ঘুরে আসুন সবুজে মোড়ানো মাধবপুর লেক
সুনীল আকাশ, গাঢ় সবুজ পাহাড়, শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো মনোরম চা বাগানের দৃশ্যে আমরা হারিয়ে গেলাম আপনমনে। চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত লেকটি সত্যি অপূর্ব।
লেকের ঝলমল পানি, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা-শালুকের উপস্থিতি আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে পরিবেশ। ও বলাই হল না আমরা আছি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত মাধবপুর লেকে।
সেই সকালবেলা রওনা হয়েছিলাম। আমার সঙ্গে আছে সব্যসাচী গুপ্ত আর সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রণব স্যার। আমরা গাড়ি থেকে নেমে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম।
মূল গেট পাড়ি দেয়ার আগে দেখা হল ভাইয়ের ছোটবেলার বন্ধুর সঙ্গে। আমাদের পরিবারের পূর্ববর্তী প্রজন্মের বাস এই চা বাগানেই ছিল। শ্রীমঙ্গলের চা না খাইয়ে ছাড়তে রাজিই নন তিনি। অগত্যা তার আমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম আর যাত্রাপথের ক্লান্তি দূর করতে এক কাপ চা-ই যথেষ্ট।
আপ্যায়ন শেষে আমরা এগিয়ে গেলাম লেকের দিকে। দূর থেকে সামনে তাকিয়ে স্রেফ উঁচু একটা বাঁধ দেখতে পাচ্ছিলাম, আর কিছু না। কিন্তু বাঁধের ওপর উঠার পর সম্পূর্ণ দৃশ্যপটই যেন পাল্টে গেল। দৃশ্যপটে ভেসে উঠল উঁচু-নিচু পাহাড়-উপত্যকার মধ্যে ছবির মতো সুন্দর মাধবপুর লেক।
অসংখ্য পাহাড় সারির মধ্যে স্ফটিকস্বচ্ছ নীল জল দৃষ্টির পরিধি নিয়ে গেল অনেক দূর। শান্ত-স্নিগ্ধ দুপুরে পাখ-পাখালির কিচিরমিচির নীরবতার মধ্যে সুরের আল্পনা এঁকে দিচ্ছিল। সঙ্গে হালকা ফুরফুরে বাতাস সব মিলিয়ে অপূর্ব।
ছবির মতো সুন্দর সারি সারি চা গাছ বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে উঁচু উঁচু টিলা, গাঢ় সবুজ পাহাড় আর মাথার ওপর সুনীল আকাশ।
লেকের স্বচ্ছ নীলাভ জলে আকাশের প্রতিবিম্ব আর ফুটে থাকা অসংখ্য শাপলা শালুকের অলঙ্করণ যেন শিল্পীর কল্পনার রঙে আঁকা কোনো নিখুঁত ছবি।
চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত লেকটি তার অপূর্ব রূপের মায়া ছড়িয়ে বসে আছে চুপচাপ। সবুজ পাতার সতেজ গন্ধ আর চা বাগানের মনোরম দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের আনমনে নিয়ে যায় এক ভিন্ন জগতে। মাধবপুর লেকটি যেন প্রকৃতির আপন খেয়ালে গড়া এক নৈসর্গিক সৃষ্টি।
আমরা লেকের জলে হাত ভিজিয়ে নিলাম, অন্য রকম অনুভূতি। লেকের পাশেই আছে বসার জন্য ব্যবস্থা। আমরা না বসে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। টিলা বেয়ে ওপরের দিকে উঠতে লাগলাম। আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে আমরা ওপরের অংশে পৌঁছে গেলাম। ওপর থেকে লেকের দৃশ্য আরও সুন্দর লাগছিল।
লেকটি দেখে মনে হচ্ছিল যেন প্রকৃতির নিজ হাতে আঁকা মায়াবী নৈসর্গিক দৃশ্য। সুনীল আকাশ আর গাঢ় সবুজ পাহাড়, শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো চা বাগানের এই মনোরম দৃশ্য আকর্ষণ করে নিয়ে যাবে ভিন্ন জগতে।
এদিকে হঠাৎ চোখে পড়ল একদল বানর দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে এক গাছ থেকে অন্য গাছে মনের আনন্দে। কিছু দূর যাওয়ার পর আমাদের চোখের সামনে পুরো লেকটি আবির্ভূত হল। লেকের সৌন্দর্য আমাদের চোখে ধরা পড়ল অনেকটা স্বর্গীয় দৃশ্যের মতো। দৃষ্টি সীমানায় দেখা মিলবে বনের নীল রেখা।
