কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশকে এখন একটি সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে জ্বালানি খাতে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হবে। একটি ন্যায্য, গণতান্ত্রিক ও টেকসই জ্বালানি রূপান্তরের পথে হাঁটতে হবে; যেখানে জনগণ ও প্রকৃতি অগ্রাধিকার পাবে। এখনই সময় একটি কর্মপন্থা গ্রহণের, যা ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ ও দীর্ঘমেয়াদি সহনশীলতার নীতিতে পরিচালিত হবে। কেবল তখনই বাংলাদেশে সত্যিকারের সুবিচারের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ক্যাবের প্রস্তাবিত ‘বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি-২০২৪’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

এম শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ৯৮ শতাংশ পরিবারেই বিদ্যুৎ রয়েছে। তবে বিদ্যুৎ পাওয়া মানেই জ্বালানি সুবিচার নয়। অনেক গ্রামীণ ও নিæ-আয়ের জনগোষ্ঠী এখনো ঘনঘন লোডশেডিং ও ভোল্টেজ সমস্যায় ভোগেন এবং বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনেন। বাংলাদেশে জ্বালানি সুবিচার সংকট কেবল একটি কারিগরি সমস্যা নয়, এটি অধিকার, সাম্য ও সুশাসনব্যবস্থার প্রশ্ন। এটি আমাদের বাধ্য করে ভাবতে যে, কীভাবে জ্বালানি উৎপাদন, আমদানি, বণ্টন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়।

তিনি আরও বলেন, সরকার অবকাঠামো ও সংযোগে অগ্রগতি অর্জন করলেও গঠনগত সমস্যাগুলো এখনো রয়ে গেছ। দুর্নীতি, ব্যয়বহুল সেবা, পরিবেশ ধ্বংস ও বর্জনমূলক নীতি সেসব মানুষকে প্রান্তিক করে দিচ্ছে, যাদের জন্য জ্বালানি উন্নয়ন বা রূপান্তর হওয়া উচিত। নইলে সে রূপান্তর ন্যায্য হয় না, জ্বালানি সুবিচার ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।

সভায় ক্যাবের পক্ষ থেকে ১৩ দফা দাবি জানিয়ে বলা হয়, জ্বালানির ওপর জনগণের প্রকৃত মালিকানা ও স্বত্বাধিকার নিশ্চিত করে স্বনির্ভরতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জ্বালানি খাতের বিকাশ ঘটানো। ভোক্তার কাছে ন্যূনতম ব্যয়ে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ খাতে বিনিয়োগ কৌশল গ্রহণ করে যৌক্তিক জ্বালানি মূল্যহার নির্ধারণ ও জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করা। জ্বালানি খাত উন্নয়নের সব পর্যায়ে ন্যায্যতা, সমতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

ভোক্তার জ্বালানি অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার মাধ্যমে জ্বালানি সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জ্বালানি রূপান্তর সম্পন্ন করার জন্য ক্যাব প্রস্তাবিত জ্বালানি রূপান্তর নীতি-২০২৪-এর আলোকে এ ১৩ দফা জনদাবি প্রণয়ন করেছে।

আলোচনা সভায় আরও বক্তৃতা করেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভ‚ঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ক্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু প্রমুখ।