বাংলাদেশে নগরায়ণে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০৯:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশে নগরায়ণ ও নগর পরিকল্পনায় মাটির প্রকৃতি, ভূতলের উচ্চতা, ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য প্রভৃতিকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) এর নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের সেমিনারে এমন মন্তব্য করেছেন বক্তারা।
তারা আরও বলেন, রাজধানী ঢাকার নগরায়ণ প্রক্রিয়ায় জলাশয়-জলাভূমিকে ভরাট করে আবাসন ও অবকাঠামো নির্মাণের কারণে ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগের শঙ্কা বাড়ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ আয়োজিত ‘ঢাকা শহরের ভূ-প্রকৃতি এবং অভ্যন্তরীণ ভূতাত্ত্বিক বিন্যাস এর নগর পরিকল্পনাগত প্রভাব’ শীর্ষক পরিকল্পনা সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব মতামত দেন।
নগরপরিকল্পনাবিদরা বলেন, বাংলাদেশের নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে ভূমির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই নগরায়ণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুর্যোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মাহফুজুল হক বলেন, গত দুই দশকে ঢাকার নগরায়ণ প্রক্রিয়ায় পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের যেসব এলাকায় নগরায়ণ হয়েছে, সেসব এলাকার মাটির বৈশিষ্ট্য ও ভূতাত্ত্বিক গঠন নগরায়ণের উপযোগী নয়। ফলে ভূমিকম্প হলে বসিলার মত এলাকায় দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা বেশি থেকে যায়।
তিনি বলেন, ঢাকার ভূমিতলের উচ্চতা ৫-১৮ মিটার এর মধ্যে এবং এই অঞ্চলের অনেক স্থানে ভবন নির্মাণ ও নগরায়ণের জন্য উপযোগী লাল মাটি বিদ্যমান আছে। আবার অনেক এলাকায় প্রাকৃতিকভাবেই নিচুভূমি, জলাশয় ও ভূ-অভ্যন্তরে পানি ধারণ অঞ্চল বা একুইফার আছে। যথাযথভাবে ভূমি উপযোগিতা বিশ্লেষণ না করে বর্তমানে নগরায়ণ হওয়াতে সামনের দিনে নগর দুর্যোগের শঙ্কা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য যথাযথ বিবেচনায় না নেওয়াতে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের যে প্রকল্প ও উদ্যোগ চলমান আছে, সেগুলোর মাধ্যমে কার্যকর উপযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনাও কম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ভবন নির্মাণে যেমন বিল্ডিং কোড ও পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট আইন মানা হচ্ছে না, তেমনি প্রভাবশালীদের চাপে নগরায়ণ হচ্ছে স্বেচ্ছাচারীভাবে। ফলে সাময়িকভাবে কেউ কেউ লাভবান হলেও প্রকৃতির প্রতিশোধ থেকে সম্মিলিতভাবে কেউ রেহাই পাবে না। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি হাওর এলাকার বন্যায় সিলেটের কেন্দ্রীয় নগর এলাকাও তলিয়ে গিয়েছিল।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, রাজউকের আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টের (ইউআরপি) মাধ্যমে ঢাকা শহরের মাটির প্রকৃতি ও ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যকে বিবেচনায় নিয়ে নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন করার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। সামনের দিনের পরিকল্পনায় এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়েই নগরের সম্প্রসারণ ও টেকসই নগরায়ণ নিশ্চিত করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম আবুল কালাম বলেন, ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন নগর দুর্যোগের প্রস্তুতির জন্য সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করার পাশাপাশি সারা বাংলাদেশের ইমারত নির্মাণ যেন যাবতীয় নির্মাণ মানদণ্ড মেনে করা হয়। এজন্য জাতীয় বিল্ডিং কোডের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খানের সঞ্চালনায় পরিকল্পনা সেমিনারের আলোচনায় অংশ নেন, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আনিসা নূরী কাকন, ড. মেহেদী হাসান, অধ্যাপক কাশফিয়া নাহরিন, ড. ফরহাদুর রেজা এবং এস এম নওশাদ হোসেন প্রমুখ।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বাংলাদেশে নগরায়ণে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে
