jugantor
পলাতক থেকেও কিভাবে খালাস পান শাহ আলম পুত্র সানবীর?
আসামি পলাতক থাকলে প্রমাণ হয় সে দোষী

  আইন বিশেষজ্ঞ  

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ০০:০০:০০  | 

যুগান্তর রিপোর্ট

পলাতক অবস্থায় সাব্বির হত্যা মামলা থেকে কিভাবে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক শাহ আলমের পুত্র সাফিয়াত সোবহান সানবীর খালাস পেয়েছে- সে বিষয়টি এখন সামনে চলে এসেছে। তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে পুরো বিচার প্রক্রিয়া। বিচারক মোতাহার হোসেন কি পরিমাণ ঘুষ নিয়ে সানবীরকে খালাস দিলেন তাও তদন্ত করা হচ্ছে। সাব্বির হত্যা ধামাচাপা দিতে বসুন্ধরা গ্র“প ঘটনার পরপর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে ২১ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিল, যা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তেও উঠে এসেছে। তবে বসুন্ধরা গ্র“প বাবরকে অর্থ দিয়ে হত্যাকাণ্ডটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করলেও সিআইডির তদন্তে শাহ আলমের ছেলে সানবীরসহ তিনজন অভিযুক্ত হন। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়। চার্জশিটে তাদের পলাতক আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মামলাটির বিচার করেন ঢাকার ৪নং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোতাহার হোসেন। বিচার চলাকালে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে শাহ আলমের ছেলে সানবীর পলাতক থাকলেও তাকে খালাস দেন বিচারক মোতাহার হোসেন। আর এ মামলা থেকে রক্ষা পেতে বসুন্ধরা গ্র“প বিচারক মোতাহার হোসেনকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়েছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। যে কারণে বসুন্ধরা গ্র“পের অর্থ ও হিসাব বিভাগের এজিএম পবিত্র সরকার এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ঢাকার একটি আদালতের এপিপি কাজী শাহানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।

সূত্র জানায়, সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর ঘুষ লেনদেনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এপিপি কাজী শাহানাকে প্রথম দফায় বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাকে আগামী রোববার আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে। এর বাইরে ওই ট্রাইব্যুনালের পেশকার আবুল কালাম আজাদ, আরিফুল ইসলাম, স্টেনোগ্রাফার মোঃ নূরুল ইসলাম, ড্রাইভার সোহরাব হোসেন এবং দেহরক্ষী বাদল দেওয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। দ্বিতীয় দফায় মামলার রায় থেকে খালাস পেতে আদালতের এ চক্রটিকেও ব্যবহার করা হয় বলে জানা গেছে। এরাও ঘুষের একটি অংশের ভাগ পেয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার কোনো আসামি অপরাধ মাথায় নিয়ে পলাতক থাকা অবস্থায় আইনের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা দেখিয়ে আত্মসমর্পণ না করে কিভাবে রায় থেকে খালাস পায়? ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আদালতে উপযুক্ত সাক্ষীকে হাজির না করা কিংবা যে সাক্ষীর জবানবন্দির ভিত্তিতে অপরাধ প্রমাণিত হবে তাকে হাজির হতে না দেয়াসহ তদন্তে কোনো ধরনের ফাঁকফোকর রেখে দেয়া হলে আসামিরা সে সুযোগটি নেয়ার চেষ্টা করে থাকে। কোনো কোনো আইনজীবী বলেছেন, হত্যা মামলার কোনো আসামি আদালতকে অবজ্ঞা করে কিংবা সাজা হওয়ার ভয়ে যদি আÍসমর্পণ না করে এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে বিচারক চাইলে আসামিকে সাজা দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট বাহারুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ এলে অবশ্যই তাকে সাজা দিতে হবে। তবে ঠিকমতো সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে কিনা সেটি বিবেচ্য বিষয়। তিনি বলেন, আসামির বিরুদ্ধে মোটামুটি সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকলেই এটা সমর্থন করে যে, আসামি সাজা পাওয়ার ভয়ে পালিয়ে আছে।

ঘটনার পর আসামি পালিয়ে যাওয়া প্রমাণ করে, সে অপরাধ করেছে। তবে এর সপক্ষে আদালতের কাছে তথ্য-প্রমাণ থাকতে হবে। অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, হত্যা মামলায় পলাতক আসামির বিরুদ্ধে বিচার করার আগে দেখতে হবে তাকে পলাতক ঘোষণা করে আদালত থেকে কোনো ধরনের নোটিশ বা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে কিনা। যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটি দেখার পর আসামি যদি হাজির না হয় প্রাথমিকভাবে ধরে নেয়া যায় সে অপরাধমূলক ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, মামলা প্রমাণের দায়িত্ব রাষ্ট্রপক্ষের। মামলার শুনানি চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন কিনা সেটিও বিবেচ্য বিষয়। এছাড়া আসামিকে খালাস দেয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে কিনা সেটিও দেখতে হবে। আইনজীবীরা পলাতক আসামির বিচার প্রসঙ্গে যে অভিমত দিয়েছেন তাতে দেখা যায়, সাব্বির হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে। সাব্বির হত্যা মামলায় আইন তার নিজস্ব গতিতে চলেনি। বিচারক নিজেই যেখানে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন, সেখানে তার আশপাশের লোকজনও সেই সুযোগ নিয়েছে।

সূত্র জানায়, দুদক এ ঘুষ লেনদেনের প্রাথমিক তথ্য পেয়ে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ তালিকা আরও দীর্ঘ হবে। অনেক রাঘব বোয়ালও জড়িয়ে যেতে পারেন বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।

একজন এপিপিকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আরও কেউ জড়িত রয়েছেন কিনা সে তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে দুদক।

২০০৬ সালের ৪ জুলাই রাতে গুলশানের একটি বাড়িতে হত্যা করা হয় বসুন্ধরা টেলিকমিউনিকেশন্স নেটওয়ার্ক লিমিটেডের পরিচালক হুমায়ুন কবির সাব্বিরকে। এর তিনদিন পর নিহত সাব্বিরের ভগ্নিপতি এএফএম আসিফ বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তখন এ মামলা থেকে রক্ষা পেতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে ২১ কোটি টাকা ঘুষ দেয় বসুন্ধরা গ্র“প, যা পরে দুদকের তদন্তে প্রমাণিত হলে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক রূপক কুমার সাহা ২০০৮ সালের ২৪ এপ্রিল বসুন্ধরার মালিক শাহ আলম, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয় বলে জানা যায়।

এর আগে ঘুষের ঘটনায় দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কাসেম বাদী হয়ে ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১০। অপরদিকে সাব্বির হত্যা মামলার তদন্ত করে সিআইডি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট মোঃ আরমান আলী ২০০৮ সালের ১২ মে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন। এতে বলা হয়, গুলশানের ১০৪ নম্বর সড়কে বসুন্ধরা গ্র“পের মালিকানাধীন ৩/জি নম্বর বাসার ছাদ থেকে সাব্বিরকে ফেলে হত্যা করা হয়। সাব্বির হত্যা মামলায় বসুন্ধরার মালিক আহমদ আকবর সোবহান শাহ আলমের ছেলে সাফিয়াত সোবহান সানবীর ছিলেন প্রধান আসামি। তিনি ছাড়াও নূরে আলম ও হুমায়ুন কবীর নামে আরও দু’জন আসামি পলাতক ছিলেন। বাকি দুই আসামি খায়রুল হাসান উজ্জ্বল ও শামসুদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সাব্বির খুন হওয়ার কিছুদিন পর সানবীর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর তাকে দেশত্যাগে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গ্রেফতার হওয়ার পর বাবর জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, তিনি সানবীরকে খুনের মামলা থেকে বাঁচাতে বসুন্ধরা গ্র“পের মালিকের কাছ থেকে ২১ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে দুদকে একটি মামলা বিচারাধীন। সাব্বির হত্যা মামলায় ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ উপযুক্ত সাক্ষী হাজির করতে ‘ব্যর্থ হওয়ায়’ বসুন্ধরা টেলিকমের পরিচালক সাব্বির হত্যা মামলার পাঁচ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দেন বিচারক মোঃ মোতাহার হোসেন। আবার তিনিই গত ১৭ নভেম্বর বিদেশে অর্থ পাচার মামলায় বেকসুর খালাস দেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে। এটি ছিল তার চাকরি জীবনের শেষ রায়। এ রায়ের পর মোতাহার বিদেশ চলে যান। ২০ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।



সাবমিট

পলাতক থেকেও কিভাবে খালাস পান শাহ আলম পুত্র সানবীর?

আসামি পলাতক থাকলে প্রমাণ হয় সে দোষী
 আইন বিশেষজ্ঞ 
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ১২:০০ এএম  | 
যুগান্তর রিপোর্ট

পলাতক অবস্থায় সাব্বির হত্যা মামলা থেকে কিভাবে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক শাহ আলমের পুত্র সাফিয়াত সোবহান সানবীর খালাস পেয়েছে- সে বিষয়টি এখন সামনে চলে এসেছে। তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে পুরো বিচার প্রক্রিয়া। বিচারক মোতাহার হোসেন কি পরিমাণ ঘুষ নিয়ে সানবীরকে খালাস দিলেন তাও তদন্ত করা হচ্ছে। সাব্বির হত্যা ধামাচাপা দিতে বসুন্ধরা গ্র“প ঘটনার পরপর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে ২১ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিল, যা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তেও উঠে এসেছে। তবে বসুন্ধরা গ্র“প বাবরকে অর্থ দিয়ে হত্যাকাণ্ডটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করলেও সিআইডির তদন্তে শাহ আলমের ছেলে সানবীরসহ তিনজন অভিযুক্ত হন। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়। চার্জশিটে তাদের পলাতক আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মামলাটির বিচার করেন ঢাকার ৪নং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোতাহার হোসেন। বিচার চলাকালে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে শাহ আলমের ছেলে সানবীর পলাতক থাকলেও তাকে খালাস দেন বিচারক মোতাহার হোসেন। আর এ মামলা থেকে রক্ষা পেতে বসুন্ধরা গ্র“প বিচারক মোতাহার হোসেনকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়েছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। যে কারণে বসুন্ধরা গ্র“পের অর্থ ও হিসাব বিভাগের এজিএম পবিত্র সরকার এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ঢাকার একটি আদালতের এপিপি কাজী শাহানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।

সূত্র জানায়, সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর ঘুষ লেনদেনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এপিপি কাজী শাহানাকে প্রথম দফায় বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাকে আগামী রোববার আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে। এর বাইরে ওই ট্রাইব্যুনালের পেশকার আবুল কালাম আজাদ, আরিফুল ইসলাম, স্টেনোগ্রাফার মোঃ নূরুল ইসলাম, ড্রাইভার সোহরাব হোসেন এবং দেহরক্ষী বাদল দেওয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। দ্বিতীয় দফায় মামলার রায় থেকে খালাস পেতে আদালতের এ চক্রটিকেও ব্যবহার করা হয় বলে জানা গেছে। এরাও ঘুষের একটি অংশের ভাগ পেয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার কোনো আসামি অপরাধ মাথায় নিয়ে পলাতক থাকা অবস্থায় আইনের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা দেখিয়ে আত্মসমর্পণ না করে কিভাবে রায় থেকে খালাস পায়? ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আদালতে উপযুক্ত সাক্ষীকে হাজির না করা কিংবা যে সাক্ষীর জবানবন্দির ভিত্তিতে অপরাধ প্রমাণিত হবে তাকে হাজির হতে না দেয়াসহ তদন্তে কোনো ধরনের ফাঁকফোকর রেখে দেয়া হলে আসামিরা সে সুযোগটি নেয়ার চেষ্টা করে থাকে। কোনো কোনো আইনজীবী বলেছেন, হত্যা মামলার কোনো আসামি আদালতকে অবজ্ঞা করে কিংবা সাজা হওয়ার ভয়ে যদি আÍসমর্পণ না করে এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে বিচারক চাইলে আসামিকে সাজা দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট বাহারুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ এলে অবশ্যই তাকে সাজা দিতে হবে। তবে ঠিকমতো সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে কিনা সেটি বিবেচ্য বিষয়। তিনি বলেন, আসামির বিরুদ্ধে মোটামুটি সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকলেই এটা সমর্থন করে যে, আসামি সাজা পাওয়ার ভয়ে পালিয়ে আছে।

