হিফজখানায় কড়া শাসন, যা বলছেন মুফতি সাইফুল ইসলাম মাদানী
সাঈদ আল হাসান শিমুল
২৯ অক্টোবর ২০২২, ১৬:৫৭:২৬ | অনলাইন সংস্করণ
স্কুল কিংবা মাদ্রাসায় তথা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুর প্রতি শারীরিক নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা নতুন নয়। এসব অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে অনেকে কারাদণ্ড ভোগ করেছেন, এখনো অনেকে কারাবাসে আছেন। দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের শতাধিক মামলা তদন্ত ও বিচারাধীন রয়েছে।
গণমাধ্যমগুলোর আর্কাইভে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোমলমতিদের ওপর নির্যাতন নিয়ে বহু ঘটনার ভিডিও রেকর্ড ও প্রতিবেদন জমা আছে।
তবে সম্প্রতি বিভিন্ন হিফজখানায় শিক্ষার্থীদের প্রতি কড়া শাসন ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়টি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
আলোচিত ইসলামি বক্তামাওলানা রফিক উল্লাহ আফসারির একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে বেশ চর্চা শুরু হয়। ওই ভিডিও ক্লিপে আফসারি মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতনের বিষয়টিকে সামনে আনেন এবং শিক্ষকদের নির্যাতনে অনেক শিশু প্রতিবন্ধী হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন। তিনি অভিভাবকদের অনুরোধ করেন, কোনো শিশুকে বোর্ডিংয়ে (মাদ্রাসার আবাসনে) দেবেন না। শিশুরা মায়ের কাছ থেকে হিফজখানায় গিয়ে কুরআন শিখবে।
মাওলানা আফসারির এমন বক্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে, সত্যি কি হিফজখানায় অবুঝ শিশুরা এতটা নির্যাতিত হচ্ছে? এ বিষয়ে কী বলছেন আলেম সমাজ? গোটা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে রাজধানী ঢাকার চকবাজারের বড় কাটারা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি সাইফুল ইসলাম মাদানীর বক্তব্য নিয়েছে যুগান্তর।
বক্তব্যের শুরুতেই এই আলেম জানালেন, শিশুদের যেকোনো পাঠশালায় শাসনের নামে নির্যাতন ইসলামি শরীয়তে নিষিদ্ধ।
তাহলে হিফজুল কুরআন মাদ্রাসায় কেন শাসনে এতো কড়াকড়ি? শিশুরা কেন মারধর, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
জবাবে এ মাওলানার দাবি, এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এসব ঘটনাকে পুঁজি করে একটি শ্রেণি মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
সাইফুল ইসলাম মাদানী যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৩০ হাজার হিফজুল কুরআন মাদ্রাসার মধ্যে কোথাও কোথাওশাসনের কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা রয়েছে। যার কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল; কিন্তু এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ফরজে কেফায়া ইবাদতের ব্যাপারে মানুষকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ভুলে গেলে চলবে না ইসলামবিদ্বেষী পক্ষগুলো আন্তর্জাতিক মহলে হিফজুল কুরআনের ধারাবাহিক সাফল্য দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিভিন্নভাবে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে।
তবে কি মাদ্রাসায় কোমলমতিদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত শাসন হচ্ছে না? স্কুল-কিন্ডারগার্টেনে তো শাসনে এমন কড়াকড়ি দেখা যায় না।
এর জবাবে এই মাওলানা জানালেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়-কিন্ডারগার্টেনের পাঠদান ও শাসন ব্যবস্থার হিফজখানার তুলনা বোকামো ছাড়া আর কিছুই নয়।
