আটকের ৮ মাস পর জলিলকে ক্রসফায়ারে দেন ওসি প্রদীপ
আদালতে হত্যা মামলা দায়ের
কক্সবাজার প্রতিনিধি
২৭ আগস্ট ২০২০, ২২:১৯:০৭ | অনলাইন সংস্করণ

টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১২ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। টেকনাফ থানার হ্নীলা ইউপির হোয়াইক্যংয়ের মহেশখালীয়া পাড়ার সিএনজিচালক মৃত আবদুল জলিলের স্ত্রী সানোয়ারা বেগম বাদী হয়ে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিনের আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালত শুনানি শেষে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই ঘটনা নিয়ে থানায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর মামলার বাদী ছেনোয়ারা বেগমের স্বামী আবদুল জলিলকে কক্সবাজার শহরের আদালতপাড়া থেকে আটক করে ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মানস বড়ুয়া। পরে তাকে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মশিউরের হাতে তুলে দেয়া হয়। ওই দারোগা মশিউর জলিলকে নিয়ে টেকনাফ থানায় রাখে এবং তাকে পুলিশ ধরেনি বলে স্ত্রীসহ আত্মীয়-স্বজনদের নিকট নানা লুকোচরি করে।
একপর্যায়ে জলিলের স্ত্রীকে জানানো হয় তাকে ইয়াবা ব্যবসার অপরাধে ক্রসফায়ার দেয়া হবে। যদি স্বামীকে বাঁচাতে চান তাহলে ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। মশিউরের কথামত স্বর্ণলংকার বিক্রি করে জলিলের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম স্থানীয় দফাদারকে নিয়ে দারোগা মশিউরসহ টেকনাফ থানার তৎকালিন ওসি বর্তমান সিনহা হত্যা মামলার আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাসের হাতে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দেয়া হয়। কিন্তু টাকা নিয়েও স্বামীকে ফেরত দিবে বলে কালক্ষেপণ করে। একপর্যায়ে স্বামীর কথা বললে তাকে (ছেনোয়ারা বেগম) ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে মামলা দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। পরে মাসের পর মাস চলে গেলেও স্বামী জলিলকে ফিরিয়ে দেয়নি ওসি প্রদীপ ও মশিউর।
ছেনোয়ারা বেগম জানান, একপর্যায়ে দীর্ঘ আট মাস পর চলতি বছরের ৭ জুলাই স্বামী আবদুল জলিলকে তার নিজ বাড়ির পেছনে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করে ওসি প্রদীপসহ মামলার আসামিরা। এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চেয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিনের আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয় বলে জানান মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মুনিরুল ইসলাম।
আইনজীবী মুনিরুল ইসলাম জানান, এই হত্যার ঘটনায় হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউরকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামীরা হলো, বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাস, ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মানস বড়ুয়া, এএসআই আরিফুর রহমান, সুজিত চন্দ্র দে, এসআই অরুণ কুমার চাকমা, এসআই নাজিম উদ্দিন, এসআই মো. নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া, এএসআই রামচন্দ্র দাস, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, কনস্টেবল সাগর দেব ও দফাদার আমিনুল হক।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম আরো জানান, আদালত শুনানি শেষে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উক্ত ঘটনা নিয়ে টেকনাফ থানায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা- তা জানানোর নির্দেশ প্রদান করেন।
এদিকে ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুরে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাস র্যাবের দ্বিতীয় দফার ৪ দিনের রিমান্ডে র্যা ব-১৫ কার্যালয়ে রয়েছেন।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
আদালতে হত্যা মামলা দায়ের
আটকের ৮ মাস পর জলিলকে ক্রসফায়ারে দেন ওসি প্রদীপ

টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১২ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। টেকনাফ থানার হ্নীলা ইউপির হোয়াইক্যংয়ের মহেশখালীয়া পাড়ার সিএনজিচালক মৃত আবদুল জলিলের স্ত্রী সানোয়ারা বেগম বাদী হয়ে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিনের আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালত শুনানি শেষে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই ঘটনা নিয়ে থানায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর মামলার বাদী ছেনোয়ারা বেগমের স্বামী আবদুল জলিলকে কক্সবাজার শহরের আদালতপাড়া থেকে আটক করে ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মানস বড়ুয়া। পরে তাকে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মশিউরের হাতে তুলে দেয়া হয়। ওই দারোগা মশিউর জলিলকে নিয়ে টেকনাফ থানায় রাখে এবং তাকে পুলিশ ধরেনি বলে স্ত্রীসহ আত্মীয়-স্বজনদের নিকট নানা লুকোচরি করে।
একপর্যায়ে জলিলের স্ত্রীকে জানানো হয় তাকে ইয়াবা ব্যবসার অপরাধে ক্রসফায়ার দেয়া হবে। যদি স্বামীকে বাঁচাতে চান তাহলে ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। মশিউরের কথামত স্বর্ণলংকার বিক্রি করে জলিলের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম স্থানীয় দফাদারকে নিয়ে দারোগা মশিউরসহ টেকনাফ থানার তৎকালিন ওসি বর্তমান সিনহা হত্যা মামলার আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাসের হাতে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দেয়া হয়। কিন্তু টাকা নিয়েও স্বামীকে ফেরত দিবে বলে কালক্ষেপণ করে। একপর্যায়ে স্বামীর কথা বললে তাকে (ছেনোয়ারা বেগম) ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে মামলা দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। পরে মাসের পর মাস চলে গেলেও স্বামী জলিলকে ফিরিয়ে দেয়নি ওসি প্রদীপ ও মশিউর।
ছেনোয়ারা বেগম জানান, একপর্যায়ে দীর্ঘ আট মাস পর চলতি বছরের ৭ জুলাই স্বামী আবদুল জলিলকে তার নিজ বাড়ির পেছনে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করে ওসি প্রদীপসহ মামলার আসামিরা। এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চেয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিনের আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয় বলে জানান মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মুনিরুল ইসলাম।
আইনজীবী মুনিরুল ইসলাম জানান, এই হত্যার ঘটনায় হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউরকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামীরা হলো, বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাস, ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মানস বড়ুয়া, এএসআই আরিফুর রহমান, সুজিত চন্দ্র দে, এসআই অরুণ কুমার চাকমা, এসআই নাজিম উদ্দিন, এসআই মো. নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া, এএসআই রামচন্দ্র দাস, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, কনস্টেবল সাগর দেব ও দফাদার আমিনুল হক।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম আরো জানান, আদালত শুনানি শেষে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উক্ত ঘটনা নিয়ে টেকনাফ থানায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা- তা জানানোর নির্দেশ প্রদান করেন।
এদিকে ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুরে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাস র্যাবের দ্বিতীয় দফার ৪ দিনের রিমান্ডে র্যা ব-১৫ কার্যালয়ে রয়েছেন।