jugantor
ঢাবিতে ভর্তি জালিয়াতি

  মাহমুদুল হাসান নয়ন  

১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ০০:০০:০০  | 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এবার কমপক্ষে ১২০ জন পরীক্ষার্থী জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এদের প্রায় সবাই চারটি কোচিং সেন্টারের সহায়তায় প্রযুক্তির অবৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে জালিয়াতি করেছে। এভাবে পাস করে আসা শিক্ষার্থীদের এই প্রথমবারের মতো ভর্তির আগে আরও একবার পরীক্ষার মুখোমুখি হতে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে জালিয়াত চক্রের বিভিন্ন সময়ের চুক্তি, পরীক্ষা-পরবর্তী বক্তব্য ও ফলাফল প্রকাশসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথোপকথনের একাধিক অডিও রেকর্ড থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্যগুলো যুগান্তরের হাতে এসেছে। ভর্তি পরীক্ষায় অবৈধ পথ অনুসরণ করেছে এমন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়েছে যুগান্তর প্রতিনিধির। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেয়া সেই শিক্ষার্থীর বক্তব্য এবং অডিওতে পাওয়া তথ্যের মধ্যে মিল রয়েছে। অডিও এবং পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক যুগান্তরকে বলেন, জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কেউই উত্তীর্ণ হয়নি সেই কথা আমরা বলতে পারছি না। দু’একটা জালিয়াত চক্র সফল হতে পারে। তবে জালিয়াতির মাধ্যমে যারা উত্তীর্ণ হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়া তাদের জন্য সহজ হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ প্রথমবারের মতো ভর্তির আগে প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে যারা ভালো করবে তারাই ভর্তির সুযোগ পাবে। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এমন তথ্য প্রশাসনের কাছেও আসছে। যাদের নামে এমন অভিযোগ পাওয়া যাবে প্রশাসন তাদের চ্যালেঞ্জ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কোচিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সরকারি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানানো হবে।

চলতি বছরে ভর্তি পরীক্ষার হলে জালিয়াতির দায়ে আটক সানজানা বিনতে বশির বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দেয়া মুচলেকায় উল্লেখ করে, ‘ইউনিএইড’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিংয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল্লাহর (ইউনিএইড থেকে প্রকাশিত এক্সট্রা পাওয়ার বইয়ের লেখক) সঙ্গে তার তিন লাখ টাকার বিনিময়ে ভর্তি বিষয়ে চুক্তি হয়। টিচার্স ট্রেইনিং কলেজ থেকে আটক এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং ‘প্যারাগনের’ মাধ্যমে জালিয়াতিতে জড়িয়েছেন বলে জানায়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং ‘আইকন’র কয়েকটি চক্র এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলী।

‘গ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বেশ কয়েকটি জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। আমরা তাদেও কয়েকজনকে আটক করেছি। এরপরও যারা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তিনি বলেন, এ ধরনের শিক্ষার্থী যাতে ভর্তি না হতে পারে সেজন্য আমরা একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার নেব। এক্ষেত্রে মেধাক্রমে প্রথম ৩০০ জন এবং এসএসসি ও এইচএসসিতে কম স্কোর নিয়ে যারা ভর্তি পরীক্ষায় অধিক নম্বর পেয়েছে তাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার বিষয়ে প্রাধান্য দেয়া হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন এমন এক অধ্যাপক যুগান্তরকে বলেন, প্রযুক্তির অবৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে একশ’র বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালে এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যারা জালিয়াতি করেছে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে আমরা আটকও করেছি। বাকিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছি। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যুগান্তরের হাতে আসা একটি অডিও রেকর্ডে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়েছে এমন এক ছাত্রী তার বান্ধবীর অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলছেন এ ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রী তার বান্ধবীর অভিভাবককে বলেন, ‘এই কাজে কোনো রিস্ক নেই, মেয়ে হওয়ায় এ রিস্ক আরও কম। কানে থাকা ব্লুটুথ ডিভাইসের মাধ্যমেই পরীক্ষা দিয়ে আমি চান্স পেয়েছি। যদিও আমার পরীক্ষার হলে ২ জন শিক্ষক গার্ডে ছিলেন কিন্তু তাদের ম্যানেজ করেই পরীক্ষা দিয়েছি। কারণ শিক্ষকরা তো আর সব সময়ই এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকেন না। অনেক সময় তারা গল্পও করেন।’ তার কোচিং সেন্টারের মাধ্যমেই এভাবে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ হয়েছে বলে পরীক্ষার্থী উল্লেখ করে।