তার ভাষ্যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মাত্র তিন থেকে চার ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে থাকেন। পক্ষান্তরে হিফজুল কুরআন মূলত একটি সাধনা। বাস্তবে হিফজুল কুরআনের আবাসিক শিক্ষকদের ক্যাডেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতো অবস্থা। ঘুমের সময়টাসহ ২৪ ঘন্টা খাওয়া-দাওয়া, গোসল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, ঘুম, খেলাধুলাসহ সবকিছু মাত্র একজন শিক্ষকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। তাই এসব শিক্ষকদের একইসাথে কখনো শিক্ষকের ভূমিকা, কখনো পাহারাদারের, কখনো মা-বাবার ভূমিকা পালন করতে হয়। এটা অবশ্যই বিবেচ্য, কোথায় ৩০-৪০ মিনিটের দায়িত্ব পালন আর কোথায় ২৪ ঘণ্টার ধারাবাহিক দায়িত্ব পালন! এ দুটোর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
আরও দুটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমতাবস্থায় একজন শিক্ষক যেখানে ১০-১২ জনের দায়িত্ব নেওয়া উচিত সেখানে অর্থের অভাবে আমরা ২০ থেকে ২৫ জন করে ছাত্র দিয়ে থাকি। আরেকটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। তা হলো, অধিকাংশ শিক্ষক মাদ্রাসার গরিব অসহায় এতিম শিক্ষার্থীদের লালন পালন, পড়ালেখার জন্য মানুষের কাছে সাহায্য সংগ্রহ করতে হয়। এসব বিচারে শিক্ষকদের মন-মেজাজ, দায়িত্ব-কর্তব্য স্কুল-কলেজ থেকে বিস্তর ফাঁরাক। যে কারণে শাসনে ভুলত্রুটি হতে পারে।
আবাসন ব্যবস্থায় না গিয়ে বাসা থেকে হিফজুল কুরআন শেখাতে অভিভাবকদের তাগিদ দিয়েছেন মাওলানাআফসারি।
এ বিষয়ে মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার শিক্ষা ও শিক্ষক জীবনের অভিজ্ঞতা বলছে, হিফজুল কুরআন পাঠদানের বেলায় আবাসিক সিস্টেমটাই সর্বোত্তম। কারণ বাসা থেকে এসে হাফেজ হওয়াদের তুলনায় আবাসিক পরিবেশের হাফেজরা দুর্দান্ত হয়। এ বিষয়ে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে ঢাকার বড় কাটারা মাদ্রাসা। হাফেজি হুজুর রহমাতুল্লাহ আলাইহি প্রবর্তিত ১৯৩১ সাল থেকে ঢাকার বড় কাটারা মাদ্রাসায় আবাসিক হিফজুল কুরআন চালু করা হয়। তিনি দীর্ঘ ৬০ বছরে পরিকল্পনা মোতাবেক বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে আবাসিক হিফজুল কুরআন গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
আলহামদুলিল্লাহ, তার সুফল এখন আমরা পাচ্ছি। হিফজুল কুরআন মাদ্রাসার কঠোর সাধনা যুক্ত পাঠ্যসূচির কারণেই বর্তমানে বাংলাদেশ গোটা মুসলিম বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হাফেজ তৈরি করছে বলে আন্তর্জাতিক প্রতিটি প্রতিযোগিতায় স্বীকৃতি পেয়েছে এবং পাচ্ছে।
এরপরও কোমলমতিদের পাঠদান ও শাসন প্রক্রিয়ায় কড়া নজরদারি থাকতে হবে বলে মনে করেন এই আলেম।
মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, শাসন করতে গিয়ে যেসব শিক্ষক সীমা অতিক্রম করে ফেলেন, ভুল করে থাকেন, তাদের অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। সাধারণ বিদ্যালয়ের তুলনায় হিফজুল কুরআন মাদ্রাসার রুটিনের পার্থক্যটি মাথায় রেখে আমাদের ভাবতে হবে, সংশোধনের পথ খুঁজতে হবে। অতএব ঢালাওভাবে সমালোচনা মোটেই সমীচীন নয়। এমন কোনো কথা যেন না বলা হয়, যা ইসলামের শত্রুদের হাতিয়ার হয়ে যায়। বিচ্ছিন্ন দোষ-ত্রুটিগুলোকে পাবলিক প্লেসে প্রকাশ করা না হয়, যাতে বাংলাদেশে লাখ লাখ হাফেজে কুরআন তৈরি হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
