জগলুল ওয়াহিদের সঙ্গে ভারতীয় নাগরিক আঞ্জুর বিয়ে অবৈধ
সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের ভাই মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের সঙ্গে ভারতীয় নাগরিক আঞ্জু কাপুরের বিয়ে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৮৭২ অনুসারে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
বিয়ে অবৈধ হওয়ায় স্ত্রী হিসেবে আঞ্জু কাপুরকে দেওয়া জগলুল ওয়াহিদের বাড়ির দাবি করা উইলেরও আইনগত ভিত্তি নেই। এখন প্রচলিত আইন অনুসারে দুই মেয়েসহ উত্তরাধিকারের মধ্যে সম্পদ বণ্টন হবে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তবে প্রয়াত জগলুলের দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুর ভারতে চলে যাওয়ায় তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। জগলুল ওয়াহিদের ভাইদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহমেদ মুসান্না চৌধুরী।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে গুলশান-২ এর ৯৫ নম্বর সড়কের বাড়িটি প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপর। গৃহকর্তার (জগলুল) মৃত্যুর পর মালিকানা নিয়ে বিরোধে তার দুই মেয়ে অবস্থান নেন বাড়ির সামনে। ওই দুই বোনের দাবি, বাড়ির দখল বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুরের হাতে। তিনি কিছুতেই ওই বাড়িতে তাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না। ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে সন্ধ্যায় আদেশ দেন।
আদেশে অনতিবিলম্বে তাদের বাবা মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের গুলশান-২ এর ৯৫ নম্বর সড়কের বাসায় প্রবেশ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে রাতেই ওই বাড়িতে তাদের প্রবেশ ও অবস্থান নিশ্চিত করার পর রাতেই গুলশান থানার ওসিকে সুপ্রিমকোর্টের স্পেশাল অফিসারকে টেলিফোনে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এছাড়া ওই বাসায় দুই বোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়। পাশাপাশি গুলশান থানার ওসিসহ ৩ নভেম্বর দুই বোন এবং ওই বাড়িতে থাকা আঞ্জু কাপুরকে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়।
এ আদেশের পর ওই রাতেই দুই বোন মুশফিকা মোস্তফা ও মোবাশ্বেরা মোস্তফাকে বাসায় উঠিয়ে দিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গুলশান থানা পুলিশ এবং বাড়ির সামনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। পরে আদেশ অনুসারে ৩ নভেম্বর দুই মেয়ে ও দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুর গুলশান থানার ওসিকে নিয়ে হাইকোর্টে হাজির হন। ওই দিন আদালত ওই বাড়ির দাবির পক্ষে প্রয়োজনীয় নথিপত্র আদালতে দাখিল করতে পক্ষদের নির্দেশ দেন। পরে বাড়ি উইল করা নিয়ে আইনগত বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য চার আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তারা এ বিষয়ে মতামত দেন।
২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মোস্তফা জগলুলের মৃত্যু হয়। মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদ পেশায় পাইলট ছিলেন। ভাই ও বোনদের মধ্যে শুধু সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ ছাড়া আর কেউ বাংলাদেশে নেই। বাড়ির সামনে অবস্থান নেন মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ে মুশফিকা ও মোবাশ্বেরা। তারা বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
মুশফিকা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ১৯৮৪ সালে তার মাকে নিয়ে বাবা গুলশানের এই বাসাতেই সংসার শুরু করেছিলেন। তাদের জন্ম এ বাড়িতে। ২০০৫ সালে তাদের মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়। পরে আঞ্জু কাপুর নামে এক ভারতীয়কে তাদের বাবা বিয়ে করেন। তিনি একাই এখন এই বাড়ির ভোগদখল করছেন।
দুই মেয়ের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৮৭২ এর ২ ধারা অনুসারে বিয়ে অবৈধ। কারণ ১৮৭২ এর আইন অনুসারে বর-কনে উভয়পক্ষকে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জায়ান, খ্রিস্টান হতে হবে; কিন্তু এক্ষেত্রে বর মুসলিম হওয়ায় এ আইনের অধীন বিয়েটা অবৈধ। আর একজন বিদেশিকে সম্পত্তি উইল করা যায় না। তাই জগলুল ওয়াহিদের গুলশানের বাড়ি আঞ্জু কাপুরের নামে উইল করাটাও বাতিল হবে।
জগলুল ওয়াহিদের সঙ্গে ভারতীয় নাগরিক আঞ্জুর বিয়ে অবৈধ
যুগান্তর প্রতিবেদন
০৭ জুন ২০২৩, ২২:৩০:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ
সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের ভাই মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের সঙ্গে ভারতীয় নাগরিক আঞ্জু কাপুরের বিয়ে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৮৭২ অনুসারে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
বিয়ে অবৈধ হওয়ায় স্ত্রী হিসেবে আঞ্জু কাপুরকে দেওয়া জগলুল ওয়াহিদের বাড়ির দাবি করা উইলেরও আইনগত ভিত্তি নেই। এখন প্রচলিত আইন অনুসারে দুই মেয়েসহ উত্তরাধিকারের মধ্যে সম্পদ বণ্টন হবে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তবে প্রয়াত জগলুলের দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুর ভারতে চলে যাওয়ায় তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। জগলুল ওয়াহিদের ভাইদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহমেদ মুসান্না চৌধুরী।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে গুলশান-২ এর ৯৫ নম্বর সড়কের বাড়িটি প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপর। গৃহকর্তার (জগলুল) মৃত্যুর পর মালিকানা নিয়ে বিরোধে তার দুই মেয়ে অবস্থান নেন বাড়ির সামনে। ওই দুই বোনের দাবি, বাড়ির দখল বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুরের হাতে। তিনি কিছুতেই ওই বাড়িতে তাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না। ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে সন্ধ্যায় আদেশ দেন।
আদেশে অনতিবিলম্বে তাদের বাবা মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের গুলশান-২ এর ৯৫ নম্বর সড়কের বাসায় প্রবেশ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে রাতেই ওই বাড়িতে তাদের প্রবেশ ও অবস্থান নিশ্চিত করার পর রাতেই গুলশান থানার ওসিকে সুপ্রিমকোর্টের স্পেশাল অফিসারকে টেলিফোনে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এছাড়া ওই বাসায় দুই বোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়। পাশাপাশি গুলশান থানার ওসিসহ ৩ নভেম্বর দুই বোন এবং ওই বাড়িতে থাকা আঞ্জু কাপুরকে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়।
এ আদেশের পর ওই রাতেই দুই বোন মুশফিকা মোস্তফা ও মোবাশ্বেরা মোস্তফাকে বাসায় উঠিয়ে দিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গুলশান থানা পুলিশ এবং বাড়ির সামনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। পরে আদেশ অনুসারে ৩ নভেম্বর দুই মেয়ে ও দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুর গুলশান থানার ওসিকে নিয়ে হাইকোর্টে হাজির হন। ওই দিন আদালত ওই বাড়ির দাবির পক্ষে প্রয়োজনীয় নথিপত্র আদালতে দাখিল করতে পক্ষদের নির্দেশ দেন। পরে বাড়ি উইল করা নিয়ে আইনগত বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য চার আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তারা এ বিষয়ে মতামত দেন।
২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মোস্তফা জগলুলের মৃত্যু হয়। মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদ পেশায় পাইলট ছিলেন। ভাই ও বোনদের মধ্যে শুধু সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ ছাড়া আর কেউ বাংলাদেশে নেই। বাড়ির সামনে অবস্থান নেন মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ে মুশফিকা ও মোবাশ্বেরা। তারা বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
মুশফিকা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ১৯৮৪ সালে তার মাকে নিয়ে বাবা গুলশানের এই বাসাতেই সংসার শুরু করেছিলেন। তাদের জন্ম এ বাড়িতে। ২০০৫ সালে তাদের মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়। পরে আঞ্জু কাপুর নামে এক ভারতীয়কে তাদের বাবা বিয়ে করেন। তিনি একাই এখন এই বাড়ির ভোগদখল করছেন।
দুই মেয়ের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৮৭২ এর ২ ধারা অনুসারে বিয়ে অবৈধ। কারণ ১৮৭২ এর আইন অনুসারে বর-কনে উভয়পক্ষকে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জায়ান, খ্রিস্টান হতে হবে; কিন্তু এক্ষেত্রে বর মুসলিম হওয়ায় এ আইনের অধীন বিয়েটা অবৈধ। আর একজন বিদেশিকে সম্পত্তি উইল করা যায় না। তাই জগলুল ওয়াহিদের গুলশানের বাড়ি আঞ্জু কাপুরের নামে উইল করাটাও বাতিল হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023