দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে দেশ কতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষায় মাঝে মাঝে এ সংক্রান্ত তথ্য উঠে আসে। বস্তুত দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দু’ভাবেই। দেশে প্রকল্পের অর্থ নয়ছয় করা যেন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত এ সংক্রান্ত খবর আসে। দুর্নীতির কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্ব হয়, কাজ হয় নিুমানের, সেই সঙ্গে অপচয় হয় সরকারি অর্থের।
দুর্নীতি সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন, যখন কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা বা দাতা সংস্থা তার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে সহায়তা বাতিল ঘোষণা করে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল সংস্থার (ইউনিসেফ) সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে তেমনটিই ঘটেছে। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের জন্য নেয়া এ প্রকল্পে দুর্নীতি ও চেক জালিয়াতির অভিযোগে ইউনিসেফ ১২৯ কোটি টাকার অনুদান বাতিল করেছে। উল্লেখ্য, অনুদান হল প্রকৃত সাহায্য, ঋণ নয়। এ অর্থায়ন বাতিল হওয়া রাষ্ট্রের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিশেষত শিশুদের জন্য একটি বড় ক্ষতি বৈকি। ২০১২ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা আগামী বছর জুনে। পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) জানাচ্ছে, গত মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ সময় অতিবাহিত হয়েছে। সে তুলনায় বাস্তবায়নের গতি হতাশাজনক। এ সময়ের মধ্যে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৪৩ শতাংশ। কার্যক্রমভিত্তিক বাস্তব অগ্রগতি গড়ে মাত্র ৪৬ শতাংশ। ব্যয় হয়েছে ১৩৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রকল্প পরিচালক যুগান্তরকে বলেছেন, আর্থিক অনিয়মসহ নানা কারণে প্রকল্পে ইউনিসেফের অর্থ ছাড়ে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে এর বাস্তবায়নে তৈরি হয়েছে স্থবিরতা।
প্রতিবছর বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এসব দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়, তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আদৌ শাস্তি দেয়া হয় কিনা- এ সংক্রান্ত তথ্যের সামান্যই গণমাধ্যমে আসে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হলে দেশে দুর্নীতির প্রকোপ যে উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পেত না, তা বলাই বাহুল্য। সত্য হল, দুর্নীতিবাজরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় কম ক্ষেত্রেই। ফলে দুর্নীতি চলে আসছে মহাসমারোহে। জানা গেছে, ইউনিসেফের সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির দুর্নীতির তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আমরা আশা করব, এর মাধ্যমে প্রকৃত দুর্নীতিবাজরা চিহ্নিত হবে। তাদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে। দুর্নীতিবাজরা দেশের শত্রু, তাদের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শনের সুযোগ নেই।