যেভাবে ছাত্রদল নেতা থেকে হরকাতুল জিহাদে ইকবাল
যুগান্তর প্রতিবেদন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:২৫:৫১ | অনলাইন সংস্করণ
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত পলাতক আসামি ইকবাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেনেড হামলার ১৬ বছর এবং আদালতের রায়ের তিন বছর পর মঙ্গলবার ইকবালকে ঢাকার দিয়াবাড়ি থেকে গ্রেফতারের কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
গ্রেফতারের পর ইকবাল র্যাবকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। ১৬ বছর আগের ওই লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনায় ইকবাল জানান, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের নির্দেশে তিনি আওয়ামী লীগের সমাবেশ মঞ্চে সেদিন গ্রেনেড ছুড়েছিলেন।
র্যাব জানায়, ঝিনাইদহের ইকবাল একসময় ছাত্রদল করতেন। পরে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদে (হুজি) জড়িয়ে পড়েন। গ্রেনের হামলার পর ২০০৮ সালে তিনি বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ২০২০ সালের শেষ দিকে তিনি দেশে ফেরেন।
গ্রেফতার মো. ইকবাল হোসেন ওরফে ইকবাল ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিমের বাড়ি ঝিনাইদহে। তাকে গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার কারওয়ানবাজারে র্যাব সদর দপ্তরে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল স্বীকার করে নিয়েছে যে, মুফতি হান্নানের নির্দেশে সে মঞ্চের দিকে গ্রেনেড ছুড়েছিল।
ইকবাল র্যাবকে জানান, তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাস। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৪ সালে কেসি কলেজ, ঝিনাইদহে ছাত্র সংসদে ছাত্রদলের নির্বাচিত শ্রেণি প্রতিনিধি ছিলেন। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ছিলেন। দেশে ফিরে এসে তিনি আইএসডি ফোনসহ বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত হন। এ সময় তিনি সর্বহারা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন।
র্যাবের কাছে ইকবালের জবানবন্দির বরাত দিয়ে সংস্থাটির প্রধান বলেন, ২০০১ সালে তার চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আসে। তিনি হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হন। মুফতি হান্নানের সংস্পর্শে তিনি আসেন ২০০৩ সালে। তখন থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। মুফতি হান্নান ও হুজি–বির শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতার সংস্পর্শে এসেছেন তিনি। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন গোপন বৈঠকেও অংশ নেন। মুফতি হান্নানের নির্দেশেই তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অংশ নেন এবং মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়েন।
দেশে ফেরার পর ইকবালের জঙ্গি সংযোগের তথ্য দিয়ে র্যাবপ্রধান বলেন, ২০০৪ সালে হামলার আগেই ইকবাল ঢাকায় অবস্থান নিয়েছিল। আগস্টে মুফতি হান্নানের নির্দেশে সে ঢাকায় চলে আসে এবং গোপন আস্তানায় অবস্থান করতে থাকে। সেখানে মুফতি হান্নানসহ অন্যদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয় (তার)।
ইকবাল জবানবন্দির বরাত দিয়ে র্যাবপ্রধান বলেন, মুফতি হান্নানের নির্দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সরাসরি অংশ নেন। মুফতি হান্নান তাকে গ্রেনেড সরবরাহ করেছিল। ইকবাল মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়েছিল।
ঘটনার পর থেকে জঙ্গি ইকবালকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালায় বলে জানায় র্যাব। তিনি ঝিনাইদহ, গাজীপুর ও সাভারে নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, রিকশাচালকের ছদ্মবেশে দিন কাটান। ২০০৮ সালে দেশ ছেড়ে পালান।
র্যাবপ্রধান আল মামুন জানান, ২০০৮ সালে ইকবালকে গ্রেফতারের জন্য ঝিনাইদহে তার বাড়িতে এবং পরে গাজীপুর ও সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু ইকবাল আত্মগোপন করেন।
ইকবালের দেশত্যাগের তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ইকবাল ২০০৮ সালে দেশত্যাগ করে। প্রবাসে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় প্রথমে সেলিম এবং পরে জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করে। একপর্যায়ে ইকবাল প্রবাসে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হলে তাকে ২০২০ সালের শেষের দিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
যাবজ্জীবন দণ্ডিত ইকবাল কী করে দেশ ছাড়ল– এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবপ্রধান বলেন, ইকবাল যে সময় দেশ ছাড়ে, সেই সময় হাতে লেখা পাসপোর্টের চল ছিল। সে নাম পরিবর্তন করে অন্তত দুবার। তবে সে কীভাবে দেশ ছেড়েছে এবং কীভাবে ফিরেছে, সে সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। ইকবাল ‘সমমনা’দের সঙ্গে যোগাযোগেরও চেষ্টা করে। তবে সমমনা কারা, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেননি মহাপরিচালক।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
