শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন
গ্রেফতার ও কারাবাসের তথ্য সরকারের কাছে গোপন করায় আইনি নোটিশ
শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলায় গ্রেফতার ও কারাবাসের তথ্য গোপন করে ১৯ বছর চাকরি, পদোন্নতি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের অভিযোগে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে তিন সচিব, দুই মহাপরিচালকসহ ৮ জনকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের অ্যাডভোকেট মো. খবির উদ্দিন ভূইয়া এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশে বলা হয়, তথ্য গোপন এবং সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সুযোগ-সুবিধা আদায় করার অপরাধে ৭ ও ৮ নম্বর নোটিশ গ্রহীতার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না- তা নোটিশ পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে নোটিশদাতাকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। না জানালে ওই সময়ের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজাকে।
গত ২২ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে জনস্বার্থে লিগ্যাল নোটিশটি দেওয়া হয়।
নোটিশে খবির উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘নোটিশ গ্রহীতা ৭নং অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল ও ৮নং অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজা নোটিশ গ্রহীতা শিশু গৃহকর্মীকে গুরুতর দগ্ধ করে গ্রেফতার হয়ে হাজতবাস করেছিলেন। ফৌজদারি মামলা ও কারাবাসের তথ্য কর্তৃপক্ষকে জানানোর বিধান থাকলেও ওই তথ্য লুকিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর কারাবাসের দিনগুলো ব্যক্তিগত, পারিবারিক কারণে কর্মস্থলে অনুপস্থিত দেখিয়ে অর্জিত ছুটি মঞ্জুর করান। অতঃপর ১৯ বছর কর্মরত থেকে দফায় দফায় পদোন্নতি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন।’
‘সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী আপনি ৭ নম্বর নোটিশ গ্রহীতা এবং মামলার ২ নম্বর আসামি গ্রেফতার হওয়ার দিন থেকে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিন পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত হিসেবে থাকার কথা। সেই সময়ে আপনার শুধু খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য ছিল। ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হয়ে হাজতবাসের তথ্য গোপন করায় আপনি কখনোই সাময়িক বরখাস্ত হননি এবং সম্পূর্ণ বেতনভাতা নিয়েছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হয়ে হাজতবাসের তথ্য লুকিয়ে আপনি ১৯ বছরে পর্যায়ক্রমে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন এবং গত ১ জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (চিকিৎসা শিক্ষা) দায়িত্ব পালন করছেন’, বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী আপনি ৮ নম্বর নোটিশ গ্রহীতা এবং মামলার ১ নম্বর আসামির ক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে।
৭ ও ৮ নম্বর নোটিশ গ্রহীতা দুটি গর্হিত অপরাধ করেছেন। একটি হলো তথ্য গোপন এবং অন্যটি সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সুযোগ-সুবিধা আদায় করা। এই অপরাধের জন্য তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও দণ্ড হওয়া প্রয়োজনীয়তা থাকলেও ১ থেকে ৬ নম্বর নোটিশ গ্রহীতা তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করাটা সরকারি কর্মচারী বিধিমালা লঙ্ঘন এবং জনস্বার্থবিরোধী। তারা সরকারি চাকরি করার যোগ্যতা হারিয়েছেন এবং যে বেতনভাতা গ্রহণ করছেন তা জনগণের অর্থ আত্মসাতের শামিল। আর এ কারণেই এই আইনি নোটিশ বলে উল্লেখ করেছেন ওই আইনজজীবী।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বিন্নাকুড়ি গ্রামের মাতৃহীন শিশু গৃহকর্মী মোস্তাকিনাকে ২০০৪ সালে ১ মে গরম ইস্তিরি দিয়ে দগ্ধ করেছিলেন চিকিৎসক দম্পতি ডা. ফাতেমা দোজা ও ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। ফাতেমা তখন ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আর জামাল ছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের রেজিস্ট্রার। ওই ঘটনার পরদিন ২ মে তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছিলেন রমনা থানার তৎকালীন এসআই মো. আবদুল্লাহেল বাকী। সেদিনই ঢাকার পরীবাগ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরদিন আদালতের আদেশে দম্পতিকে পাঠানো হয় জেলহাজতে।
গ্রেফতার ও কারাবাসের তথ্য সরকারের কাছে গোপন করায় আইনি নোটিশ
শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন
যুগান্তর প্রতিবেদন
০৯ জুন ২০২৩, ১৭:১২:১৭ | অনলাইন সংস্করণ
শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলায় গ্রেফতার ও কারাবাসের তথ্য গোপন করে ১৯ বছর চাকরি, পদোন্নতি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের অভিযোগে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে তিন সচিব, দুই মহাপরিচালকসহ ৮ জনকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের অ্যাডভোকেট মো. খবির উদ্দিন ভূইয়া এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশে বলা হয়, তথ্য গোপন এবং সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সুযোগ-সুবিধা আদায় করার অপরাধে ৭ ও ৮ নম্বর নোটিশ গ্রহীতার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না- তা নোটিশ পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে নোটিশদাতাকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। না জানালে ওই সময়ের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজাকে।
গত ২২ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে জনস্বার্থে লিগ্যাল নোটিশটি দেওয়া হয়।
নোটিশে খবির উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘নোটিশ গ্রহীতা ৭নং অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল ও ৮নং অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজা নোটিশ গ্রহীতা শিশু গৃহকর্মীকে গুরুতর দগ্ধ করে গ্রেফতার হয়ে হাজতবাস করেছিলেন। ফৌজদারি মামলা ও কারাবাসের তথ্য কর্তৃপক্ষকে জানানোর বিধান থাকলেও ওই তথ্য লুকিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর কারাবাসের দিনগুলো ব্যক্তিগত, পারিবারিক কারণে কর্মস্থলে অনুপস্থিত দেখিয়ে অর্জিত ছুটি মঞ্জুর করান। অতঃপর ১৯ বছর কর্মরত থেকে দফায় দফায় পদোন্নতি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন।’
‘সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী আপনি ৭ নম্বর নোটিশ গ্রহীতা এবং মামলার ২ নম্বর আসামি গ্রেফতার হওয়ার দিন থেকে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিন পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত হিসেবে থাকার কথা। সেই সময়ে আপনার শুধু খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য ছিল। ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হয়ে হাজতবাসের তথ্য গোপন করায় আপনি কখনোই সাময়িক বরখাস্ত হননি এবং সম্পূর্ণ বেতনভাতা নিয়েছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হয়ে হাজতবাসের তথ্য লুকিয়ে আপনি ১৯ বছরে পর্যায়ক্রমে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন এবং গত ১ জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (চিকিৎসা শিক্ষা) দায়িত্ব পালন করছেন’, বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী আপনি ৮ নম্বর নোটিশ গ্রহীতা এবং মামলার ১ নম্বর আসামির ক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে।
৭ ও ৮ নম্বর নোটিশ গ্রহীতা দুটি গর্হিত অপরাধ করেছেন। একটি হলো তথ্য গোপন এবং অন্যটি সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সুযোগ-সুবিধা আদায় করা। এই অপরাধের জন্য তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও দণ্ড হওয়া প্রয়োজনীয়তা থাকলেও ১ থেকে ৬ নম্বর নোটিশ গ্রহীতা তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করাটা সরকারি কর্মচারী বিধিমালা লঙ্ঘন এবং জনস্বার্থবিরোধী। তারা সরকারি চাকরি করার যোগ্যতা হারিয়েছেন এবং যে বেতনভাতা গ্রহণ করছেন তা জনগণের অর্থ আত্মসাতের শামিল। আর এ কারণেই এই আইনি নোটিশ বলে উল্লেখ করেছেন ওই আইনজজীবী।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বিন্নাকুড়ি গ্রামের মাতৃহীন শিশু গৃহকর্মী মোস্তাকিনাকে ২০০৪ সালে ১ মে গরম ইস্তিরি দিয়ে দগ্ধ করেছিলেন চিকিৎসক দম্পতি ডা. ফাতেমা দোজা ও ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। ফাতেমা তখন ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আর জামাল ছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের রেজিস্ট্রার। ওই ঘটনার পরদিন ২ মে তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছিলেন রমনা থানার তৎকালীন এসআই মো. আবদুল্লাহেল বাকী। সেদিনই ঢাকার পরীবাগ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরদিন আদালতের আদেশে দম্পতিকে পাঠানো হয় জেলহাজতে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023