অনেক দূরে গিয়ে নীল রেখা যেন ছুঁয়েছে আকাশের সীমা। মাধবপুর লেক যেন প্রকৃতির নিজ হাতে আঁকা মায়াবী নৈসর্গিক দৃশ্য।
অনন্য এই লেকে আপনি একসঙ্গে পাবেন জল-পাহাড়ের কাব্য, চির সতেজ চা বাগান আর বুনো নির্জনতার আদিম স্বাদ। প্রকৃতির এই অপূর্ব মেলবন্ধন আর অন্য কোথায় মিলবে না। টিলা বেয়ে সবাই বেশ ক্লান্ত এবার গলা ভেজানো দরকার, দেখা পেলাম শরবত বিক্রেতার। তিন গ্লাস শরবতের অর্ডার দেয়া হল। স্বল্প সময়ের মধ্যে আমাদের শরবত বানিয়ে দেয়া হল। আমাদের তৃষ্ণা মিটল।
ও বলাই হল না মাধবপুর চা বাগানকে পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষার জন্য ১৯৬৫ সালে তৎকালীন বাগান কর্তৃপক্ষ দুই সারি পাহাড়ের মধ্যে বাঁধ তৈরি করেছিল। এ বাঁধের জন্যই ছোট ছোট পাহাড় বা টিলাগুলোর পাদদেশে পানি জমে সৃষ্টি হয় মনোরম এই লেক।
স্থানীয়রা একে ‘ড্যাম’ হিসেবেই চেনে। মাধবপুর লেকের দৈর্ঘ্য আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার। লেকের পানিতে বেগুনি নীলাভ আভা ছড়িয়ে ফুটে আছে অসংখ্য শাপলা। বেগুনি-নীল রঙের এই শাপলার প্রাচুর্যের জন্য অনেকে এই লেককে ‘লেক অব দ্য লোটাস’ নামেও চেনে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে সরাসরি শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, এনা পরিবহন, সিলেট পরিবহন ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাস ছাড়ে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে। ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এছাড়া কমলাপুর স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ও উপবন এক্সপ্রেসে চড়েও যেতে পারেন শ্রীমঙ্গল।
ঘুরে আসুন সবুজে মোড়ানো মাধবপুর লেক
সুমন্ত গুপ্ত
২৫ জুন ২০১৯, ১৯:৪৯:১১ | অনলাইন সংস্করণ
সুনীল আকাশ, গাঢ় সবুজ পাহাড়, শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো মনোরম চা বাগানের দৃশ্যে আমরা হারিয়ে গেলাম আপনমনে। চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত লেকটি সত্যি অপূর্ব।
লেকের ঝলমল পানি, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা-শালুকের উপস্থিতি আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে পরিবেশ। ও বলাই হল না আমরা আছি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত মাধবপুর লেকে।
সেই সকালবেলা রওনা হয়েছিলাম। আমার সঙ্গে আছে সব্যসাচী গুপ্ত আর সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রণব স্যার। আমরা গাড়ি থেকে নেমে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম।
মূল গেট পাড়ি দেয়ার আগে দেখা হল ভাইয়ের ছোটবেলার বন্ধুর সঙ্গে। আমাদের পরিবারের পূর্ববর্তী প্রজন্মের বাস এই চা বাগানেই ছিল। শ্রীমঙ্গলের চা না খাইয়ে ছাড়তে রাজিই নন তিনি। অগত্যা তার আমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম আর যাত্রাপথের ক্লান্তি দূর করতে এক কাপ চা-ই যথেষ্ট।
আপ্যায়ন শেষে আমরা এগিয়ে গেলাম লেকের দিকে। দূর থেকে সামনে তাকিয়ে স্রেফ উঁচু একটা বাঁধ দেখতে পাচ্ছিলাম, আর কিছু না। কিন্তু বাঁধের ওপর উঠার পর সম্পূর্ণ দৃশ্যপটই যেন পাল্টে গেল। দৃশ্যপটে ভেসে উঠল উঁচু-নিচু পাহাড়-উপত্যকার মধ্যে ছবির মতো সুন্দর মাধবপুর লেক।
অসংখ্য পাহাড় সারির মধ্যে স্ফটিকস্বচ্ছ নীল জল দৃষ্টির পরিধি নিয়ে গেল অনেক দূর। শান্ত-স্নিগ্ধ দুপুরে পাখ-পাখালির কিচিরমিচির নীরবতার মধ্যে সুরের আল্পনা এঁকে দিচ্ছিল। সঙ্গে হালকা ফুরফুরে বাতাস সব মিলিয়ে অপূর্ব।