কত টাকার চুক্তিতে তারা কাজটি করে দিচ্ছে এ সংক্রান্ত বিষয়ে অডিওতে যে তথ্য আছে তা হল, ‘টাকার অ্যামাউন্ট হল চার লাখ। আগে সাড়ে তিন লাখ ছিল। এছাড়া চান্স পেলে টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তার জন্য তারা (চক্রটি) বাসায় এসে মেইন মার্কশিট নিয়ে নেবে এবং সেই সময়েই ডিভাইসটি দিয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে একটা কথা হল, যে সময় আসবে তখন তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা তাদের দিতে হবে; ডিভাইসের খরচ বাবদ। নকিয়া-২২০ মডেলের একটা মোবাইল কিনতে হবে।’ মোবাইলটির দাম ১৪৫০ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়। ‘কাজ শেষ হলে তারা এটি (মোবাইলটি) নিয়ে যাবে। এমনকি মোবাইলটি আর ফেরত দেয়া হবে না। কারণ ওই মোবাইলটা দিয়েই শুধু নেটওয়ার্কের লাইন পাওয়া যাবে। অন্য কোনো মোবাইল দিয়ে হবে না। সবকিছুই ওই সেট দিয়ে হবে।’

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কেন্দ্র হলে এভাবে ভর্তির সুযোগ নেই উল্লেখ করে অডিও রেকর্ডে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পরীক্ষার কেন্দ্র হলে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে বেগ পেতে হয়। আর এটি অনেক রিস্কি (ঝুঁকিপূর্ণ)।’ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভেতর এ ধরনের জালিয়াতি করতে গিয়ে চক্রটি সফল হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয় অডিওটিতে।

প্রায় একই ধরনের আলাদা একটি অডিওতে এভাবে ভর্তি প্রক্রিয়াটি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্যাপারে কথোপকথনে অন্য এক চিত্র ফুটে ওঠে। এতে বলা হয়, ‘রিস্ক তো একটু থাকবেই।’ পরীক্ষার আগের দিন বাসায় এসে চক্রের সদস্যরা তার কাছে ডিভাইস পৌঁছে দেয়। সুন্দরভাবে ডিভাইস তারা বুঝিয়ে দিয়ে যাবে। তবে এ প্রক্রিয়াটি কখনোই ফোনে সম্পন্ন করা যাবে না। কারণ এক্ষেত্রে একটি রিস্ক থেকে যায়। তারা পরীক্ষার আগের দিন রাতে এসে সামনাসামনি বসে সব বুঝিয়ে দেবে। কয়েকবার প্রাক্টিসও করাবে। যাতে করে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে কোনো সমস্যা না হয়।

জালিয়াতির প্রক্রিয়াটি কেমন হবে সে ব্যাপারে বলা হয়, ‘একটি গেঞ্জির (টি-শার্ট অথবা বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি বক্ষবন্ধনী) মাধ্যমে ডিভাইস দেবে, ওই গেঞ্জির মধ্যে সবকিছু সেট করা থাকবে। নেটওয়ার্কও সেট করা থাকবে ওই গেঞ্জির মধ্যে। বিশেষ উপায়ে তৈরি ব্লুটুথ ডিভাইসও থাকবে ওই গেঞ্জির মধ্যে। ছোট্ট একটা ব্লুটুথ ডিভাইস কানে থাকবে। যদি কোনো কারণে এ ডিভাইসটি কাজ না করে তাহলে মোবাইল ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে দুটি ডিভাইস নিয়ে হলে ঢোকাই শ্রেয়। কারণ কোনো কারণে একটি ডিভাইস কাজ না করলে যাতে আরেকটি ডিভাইস দিয়ে কাজ করা যায়।’

