jugantor
আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতি : তদন্ত সূত্রের তথ্য
ডাকাতির আড়ালে ছিল জঙ্গি মিশনের তালিম!
সন্দেহের তালিকায় ব্যাংক কর্মকর্তা

  সৈয়দ আতিক, জাভেদ মোস্তফা ও এমএম হেলাল উদ্দিন  

২৪ এপ্রিল ২০১৫, ০০:০০:০০  | 

আশুলিয়ার কাঠগড়ায় নজুমদ্দিন মার্কেটে স্থানীয় লোক বলতে নেই। বাজারের অধিকাংশই দোকানই বন্ধ। যেসব দোকান খোলা আছে সেগুলোতেও বেচাবিক্রি নেই। অনেকে অজানা আতংকে পালিয়ে আছেন। যদিও পুলিশের পক্ষে কাউকে হয়রানি করা হবে না বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ব্যাংকে ডাকাতিকালে খুনের ঘটনায় এক কর্মকর্তা ও একজন নিরাপত্তা কর্মী তদন্তকারীদের সন্দেহের তালিকায় আছেন।

এদিকে গ্রেফতার হওয়া চিকিৎসাধীন দুই ডাকাত সদস্যের প্রথম অভিযানই ছিল এ ব্যাংক ডাকাতি। ডাকাতিতে অংশ নেয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিয়েছে তারা। ব্যাংকের শাখার ভিডিও ফুটেজ নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হলেও একজন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার বলেন, যেখানকার ফুটেজ সেখানে আছে। আইটি বিশেষজ্ঞ দিয়ে ওই ফুটেজ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

র‌্যাব ও পুলিশের তদন্ত সূত্র একই তথ্য জানিয়ে বলেছে, সাইফুল ও বোরহান জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তারা দু’জনে এ অপারেশনকে ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে নিয়েছে। তাদের সঙ্গে কিছু পুরনো ও প্রশিক্ষিত জঙ্গি সদস্য ছিল। ১০ জন এ অপারেশনে অংশ নেয়। তাদের নির্দেশদাতা ব্যাংক শাখার একটু দূরে ছিল। গ্রেফতার সাইফুল এ ধরনের তথ্য দিয়েছে। তবে তিনি ডাকাতিতে অংশ নেয়া মাত্র ৩ জনকে চেনেন বলে জানান। আর বোরহান স্বীকার করেছেন একজনকে চেনার কথা। সূত্র জানিয়েছে, দু’জনের কাছ থেকে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বোরহানের ৪-৫ জন সহযোগী ছিল, যারা তার গাড়িচালক। ঢাকায় হেফাজতের অবস্থানের দিন সে শাহবাগে পুলিশের হাতে আটক হয়েছিল।

জানতে চাইলে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংকের ভেতরে ও বাইরে লোক ছিল। এটা পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। গ্রেফতার বোরহান ও সাইফুল নতুন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বিশেষ করে জঙ্গিরা অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে পুরনোদের সঙ্গে নতুনদের পাঠিয়ে থাকে। সাইফুল ও বোরহানের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকের ভেতরে আগে থেকে নির্দিষ্ট লোক ছিল। তারা সেখান থেকে সংকেত দেয়ার পরই ডাকাত বা দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করে। এ ক্ষেত্রে এই ব্যাংকের শাখাটি কেন টার্গেট হল বা ব্যাংকের ম্যানেজার কেন টার্গেট হয়েছেন সেটি তদন্তের বিষয়। এসব বিষয় তদন্ত করতে গিয়ে নানা প্রশ্ন আসছে। সবকিছু মাথায় রেখে তথ্যানুসন্ধান চলছে।

আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার পর থেকে এলাকায় মানুষজনের আনাগোণা কমে গেছে। বাজারে লোক বলতে নেই। বাজার ঘুরে দেখা গেল সেই চিত্র।

মঙ্গলবার নজুমদ্দিন মার্কেটের দোতলায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখায় ব্যাংকের ম্যানেজার, দুই নিরাপত্তা কর্মীসহ ৭ জনকে হত্যা করে ডাকাত দল। গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে সন্দেহভাজন এক ডাকাত। এ ঘটনায় ঢাকা জেলা পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি ও সিআইডি আলাদা আলাদা করে তদন্ত ও অনুসন্ধান চালাচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, ব্যাংকের ভেতরে দুই ডাকাত আগে থেকেই গ্রাহক সেজে প্রবেশ করেছিল। তাদের একজন ব্যাংকের এক কর্মকর্তার সঙ্গেও নিবিড়ভাবে কথা বলেছে। ঘটনার সময় ওই দুই ব্যক্তিও ডাকাতদের সঙ্গে যোগ দেয়। তারও কিছু সময় আগে নিরাপত্তা কর্মী সোহেল ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যায়। ওই ব্যাংক কর্মকর্তা ও সোহেলকে সন্দেহভাজন হিসেবে ধারণা করছে তদন্তকারীরা। তাদের সঙ্গে উগ্রপন্থীদেরও সম্পর্ক থাকতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ভেতরের কারও সংশ্লিষ্টতা ছাড়া এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাছাড়া খুনের সঙ্গে জড়িতরা আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিল। এটি একটি ‘অর্গানাইজড ক্রাইম’। ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ এ হত্যার সঙ্গে জড়িত কিনা তা প্রথম দিন থেকে গভীরভাবে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তদন্ত দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকের সঙ্গে আর্থিক বিরোধ, লেনদেন, ঋণ সংক্রান্ত কোনো ঘটনা, জমিসংক্রান্ত বিরোধ, উগ্রপন্থীদের ফান্ড সংগ্রহ করার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তদন্তে।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) হাবিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, তদন্তে সব ধরনের সন্দেহ কাজে লাগানো হচ্ছে। জড়িত অপর আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে আসামিরা প্রযুক্তিগতভাবে উচ্চজ্ঞান রাখে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

ব্যাংকের কর্মকর্তা বা কর্মচারীর জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার বিকালে কাঠগড়ায় ঘটনাস্থলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপক চন্দ্র সাহা যুগান্তরকে বলেন, কেউই সন্দেহের বাইরে নয়। সন্দেহের তালিকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীও আছেন। এখন উপযুক্ত প্রমাণ পেলেই তাদের গ্রেফতার করা হবে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই ব্যাংকের শাখায় এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, তাকে উপর থেকে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে কাউকে যেন কোনো তথ্য না দেন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মার্কেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বরকতকে কয়েক দফায় ওই ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। পরে তার মুখোমুখি হলে তিনিও একবাক্যে বলেন, এটি জঙ্গিদের কাজ। তার কাছে কোনো তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, এটি তার ধারণা। তবে তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকের শাখার সামনেই মসজিদ। আর ওই মসজিদ থেকে বের হওয়া কয়েকজন ব্যক্তি ব্যাংকের শাখার ভেতরে প্রবেশ করছে। এ ধরনের ফুটেজ তারা দেখতে পেয়েছেন। কিন্তু তারাই ডাকাত কিনা তা স্পষ্ট নয়। এমনকি যে কর্মকর্তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে ঘটনার দিন তিনিও ব্যাংক থেকে নিচ তলায় নেমেছিলেন। ওই কর্মকর্তার ফোন কলের মধ্য থেকে বিশেষ চারটি কল খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা।

তদন্ত সূত্র আরও জানায়, খুনে অংশ নেয়া একজনের পাঞ্জাবির একটি অংশ আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের পা ও হাতের ছাপ এবং উদ্ধারকৃত ছোরার সূত্রকে কাজে লাগানো হচ্ছে।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, কাউকে হয়রানি করা হবে না। তারপরও দোকানপাট বন্ধ রেখে দোকানিরা অজানা আতংকে পালিয়ে আছেন। আর যারা দোকান খুলে আছেন তাদের বিক্রি নেই। পান-সুপারির দোকানি কালাম বিশ্বাস, মোরশেদ ও মুরগি ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন জানান, মঙ্গলবার থেকে বাজারে লোক আসছে না। বেচাকেনা নেই। কবে স্বাভাবিক হবে জানি না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে তদন্ত দল ডাকাতির শিকার ব্যাংক শাখা থেকে আরও কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদের মধ্যে দু’জনকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে সন্দেহের তালিকায় আনা হয়েছে। ব্যাংকের ওই শাখাটি খোলা থাকলেও পাশের কয়েকটি শাখায় গ্রাহকদের লেনদেন করতে নোটিশে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

এদিকে, সাইফুল ও বোরহান তথ্য দিলেও পুলিশ ডাকাতিতে অংশ নেয়া আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এ সংক্রান্ত একটি মামলা তদন্ত করছেন আশুলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) দীপক চন্দ্র সাহা। অন্য মামলাটি তদন্ত করছেন আশুলিয়া থানার এসআই মোফাজ্জল হোসেন। তারা জানান, তদন্তে বড় ধরনের কোনো অগ্রগতি না হলেও তারা বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছেন। যা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হচ্ছেন তারা।

বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ব্যাংকটির কাঠগড়া বাজার শাখা বন্ধ রাখা হয়েছে। সকাল থেকে ব্যাংকের চারপাশে পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে। কয়েকজন গ্রাহক জানান, রোববার ব্যাংক খুলবে বলে তাদের জানানো হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার সময় ব্যাংকের সিসি ক্যামেরাগুলো কি অবস্থায় ছিল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল জানান, কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখার ৫ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে। তবে ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী সোহেল রানাকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ঘটনার কিছু সময় আগে কাউকে না বলে ব্যাংক থেকে বের হয়ে যাওয়ার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি সে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, এ ঘটনার প্রায় ৩০ মিনিট আগে কাউকে কিছু না বলে সোহেল রানা ব্যাংক থেকে চলে যায়।

সিসি ক্যামেরা সম্পর্কে ওসি কামাল বলেন, ব্যাংকের ৮টি সিসি ক্যামেরা জব্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সিসি ক্যামেরা থেকে কোনো ধরনের ফুটেজ তারা বের করতে পারেননি। তাদের ধারণা ছিল, ব্যাংকের সিসি ক্যামেরা থেকে অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, কারিগরি বিষয়টি জানা নেই বলেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বের করা সম্ভব হয়নি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ যৌথভাবে সিসি ক্যামেরার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। যদি একান্তই সম্ভব না হয় তবে আদালতের আদেশ নিয়ে ক্যামেরাগুলো সিআইডিতে হস্তান্তর করা হবে। ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখায় মোট আটটি সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। ক্যামেরাগুলো দিয়ে ব্যাংকের ভেতরে ও গেটের বাইরে সব দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল। ক্যামেরাগুলো ঘটনার সময়ও সচল ছিল বলে তিনি দাবি করেন। তবে ক্যামেরাগুলো রেকর্ড করার যন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল কিনা তা তিনি জানেন না বলে জানান। আর সিসি ক্যামেরা চালু থাকলেও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সিসি ক্যামেরা আছে কিন্তু মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেই।

সিসিটিভি স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বৃহস্পতিবার বিকালে পুলিশ হেফাজতে থাকা রেকর্ডার পরীক্ষা করে জানান, ১৮ এপ্রিল থেকে রেকর্ডার সঠিকভাবে কাজ করছিল না।