ছবির মতো সুন্দর সারি সারি চা গাছ বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে উঁচু উঁচু টিলা, গাঢ় সবুজ পাহাড় আর মাথার ওপর সুনীল আকাশ।
লেকের স্বচ্ছ নীলাভ জলে আকাশের প্রতিবিম্ব আর ফুটে থাকা অসংখ্য শাপলা শালুকের অলঙ্করণ যেন শিল্পীর কল্পনার রঙে আঁকা কোনো নিখুঁত ছবি।
চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত লেকটি তার অপূর্ব রূপের মায়া ছড়িয়ে বসে আছে চুপচাপ। সবুজ পাতার সতেজ গন্ধ আর চা বাগানের মনোরম দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের আনমনে নিয়ে যায় এক ভিন্ন জগতে। মাধবপুর লেকটি যেন প্রকৃতির আপন খেয়ালে গড়া এক নৈসর্গিক সৃষ্টি।
আমরা লেকের জলে হাত ভিজিয়ে নিলাম, অন্য রকম অনুভূতি। লেকের পাশেই আছে বসার জন্য ব্যবস্থা। আমরা না বসে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। টিলা বেয়ে ওপরের দিকে উঠতে লাগলাম। আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে আমরা ওপরের অংশে পৌঁছে গেলাম। ওপর থেকে লেকের দৃশ্য আরও সুন্দর লাগছিল।
লেকটি দেখে মনে হচ্ছিল যেন প্রকৃতির নিজ হাতে আঁকা মায়াবী নৈসর্গিক দৃশ্য। সুনীল আকাশ আর গাঢ় সবুজ পাহাড়, শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো চা বাগানের এই মনোরম দৃশ্য আকর্ষণ করে নিয়ে যাবে ভিন্ন জগতে।
এদিকে হঠাৎ চোখে পড়ল একদল বানর দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে এক গাছ থেকে অন্য গাছে মনের আনন্দে। কিছু দূর যাওয়ার পর আমাদের চোখের সামনে পুরো লেকটি আবির্ভূত হল। লেকের সৌন্দর্য আমাদের চোখে ধরা পড়ল অনেকটা স্বর্গীয় দৃশ্যের মতো। দৃষ্টি সীমানায় দেখা মিলবে বনের নীল রেখা।
অনেক দূরে গিয়ে নীল রেখা যেন ছুঁয়েছে আকাশের সীমা। মাধবপুর লেক যেন প্রকৃতির নিজ হাতে আঁকা মায়াবী নৈসর্গিক দৃশ্য।
অনন্য এই লেকে আপনি একসঙ্গে পাবেন জল-পাহাড়ের কাব্য, চির সতেজ চা বাগান আর বুনো নির্জনতার আদিম স্বাদ। প্রকৃতির এই অপূর্ব মেলবন্ধন আর অন্য কোথায় মিলবে না। টিলা বেয়ে সবাই বেশ ক্লান্ত এবার গলা ভেজানো দরকার, দেখা পেলাম শরবত বিক্রেতার। তিন গ্লাস শরবতের অর্ডার দেয়া হল। স্বল্প সময়ের মধ্যে আমাদের শরবত বানিয়ে দেয়া হল। আমাদের তৃষ্ণা মিটল।
ও বলাই হল না মাধবপুর চা বাগানকে পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষার জন্য ১৯৬৫ সালে তৎকালীন বাগান কর্তৃপক্ষ দুই সারি পাহাড়ের মধ্যে বাঁধ তৈরি করেছিল। এ বাঁধের জন্যই ছোট ছোট পাহাড় বা টিলাগুলোর পাদদেশে পানি জমে সৃষ্টি হয় মনোরম এই লেক।
স্থানীয়রা একে ‘ড্যাম’ হিসেবেই চেনে। মাধবপুর লেকের দৈর্ঘ্য আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার। লেকের পানিতে বেগুনি নীলাভ আভা ছড়িয়ে ফুটে আছে অসংখ্য শাপলা। বেগুনি-নীল রঙের এই শাপলার প্রাচুর্যের জন্য অনেকে এই লেককে ‘লেক অব দ্য লোটাস’ নামেও চেনে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে সরাসরি শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, এনা পরিবহন, সিলেট পরিবহন ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাস ছাড়ে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে। ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এছাড়া কমলাপুর স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ও উপবন এক্সপ্রেসে চড়েও যেতে পারেন শ্রীমঙ্গল।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023