প্রভাবশালীদের মদদে বেপরোয়া ‘রিয়াদ গ্যাং’
যুগান্তর প্রতিবেদন
০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:৩৩:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে স্কুলপড়ুয়া গারো সম্প্রদায়ের দুই কিশোরীকে গণধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি সোলায়মান হোসেন রিয়াদ (২১) একটি বাহিনী বা গ্যাং গড়ে তুলেছিল ১০-১৩ জনের। তারা চলাফেরা করে কিশোর গ্যাং স্টাইলে। তাদের বয়স ১৯ থেকে ২১ বছর। স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদ থাকায় বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে ফেবার (সহায়তা) পেত রিয়াদ ও তার বাহিনীর সদস্যরা।
রিয়াদ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আগেও অনেক অভিযোগ ছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তি হতো। রিয়াদের বাবা সাবেক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। এসব কারণে বারবারই পার পেয়ে যায় রিয়াদ।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে গতকাল (৭ জানুয়ারি) রাতে রিয়াদকে গ্রেফতারের পর শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
র্যাব বলছে, বাবা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হওয়ার সুবাদে রিয়াদ সুবিধা পেয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে গারো সম্প্রদায়ের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে দুই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। এ সময় তাদের হত্যার ভয় দেখানো হয়। তাদের সঙ্গে থাকা ১০ বছরের শিশু পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় মামলা হয় ৩০ ডিসেম্বর।
খন্দকার আল মঈন বলেন, লোকলজ্জার ভয় এবং প্রাণনাশের হুমকির কারণে কিশোরীদের পরিবার মামলা করতে দেরি করেছিল।
রিয়াদ এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত জানিয়ে মঈন বলেন, ইভটিজিং, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে রিয়াদের বিরুদ্ধে। এর আগেও সে ধর্ষণ করেছে।
রিয়াদের বাবা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলেন জানিয়ে এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, বাবা জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুবাদে রিয়াদ সুবিধা পেতে পারে।
র্যাব জানায়, ঘটনাস্থলে ১০ জন উপস্থিত থাকলেও ছয়জন ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত। বাকি চারজন পাহারা দিচ্ছিল। মূলহোতা রিয়াদের শিক্ষাগত যোগ্যতা তেমন নেই। শিশু বয়সে তিন বছর মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছিল। গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত অন্যান্যরা পলাতক বলে র্যাব কর্মকর্তা আল মঈন জানান। তবে ইতোমধ্যে ডিবি পুলিশের হাতে আরও পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি বলেন, জড়িতদের পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়েছে, যেন তারা এদের আইনের হাতে সোপর্দ করেন।
র্যাব আরও জানায়, রিয়াদ ও তার সহযোগীদের অত্যাচারে এলাকার স্কুলপড়ুয়া মেয়েরা অতিষ্ঠ। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করারও অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। রিয়াদের নামে হালুয়াঘাট থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মাদক চোরাচালান মামলা চলমান রয়েছে। ইতোপূর্বে সে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় এবং কারাভোগ করে। তার সহযোগী এজাহারনামীয় অন্যান্য আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে এলাকায় মাদক কারবারি এবং গ্রুপভিত্তিক বিভিন্ন চুরি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গণধর্ষণের শিকার হওয়া এক কিশোরীর বাবা গত ৩০ ডিসেম্বর বাদী হয়ে হালুয়াঘাট থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পর আসামিদের গ্রেফতার করতে স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিকবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ করেন। তারা আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রভাবশালীদের মদদে বেপরোয়া ‘রিয়াদ গ্যাং’
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে স্কুলপড়ুয়া গারো সম্প্রদায়ের দুই কিশোরীকে গণধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি সোলায়মান হোসেন রিয়াদ (২১) একটি বাহিনী বা গ্যাং গড়ে তুলেছিল ১০-১৩ জনের। তারা চলাফেরা করে কিশোর গ্যাং স্টাইলে। তাদের বয়স ১৯ থেকে ২১ বছর। স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদ থাকায় বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে ফেবার (সহায়তা) পেত রিয়াদ ও তার বাহিনীর সদস্যরা।
রিয়াদ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আগেও অনেক অভিযোগ ছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তি হতো। রিয়াদের বাবা সাবেক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। এসব কারণে বারবারই পার পেয়ে যায় রিয়াদ।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে গতকাল (৭ জানুয়ারি) রাতে রিয়াদকে গ্রেফতারের পর শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
র্যাব বলছে, বাবা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হওয়ার সুবাদে রিয়াদ সুবিধা পেয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে গারো সম্প্রদায়ের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে দুই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। এ সময় তাদের হত্যার ভয় দেখানো হয়। তাদের সঙ্গে থাকা ১০ বছরের শিশু পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় মামলা হয় ৩০ ডিসেম্বর।
খন্দকার আল মঈন বলেন, লোকলজ্জার ভয় এবং প্রাণনাশের হুমকির কারণে কিশোরীদের পরিবার মামলা করতে দেরি করেছিল।
রিয়াদ এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত জানিয়ে মঈন বলেন, ইভটিজিং, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে রিয়াদের বিরুদ্ধে। এর আগেও সে ধর্ষণ করেছে।
রিয়াদের বাবা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলেন জানিয়ে এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, বাবা জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুবাদে রিয়াদ সুবিধা পেতে পারে।
র্যাব জানায়, ঘটনাস্থলে ১০ জন উপস্থিত থাকলেও ছয়জন ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত। বাকি চারজন পাহারা দিচ্ছিল। মূলহোতা রিয়াদের শিক্ষাগত যোগ্যতা তেমন নেই। শিশু বয়সে তিন বছর মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছিল। গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত অন্যান্যরা পলাতক বলে র্যাব কর্মকর্তা আল মঈন জানান। তবে ইতোমধ্যে ডিবি পুলিশের হাতে আরও পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি বলেন, জড়িতদের পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়েছে, যেন তারা এদের আইনের হাতে সোপর্দ করেন।
র্যাব আরও জানায়, রিয়াদ ও তার সহযোগীদের অত্যাচারে এলাকার স্কুলপড়ুয়া মেয়েরা অতিষ্ঠ। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করারও অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। রিয়াদের নামে হালুয়াঘাট থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মাদক চোরাচালান মামলা চলমান রয়েছে। ইতোপূর্বে সে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় এবং কারাভোগ করে। তার সহযোগী এজাহারনামীয় অন্যান্য আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে এলাকায় মাদক কারবারি এবং গ্রুপভিত্তিক বিভিন্ন চুরি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গণধর্ষণের শিকার হওয়া এক কিশোরীর বাবা গত ৩০ ডিসেম্বর বাদী হয়ে হালুয়াঘাট থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পর আসামিদের গ্রেফতার করতে স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিকবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ করেন। তারা আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।