বাংলাদেশে নগরায়ণ ও নগর পরিকল্পনায় মাটির প্রকৃতি, ভূতলের উচ্চতা, ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য প্রভৃতিকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) এর নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের সেমিনারে এমন মন্তব্য করেছেন বক্তারা।
তারা আরও বলেন, রাজধানী ঢাকার নগরায়ণ প্রক্রিয়ায় জলাশয়-জলাভূমিকে ভরাট করে আবাসন ও অবকাঠামো নির্মাণের কারণে ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগের শঙ্কা বাড়ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ আয়োজিত ‘ঢাকা শহরের ভূ-প্রকৃতি এবং অভ্যন্তরীণ ভূতাত্ত্বিক বিন্যাস এর নগর পরিকল্পনাগত প্রভাব’ শীর্ষক পরিকল্পনা সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব মতামত দেন।
নগরপরিকল্পনাবিদরা বলেন, বাংলাদেশের নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে ভূমির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই নগরায়ণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুর্যোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মাহফুজুল হক বলেন, গত দুই দশকে ঢাকার নগরায়ণ প্রক্রিয়ায় পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের যেসব এলাকায় নগরায়ণ হয়েছে, সেসব এলাকার মাটির বৈশিষ্ট্য ও ভূতাত্ত্বিক গঠন নগরায়ণের উপযোগী নয়। ফলে ভূমিকম্প হলে বসিলার মত এলাকায় দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা বেশি থেকে যায়।
তিনি বলেন, ঢাকার ভূমিতলের উচ্চতা ৫-১৮ মিটার এর মধ্যে এবং এই অঞ্চলের অনেক স্থানে ভবন নির্মাণ ও নগরায়ণের জন্য উপযোগী লাল মাটি বিদ্যমান আছে। আবার অনেক এলাকায় প্রাকৃতিকভাবেই নিচুভূমি, জলাশয় ও ভূ-অভ্যন্তরে পানি ধারণ অঞ্চল বা একুইফার আছে। যথাযথভাবে ভূমি উপযোগিতা বিশ্লেষণ না করে বর্তমানে নগরায়ণ হওয়াতে সামনের দিনে নগর দুর্যোগের শঙ্কা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য যথাযথ বিবেচনায় না নেওয়াতে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের যে প্রকল্প ও উদ্যোগ চলমান আছে, সেগুলোর মাধ্যমে কার্যকর উপযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনাও কম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ভবন নির্মাণে যেমন বিল্ডিং কোড ও পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট আইন মানা হচ্ছে না, তেমনি প্রভাবশালীদের চাপে নগরায়ণ হচ্ছে স্বেচ্ছাচারীভাবে। ফলে সাময়িকভাবে কেউ কেউ লাভবান হলেও প্রকৃতির প্রতিশোধ থেকে সম্মিলিতভাবে কেউ রেহাই পাবে না। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি হাওর এলাকার বন্যায় সিলেটের কেন্দ্রীয় নগর এলাকাও তলিয়ে গিয়েছিল।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, রাজউকের আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টের (ইউআরপি) মাধ্যমে ঢাকা শহরের মাটির প্রকৃতি ও ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যকে বিবেচনায় নিয়ে নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন করার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। সামনের দিনের পরিকল্পনায় এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়েই নগরের সম্প্রসারণ ও টেকসই নগরায়ণ নিশ্চিত করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম আবুল কালাম বলেন, ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন নগর দুর্যোগের প্রস্তুতির জন্য সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করার পাশাপাশি সারা বাংলাদেশের ইমারত নির্মাণ যেন যাবতীয় নির্মাণ মানদণ্ড মেনে করা হয়। এজন্য জাতীয় বিল্ডিং কোডের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খানের সঞ্চালনায় পরিকল্পনা সেমিনারের আলোচনায় অংশ নেন, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আনিসা নূরী কাকন, ড. মেহেদী হাসান, অধ্যাপক কাশফিয়া নাহরিন, ড. ফরহাদুর রেজা এবং এস এম নওশাদ হোসেন প্রমুখ।