একটি রেকর্ডে শোনা যায়, উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে এক শিক্ষার্থী বলছে, ‘তারা আমাকে একশ’ ভাগ নিশ্চয়তা দিয়েছে চান্স পাওয়ার। কারণ আমি সমগ্র প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পেরেছি। তারা বলেছে আমি প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থানের মধ্যে থাকব। সর্বোচ্চ গেলে একশ’ জনের মধ্যে। কারণ আমি পুরো প্রক্রিয়াটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি।’ এতে বলা হয়, ‘পরীক্ষার হলের সম্পূর্ণ রিস্ক পরীক্ষার্থীর ওপর থাকবে। সে যদি পুরো প্রক্রিয়াটি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে না পারে তাহলে কিছু করার নেই।’

আটককৃত মার্কশিট ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে বলা হয়, ‘এটি নিয়ে কোনো চিন্তার কারণ নেই। কোনো কারণে মেরিট লিস্টে নাম না এলে টাকা দিতে হবে না। আপনার দেয়া মূল মার্কশিটও তখন তারা দিয়ে দেবে। শুধু যদি কারও অবস্থান ১১৭০-এর মধ্যে থাকে তাহলে সে টাকা দিয়ে তার মূল মার্কশিটগুলো নিয়ে নেবে।’ প্রসঙ্গত বলা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গ’ ইউনিটে মোট ১১৭০টি আসন রয়েছে।

চক্রটির সঙ্গে কারা জড়িত এর কিছু ইঙ্গিতও পাওয়া যায় একটি অডিওতে। এতে বলা হয়, ‘সত্যি কথা বলতে কোচিংয়ের শিক্ষকদের সম্পৃক্ততা এখানে অবশ্যই আছে। তবে এছাড়া কারা এর সঙ্গে জড়িত সেই তথ্য ওপরের কয়েকজন ছাড়া কেউ জানে না। এইটা ওদের বিরাট লিঙ্ক। এটা কাউকে বলা হবে না। কারণ কাউকেই বিশ্বাস করা যায় না।’

চক্রটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসাধু লোকজন জড়িত থাকারও ইঙ্গিত রয়েছে একটি অডিওতে। কারণ এতে বলা হয়, ‘সিট প্ল্যান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যোগাযোগ করতে হবে। যদি নিশ্চয়তা দেন তাহলে রোল নম্বর ওদের কাছে দিলে, পছন্দ অনুযায়ী কেন্দ্রে ওরাই সিট প্ল্যান বসাতে পারে। ওই অনুযায়ী সিট দেয়া হবে। এক্ষেত্রে আগেভাগে রোল নম্বর দিয়ে দিতে হবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট পড়ার কারণে অনেকেই সফল হতে পারেনি বলেও রেকর্ডের একাংশে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, সব মিলিয়ে এটি অনেক লম্বা কাহিনী।

চক্রটি ভর্তির ব্যাপারে কেমন নিশ্চয়তা দেয় এমন কথা পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়, ‘তারা (চক্রের সদস্যরা) বলেছে, তারা উত্তর পাওয়ার জন্য সবকিছু দিয়ে দেবে। বাকি ১০০ ভাগ রিস্ক নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। ভাগ্যের ওপর সবকিছু নির্ভর করে। জীবনে একটা রিস্ক নিতেই হবে।’

হলে ডিভাইসটির অবস্থান বর্ণনা করতে গিয়ে একটি রেকর্ডে বলা হয়, ‘মোবাইলটা এমন জায়গায় রাখছি যেখান থেকে ধরার সাধ্য কারও নাই। সবকিছু ফাঁকি দিয়ে ভিতরে ঢুকতে হয়েছে। তারপরে আবার সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে কাজটি করা একটু কঠিনই ছিল।’ আগামী ‘ডি’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায়ও একই উপায়ে চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য কাজ করবে বলে অডিওতে শোনা যায়। একটি রেকর্ড থেকে জানা যায়, সে চান্স পেয়েছে এবং একই গ্র“পের অন্তত ১২০-৩০ জনের মতো এই প্রক্রিয়ায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

সামগ্রিক বিষয় জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলী যুগান্তরকে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি। এবারও বেশ কয়েকজনকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বাকি ইউনিটের পরীক্ষাগুলোতে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হবে। যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রমাণ বা তথ্য পাওয়া যাবে আইনানুগভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৪৮,৭৪২ জন আবেদনকারীর মধ্য থেকে ৪৮,০৫৭ জন অংশগ্রহণ করে। এর ওএমআর পূরণে ভুলের জন্য ছয়টি আবেদনপত্র বাতিল এবং জালিয়াতির দায়ে নয়টি আবেদনপত্র বাতিল করা হয়েছে। বাকি ৪৮,০৫১ জনের মধ্য থেকে ৯৯০৬ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। অনুত্তীর্ণ হয়েছে ৩৮,১৪৫ জন। মোট আসন রয়েছে ১১৭০টি। মোট হিসেবে শতকরা ২০.৬১ ভাগ উত্তীর্ণ হয়েছে।

গত বছর প্রশ্ন ফাঁসের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টার ইউসিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। যে কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মিটিংয়ে কোচিংটিকে ভর্ৎসনা করা হয়। একই কোচিংয়ের বিরুদ্ধে কয়েক বছর আগে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রোভিসি অধ্যাপক ড. আফম ইউসুফ হায়দারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউসিসি কোচিং সেন্টারের পরিচালক মোঃ কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, প্রশ্ন ফাঁস ও প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে ভর্তি জালিয়াতির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যদি শিক্ষকরা জড়িত থাকে তাহলে আমরা কি করতে পারি। জড়িত শিক্ষক কোচিং ক্লাস নেয়ার সুযোগ পায় কী করে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের আমরা ক্লাস নিতে দেইনি।

ইউনিএইড-এর পরিচালক গোলাম মোস্তফা কিরণ বলেন, আমাদের কোচিংয়ের কোনো শিক্ষক প্রশ্ন ফাঁস বা যে কোনো ভাবে ভর্তি জালিয়াতিতে জড়িত এমন তথ্য পাইনি। আটককৃত শিক্ষার্থীর উদ্ধৃতি দেয়া হলে তিনি বলেন, আমরা তার কথা শুনেছি। তবে কোচিংয়ে চারজন আবদুল্লাহ নামের শিক্ষক থাকায় আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না, কোন আবদুল্লাহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

প্যারাগন কোচিং সেন্টারের প্রধান পরিচালক আবু জাহেদ জাহিদ বলেন, আমাদের কোচিংয়ে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে এবং জালিয়াতিতে জড়িত আছে এমন কোনো শিক্ষক নেই। যদি এমন কাউকে পাওয়া যায় তাকে পুলিশে দেয়া হবে।


 

সাবমিট

ঢাবিতে ভর্তি জালিয়াতি

 মাহমুদুল হাসান নয়ন 
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ১২:০০ এএম  | 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এবার কমপক্ষে ১২০ জন পরীক্ষার্থী জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এদের প্রায় সবাই চারটি কোচিং সেন্টারের সহায়তায় প্রযুক্তির অবৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে জালিয়াতি করেছে। এভাবে পাস করে আসা শিক্ষার্থীদের এই প্রথমবারের মতো ভর্তির আগে আরও একবার পরীক্ষার মুখোমুখি হতে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে জালিয়াত চক্রের বিভিন্ন সময়ের চুক্তি, পরীক্ষা-পরবর্তী বক্তব্য ও ফলাফল প্রকাশসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথোপকথনের একাধিক অডিও রেকর্ড থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্যগুলো যুগান্তরের হাতে এসেছে। ভর্তি পরীক্ষায় অবৈধ পথ অনুসরণ করেছে এমন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়েছে যুগান্তর প্রতিনিধির। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেয়া সেই শিক্ষার্থীর বক্তব্য এবং অডিওতে পাওয়া তথ্যের মধ্যে মিল রয়েছে। অডিও এবং পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক যুগান্তরকে বলেন, জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কেউই উত্তীর্ণ হয়নি সেই কথা আমরা বলতে পারছি না। দু’একটা জালিয়াত চক্র সফল হতে পারে। তবে জালিয়াতির মাধ্যমে যারা উত্তীর্ণ হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়া তাদের জন্য সহজ হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ প্রথমবারের মতো ভর্তির আগে প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে যারা ভালো করবে তারাই ভর্তির সুযোগ পাবে। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এমন তথ্য প্রশাসনের কাছেও আসছে। যাদের নামে এমন অভিযোগ পাওয়া যাবে প্রশাসন তাদের চ্যালেঞ্জ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কোচিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সরকারি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানানো হবে।

চলতি বছরে ভর্তি পরীক্ষার হলে জালিয়াতির দায়ে আটক সানজানা বিনতে বশির বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দেয়া মুচলেকায় উল্লেখ করে, ‘ইউনিএইড’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিংয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল্লাহর (ইউনিএইড থেকে প্রকাশিত এক্সট্রা পাওয়ার বইয়ের লেখক) সঙ্গে তার তিন লাখ টাকার বিনিময়ে ভর্তি বিষয়ে চুক্তি হয়। টিচার্স ট্রেইনিং কলেজ থেকে আটক এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং ‘প্যারাগনের’ মাধ্যমে জালিয়াতিতে জড়িয়েছেন বলে জানায়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং ‘আইকন’র কয়েকটি চক্র এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলী।

‘গ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বেশ কয়েকটি জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। আমরা তাদেও কয়েকজনকে আটক করেছি। এরপরও যারা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তিনি বলেন, এ ধরনের শিক্ষার্থী যাতে ভর্তি না হতে পারে সেজন্য আমরা একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার নেব। এক্ষেত্রে মেধাক্রমে প্রথম ৩০০ জন এবং এসএসসি ও এইচএসসিতে কম স্কোর নিয়ে যারা ভর্তি পরীক্ষায় অধিক নম্বর পেয়েছে তাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার বিষয়ে প্রাধান্য দেয়া হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন এমন এক অধ্যাপক যুগান্তরকে বলেন, প্রযুক্তির অবৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে একশ’র বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালে এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যারা জালিয়াতি করেছে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে আমরা আটকও করেছি। বাকিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছি। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যুগান্তরের হাতে আসা একটি অডিও রেকর্ডে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়েছে এমন এক ছাত্রী তার বান্ধবীর অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলছেন এ ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রী তার বান্ধবীর অভিভাবককে বলেন, ‘এই কাজে কোনো রিস্ক নেই, মেয়ে হওয়ায় এ রিস্ক আরও কম। কানে থাকা ব্লুটুথ ডিভাইসের মাধ্যমেই পরীক্ষা দিয়ে আমি চান্স পেয়েছি। যদিও আমার পরীক্ষার হলে ২ জন শিক্ষক গার্ডে ছিলেন কিন্তু তাদের ম্যানেজ করেই পরীক্ষা দিয়েছি। কারণ শিক্ষকরা তো আর সব সময়ই এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকেন না। অনেক সময় তারা গল্পও করেন।’ তার কোচিং সেন্টারের মাধ্যমেই এভাবে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ হয়েছে বলে পরীক্ষার্থী উল্লেখ করে।

কত টাকার চুক্তিতে তারা কাজটি করে দিচ্ছে এ সংক্রান্ত বিষয়ে অডিওতে যে তথ্য আছে তা হল, ‘টাকার অ্যামাউন্ট হল চার লাখ। আগে সাড়ে তিন লাখ ছিল। এছাড়া চান্স পেলে টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তার জন্য তারা (চক্রটি) বাসায় এসে মেইন মার্কশিট নিয়ে নেবে এবং সেই সময়েই ডিভাইসটি দিয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে একটা কথা হল, যে সময় আসবে তখন তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা তাদের দিতে হবে; ডিভাইসের খরচ বাবদ। নকিয়া-২২০ মডেলের একটা মোবাইল কিনতে হবে।’ মোবাইলটির দাম ১৪৫০ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়। ‘কাজ শেষ হলে তারা এটি (মোবাইলটি) নিয়ে যাবে। এমনকি মোবাইলটি আর ফেরত দেয়া হবে না। কারণ ওই মোবাইলটা দিয়েই শুধু নেটওয়ার্কের লাইন পাওয়া যাবে। অন্য কোনো মোবাইল দিয়ে হবে না। সবকিছুই ওই সেট দিয়ে হবে।’

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কেন্দ্র হলে এভাবে ভর্তির সুযোগ নেই উল্লেখ করে অডিও রেকর্ডে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পরীক্ষার কেন্দ্র হলে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে বেগ পেতে হয়। আর এটি অনেক রিস্কি (ঝুঁকিপূর্ণ)।’ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভেতর এ ধরনের জালিয়াতি করতে গিয়ে চক্রটি সফল হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয় অডিওটিতে।

