দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে পাটের হাত ধরে: ড. আউয়াল

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
১০ জুন ২০২৩, ১১:১২ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল আউয়াল পাট চাষ সম্প্রসারণ জোরদার করার লক্ষ্যে দেশের দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীতে দুইদিন ব্যাপী নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। তার এসব কার্যক্রমে দক্ষিনাঞ্চলের শস্যবিন্যাসে পাটের স্থায়ী অন্তর্ভুক্তি এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের হাত ধরে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট জনপদের স্বপ্ন দেখছেন দক্ষিণের কৃষকরা।

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনস্থ পাট গবেষণা উপকেন্দ্রটির পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহের স্থানীয় কৃষক, জনপ্রতিনিধি, কৃষি পণ্যের ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে  ড. আউয়াল দুইদিন ব্যাপী নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। 

৯ জুন সকাল ৯ টায় তিনি উপকেন্দ্রের প্রশিক্ষণ কক্ষে স্থানীয় ৫০ জন কৃষক-কৃষাণীকে বিজেআরআই উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল পাট ও কেনাফের জাতসমূহের আঁশ উৎপাদন প্রযুক্তি জনপ্রিয়করণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। পরে দুপুর ২টায় তিনি স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে পাটের আঁশ ও বীজ উৎপাদন বিষয়ে একটি মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। 

এ সময় তিনি দক্ষিণবঙ্গের লবণাক্ত মাটিতে চাষের উপযোগী বিজেআরআই উদ্ভাবিত দেশীপাট ৮, দেশীপাট ১০ এবং কেনাফ এইচসি ৯৫ জাতের নানা বৈশিষ্ট্য, উৎপাদন কৌশল ও ফলন সম্পর্কে কৃষকদের জানান এবং এগুলো চাষে তাদের উদ্বুদ্ধ করেন।  

বিকাল ৪ টায় তিনি কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সলিমপুর গ্রামের পাট চাষী শেফালী রানীর পাটের মাঠ পরিদর্শন করেন ও স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে আয়োজিত মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। 

সেখানে তিনি বিজেআরআই উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল পাটের জাত জনপ্রিয়করণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কৃষকদের মাঝে পাট চাষের উপকারিতা নিয়ে বক্তব্য প্রদান করে তাদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। 

এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পিছনে অন্যতম ইস্যু ছিল পাট। এরকম আরো অনেক বৈষম্যের শিকার বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বর্তমানে সারা বিশ্বে  অর্থনৈতিক মন্দা ও পরিবেশগত বিপর্যয় চলছে। বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে  উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা এদেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। একই সাথে পাটপণ্য ব্যবহার করার ফলে বিশ্ব পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকেও রক্ষা পাবে। 

এছাড়াও অর্থনৈতিক গুরুত্বের পাশাপাশি পাটের একাধিক পুষ্টিগুণ রয়েছে যা দেশের মানুষের পুষ্টির ঘাটতি দূর করতেও সহায়তা করবে। প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে পাট ও পাটজাত পণ্যকে ঘোষণা করেছেন ও পাট পণ্য ব্যবহারে সবাইকে উৎসাহিত করছেন।

পরে উপকেন্দ্রে ফিরে তিনি বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৩ উপলক্ষে উপকেন্দ্রের অফিস চত্বরে একটি বৃক্ষ রোপন করেন ও পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। পরদিন ১০জুন সকাল ৯ টায় তিনি পাটের আঁশ ও বীজ উৎপাদন বিষয়ে স্থানীয় স্টেকহোল্ডারগনের সাথে একটি মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। 

পরে তিনি স্থানীয় কৃষক ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে একটি পাটের আঁশ ও বীজ উৎপাদন সমিতি গঠন করেন যা দক্ষিণবঙ্গে পাট চাষের সম্প্রসারণে সর্বপ্রথম উদ্যোগ। এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি তিনি উপকেন্দ্রটির বিভিন্ন গবেষণা প্লট পরিদর্শন করেন ও বিজ্ঞানীদের নানা দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। 

মহাপরিচালক ড. আবদুল আউয়ালের নেতৃত্বে পরিচালিত এসব কার্যক্রমে ড. নার্গিস আক্তার পরিচালক (কৃষি), ড. ফেরদৌস আরা দিলরুবা পরিচালক (জুট-টেক্সটাইল), ড. এস, এম, মাহবুব আলী পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলীমসহ প্রতিষ্ঠানটির আরো অনেক সিনিয়র বিজ্ঞানী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও উপকেন্দ্রটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তপন কুমারসহ অন্যান্য বিজ্ঞানীরা অংশগ্রহণ করেন।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন