jugantor
মিরাজের সত্যতা প্রমাণ করেছে আধুনিক বিজ্ঞান

  মুফতি মুতীউর রাহমান  

১৫ মে ২০১৫, ০০:০০:০০  | 

শুধু হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনেই নয় গোটা পৃথিবীর ইতিহাসে মিরাজের ঘটনা একটি বিস্ময়কর ঘটনা। মিরাজের মাধ্যমে হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে এই পার্থিব জীবনে মানবেতিহাসের সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া হয়েছে। যে সম্মান এর আগে ও পরে অন্য কাউকেই দেয়া হয়নি। কিয়ামতের ময়দানে শাফায়াতের সুযোগদানের মাধ্যমে তাকে আবার সর্বোচ্চ সম্মানে সম্মানিত করা হবে। কোনো নবী-রাসূল বা নিকটতর ফেরেশতাই যে উচ্চতায় পৌঁছতে পারেননি, মিরাজে হজরত মুহাম্মদ (সা.) সেই অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে ছিলেন। আল্লাহতায়ালার দিদার লাভ করেছিলেন। মিরাজ হচ্ছে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইহ ও পরলৌকিক উন্নতির সোপান। মিরাজের শিক্ষা তাৎপর্য ও প্রাপ্তি অনেক ব্যাপক, সুগভীর ও সুদূরপ্রসারী। আর আল্লাহর নিঃসীম কুদরতের নিদর্শন। এত বড় একটি বিষয় পবিত্র কোরআনে অতিসংক্ষেপে উল্লেখ রয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘পবিত্র মহিমাময় তিনি যিনি তার বান্দাকে রজনীভাগে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশপাশ আমি করেছি বরকতময়। তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (বনি ইসরাঈল ১)।

মিরাজের প্রাপ্তি সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, মিরাজে হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে তিনটি জিনিস দেয়া হয়েছে- ১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, ২. সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত, ৩. উম্মতের মধ্যে যারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করেনি তাদের ক্ষমা করা হবে। (মুসলিম ১/৯৭)।

পবিত্র কোরআনে অবশ্য বলা হয়েছে- (হজরত মুহাম্মদকে মিরাজ করিয়েছি) ‘তাঁকে আমার কিছু নিদর্শন দেখানোর জন্য।’ (বনি ইসরাঈল : ১)। কথাটা অনেক সারগর্ভ ও ব্যাপক। বিভিন্ন হাদিসে মিরাজের যে বিশদ বর্ণনা এসেছে তাতে প্রমাণিতও হয় যে, মিরাজে হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ কুদরতের বহু নিদর্শনই স্বচক্ষে দেখেছেন।

সাহাবায়ে কেরাম মিরাজের ঘটনাকে কোনো বাক্য ব্যয় ছাড়াই বিশ্বাস করেছিলেন, আল্লাহর কুদরতের পক্ষে সবই সম্ভব- এই ছিল তাদের সরল যুক্তি। তখনকার বাস্তবতার নিরিখে বিষয়টি অসম্ভব মনে হওয়ায় কাফেররা তা অবিশ্বাস করেছে। বিভিন্ন কটু মন্তব্যও করেছিল।

আজকের বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতির যুগে বাস্তবতার নিরিখে ও মিরাজের সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণ করা যায়। আর এ যুগের মানুষ বিজ্ঞানের আলোকে কোরআন-হাদিস বা ইসলামের কোনো কিছুকে বিশ্লেষণ করলে চমকে ওঠেন। অথচ বিষয়টি উল্টো হওয়া উচিত। বিজ্ঞানকে কোরআন দ্বারা বিশ্লেষণ করাটাই যুক্তিসঙ্গত। কারণ কোরআন শাশ্বত সত্য। আর বিজ্ঞানের বহু থিওরি অসত্য ও প্রমাণিত হয়েছে। তবুও মিরাজের একটু বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করা যাক।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) রাতে মিরাজে গিয়েছিলেন। আজকের বিজ্ঞানীরাও শেষ রাতকে রকেট উৎক্ষেপণের উপযুক্ত সময় মনে করেন।

মিরাজের সফর শুরু করার আগেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর বক্ষ বিদীর্ণ করা হয়। তার কলবকে ঈমান ও হিকমত দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেয়া হয়। এটাকে বর্তমানকালের ওপেন হার্ট সার্জারির সঙ্গে তুলনা করা যায়। সেকালে তা কল্পনাতীত ছিল। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে তা বাস্তবে সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া মহাশূন্যচারীকে কক্ষপথে পাঠানোর আগে বহু বছরব্যাপী বিভিন্ন ধরনের দৈহিক ও মানসিক অনুশীলন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। হজরত মুহাম্মদ (সা.)কেও যেন বক্ষ বিদীর্ণ করার মাধ্যমে মিরাজের ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।

সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে- মিরাজ অতি অল্প সময়ে সংগঠিত হয়েছিল। উম্মে হানির ঘর থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) মিরাজে গিয়েছিলেন। মিরাজ থেকে ফিরে এসে দেখলেন উম্মে হানির ঘরের দরজার কড়া তখনও নড়ছে। অজুর পানি তখনও গড়িয়ে পড়ছে। বিছানা তখনও উষ্ণ। এসব থেকেই প্রমাণিত হয় কত অল্প সময়ের মধ্যে মিরাজ হয়েছিল। কিন্তু এত অল্প সময়ে কীভাবে বাইতুল্লাহ থেকে বাইতুল মাকদিস, বাইতুল মাকদিস থেকে সাত আসমান আল্লাহর আরশ ইত্যাদি ভ্রমণ সম্ভব হল? বিজ্ঞানের উন্নতি এ বিষয়টি কিছুটা খোলাসা করেছে।

মিরাজে বাহন হিসেবে বোরাক ব্যবহৃত হয়েছিল। বোরাক বারকুন থেকে উদ্গত, অর্থ- বিদ্যুৎ। বিজ্ঞানীদের মতে আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ছিয়াশি হাজার মাইল। শাব্দিক অর্থ বিবেচনায় বোরাকের গতি অন্তত আলোর গতির সমান ছিল। হয়তো আরও বেশিই ছিল। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বোরাকের দ্রুতগতির বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, বোরাক নিজ দৃষ্টি সীমার শেষ প্রান্তে প্রতিটি কদম ফেলে। ইট-কংক্রিটের শহরে মানুষের দৃষ্টি বেশিদূর যায় না ঠিকই, কিন্তু দৃষ্টির সামনে কোনো অন্তরায় না থাকলে দিগন্ত দেখা যায়। আমরা পৃথিবী থেকে আকাশও তো দেখতে পাই। সেটা প্রথম আকাশ, সপ্তম আকাশের আগে কিছু না থাকলে পৃথিবী থেকেই হয়তো সপ্তম আকাশও দেখা সম্ভব হতো। এভাবে বিশ্লেষণ করলেই বুঝে আসে বোরাক কত দ্রুতগতির বাহন ছিল। বোরাকের গতির প্রকৃত জ্ঞান এখনও হয়তো মানুষের অর্জনই হয়নি। উপরন্তু মসজিদে আকসা থেকে ঊর্ধ্বলোকের ভ্রমণের জন্য সিঁড়িও নিয়ে আসা হয়েছিল। বোরাকে চড়ে রাসূল (সা.) সেই সিঁড়িতে উঠেছিলেন। ফলে বোরাকের গতি কত বেড়ে গিয়েছিল তা মহান আল্লাহই ভালো জানেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের বক্তব্য হচ্ছে, আলো অপেক্ষা আলোর তরঙ্গের গতি আরও অধিক। বোরাক ও মিরাজে ব্যবহৃত সিঁড়ির সমন্বিত গতি আলো ও আলোর তরঙ্গের গতি থেকেও বেশি ছিল। কারণ মিরাজের জন্য এ যানটি বিশেষভাবে পাঠানো হয়েছিল। আলবার্ট আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি অফ টাইম তথা সময়ের আপেক্ষিকতার থিওরিটিও মিরাজের ঘটনা বুঝতে সহায়ক হয়। দ্রুতগতির একজন রকেট আরোহীর সময়জ্ঞান আর একজন স্থিতিশীল পৃথিবীবাসীর সময়জ্ঞান এক নয়। রকেট আরোহীর দুই বছর পৃথিবীর দুশ’ বছরের সমানও হতে পারে।