আহতদের অবস্থা : মঙ্গলবার ডাকাতির ঘটনায় ব্যাংকের ভেতরে ব্যবস্থাপকসহ তিনজন, ডাকাতদের ধরতে গিয়ে চারজন এবং গণপিটুনিতে এক ডাকাত- মোট আটজন নিহত হন। এ সময় গ্রেনেড, গুলি ও ছুরিকাঘাতে আহত হন ২০ জন। তাদের মাধ্যে ১৭ জনকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে নুর মোহাম্মদ নামে একজন মারা যান। বাকি ১৬ জনের চিকিৎসা চলছে এনাম মেডিকেল হাসপাতালে। এর হলেন- মো. পারভেজ, মো. নুরুল ইসলাম, আইয়ুব আলী, সফিকুল ইসলাম, মাহজাদ আলী, মো. সাইফুল, মো. রমজান, মো. শাহজাহান, মো. আমিনুল ইসলাম, আইয়ুব আলী, হামিদ আলী এবং শাহাদাৎ মিয়া। এদের মধ্যে মাত্র ১ জন ব্যাংক কর্মকর্তা। বাকি সবাই সাধারণ মানুষ। সাভার এনাম মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ারুল কাদের নাজিম যুগান্তরকে জানান, আহতদের চিকিৎসা খরচ এখন পর্যন্ত কেউ বহন করেনি। ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তিনি বলেন, এনাম মেডিকেল কলেজ বাকিতে আহতদের ওষুধসহ চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। চিকিৎসা শেষে যার যার মতো বিল পরিশোধ করে তারা রিলিজ হবেন। নাজিম জানান, আহত ৮ জনের অবস্থা গুরুতর। তাদের অনেকেরই অঙ্গহানি ঘটেছে। তাদের প্রত্যেকের পেছনে প্রায় ২ লাখ টাকা করে খরচ হতে পারে। তিনি বলেন, গ্রেফতার দুই ডাকাত বাদে ১৬ জনের চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ২৩ লাখ টাকার মতো হবে। এ সময় আহতদের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, ডাকাত ধরতে গিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে তারা আহত হলেও সরকার বা ব্যাংকের কেউই তাদের চিকিৎসা ব্যয় দেয়ার ঘোষণা দেয়নি। অনেকেই নিজের টাকা দিয়ে ওষুধ কিনছেন বলেও জানান।

এদিকে ধৃত দুই ডাকাত সাইফুল ও বোরহানকে এনাম মেডিকেলের ৭ তলায় ভিআইপি কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ৭০৫ ও ৭০৮নং কেবিনে তারা পুলিশি প্রহরায় আছেন। এনাম মেডিকেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, ডাকাতদেও কেবিনের প্রতিদিনের ভাড়া ১ হাজার ৬০০ টাকা। তিনি বলেন, ডাকাতদের বিল কে দেবেন এ ব্যাপারেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, ডাকাতদের পেছনে চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ২ লাখ টাকার মতো হতে পারে। পুলিশ জানায়, নিরাপত্তার কারণেই ডাকাতদের এনাম মেডিকেলে রাখা হয়েছে।

হরিষে বিষাদ : সাভারে ডাকাতদের হামলায় নিহত কমার্স ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক অলিউল্লাহ মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। বুধবার তার স্ত্রী মাহমুদা মেহজাবিন ও ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। মেহজাবিন বলেন, মঙ্গলবার সকালে অন্যদিনের মতো খাওয়া-দাওয়া করে ব্যাংকে গিয়েছিলেন তার স্বামী। দুপুরে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার (এসইও) পদে পদোন্নতির সেই চিঠি হাতে পেয়ে ফোন করে স্ত্রীকে সুখবর জানান অলিউল্লাহ। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ফোন পেয়ে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে স্বামীর লাশ দেখতে পান মাহমুদা। জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের অনন্তবাড়ি গ্রামের মৃত ওয়াসিম উদ্দীন কাজীর ছেলে অলিউল্লাহ জনতা ব্যাংকে কর্মজীবন শুরু করেন। ৫ বছর আগে তিনি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডে যোগ দেন। অলিউল্লাহ ৯ বছর আগে একই গ্রামে বিয়ে করেন। তার এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে।


 

সাবমিট
আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতি : তদন্ত সূত্রের তথ্য

ডাকাতির আড়ালে ছিল জঙ্গি মিশনের তালিম!

সন্দেহের তালিকায় ব্যাংক কর্মকর্তা
 সৈয়দ আতিক, জাভেদ মোস্তফা ও এমএম হেলাল উদ্দিন 
২৪ এপ্রিল ২০১৫, ১২:০০ এএম  | 

আশুলিয়ার কাঠগড়ায় নজুমদ্দিন মার্কেটে স্থানীয় লোক বলতে নেই। বাজারের অধিকাংশই দোকানই বন্ধ। যেসব দোকান খোলা আছে সেগুলোতেও বেচাবিক্রি নেই। অনেকে অজানা আতংকে পালিয়ে আছেন। যদিও পুলিশের পক্ষে কাউকে হয়রানি করা হবে না বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ব্যাংকে ডাকাতিকালে খুনের ঘটনায় এক কর্মকর্তা ও একজন নিরাপত্তা কর্মী তদন্তকারীদের সন্দেহের তালিকায় আছেন।

এদিকে গ্রেফতার হওয়া চিকিৎসাধীন দুই ডাকাত সদস্যের প্রথম অভিযানই ছিল এ ব্যাংক ডাকাতি। ডাকাতিতে অংশ নেয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিয়েছে তারা। ব্যাংকের শাখার ভিডিও ফুটেজ নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হলেও একজন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার বলেন, যেখানকার ফুটেজ সেখানে আছে। আইটি বিশেষজ্ঞ দিয়ে ওই ফুটেজ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

র‌্যাব ও পুলিশের তদন্ত সূত্র একই তথ্য জানিয়ে বলেছে, সাইফুল ও বোরহান জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তারা দু’জনে এ অপারেশনকে ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে নিয়েছে। তাদের সঙ্গে কিছু পুরনো ও প্রশিক্ষিত জঙ্গি সদস্য ছিল। ১০ জন এ অপারেশনে অংশ নেয়। তাদের নির্দেশদাতা ব্যাংক শাখার একটু দূরে ছিল। গ্রেফতার সাইফুল এ ধরনের তথ্য দিয়েছে। তবে তিনি ডাকাতিতে অংশ নেয়া মাত্র ৩ জনকে চেনেন বলে জানান। আর বোরহান স্বীকার করেছেন একজনকে চেনার কথা। সূত্র জানিয়েছে, দু’জনের কাছ থেকে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বোরহানের ৪-৫ জন সহযোগী ছিল, যারা তার গাড়িচালক। ঢাকায় হেফাজতের অবস্থানের দিন সে শাহবাগে পুলিশের হাতে আটক হয়েছিল।

জানতে চাইলে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংকের ভেতরে ও বাইরে লোক ছিল। এটা পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। গ্রেফতার বোরহান ও সাইফুল নতুন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বিশেষ করে জঙ্গিরা অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে পুরনোদের সঙ্গে নতুনদের পাঠিয়ে থাকে। সাইফুল ও বোরহানের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকের ভেতরে আগে থেকে নির্দিষ্ট লোক ছিল। তারা সেখান থেকে সংকেত দেয়ার পরই ডাকাত বা দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করে। এ ক্ষেত্রে এই ব্যাংকের শাখাটি কেন টার্গেট হল বা ব্যাংকের ম্যানেজার কেন টার্গেট হয়েছেন সেটি তদন্তের বিষয়। এসব বিষয় তদন্ত করতে গিয়ে নানা প্রশ্ন আসছে। সবকিছু মাথায় রেখে তথ্যানুসন্ধান চলছে।

আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার পর থেকে এলাকায় মানুষজনের আনাগোণা কমে গেছে। বাজারে লোক বলতে নেই। বাজার ঘুরে দেখা গেল সেই চিত্র।

