যেসব কারণে উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়নি

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০১:৩২ পিএম

ফাইল ছবি
ফলো করুন |
|
---|---|
বিভিন্ন কারণে সারা দেশে উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত বাস্তবায়ন হয়নি।তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে আট ধরনের ত্রুটি চিহ্নিত করেছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এসব কারণে প্রকল্পটির কাঙ্ক্ষিত বাস্তবায়ন হয়নি।
যতটুকু হয়েছে, তাতেও অনিয়ম হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী। বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১৬৪ শতাংশ সময় বেড়েছে। ব্যয় বেড়েছে মূল অনুমোদনের তুলনায় ৮৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
প্রকল্পের চিহ্নিত ত্রুটিগুলোর মধ্যে রয়েছে—সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করা, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করা, প্রকল্পের এক্সিট প্ল্যান না রাখা, কাজ যথাযথভাবে তদারকি না করা, নিয়মিত অডিট না হওয়া এবং ভবন রক্ষণাবেক্ষণে লোকবল ও বাজেট বরাদ্দ না রাখা।
এছাড়া নিয়মিত পিএসসি ও পিআইসি সভা না হওয়া, ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতা। বাস্তবায়ন হওয়া প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদন আইএমইডি ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত করেছে। শিগ্গিরই এটি প্রকাশ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আইএমইডির মূল্যায়ন, পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশগুলো সাধারণত প্রকল্পসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু যারা এসব ত্রুটি বা অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত, ব্যবস্থা নিতে তাদেরই বলা, এটি হাস্যকর। এখন নতুন করে ভাবা দরকার। কেননা অর্থ ও সময় ব্যয় করে প্রকল্পের যে মূল্যায়ন করা হয়, সেটির ওপর ভিত্তি করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া বা জবাবদিহি নিশ্চিত করা দরকার। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয় অথবা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া দরকার। যাতে তারা আইএমইডির চিহ্নিত ত্রুটি, অনিয়ম বা দুর্নীতি যাই হোক না কেন-সেটার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, সেটা মনিটর করে। এটি না হলে বছরের পর বছর আইএমইডি মূল্যায়ন করেই যাবে আর প্রকল্পে যা হওয়ার তা হতেই থাকবে। এটা চলতে দেওয়া যেতে পারে না।
আইএমইডি জানায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের আট বিভাগের ৬৪টি জেলার ২৩৩টি উপজেলায় প্রকল্পটি হাতে নেয়। ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে চার বছরে এটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু নানা ত্রুটি ও জটিলতায় বাস্তবায়ন পর্যায়ে দুবার প্রকল্প সংশোধন এবং পরে ব্যয় ছাড়া তিনবার মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০২২ সালের জুনে বাস্তবায়ন করা হয়। ফলে চার বছরের প্রকল্পে সময় লাগে ১১ বছর। এছাড়া প্রকল্পটির অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৭৭৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। পরে বিভিন্ন সময় বাড়তে বাড়তে সর্বশেষ ব্যয় দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকায়। ৬৫৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পায়। তবে শেষ পর্যন্ত ১ হাজার ২২৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় হয়।
আইএমইডির দ্বিতীয় খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার সময় কোনো সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়নি। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে। এছাড়া কোথায় পুরোনো ভবন আছে বা গাছ কাটার প্রয়োজন, সেসব বিষয় স্পষ্ট ছিল না এবং স্থানভেদে নকশার ত্রুটি-বিচ্যুতিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দেরি হয়েছে। ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বছরভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ও ক্রয় পরিকল্পনা তৈরি এবং দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব হয়নি। ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন কীভাবে করা হবে, তা উল্লেখ থাকলেও প্রকল্পের আওতায় কেনা যানবাহন, অফিস সরঞ্জাম এবং আসবাবপত্র কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হবে, সেসব বিষয়ে কোনো এক্সিট প্ল্যান ছিল না। প্রকল্পটি চলাকালে নিয়মিত অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন ও অন্যসব স্থাপনা নির্মাণে স্থান নির্বাচন অনেক ক্ষেত্রে ঝামেলাপূর্ণ ছিল। স্থান সংক্রান্ত জটিলতায় আটটি উপজেলায় সম্প্রসারিত কমপ্লেক্স ভবন, ১৬টি হলরুম এবং ২১টি আবাসিক ভবনের নির্মাণকাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন ও হলরুম নির্মাণকাজের গুণগতমানের বিষয়ে বেশির ভাগ সুবিধাভোগী সাক্ষাৎকারে সন্তোষজনক বলে জানিয়েছেন। তবে এক-তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা জানান, নির্মিত দেওয়ালে ড্যাম্প বা নোনা দেখা গেছে।
এছাড়া পরিদর্শন পর্যবেক্ষণে বলা হয়, কিছু কিছু ভবনের দেওয়াল ও অ্যাপ্রোনে ফাটল, প্লাস্টারিং-পেইন্টিং ও রডের বেল্ডে অপর্যাপ্ততা, প্লাম্বিং লাইনের সংযোগস্থল খোলাসহ কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা গেছে। প্রকল্পের আওতায় নির্মিত আবাসিক ভবনগুলোর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন ও আশানুরূপ নান্দনিক নয়।