রাজধানীতে গাড়ি থামিয়ে ছিনতাইচেষ্টা, পুলিশের হাতে র্যাব সদস্য গ্রেফতার
যুগান্তর প্রতিবেদন
২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:২৮:৪৯ | অনলাইন সংস্করণ
রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে গাড়ি থামিয়ে ছিনতাই চেষ্টার অভিযোগে এক র্যাব সদস্যসহ তিনজনকে গ্রেফতার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার প্রথম প্রহরে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানান বনানী থানার ওসি নূরে আজম মিয়া।
মধ্যরাতে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে গাড়ির গতিরোধ করে র্যাব পরিচয়ে দুই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে দুষ্কৃতকারীরা। এ সময় ভুক্তভোগীদের চিৎকারে জনতা এবং ওই পথে যাওয়া একজন পুলিশ সদস্য এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় তারা। হাতেনাতে আটক করা হয় চক্রের এক সদস্যকে। উদ্ধার করা হয় একটি অস্ত্র।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের গাড়িচালককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনকি উপস্থিত পুলিশ সদস্যকেও উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে চক্রটি।
শুক্রবার দিনগত রাত সোয়া দুইটায় ঘটে এ ঘটনা। রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারের ওপর থেমে ছিল কয়েকটি গাড়ি। ওই পথ দিয়ে যাওয়া যমুনা টেলিভিশনের গাড়ি দেখেই থামার আহ্বান জানায় জটলা করে থাকা কিছু সংখ্যক মানুষ। সেখানেই দেখা মেলে হ্যান্ডকাফ পরিহিত দুই ব্যক্তির। একজনের নাম শহীদুল ইসলাম, অপরজনের রিয়াজ। সম্পর্কে তারা মামা-ভাগনে।
তাদের অভিযোগ, বিমানবন্দর এলাকা থেকে গাড়ি ভাড়া করে যাচ্ছিলেন তারা। ফ্লাইওভারে উঠতেই তাদের গাড়ির গতিরোধ করে পেছন থেকে আসা আরেকটি গাড়ি। আরোহী চার ব্যক্তি র্যাব পরিচয়ে অস্ত্র দেখিয়ে তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিল তাদের। এক পর্যায়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে করে মারধর। সন্দেহ হওয়ায় চিৎকার শুরু করেন ভুক্তভোগীরা।
ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত শহীদুল ইসলাম বলেন, ওরা আমাদের গাড়ি থামিয়ে জানালা দিয়ে পিস্তল ধরে। গাড়ি থেকে বের হওয়ার পর বলে আমরা সোনা চোরাচালানকারী। আমরা বলি আমাদের চেক করে দেখেন। তখন আমাদের মারধর শুরু করে এবং বলে, গুলি করে মেরে ফেলব। তারপর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয়। এ সময় আমরা চিৎকার শুরু করি।
তাদের চিৎকার শুনে গাড়ি থামান এক ব্যক্তি। তিনি জানান, আমি দেখলাম র্যাব লেখা কোট পরে ৩-৪ জন এই দুই ব্যক্তির সঙ্গে টানাহেঁচড়া করছে। তাদের কোমরে অস্ত্র। আমি এগিয়ে গেলে তারা সরে যেতে বলে। তখন আমি ৯৯৯-এ কল করে পুলিশকে বিষয়টি জানাই।
এ সময় গুলশান ডিপ্লোমেটিক জোনের ডিউটি শেষে সে পথেই মোটরসাইকেলে ফিরছিলেন সাকিব নামে এক পুলিশ সদস্য। ভুক্তভোগীদের আকুতি শুনে তিনিও এগিয়ে আসেন সহায়তায়।
যমুনা টেলিভিশনেরপ্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ সদস্য সাকিব বলেন- আমি এগিয়ে গেলে র্যাবের কোট পরিহিত ব্যক্তিরা আইডি কার্ড দেখায়। আইডি কার্ডের মেয়াদ ছিল না। তখন আমার সন্দেহ হয়। পরে আমাকেও তারা গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে চায়। একপর্যায়ে অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়। সে সময় আমরা তাদের সঙ্গে থাকা একজনকে ধরে ফেলি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ভুক্তোভোগীদের ভাড়া করা গাড়ির চালককে নিয়ে যায়। তবে পালিয়ে যাওয়ার সময় চক্রের এক সদস্যকে জনতা ধরে ফেলে।
আটক ব্যক্তি জানান, তার নাম জয়। বাড়ি দিনাজপুর। তিনি টঙ্গীতে একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করেন। তার দাবি, মমিন নামে এক র্যাব সদস্যের সঙ্গে মাদক সংক্রান্ত কিছু কাজে করতে গিয়ে তার পরিচয় হয়। পরে মমিন তাকে দিয়ে আরও কিছু কাজ করায়। ঘটনার দিন একটি অপারেশনের কথা বলে মহাখালী ফ্লাইওভারে নিয়ে আসেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জয় নামের ব্যক্তিটিও তাদের মারধর করেছে।
ঘটনাস্থল থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পরে বনানী থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসে। তাদের চাবিতে হ্যান্ডকাফ থেকে মুক্তি মেলে ভুক্তভোগীদের। সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।
থানায় যায় যমুনা নিউজের আরেকটি টিম। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি পুলিশ।
তবে আজ (শনিবার) বনানী থানার ওসি জয়সহ মোট তিনজনকে গ্রেফতারের কথা জানান। এদের একজন র্যাব সদস্য বলে তিনি স্বীকার করলেও বিস্তারিত আর কিছু বলতে চাননি।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