মঙ্গলবার নজুমদ্দিন মার্কেটের দোতলায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখায় ব্যাংকের ম্যানেজার, দুই নিরাপত্তা কর্মীসহ ৭ জনকে হত্যা করে ডাকাত দল। গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে সন্দেহভাজন এক ডাকাত। এ ঘটনায় ঢাকা জেলা পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি ও সিআইডি আলাদা আলাদা করে তদন্ত ও অনুসন্ধান চালাচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, ব্যাংকের ভেতরে দুই ডাকাত আগে থেকেই গ্রাহক সেজে প্রবেশ করেছিল। তাদের একজন ব্যাংকের এক কর্মকর্তার সঙ্গেও নিবিড়ভাবে কথা বলেছে। ঘটনার সময় ওই দুই ব্যক্তিও ডাকাতদের সঙ্গে যোগ দেয়। তারও কিছু সময় আগে নিরাপত্তা কর্মী সোহেল ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যায়। ওই ব্যাংক কর্মকর্তা ও সোহেলকে সন্দেহভাজন হিসেবে ধারণা করছে তদন্তকারীরা। তাদের সঙ্গে উগ্রপন্থীদেরও সম্পর্ক থাকতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ভেতরের কারও সংশ্লিষ্টতা ছাড়া এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাছাড়া খুনের সঙ্গে জড়িতরা আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিল। এটি একটি ‘অর্গানাইজড ক্রাইম’। ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ এ হত্যার সঙ্গে জড়িত কিনা তা প্রথম দিন থেকে গভীরভাবে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তদন্ত দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকের সঙ্গে আর্থিক বিরোধ, লেনদেন, ঋণ সংক্রান্ত কোনো ঘটনা, জমিসংক্রান্ত বিরোধ, উগ্রপন্থীদের ফান্ড সংগ্রহ করার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তদন্তে।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) হাবিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, তদন্তে সব ধরনের সন্দেহ কাজে লাগানো হচ্ছে। জড়িত অপর আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে আসামিরা প্রযুক্তিগতভাবে উচ্চজ্ঞান রাখে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

ব্যাংকের কর্মকর্তা বা কর্মচারীর জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার বিকালে কাঠগড়ায় ঘটনাস্থলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপক চন্দ্র সাহা যুগান্তরকে বলেন, কেউই সন্দেহের বাইরে নয়। সন্দেহের তালিকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীও আছেন। এখন উপযুক্ত প্রমাণ পেলেই তাদের গ্রেফতার করা হবে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই ব্যাংকের শাখায় এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, তাকে উপর থেকে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে কাউকে যেন কোনো তথ্য না দেন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মার্কেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বরকতকে কয়েক দফায় ওই ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। পরে তার মুখোমুখি হলে তিনিও একবাক্যে বলেন, এটি জঙ্গিদের কাজ। তার কাছে কোনো তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, এটি তার ধারণা। তবে তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকের শাখার সামনেই মসজিদ। আর ওই মসজিদ থেকে বের হওয়া কয়েকজন ব্যক্তি ব্যাংকের শাখার ভেতরে প্রবেশ করছে। এ ধরনের ফুটেজ তারা দেখতে পেয়েছেন। কিন্তু তারাই ডাকাত কিনা তা স্পষ্ট নয়। এমনকি যে কর্মকর্তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে ঘটনার দিন তিনিও ব্যাংক থেকে নিচ তলায় নেমেছিলেন। ওই কর্মকর্তার ফোন কলের মধ্য থেকে বিশেষ চারটি কল খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা।