পবিত্র কোরআনেও এমন একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। হজরত উযাইর (আ.)কে আল্লাহতায়ালা একশ’ বছর মৃত অবস্থায় রাখলেন। তারপর তাকে জীবিত করে প্রশ্ন করলেন- ‘বলত, কতদিন এভাবে ছিলে? লোকটি বলল একদিন বা একদিনের কিছু সময় আমি এভাবে ছিলাম। আল্লাহ বললেন, না। তুমি বরং একশ’ বছর এভাবে ছিলে। তোমার খাবার ও পানিয়ের দিকে তাকিয়ে দেখ সেগুলো পচে যায়নি। আর দেখ নিজের গাধাটির দিকে। (বাকারা : ২৫৯)। এ আয়াতে দেখা যাচ্ছে, হজরত উযাইর (আ.) যে সময়টাকে একদিন বা তারও কম ভাবছেন বাস্তবে তা একশ’ বছর। একদিকে তার খাবার পচে যায়নি তাতে সময়টা সামান্যই মনে হচ্ছে অপরদিকে তার মৃত গাধার গলে-পচে যাওয়া বিচূর্ণ হাড্ডি প্রমাণ করছে বহুকাল এরই মধ্যে চলে গেছে। এটাকে রিলিটিভিটি অক টাইম সময়ের আপেক্ষিকতা বলা যেতে পারে। মার্কিন নভোযান ডিসকভারির মহাশূন্যচারিরা নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসায় প্রমাণিত হয়েছে নভোভ্রমণ বাস্তবেই সম্ভব। কিন্তু হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মিরাজে গিয়েছিলেন তখন বিষয়টা কল্পনাতীত ছিল। মিরাজের ঘটনা মহাকাশ বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের বিশাল অবদান রেখেছে।

মিরাজের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কাফেররা হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে বাইতুল মাকদিস সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করেছিল। দরজা ক’টা, জানালা ক’টা ইত্যাদি। মাত্র একবার দেখে এসব খুটিনাটি বিষয়ের বিবরণ দেয়া তার জন্য কঠিনই ছিল। তখন আল্লাহতায়ালা বাইতুল মাকদিসের চিত্র তার সামনে গায়েবিভাবে তুলে ধরেছিলেন। তিনি তা দেখে কাফেরদের সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। আজকের বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ফলে এক স্থানের কোনো কিছুর চিত্র-অন্যত্র বসে দেখা সম্ভব হয়েছে। মানুষ টিভি ইত্যাদির মাধ্যমে অহরহই তা দেখছে।

প্রকৃত পক্ষে মানুষের কাছে যা অসাধারণ বা অসাধ্য আল্লাহর কুদরতের কাছে তা একেবারেই সাধারণ, সম্ভব। মিরাজের গোটা ঘটনাটিই মানুষের কাছে বিস্ময়কর হলেও বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের মাধ্যমে তার সম্ভাব্যতা প্রমাণ হয়েছে। কিয়ামত অবধি তা আরও স্পষ্ট হতে থাকবে। মিরাজ বিজ্ঞানীদের চিন্তা ও গবেষণার দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতি মিরাজের সত্যতাকেই বারবার প্রমাণ করেছে। ভবিষ্যতে আরও করতে থাকবে। মিরাজকে কেন্দ্র করে গবেষণা অব্যাহত রাখলে বিজ্ঞানীরা আরও বহুদূর এগিয়ে যাবেন নিঃসন্দেহে। তাতে ঈমানদারদের ঈমান-বিশ্বাস আরও সুদৃঢ় হবে।

লেখক : শায়েখে সানি ও প্রধান মুফতি চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসা, ঢাকা

খতিব-মুহাম্মদিয়া দারুল উলুম জামে মসজিদ, পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা


 

