করোনাকালে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি দৈনিক চার ঘণ্টা
jugantor
করোনাকালে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি দৈনিক চার ঘণ্টা

  যুগান্তর প্রতিবেদন  

১৬ মার্চ ২০২৩, ২২:১৭:০৭  |  অনলাইন সংস্করণ

করোনাকালীন সার্বিকভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছিল। সবচেয়ে বেশ ক্ষতি হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষায়। সার্বিকভাবে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে দৈনিক চার ঘণ্টা শিক্ষা গ্রহণ সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এক্ষেত্রে করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ার আগে প্রতিদিন একজন শিক্ষার্থী বাসা ও স্কুল মিলে গড়ে ৬ ঘণ্টা পড়ালেখা করত। কিন্তু সেখানে স্কুল বন্ধকালীন দৈনিক দুই ঘণ্টা পড়ালেখা করেছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘শিশু শিক্ষা জরিপ-২০২১’ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে আসে।

এটি পরিচালনায় সহায়তা করেছে ইউনিসেফ। বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সংস্থাটি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটরিয়ামে এ প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির ফলে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের তুলনায় বেশি ঝরে পড়েছে ছেলে শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ, যা করোনার আগে ২০১৯ সালে ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

এ পর্যায়ে ঝরে পড়েছিল ১১ দশমিক ৬ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী, আর ছেলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে ১৯ দশমিক ১ শতাংশ। আরও বলা হয়, কোভিডকালে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ছিল ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে তা ছিল ৫৯ দশমিক ৬ শতাংশ, আর উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ছিল ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ।

করোনাকালিন শিক্ষা কার্যক্রমে অনেক শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করতে পারেনি। এরমধ্যে ৪২ দশমিক ২ শতাংশ বলছে তাদের স্কুল থেকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ ছিল না। ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ বলছে তাদের বাসায় ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ছিল না। ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ বলেছে, বাসায় তাদের ডিভাইস ছিল না। বিভিন্ন মাধ্যমে মাত্র ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ নেয়। তবে ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্লাস না করার পিছনে বেশকিছু কারণ উঠে এসেছে।

৪২ শতাংশ স্কুলে অনলাইন ক্লাস আয়োজনের সুযোগ ছিল না। আর বাসায় ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ছিল না ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থীর। ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীর বাসায় কোন টেলিভিশন বা রেডিও ছিল না। এদিকে ১৭ শতাংশ স্কুল পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্পিয়ার শাখার প্রধান স্টানলি গোয়াভুয়ার।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বত্তৃদ্ধতা করেন বিবিএস’র উপ-মহাপরিচালক কাজী নূরুল ইসলাম। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক মো. মাসুদ আলম। উন্মুক্ত আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্মসচিব ড. দিপংকর রায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিডকালে স্কুল বন্ধ থাকার সময় ২০ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষক ফোনে শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিয়েছেন। ২০ শতাংশ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দিয়েছেন। ৭১ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের এ্যাসাইনমেন্ট ও এসাইনমেন্ট শিট দিয়েছেন। আর ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কোনো খোঁজই নেননি।

দেশের ৯ হাজার খানায় ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত জরিপটি পরিচালিত হয়। করোনার প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দূর শিক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অনলাইন, টেলিভিশন ও বেতারে মোট ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রমে পাঠ নিয়েছে।

করোনাকালে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি দৈনিক চার ঘণ্টা

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
১৬ মার্চ ২০২৩, ১০:১৭ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

করোনাকালীন সার্বিকভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছিল। সবচেয়ে বেশ ক্ষতি হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষায়। সার্বিকভাবে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে দৈনিক চার ঘণ্টা শিক্ষা গ্রহণ সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

এক্ষেত্রে করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ার আগে প্রতিদিন একজন শিক্ষার্থী বাসা ও স্কুল মিলে গড়ে ৬ ঘণ্টা পড়ালেখা করত। কিন্তু সেখানে স্কুল বন্ধকালীন দৈনিক দুই ঘণ্টা পড়ালেখা করেছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘শিশু শিক্ষা জরিপ-২০২১’ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে আসে। 

এটি পরিচালনায় সহায়তা করেছে ইউনিসেফ। বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সংস্থাটি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটরিয়ামে এ প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির ফলে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের তুলনায় বেশি ঝরে পড়েছে ছেলে শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ, যা করোনার আগে ২০১৯ সালে ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। 

এ পর্যায়ে ঝরে পড়েছিল ১১ দশমিক ৬ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী, আর ছেলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে ১৯ দশমিক ১ শতাংশ। আরও বলা হয়, কোভিডকালে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ছিল ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে তা ছিল ৫৯ দশমিক ৬ শতাংশ, আর উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ছিল ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ। 

করোনাকালিন শিক্ষা কার্যক্রমে অনেক শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করতে পারেনি। এরমধ্যে ৪২ দশমিক ২ শতাংশ বলছে তাদের স্কুল থেকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ ছিল না। ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ বলছে তাদের বাসায় ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ছিল না। ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ বলেছে, বাসায় তাদের ডিভাইস ছিল না। বিভিন্ন মাধ্যমে মাত্র ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ নেয়। তবে ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্লাস না করার পিছনে বেশকিছু কারণ উঠে এসেছে। 

৪২ শতাংশ স্কুলে অনলাইন ক্লাস আয়োজনের সুযোগ ছিল না। আর বাসায় ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ছিল না ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থীর। ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীর বাসায় কোন টেলিভিশন বা রেডিও ছিল না। এদিকে ১৭ শতাংশ স্কুল পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্পিয়ার শাখার প্রধান স্টানলি গোয়াভুয়ার। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বত্তৃদ্ধতা করেন বিবিএস’র উপ-মহাপরিচালক কাজী নূরুল ইসলাম। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক মো. মাসুদ আলম। উন্মুক্ত আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্মসচিব ড. দিপংকর রায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিডকালে স্কুল বন্ধ থাকার সময় ২০ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষক ফোনে শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিয়েছেন। ২০ শতাংশ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দিয়েছেন। ৭১ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের এ্যাসাইনমেন্ট ও এসাইনমেন্ট শিট দিয়েছেন। আর ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কোনো খোঁজই নেননি। 

দেশের ৯ হাজার খানায় ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত জরিপটি পরিচালিত হয়। করোনার প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দূর শিক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অনলাইন,  টেলিভিশন ও বেতারে মোট ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রমে পাঠ নিয়েছে। 
 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন