দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের প্রথম সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল করা হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে এক হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। এই অর্থ দিয়ে হাসপাতালটির অভ্যন্তরে ২টি বেজমেন্টসহ ১৩তলা ফাউন্ডেশনের একটি ভবন নির্মিত হবে। এ ছাড়া অত্যাধুনিক মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র কেনা হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।
সভায় মোট ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এতে মোট ব্যয় হবে চার হাজার ৮৫৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৭৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে দুই হাজার ২০৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল একনেক সভার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হসপিটাল প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৩৬৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টি সুপার স্পেশালাইজড হলে জনগণের চাহিদা পূরণে স্বাস্থ্যসেবার আওতা বৃদ্ধি পাবে। মেডিকেল কেয়ার ও ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের মাধ্যমে সেন্টার বেজড হেলথ কেয়ার ডেলিভারি সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা হবে। এতে দেশেই জটিল রোগের উন্নত সেবা নিশ্চিত করে বিদেশ নির্ভরতা কমানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা খাতের পেশাজীবীদের দক্ষতা বাড়ানো, দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ক্লিনিক্যাল রিসার্চের মাধ্যমে এভিডেন্স বেজড মেডিসিন চালু এবং কার্যকর রেফারেল লিংকেজ তৈরি করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের আওতায় বিএসএমএমইউর ভেতরে দুটি বেজমেন্টসহ একটি ১৩তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে হাসপাতালের জন্য আধুনিক মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র সংগ্রহ করা হবে। কামাল জানান, ভূমিকম্পের ভয়াবহতার দিকটি বিবেচনায় নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভবন রক্ষার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। সরকারি অনেক ভবন জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলো রেট্রোফিটিংয়ের মাধ্যমে ভূমিকম্পসহনীয় করে গড়ে তোলা যায়, যা পুনর্নির্মাণ করলে নতুন করে নির্মাণের চেয়ে ব্যয় অনেক কম। এ বিবেচনায় সরকারি জনগুরুত্বপূর্ণ ভবনের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনগুলোকে এ প্রকল্পের আওতায় রেট্রোফিটিং করার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। তিনি জানান, প্রকল্পের আওতায় রাজধানী ও এর আশপাশে খিলগাঁও ফায়ার স্টেশন, মিরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতর, তেজগাঁও ফায়ার স্টেশন, ডেমরা ফায়ার স্টেশন, কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশন, লালবাগ ফায়ার স্টেশন, সাভার ফায়ার স্টেশন, বারিধারা ফায়ার স্টেশন, ধামরাই ফায়ার স্টেশন এবং কেরানীগঞ্জ ফায়ার স্টেশন ভবন রক্ষার কাজ করা হবে।
অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে : টাঙ্গাইলে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন এবং ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালকে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীতকরণ। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩৫ কোটি ১০ লাখ টাকা।
এ ছাড়া ২৪৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প, ৯০৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিতাস গ্যাস ফিল্ডে গ্যাস উদ্গীরণ নিয়ন্ত্রণ এবং এ ফিল্ডের মূল্যায়ন ও উন্নয়ন প্রকল্প; ৬১৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প; ২৫৪ কোটি ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প; ৫৭১ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরাঞ্চলের ভবন সুরক্ষা প্রকল্প; ১৪৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে জাতীয় স্যানিটেশন প্রকল্প; ১০৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ফরিদপুর (বদরপুর) সালথা-সোনাপুর-মুকসুদপুর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।