সাবমিট

মিরাজের সত্যতা প্রমাণ করেছে আধুনিক বিজ্ঞান

 মুফতি মুতীউর রাহমান 
১৫ মে ২০১৫, ১২:০০ এএম  | 

শুধু হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনেই নয় গোটা পৃথিবীর ইতিহাসে মিরাজের ঘটনা একটি বিস্ময়কর ঘটনা। মিরাজের মাধ্যমে হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে এই পার্থিব জীবনে মানবেতিহাসের সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া হয়েছে। যে সম্মান এর আগে ও পরে অন্য কাউকেই দেয়া হয়নি। কিয়ামতের ময়দানে শাফায়াতের সুযোগদানের মাধ্যমে তাকে আবার সর্বোচ্চ সম্মানে সম্মানিত করা হবে। কোনো নবী-রাসূল বা নিকটতর ফেরেশতাই যে উচ্চতায় পৌঁছতে পারেননি, মিরাজে হজরত মুহাম্মদ (সা.) সেই অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে ছিলেন। আল্লাহতায়ালার দিদার লাভ করেছিলেন। মিরাজ হচ্ছে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইহ ও পরলৌকিক উন্নতির সোপান। মিরাজের শিক্ষা তাৎপর্য ও প্রাপ্তি অনেক ব্যাপক, সুগভীর ও সুদূরপ্রসারী। আর আল্লাহর নিঃসীম কুদরতের নিদর্শন। এত বড় একটি বিষয় পবিত্র কোরআনে অতিসংক্ষেপে উল্লেখ রয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘পবিত্র মহিমাময় তিনি যিনি তার বান্দাকে রজনীভাগে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশপাশ আমি করেছি বরকতময়। তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (বনি ইসরাঈল ১)।

মিরাজের প্রাপ্তি সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, মিরাজে হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে তিনটি জিনিস দেয়া হয়েছে- ১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, ২. সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত, ৩. উম্মতের মধ্যে যারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করেনি তাদের ক্ষমা করা হবে। (মুসলিম ১/৯৭)।

পবিত্র কোরআনে অবশ্য বলা হয়েছে- (হজরত মুহাম্মদকে মিরাজ করিয়েছি) ‘তাঁকে আমার কিছু নিদর্শন দেখানোর জন্য।’ (বনি ইসরাঈল : ১)। কথাটা অনেক সারগর্ভ ও ব্যাপক। বিভিন্ন হাদিসে মিরাজের যে বিশদ বর্ণনা এসেছে তাতে প্রমাণিতও হয় যে, মিরাজে হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ কুদরতের বহু নিদর্শনই স্বচক্ষে দেখেছেন।

সাহাবায়ে কেরাম মিরাজের ঘটনাকে কোনো বাক্য ব্যয় ছাড়াই বিশ্বাস করেছিলেন, আল্লাহর কুদরতের পক্ষে সবই সম্ভব- এই ছিল তাদের সরল যুক্তি। তখনকার বাস্তবতার নিরিখে বিষয়টি অসম্ভব মনে হওয়ায় কাফেররা তা অবিশ্বাস করেছে। বিভিন্ন কটু মন্তব্যও করেছিল।

আজকের বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতির যুগে বাস্তবতার নিরিখে ও মিরাজের সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণ করা যায়। আর এ যুগের মানুষ বিজ্ঞানের আলোকে কোরআন-হাদিস বা ইসলামের কোনো কিছুকে বিশ্লেষণ করলে চমকে ওঠেন। অথচ বিষয়টি উল্টো হওয়া উচিত। বিজ্ঞানকে কোরআন দ্বারা বিশ্লেষণ করাটাই যুক্তিসঙ্গত। কারণ কোরআন শাশ্বত সত্য। আর বিজ্ঞানের বহু থিওরি অসত্য ও প্রমাণিত হয়েছে। তবুও মিরাজের একটু বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করা যাক।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) রাতে মিরাজে গিয়েছিলেন। আজকের বিজ্ঞানীরাও শেষ রাতকে রকেট উৎক্ষেপণের উপযুক্ত সময় মনে করেন।

