তাহাজ্জুদের নামাজ বান্দাকে আল্লাহর প্রিয় করে তোলে

তানবির শেখ
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাসূল (সা.) তাহাজ্জুদের সালাত সম্পর্কে বলেছেন, ফরজ সালাতগুলোর পর সবচেয়ে উত্তম সালাত হলো রাতের সালাত বা তাহাজ্জুদ সালাত। (সহিহ মুসলিম ৭৩৭)। নবিজি (সা.) নিয়মিত তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতেন। তাহাজ্জুদ অর্থ ক্লেষ-কষ্ট, শ্রম-পরিশ্রম।
রাতে ঘুমানোর পর মধ্য রাতে অর্থাৎ রাতের দুই-তৃতীয়াংশে শয্যা ত্যাগ করার নাম তাহাজ্জুদ। মহান আল্লাহ প্রতি রাতের দুই-তৃতীয়াংশে আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার প্রথম আসমানে নেমে আসেন বান্দার ফরিয়াদ শোনার জন্য। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য; আশা করা যায় তোমার রব তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সূরা বনি ইসরাইল-৭৯)।
রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের সময়। সেহরির সময় শেষ হলে তাহাজ্জুদের ওয়াক্তও শেষ হয়ে যায়। রাসূল (সা.)-এর সময় তাহাজ্জুদের জন্য আলাদা আজান দেওয়া হতো। এখনো মক্কা ও মদিনা শরিফে এ নীতি প্রচলিত আছে।
তাহাজ্জুদ একাকী পড়াই উত্তম। কারণ অনেক মুহাজিদ ফিকহরা জামাতে তাহাজ্জুদ পড়াকে মাকরুহ বলেছেন। তাই অন্যসব সুন্নত ও নফল সালাতের মতো তাহাজ্জুদ সালাতেও সূরা কেরাত নিুস্বরে পড়তে হয় এবং এর জন্য ইকামাতের প্রয়োজন হয় না।
স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে তাহাজ্জুদ সালাতের জন্য ডেকে তোলা সুন্নাত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ্ সেই স্ত্রীর প্রতি রহমত করেছেন, যে নিজে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং তার স্বামীকে জাগায়। যদি সে উঠতে অস্বীকার করে, তবে যেন তার মুখমণ্ডলে পানির ছিটা দেয়। (আবু দাউদ, ১৩৩৬)। রাসূল (সা.) তাহাজ্জুদ সালাতের মাধ্যমে গভীর ধ্যানে নিমজ্জিত হতেন। এমনকি নিজের শরীরের প্রতিও কোনো ভ্রুক্ষেপ থাকতেন না।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) রাতে সালাত আদায় করতেন; এমনকি তার পা ফুলে যেত। আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এত কষ্ট করেন কেন? অথচ আল্লাহ্ আপনার আগের ও পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি কী কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? তার মেদ বর্ধিত হলে তিনি বসে সালাত আদায় করতেন। যখন রুকু করার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে কিরাত পড়তেন, তারপর রুকু করতেন। (সহিহ বুখারি ৪৮৩৭)।
তাহাজ্জুদের প্রতি হজরত রাসূল (সা.)-এর তীব্র আকর্ষণ বিবৃত হয়েছে পবিত্র কুরআনেও। রাসূল (সা.) সারা রাত তাহাজ্জুদে কাটিয়ে দিতেন। তাই আল্লাহতায়ালা পরম মমতায় কুরআনে বলেছেন, হে বস্ত্রাবৃত! রাত জাগরণ কর কিছু অংশ ব্যতীত। অর্ধ রাত কিংবা তদপেক্ষা কিছু কম। অথবা তদপেক্ষা বেশি। আর কুরআন আবৃত্তি কর ধীরে ধীরে স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে। আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী। নিশ্চয়ই রাতে জাগরণ ইবাদতের জন্য গভীর মনোনিবেশ, হৃদয়সঙ্গম এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। দিনে তোমাদের জন্য রয়েছে কর্মব্যস্ততা। (সূরা মুযযাম্মিল : ১-৭)।
হজরত আলি ইবনে আবি তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, এক রাতে রাসূল (সা.) তার ও ফাতেমার ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাদের ডেকে বলেন, তোমরা নামাজ পড়বে না। রাসূল (সা.) শুধু পরিবারকেই উদ্বুদ্ধ করতেন না; বরং তার সাহাবিদেরও তাহাজ্জুদ আদায়ে উদ্বুদ্ধ করতেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে তাহাজ্জুদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। তবে তিনি আবশ্য পালনীয় বিষয় হিসাবে নির্দেশ দেননি। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইমান ও নিষ্ঠার সঙ্গে রমজানে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করবে, আল্লাহতায়ালা তার পূর্ববর্তী পাপ মার্জনা করবেন। (সুনানে নাসায়ি ২১৯৭)।
তাহাজ্জুদ দুই দুই করে চার রাকাত, আট রাকাত, বারো রাকাত এভাবে কম বা বেশিও পড়া যায়। তাহাজ্জুদ সালাতের রুকু সিজদাহ্ লম্বা করা সুন্নত। হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) তাহাজ্জুদ সালাতে এক একটি সিজদা এত পরিমাণ করতেন যে, কেউ (সিজদা হতে) তার মাথা তোলার আগে পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত করতে পারত। (সহিহ বুখারি-১১২৩)।