ঘটনার পর আসামি পালিয়ে যাওয়া প্রমাণ করে, সে অপরাধ করেছে। তবে এর সপক্ষে আদালতের কাছে তথ্য-প্রমাণ থাকতে হবে। অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, হত্যা মামলায় পলাতক আসামির বিরুদ্ধে বিচার করার আগে দেখতে হবে তাকে পলাতক ঘোষণা করে আদালত থেকে কোনো ধরনের নোটিশ বা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে কিনা। যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটি দেখার পর আসামি যদি হাজির না হয় প্রাথমিকভাবে ধরে নেয়া যায় সে অপরাধমূলক ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, মামলা প্রমাণের দায়িত্ব রাষ্ট্রপক্ষের। মামলার শুনানি চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন কিনা সেটিও বিবেচ্য বিষয়। এছাড়া আসামিকে খালাস দেয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে কিনা সেটিও দেখতে হবে। আইনজীবীরা পলাতক আসামির বিচার প্রসঙ্গে যে অভিমত দিয়েছেন তাতে দেখা যায়, সাব্বির হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে। সাব্বির হত্যা মামলায় আইন তার নিজস্ব গতিতে চলেনি। বিচারক নিজেই যেখানে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন, সেখানে তার আশপাশের লোকজনও সেই সুযোগ নিয়েছে।

সূত্র জানায়, দুদক এ ঘুষ লেনদেনের প্রাথমিক তথ্য পেয়ে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ তালিকা আরও দীর্ঘ হবে। অনেক রাঘব বোয়ালও জড়িয়ে যেতে পারেন বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।

একজন এপিপিকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আরও কেউ জড়িত রয়েছেন কিনা সে তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে দুদক।

২০০৬ সালের ৪ জুলাই রাতে গুলশানের একটি বাড়িতে হত্যা করা হয় বসুন্ধরা টেলিকমিউনিকেশন্স নেটওয়ার্ক লিমিটেডের পরিচালক হুমায়ুন কবির সাব্বিরকে। এর তিনদিন পর নিহত সাব্বিরের ভগ্নিপতি এএফএম আসিফ বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তখন এ মামলা থেকে রক্ষা পেতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে ২১ কোটি টাকা ঘুষ দেয় বসুন্ধরা গ্র“প, যা পরে দুদকের তদন্তে প্রমাণিত হলে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক রূপক কুমার সাহা ২০০৮ সালের ২৪ এপ্রিল বসুন্ধরার মালিক শাহ আলম, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয় বলে জানা যায়।

এর আগে ঘুষের ঘটনায় দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কাসেম বাদী হয়ে ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১০। অপরদিকে সাব্বির হত্যা মামলার তদন্ত করে সিআইডি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট মোঃ আরমান আলী ২০০৮ সালের ১২ মে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন। এতে বলা হয়, গুলশানের ১০৪ নম্বর সড়কে বসুন্ধরা গ্র“পের মালিকানাধীন ৩/জি নম্বর বাসার ছাদ থেকে সাব্বিরকে ফেলে হত্যা করা হয়। সাব্বির হত্যা মামলায় বসুন্ধরার মালিক আহমদ আকবর সোবহান শাহ আলমের ছেলে সাফিয়াত সোবহান সানবীর ছিলেন প্রধান আসামি। তিনি ছাড়াও নূরে আলম ও হুমায়ুন কবীর নামে আরও দু’জন আসামি পলাতক ছিলেন। বাকি দুই আসামি খায়রুল হাসান উজ্জ্বল ও শামসুদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সাব্বির খুন হওয়ার কিছুদিন পর সানবীর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর তাকে দেশত্যাগে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গ্রেফতার হওয়ার পর বাবর জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, তিনি সানবীরকে খুনের মামলা থেকে বাঁচাতে বসুন্ধরা গ্র“পের মালিকের কাছ থেকে ২১ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে দুদকে একটি মামলা বিচারাধীন। সাব্বির হত্যা মামলায় ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ উপযুক্ত সাক্ষী হাজির করতে ‘ব্যর্থ হওয়ায়’ বসুন্ধরা টেলিকমের পরিচালক সাব্বির হত্যা মামলার পাঁচ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দেন বিচারক মোঃ মোতাহার হোসেন। আবার তিনিই গত ১৭ নভেম্বর বিদেশে অর্থ পাচার মামলায় বেকসুর খালাস দেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে। এটি ছিল তার চাকরি জীবনের শেষ রায়। এ রায়ের পর মোতাহার বিদেশ চলে যান। ২০ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।



 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র