চিন্তা করতে পারে—এই পরিমাণ সময় দিতে হবে।(শুউর ও আগাহি, মাকালা ১৮, পৃষ্ঠা ৩১৯)
সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বিপরীতে বেতন ও জীবনের মান কমে যাওয়ার প্রসঙ্গ উঠেছে। শ্রমিকের অধিকার প্রসঙ্গে একটি হাদিস বহুল প্রচলিত—‘তোমরা শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে তার মজুরি দিয়ে দাও। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৪৪৩)
অনেক প্রতিষ্ঠানই যথাসময়ে বেতন/মজুরি দিয়ে দেয়, কিন্তু তার পরিমাণ কম হওয়ায় শ্রমিকেরা মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হন। এখন প্রশ্ন হলো বেতন একটা নির্ধারণ করলেই কি সেটা ইনসাফ হয়ে যায়?
শাহ সাহেবের প্রস্তাবনা হলো বেতন/মজুরির প্রশ্নে কেবল ‘হাসিমুখ’ গ্রহণযোগ্য নয়, তাদেরকে মুনাফা থেকেও বড় অঙ্কের পার্সেন্টিজ দিতে হবে।
কোরআনে আছে—‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের আদেশ করছেন ইনসাফ ও ইহসান কায়েম করতে।’ (সুরা নাহল, আয়াত ৯০)
এই আদেশের দাবি হলো শ্রমিকের ন্যায্য পাওনার ইস্যুতে আমাদের আওয়াজ তোলা, এবং শাহ সাহেবের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে অংশ নেওয়া।
অন্যথায় কোরআনে না-ইনসাফির কারণে আল্লাহর রোষানলে পড়ার যে ধমক দেওয়া হয়েছে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে জুলুম করি বা না করি, সামগ্রিকভাবে আসা আজাব থেকে আমরা নিজেদের রক্ষা পারব না। (সুরা আনফাল, আয়াত ২৫)
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023