প্রায় একই ধরনের আলাদা একটি অডিওতে এভাবে ভর্তি প্রক্রিয়াটি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্যাপারে কথোপকথনে অন্য এক চিত্র ফুটে ওঠে। এতে বলা হয়, ‘রিস্ক তো একটু থাকবেই।’ পরীক্ষার আগের দিন বাসায় এসে চক্রের সদস্যরা তার কাছে ডিভাইস পৌঁছে দেয়। সুন্দরভাবে ডিভাইস তারা বুঝিয়ে দিয়ে যাবে। তবে এ প্রক্রিয়াটি কখনোই ফোনে সম্পন্ন করা যাবে না। কারণ এক্ষেত্রে একটি রিস্ক থেকে যায়। তারা পরীক্ষার আগের দিন রাতে এসে সামনাসামনি বসে সব বুঝিয়ে দেবে। কয়েকবার প্রাক্টিসও করাবে। যাতে করে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে কোনো সমস্যা না হয়।

জালিয়াতির প্রক্রিয়াটি কেমন হবে সে ব্যাপারে বলা হয়, ‘একটি গেঞ্জির (টি-শার্ট অথবা বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি বক্ষবন্ধনী) মাধ্যমে ডিভাইস দেবে, ওই গেঞ্জির মধ্যে সবকিছু সেট করা থাকবে। নেটওয়ার্কও সেট করা থাকবে ওই গেঞ্জির মধ্যে। বিশেষ উপায়ে তৈরি ব্লুটুথ ডিভাইসও থাকবে ওই গেঞ্জির মধ্যে। ছোট্ট একটা ব্লুটুথ ডিভাইস কানে থাকবে। যদি কোনো কারণে এ ডিভাইসটি কাজ না করে তাহলে মোবাইল ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে দুটি ডিভাইস নিয়ে হলে ঢোকাই শ্রেয়। কারণ কোনো কারণে একটি ডিভাইস কাজ না করলে যাতে আরেকটি ডিভাইস দিয়ে কাজ করা যায়।’

একটি রেকর্ডে শোনা যায়, উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে এক শিক্ষার্থী বলছে, ‘তারা আমাকে একশ’ ভাগ নিশ্চয়তা দিয়েছে চান্স পাওয়ার। কারণ আমি সমগ্র প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পেরেছি। তারা বলেছে আমি প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থানের মধ্যে থাকব। সর্বোচ্চ গেলে একশ’ জনের মধ্যে। কারণ আমি পুরো প্রক্রিয়াটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি।’ এতে বলা হয়, ‘পরীক্ষার হলের সম্পূর্ণ রিস্ক পরীক্ষার্থীর ওপর থাকবে। সে যদি পুরো প্রক্রিয়াটি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে না পারে তাহলে কিছু করার নেই।’

আটককৃত মার্কশিট ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে বলা হয়, ‘এটি নিয়ে কোনো চিন্তার কারণ নেই। কোনো কারণে মেরিট লিস্টে নাম না এলে টাকা দিতে হবে না। আপনার দেয়া মূল মার্কশিটও তখন তারা দিয়ে দেবে। শুধু যদি কারও অবস্থান ১১৭০-এর মধ্যে থাকে তাহলে সে টাকা দিয়ে তার মূল মার্কশিটগুলো নিয়ে নেবে।’ প্রসঙ্গত বলা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গ’ ইউনিটে মোট ১১৭০টি আসন রয়েছে।

চক্রটির সঙ্গে কারা জড়িত এর কিছু ইঙ্গিতও পাওয়া যায় একটি অডিওতে। এতে বলা হয়, ‘সত্যি কথা বলতে কোচিংয়ের শিক্ষকদের সম্পৃক্ততা এখানে অবশ্যই আছে। তবে এছাড়া কারা এর সঙ্গে জড়িত সেই তথ্য ওপরের কয়েকজন ছাড়া কেউ জানে না। এইটা ওদের বিরাট লিঙ্ক। এটা কাউকে বলা হবে না। কারণ কাউকেই বিশ্বাস করা যায় না।’

চক্রটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসাধু লোকজন জড়িত থাকারও ইঙ্গিত রয়েছে একটি অডিওতে। কারণ এতে বলা হয়, ‘সিট প্ল্যান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যোগাযোগ করতে হবে। যদি নিশ্চয়তা দেন তাহলে রোল নম্বর ওদের কাছে দিলে, পছন্দ অনুযায়ী কেন্দ্রে ওরাই সিট প্ল্যান বসাতে পারে। ওই অনুযায়ী সিট দেয়া হবে। এক্ষেত্রে আগেভাগে রোল নম্বর দিয়ে দিতে হবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট পড়ার কারণে অনেকেই সফল হতে পারেনি বলেও রেকর্ডের একাংশে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, সব মিলিয়ে এটি অনেক লম্বা কাহিনী।