রাজধানীতে গাড়ি থামিয়ে ছিনতাইচেষ্টা, পুলিশের হাতে র্যাব সদস্য গ্রেফতার
রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে গাড়ি থামিয়ে ছিনতাই চেষ্টার অভিযোগে এক র্যাব সদস্যসহ তিনজনকে গ্রেফতার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার প্রথম প্রহরে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানান বনানী থানার ওসি নূরে আজম মিয়া।
মধ্যরাতে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে গাড়ির গতিরোধ করে র্যাব পরিচয়ে দুই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে দুষ্কৃতকারীরা। এ সময় ভুক্তভোগীদের চিৎকারে জনতা এবং ওই পথে যাওয়া একজন পুলিশ সদস্য এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় তারা। হাতেনাতে আটক করা হয় চক্রের এক সদস্যকে। উদ্ধার করা হয় একটি অস্ত্র।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের গাড়িচালককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনকি উপস্থিত পুলিশ সদস্যকেও উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে চক্রটি।
শুক্রবার দিনগত রাত সোয়া দুইটায় ঘটে এ ঘটনা। রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারের ওপর থেমে ছিল কয়েকটি গাড়ি। ওই পথ দিয়ে যাওয়া যমুনা টেলিভিশনের গাড়ি দেখেই থামার আহ্বান জানায় জটলা করে থাকা কিছু সংখ্যক মানুষ। সেখানেই দেখা মেলে হ্যান্ডকাফ পরিহিত দুই ব্যক্তির। একজনের নাম শহীদুল ইসলাম, অপরজনের রিয়াজ। সম্পর্কে তারা মামা-ভাগনে।
তাদের অভিযোগ, বিমানবন্দর এলাকা থেকে গাড়ি ভাড়া করে যাচ্ছিলেন তারা। ফ্লাইওভারে উঠতেই তাদের গাড়ির গতিরোধ করে পেছন থেকে আসা আরেকটি গাড়ি। আরোহী চার ব্যক্তি র্যাব পরিচয়ে অস্ত্র দেখিয়ে তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিল তাদের। এক পর্যায়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে করে মারধর। সন্দেহ হওয়ায় চিৎকার শুরু করেন ভুক্তভোগীরা।
ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত শহীদুল ইসলাম বলেন, ওরা আমাদের গাড়ি থামিয়ে জানালা দিয়ে পিস্তল ধরে। গাড়ি থেকে বের হওয়ার পর বলে আমরা সোনা চোরাচালানকারী। আমরা বলি আমাদের চেক করে দেখেন। তখন আমাদের মারধর শুরু করে এবং বলে, গুলি করে মেরে ফেলব। তারপর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয়। এ সময় আমরা চিৎকার শুরু করি।
তাদের চিৎকার শুনে গাড়ি থামান এক ব্যক্তি। তিনি জানান, আমি দেখলাম র্যাব লেখা কোট পরে ৩-৪ জন এই দুই ব্যক্তির সঙ্গে টানাহেঁচড়া করছে। তাদের কোমরে অস্ত্র। আমি এগিয়ে গেলে তারা সরে যেতে বলে। তখন আমি ৯৯৯-এ কল করে পুলিশকে বিষয়টি জানাই।
এ সময় গুলশান ডিপ্লোমেটিক জোনের ডিউটি শেষে সে পথেই মোটরসাইকেলে ফিরছিলেন সাকিব নামে এক পুলিশ সদস্য। ভুক্তভোগীদের আকুতি শুনে তিনিও এগিয়ে আসেন সহায়তায়।
যমুনা টেলিভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ সদস্য সাকিব বলেন- আমি এগিয়ে গেলে র্যাবের কোট পরিহিত ব্যক্তিরা আইডি কার্ড দেখায়। আইডি কার্ডের মেয়াদ ছিল না। তখন আমার সন্দেহ হয়। পরে আমাকেও তারা গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে চায়। একপর্যায়ে অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়। সে সময় আমরা তাদের সঙ্গে থাকা একজনকে ধরে ফেলি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ভুক্তোভোগীদের ভাড়া করা গাড়ির চালককে নিয়ে যায়। তবে পালিয়ে যাওয়ার সময় চক্রের এক সদস্যকে জনতা ধরে ফেলে।
আটক ব্যক্তি জানান, তার নাম জয়। বাড়ি দিনাজপুর। তিনি টঙ্গীতে একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করেন। তার দাবি, মমিন নামে এক র্যাব সদস্যের সঙ্গে মাদক সংক্রান্ত কিছু কাজে করতে গিয়ে তার পরিচয় হয়। পরে মমিন তাকে দিয়ে আরও কিছু কাজ করায়। ঘটনার দিন একটি অপারেশনের কথা বলে মহাখালী ফ্লাইওভারে নিয়ে আসেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জয় নামের ব্যক্তিটিও তাদের মারধর করেছে।
ঘটনাস্থল থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পরে বনানী থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসে। তাদের চাবিতে হ্যান্ডকাফ থেকে মুক্তি মেলে ভুক্তভোগীদের। সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।
থানায় যায় যমুনা নিউজের আরেকটি টিম। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি পুলিশ।
তবে আজ (শনিবার) বনানী থানার ওসি জয়সহ মোট তিনজনকে গ্রেফতারের কথা জানান। এদের একজন র্যাব সদস্য বলে তিনি স্বীকার করলেও বিস্তারিত আর কিছু বলতে চাননি।