হিফজখানায় কড়া শাসন, যা বলছেন মুফতি সাইফুল ইসলাম মাদানী
স্কুল কিংবা মাদ্রাসায় তথা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুর প্রতি শারীরিক নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা নতুন নয়। এসব অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে অনেকে কারাদণ্ড ভোগ করেছেন, এখনো অনেকে কারাবাসে আছেন। দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের শতাধিক মামলা তদন্ত ও বিচারাধীন রয়েছে।
গণমাধ্যমগুলোর আর্কাইভে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোমলমতিদের ওপর নির্যাতন নিয়ে বহু ঘটনার ভিডিও রেকর্ড ও প্রতিবেদন জমা আছে।
তবে সম্প্রতি বিভিন্ন হিফজখানায় শিক্ষার্থীদের প্রতি কড়া শাসন ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়টি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
আলোচিত ইসলামি বক্তা মাওলানা রফিক উল্লাহ আফসারির একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে বেশ চর্চা শুরু হয়। ওই ভিডিও ক্লিপে আফসারি মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতনের বিষয়টিকে সামনে আনেন এবং শিক্ষকদের নির্যাতনে অনেক শিশু প্রতিবন্ধী হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন। তিনি অভিভাবকদের অনুরোধ করেন, কোনো শিশুকে বোর্ডিংয়ে (মাদ্রাসার আবাসনে) দেবেন না। শিশুরা মায়ের কাছ থেকে হিফজখানায় গিয়ে কুরআন শিখবে।
মাওলানা আফসারির এমন বক্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে, সত্যি কি হিফজখানায় অবুঝ শিশুরা এতটা নির্যাতিত হচ্ছে? এ বিষয়ে কী বলছেন আলেম সমাজ? গোটা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে রাজধানী ঢাকার চকবাজারের বড় কাটারা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি সাইফুল ইসলাম মাদানীর বক্তব্য নিয়েছে যুগান্তর।
বক্তব্যের শুরুতেই এই আলেম জানালেন, শিশুদের যেকোনো পাঠশালায় শাসনের নামে নির্যাতন ইসলামি শরীয়তে নিষিদ্ধ।
তাহলে হিফজুল কুরআন মাদ্রাসায় কেন শাসনে এতো কড়াকড়ি? শিশুরা কেন মারধর, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
জবাবে এ মাওলানার দাবি, এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এসব ঘটনাকে পুঁজি করে একটি শ্রেণি মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
সাইফুল ইসলাম মাদানী যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৩০ হাজার হিফজুল কুরআন মাদ্রাসার মধ্যে কোথাও কোথাও শাসনের কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা রয়েছে। যার কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল; কিন্তু এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ফরজে কেফায়া ইবাদতের ব্যাপারে মানুষকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ভুলে গেলে চলবে না ইসলামবিদ্বেষী পক্ষগুলো আন্তর্জাতিক মহলে হিফজুল কুরআনের ধারাবাহিক সাফল্য দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিভিন্নভাবে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে।
তবে কি মাদ্রাসায় কোমলমতিদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত শাসন হচ্ছে না? স্কুল-কিন্ডারগার্টেনে তো শাসনে এমন কড়াকড়ি দেখা যায় না।
এর জবাবে এই মাওলানা জানালেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়-কিন্ডারগার্টেনের পাঠদান ও শাসন ব্যবস্থার হিফজখানার তুলনা বোকামো ছাড়া আর কিছুই নয়।