চক্রটি ভর্তির ব্যাপারে কেমন নিশ্চয়তা দেয় এমন কথা পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়, ‘তারা (চক্রের সদস্যরা) বলেছে, তারা উত্তর পাওয়ার জন্য সবকিছু দিয়ে দেবে। বাকি ১০০ ভাগ রিস্ক নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। ভাগ্যের ওপর সবকিছু নির্ভর করে। জীবনে একটা রিস্ক নিতেই হবে।’

হলে ডিভাইসটির অবস্থান বর্ণনা করতে গিয়ে একটি রেকর্ডে বলা হয়, ‘মোবাইলটা এমন জায়গায় রাখছি যেখান থেকে ধরার সাধ্য কারও নাই। সবকিছু ফাঁকি দিয়ে ভিতরে ঢুকতে হয়েছে। তারপরে আবার সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে কাজটি করা একটু কঠিনই ছিল।’ আগামী ‘ডি’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায়ও একই উপায়ে চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য কাজ করবে বলে অডিওতে শোনা যায়। একটি রেকর্ড থেকে জানা যায়, সে চান্স পেয়েছে এবং একই গ্র“পের অন্তত ১২০-৩০ জনের মতো এই প্রক্রিয়ায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

সামগ্রিক বিষয় জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলী যুগান্তরকে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি। এবারও বেশ কয়েকজনকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বাকি ইউনিটের পরীক্ষাগুলোতে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হবে। যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রমাণ বা তথ্য পাওয়া যাবে আইনানুগভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৪৮,৭৪২ জন আবেদনকারীর মধ্য থেকে ৪৮,০৫৭ জন অংশগ্রহণ করে। এর ওএমআর পূরণে ভুলের জন্য ছয়টি আবেদনপত্র বাতিল এবং জালিয়াতির দায়ে নয়টি আবেদনপত্র বাতিল করা হয়েছে। বাকি ৪৮,০৫১ জনের মধ্য থেকে ৯৯০৬ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। অনুত্তীর্ণ হয়েছে ৩৮,১৪৫ জন। মোট আসন রয়েছে ১১৭০টি। মোট হিসেবে শতকরা ২০.৬১ ভাগ উত্তীর্ণ হয়েছে।

গত বছর প্রশ্ন ফাঁসের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টার ইউসিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। যে কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মিটিংয়ে কোচিংটিকে ভর্ৎসনা করা হয়। একই কোচিংয়ের বিরুদ্ধে কয়েক বছর আগে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রোভিসি অধ্যাপক ড. আফম ইউসুফ হায়দারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউসিসি কোচিং সেন্টারের পরিচালক মোঃ কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, প্রশ্ন ফাঁস ও প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে ভর্তি জালিয়াতির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যদি শিক্ষকরা জড়িত থাকে তাহলে আমরা কি করতে পারি। জড়িত শিক্ষক কোচিং ক্লাস নেয়ার সুযোগ পায় কী করে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের আমরা ক্লাস নিতে দেইনি।

ইউনিএইড-এর পরিচালক গোলাম মোস্তফা কিরণ বলেন, আমাদের কোচিংয়ের কোনো শিক্ষক প্রশ্ন ফাঁস বা যে কোনো ভাবে ভর্তি জালিয়াতিতে জড়িত এমন তথ্য পাইনি। আটককৃত শিক্ষার্থীর উদ্ধৃতি দেয়া হলে তিনি বলেন, আমরা তার কথা শুনেছি। তবে কোচিংয়ে চারজন আবদুল্লাহ নামের শিক্ষক থাকায় আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না, কোন আবদুল্লাহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

প্যারাগন কোচিং সেন্টারের প্রধান পরিচালক আবু জাহেদ জাহিদ বলেন, আমাদের কোচিংয়ে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে এবং জালিয়াতিতে জড়িত আছে এমন কোনো শিক্ষক নেই। যদি এমন কাউকে পাওয়া যায় তাকে পুলিশে দেয়া হবে।


 

 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র