যেভাবে ছাত্রদল নেতা থেকে হরকাতুল জিহাদে ইকবাল
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত পলাতক আসামি ইকবাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেনেড হামলার ১৬ বছর এবং আদালতের রায়ের তিন বছর পর মঙ্গলবার ইকবালকে ঢাকার দিয়াবাড়ি থেকে গ্রেফতারের কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
গ্রেফতারের পর ইকবাল র্যাবকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। ১৬ বছর আগের ওই লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনায় ইকবাল জানান, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের নির্দেশে তিনি আওয়ামী লীগের সমাবেশ মঞ্চে সেদিন গ্রেনেড ছুড়েছিলেন।
র্যাব জানায়, ঝিনাইদহের ইকবাল একসময় ছাত্রদল করতেন। পরে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদে (হুজি) জড়িয়ে পড়েন। গ্রেনের হামলার পর ২০০৮ সালে তিনি বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ২০২০ সালের শেষ দিকে তিনি দেশে ফেরেন।
গ্রেফতার মো. ইকবাল হোসেন ওরফে ইকবাল ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিমের বাড়ি ঝিনাইদহে। তাকে গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার কারওয়ানবাজারে র্যাব সদর দপ্তরে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল স্বীকার করে নিয়েছে যে, মুফতি হান্নানের নির্দেশে সে মঞ্চের দিকে গ্রেনেড ছুড়েছিল।
ইকবাল র্যাবকে জানান, তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাস। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৪ সালে কেসি কলেজ, ঝিনাইদহে ছাত্র সংসদে ছাত্রদলের নির্বাচিত শ্রেণি প্রতিনিধি ছিলেন। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ছিলেন। দেশে ফিরে এসে তিনি আইএসডি ফোনসহ বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত হন। এ সময় তিনি সর্বহারা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন।
র্যাবের কাছে ইকবালের জবানবন্দির বরাত দিয়ে সংস্থাটির প্রধান বলেন, ২০০১ সালে তার চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আসে। তিনি হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হন। মুফতি হান্নানের সংস্পর্শে তিনি আসেন ২০০৩ সালে। তখন থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। মুফতি হান্নান ও হুজি–বির শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতার সংস্পর্শে এসেছেন তিনি। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন গোপন বৈঠকেও অংশ নেন। মুফতি হান্নানের নির্দেশেই তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অংশ নেন এবং মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়েন।
দেশে ফেরার পর ইকবালের জঙ্গি সংযোগের তথ্য দিয়ে র্যাবপ্রধান বলেন, ২০০৪ সালে হামলার আগেই ইকবাল ঢাকায় অবস্থান নিয়েছিল। আগস্টে মুফতি হান্নানের নির্দেশে সে ঢাকায় চলে আসে এবং গোপন আস্তানায় অবস্থান করতে থাকে। সেখানে মুফতি হান্নানসহ অন্যদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয় (তার)।
ইকবাল জবানবন্দির বরাত দিয়ে র্যাবপ্রধান বলেন, মুফতি হান্নানের নির্দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সরাসরি অংশ নেন। মুফতি হান্নান তাকে গ্রেনেড সরবরাহ করেছিল। ইকবাল মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়েছিল।
ঘটনার পর থেকে জঙ্গি ইকবালকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালায় বলে জানায় র্যাব। তিনি ঝিনাইদহ, গাজীপুর ও সাভারে নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, রিকশাচালকের ছদ্মবেশে দিন কাটান। ২০০৮ সালে দেশ ছেড়ে পালান।
র্যাবপ্রধান আল মামুন জানান, ২০০৮ সালে ইকবালকে গ্রেফতারের জন্য ঝিনাইদহে তার বাড়িতে এবং পরে গাজীপুর ও সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু ইকবাল আত্মগোপন করেন।
ইকবালের দেশত্যাগের তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ইকবাল ২০০৮ সালে দেশত্যাগ করে। প্রবাসে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় প্রথমে সেলিম এবং পরে জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করে। একপর্যায়ে ইকবাল প্রবাসে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হলে তাকে ২০২০ সালের শেষের দিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
যাবজ্জীবন দণ্ডিত ইকবাল কী করে দেশ ছাড়ল– এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবপ্রধান বলেন, ইকবাল যে সময় দেশ ছাড়ে, সেই সময় হাতে লেখা পাসপোর্টের চল ছিল। সে নাম পরিবর্তন করে অন্তত দুবার। তবে সে কীভাবে দেশ ছেড়েছে এবং কীভাবে ফিরেছে, সে সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। ইকবাল ‘সমমনা’দের সঙ্গে যোগাযোগেরও চেষ্টা করে। তবে সমমনা কারা, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেননি মহাপরিচালক।