তার ভাষ্যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মাত্র তিন থেকে চার ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে থাকেন। পক্ষান্তরে হিফজুল কুরআন মূলত একটি সাধনা। বাস্তবে হিফজুল কুরআনের আবাসিক শিক্ষকদের ক্যাডেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতো অবস্থা। ঘুমের সময়টাসহ ২৪ ঘন্টা খাওয়া-দাওয়া, গোসল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, ঘুম, খেলাধুলাসহ সবকিছু মাত্র একজন শিক্ষকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। তাই এসব শিক্ষকদের একইসাথে কখনো শিক্ষকের ভূমিকা, কখনো পাহারাদারের, কখনো মা-বাবার ভূমিকা পালন করতে হয়। এটা অবশ্যই বিবেচ্য, কোথায় ৩০-৪০ মিনিটের দায়িত্ব পালন আর কোথায় ২৪ ঘণ্টার ধারাবাহিক দায়িত্ব পালন! এ দুটোর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
আরও দুটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমতাবস্থায় একজন শিক্ষক যেখানে ১০-১২ জনের দায়িত্ব নেওয়া উচিত সেখানে অর্থের অভাবে আমরা ২০ থেকে ২৫ জন করে ছাত্র দিয়ে থাকি। আরেকটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। তা হলো, অধিকাংশ শিক্ষক মাদ্রাসার গরিব অসহায় এতিম শিক্ষার্থীদের লালন পালন, পড়ালেখার জন্য মানুষের কাছে সাহায্য সংগ্রহ করতে হয়। এসব বিচারে শিক্ষকদের মন-মেজাজ, দায়িত্ব-কর্তব্য স্কুল-কলেজ থেকে বিস্তর ফাঁরাক। যে কারণে শাসনে ভুলত্রুটি হতে পারে।
আবাসন ব্যবস্থায় না গিয়ে বাসা থেকে হিফজুল কুরআন শেখাতে অভিভাবকদের তাগিদ দিয়েছেন মাওলানা আফসারি।
এ বিষয়ে মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার শিক্ষা ও শিক্ষক জীবনের অভিজ্ঞতা বলছে, হিফজুল কুরআন পাঠদানের বেলায় আবাসিক সিস্টেমটাই সর্বোত্তম। কারণ বাসা থেকে এসে হাফেজ হওয়াদের তুলনায় আবাসিক পরিবেশের হাফেজরা দুর্দান্ত হয়। এ বিষয়ে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে ঢাকার বড় কাটারা মাদ্রাসা। হাফেজি হুজুর রহমাতুল্লাহ আলাইহি প্রবর্তিত ১৯৩১ সাল থেকে ঢাকার বড় কাটারা মাদ্রাসায় আবাসিক হিফজুল কুরআন চালু করা হয়। তিনি দীর্ঘ ৬০ বছরে পরিকল্পনা মোতাবেক বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে আবাসিক হিফজুল কুরআন গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
আলহামদুলিল্লাহ, তার সুফল এখন আমরা পাচ্ছি। হিফজুল কুরআন মাদ্রাসার কঠোর সাধনা যুক্ত পাঠ্যসূচির কারণেই বর্তমানে বাংলাদেশ গোটা মুসলিম বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হাফেজ তৈরি করছে বলে আন্তর্জাতিক প্রতিটি প্রতিযোগিতায় স্বীকৃতি পেয়েছে এবং পাচ্ছে।
এরপরও কোমলমতিদের পাঠদান ও শাসন প্রক্রিয়ায় কড়া নজরদারি থাকতে হবে বলে মনে করেন এই আলেম।
মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, শাসন করতে গিয়ে যেসব শিক্ষক সীমা অতিক্রম করে ফেলেন, ভুল করে থাকেন, তাদের অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। সাধারণ বিদ্যালয়ের তুলনায় হিফজুল কুরআন মাদ্রাসার রুটিনের পার্থক্যটি মাথায় রেখে আমাদের ভাবতে হবে, সংশোধনের পথ খুঁজতে হবে। অতএব ঢালাওভাবে সমালোচনা মোটেই সমীচীন নয়। এমন কোনো কথা যেন না বলা হয়, যা ইসলামের শত্রুদের হাতিয়ার হয়ে যায়। বিচ্ছিন্ন দোষ-ত্রুটিগুলোকে পাবলিক প্লেসে প্রকাশ করা না হয়, যাতে বাংলাদেশে লাখ লাখ হাফেজে কুরআন তৈরি হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।