তদন্ত সূত্র আরও জানায়, খুনে অংশ নেয়া একজনের পাঞ্জাবির একটি অংশ আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের পা ও হাতের ছাপ এবং উদ্ধারকৃত ছোরার সূত্রকে কাজে লাগানো হচ্ছে।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, কাউকে হয়রানি করা হবে না। তারপরও দোকানপাট বন্ধ রেখে দোকানিরা অজানা আতংকে পালিয়ে আছেন। আর যারা দোকান খুলে আছেন তাদের বিক্রি নেই। পান-সুপারির দোকানি কালাম বিশ্বাস, মোরশেদ ও মুরগি ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন জানান, মঙ্গলবার থেকে বাজারে লোক আসছে না। বেচাকেনা নেই। কবে স্বাভাবিক হবে জানি না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে তদন্ত দল ডাকাতির শিকার ব্যাংক শাখা থেকে আরও কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদের মধ্যে দু’জনকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে সন্দেহের তালিকায় আনা হয়েছে। ব্যাংকের ওই শাখাটি খোলা থাকলেও পাশের কয়েকটি শাখায় গ্রাহকদের লেনদেন করতে নোটিশে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

এদিকে, সাইফুল ও বোরহান তথ্য দিলেও পুলিশ ডাকাতিতে অংশ নেয়া আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এ সংক্রান্ত একটি মামলা তদন্ত করছেন আশুলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) দীপক চন্দ্র সাহা। অন্য মামলাটি তদন্ত করছেন আশুলিয়া থানার এসআই মোফাজ্জল হোসেন। তারা জানান, তদন্তে বড় ধরনের কোনো অগ্রগতি না হলেও তারা বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছেন। যা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হচ্ছেন তারা।

বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ব্যাংকটির কাঠগড়া বাজার শাখা বন্ধ রাখা হয়েছে। সকাল থেকে ব্যাংকের চারপাশে পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে। কয়েকজন গ্রাহক জানান, রোববার ব্যাংক খুলবে বলে তাদের জানানো হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার সময় ব্যাংকের সিসি ক্যামেরাগুলো কি অবস্থায় ছিল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল জানান, কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখার ৫ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে। তবে ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী সোহেল রানাকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ঘটনার কিছু সময় আগে কাউকে না বলে ব্যাংক থেকে বের হয়ে যাওয়ার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি সে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, এ ঘটনার প্রায় ৩০ মিনিট আগে কাউকে কিছু না বলে সোহেল রানা ব্যাংক থেকে চলে যায়।

সিসি ক্যামেরা সম্পর্কে ওসি কামাল বলেন, ব্যাংকের ৮টি সিসি ক্যামেরা জব্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সিসি ক্যামেরা থেকে কোনো ধরনের ফুটেজ তারা বের করতে পারেননি। তাদের ধারণা ছিল, ব্যাংকের সিসি ক্যামেরা থেকে অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, কারিগরি বিষয়টি জানা নেই বলেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বের করা সম্ভব হয়নি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ যৌথভাবে সিসি ক্যামেরার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। যদি একান্তই সম্ভব না হয় তবে আদালতের আদেশ নিয়ে ক্যামেরাগুলো সিআইডিতে হস্তান্তর করা হবে। ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখায় মোট আটটি সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। ক্যামেরাগুলো দিয়ে ব্যাংকের ভেতরে ও গেটের বাইরে সব দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল। ক্যামেরাগুলো ঘটনার সময়ও সচল ছিল বলে তিনি দাবি করেন। তবে ক্যামেরাগুলো রেকর্ড করার যন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল কিনা তা তিনি জানেন না বলে জানান। আর সিসি ক্যামেরা চালু থাকলেও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সিসি ক্যামেরা আছে কিন্তু মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেই।

সিসিটিভি স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বৃহস্পতিবার বিকালে পুলিশ হেফাজতে থাকা রেকর্ডার পরীক্ষা করে জানান, ১৮ এপ্রিল থেকে রেকর্ডার সঠিকভাবে কাজ করছিল না।

আহতদের অবস্থা : মঙ্গলবার ডাকাতির ঘটনায় ব্যাংকের ভেতরে ব্যবস্থাপকসহ তিনজন, ডাকাতদের ধরতে গিয়ে চারজন এবং গণপিটুনিতে এক ডাকাত- মোট আটজন নিহত হন। এ সময় গ্রেনেড, গুলি ও ছুরিকাঘাতে আহত হন ২০ জন। তাদের মাধ্যে ১৭ জনকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে নুর মোহাম্মদ নামে একজন মারা যান। বাকি ১৬ জনের চিকিৎসা চলছে এনাম মেডিকেল হাসপাতালে। এর হলেন- মো. পারভেজ, মো. নুরুল ইসলাম, আইয়ুব আলী, সফিকুল ইসলাম, মাহজাদ আলী, মো. সাইফুল, মো. রমজান, মো. শাহজাহান, মো. আমিনুল ইসলাম, আইয়ুব আলী, হামিদ আলী এবং শাহাদাৎ মিয়া। এদের মধ্যে মাত্র ১ জন ব্যাংক কর্মকর্তা। বাকি সবাই সাধারণ মানুষ। সাভার এনাম মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ারুল কাদের নাজিম যুগান্তরকে জানান, আহতদের চিকিৎসা খরচ এখন পর্যন্ত কেউ বহন করেনি। ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তিনি বলেন, এনাম মেডিকেল কলেজ বাকিতে আহতদের ওষুধসহ চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। চিকিৎসা শেষে যার যার মতো বিল পরিশোধ করে তারা রিলিজ হবেন। নাজিম জানান, আহত ৮ জনের অবস্থা গুরুতর। তাদের অনেকেরই অঙ্গহানি ঘটেছে। তাদের প্রত্যেকের পেছনে প্রায় ২ লাখ টাকা করে খরচ হতে পারে। তিনি বলেন, গ্রেফতার দুই ডাকাত বাদে ১৬ জনের চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ২৩ লাখ টাকার মতো হবে। এ সময় আহতদের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, ডাকাত ধরতে গিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে তারা আহত হলেও সরকার বা ব্যাংকের কেউই তাদের চিকিৎসা ব্যয় দেয়ার ঘোষণা দেয়নি। অনেকেই নিজের টাকা দিয়ে ওষুধ কিনছেন বলেও জানান।

এদিকে ধৃত দুই ডাকাত সাইফুল ও বোরহানকে এনাম মেডিকেলের ৭ তলায় ভিআইপি কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ৭০৫ ও ৭০৮নং কেবিনে তারা পুলিশি প্রহরায় আছেন। এনাম মেডিকেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, ডাকাতদেও কেবিনের প্রতিদিনের ভাড়া ১ হাজার ৬০০ টাকা। তিনি বলেন, ডাকাতদের বিল কে দেবেন এ ব্যাপারেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, ডাকাতদের পেছনে চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ২ লাখ টাকার মতো হতে পারে। পুলিশ জানায়, নিরাপত্তার কারণেই ডাকাতদের এনাম মেডিকেলে রাখা হয়েছে।

হরিষে বিষাদ : সাভারে ডাকাতদের হামলায় নিহত কমার্স ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক অলিউল্লাহ মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। বুধবার তার স্ত্রী মাহমুদা মেহজাবিন ও ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। মেহজাবিন বলেন, মঙ্গলবার সকালে অন্যদিনের মতো খাওয়া-দাওয়া করে ব্যাংকে গিয়েছিলেন তার স্বামী। দুপুরে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার (এসইও) পদে পদোন্নতির সেই চিঠি হাতে পেয়ে ফোন করে স্ত্রীকে সুখবর জানান অলিউল্লাহ। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ফোন পেয়ে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে স্বামীর লাশ দেখতে পান মাহমুদা। জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের অনন্তবাড়ি গ্রামের মৃত ওয়াসিম উদ্দীন কাজীর ছেলে অলিউল্লাহ জনতা ব্যাংকে কর্মজীবন শুরু করেন। ৫ বছর আগে তিনি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডে যোগ দেন। অলিউল্লাহ ৯ বছর আগে একই গ্রামে বিয়ে করেন। তার এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে।


 

 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র