মিরাজের সফর শুরু করার আগেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর বক্ষ বিদীর্ণ করা হয়। তার কলবকে ঈমান ও হিকমত দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেয়া হয়। এটাকে বর্তমানকালের ওপেন হার্ট সার্জারির সঙ্গে তুলনা করা যায়। সেকালে তা কল্পনাতীত ছিল। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে তা বাস্তবে সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া মহাশূন্যচারীকে কক্ষপথে পাঠানোর আগে বহু বছরব্যাপী বিভিন্ন ধরনের দৈহিক ও মানসিক অনুশীলন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। হজরত মুহাম্মদ (সা.)কেও যেন বক্ষ বিদীর্ণ করার মাধ্যমে মিরাজের ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।

সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে- মিরাজ অতি অল্প সময়ে সংগঠিত হয়েছিল। উম্মে হানির ঘর থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) মিরাজে গিয়েছিলেন। মিরাজ থেকে ফিরে এসে দেখলেন উম্মে হানির ঘরের দরজার কড়া তখনও নড়ছে। অজুর পানি তখনও গড়িয়ে পড়ছে। বিছানা তখনও উষ্ণ। এসব থেকেই প্রমাণিত হয় কত অল্প সময়ের মধ্যে মিরাজ হয়েছিল। কিন্তু এত অল্প সময়ে কীভাবে বাইতুল্লাহ থেকে বাইতুল মাকদিস, বাইতুল মাকদিস থেকে সাত আসমান আল্লাহর আরশ ইত্যাদি ভ্রমণ সম্ভব হল? বিজ্ঞানের উন্নতি এ বিষয়টি কিছুটা খোলাসা করেছে।

মিরাজে বাহন হিসেবে বোরাক ব্যবহৃত হয়েছিল। বোরাক বারকুন থেকে উদ্গত, অর্থ- বিদ্যুৎ। বিজ্ঞানীদের মতে আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ছিয়াশি হাজার মাইল। শাব্দিক অর্থ বিবেচনায় বোরাকের গতি অন্তত আলোর গতির সমান ছিল। হয়তো আরও বেশিই ছিল। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বোরাকের দ্রুতগতির বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, বোরাক নিজ দৃষ্টি সীমার শেষ প্রান্তে প্রতিটি কদম ফেলে। ইট-কংক্রিটের শহরে মানুষের দৃষ্টি বেশিদূর যায় না ঠিকই, কিন্তু দৃষ্টির সামনে কোনো অন্তরায় না থাকলে দিগন্ত দেখা যায়। আমরা পৃথিবী থেকে আকাশও তো দেখতে পাই। সেটা প্রথম আকাশ, সপ্তম আকাশের আগে কিছু না থাকলে পৃথিবী থেকেই হয়তো সপ্তম আকাশও দেখা সম্ভব হতো। এভাবে বিশ্লেষণ করলেই বুঝে আসে বোরাক কত দ্রুতগতির বাহন ছিল। বোরাকের গতির প্রকৃত জ্ঞান এখনও হয়তো মানুষের অর্জনই হয়নি। উপরন্তু মসজিদে আকসা থেকে ঊর্ধ্বলোকের ভ্রমণের জন্য সিঁড়িও নিয়ে আসা হয়েছিল। বোরাকে চড়ে রাসূল (সা.) সেই সিঁড়িতে উঠেছিলেন। ফলে বোরাকের গতি কত বেড়ে গিয়েছিল তা মহান আল্লাহই ভালো জানেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের বক্তব্য হচ্ছে, আলো অপেক্ষা আলোর তরঙ্গের গতি আরও অধিক। বোরাক ও মিরাজে ব্যবহৃত সিঁড়ির সমন্বিত গতি আলো ও আলোর তরঙ্গের গতি থেকেও বেশি ছিল। কারণ মিরাজের জন্য এ যানটি বিশেষভাবে পাঠানো হয়েছিল। আলবার্ট আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি অফ টাইম তথা সময়ের আপেক্ষিকতার থিওরিটিও মিরাজের ঘটনা বুঝতে সহায়ক হয়। দ্রুতগতির একজন রকেট আরোহীর সময়জ্ঞান আর একজন স্থিতিশীল পৃথিবীবাসীর সময়জ্ঞান এক নয়। রকেট আরোহীর দুই বছর পৃথিবীর দুশ’ বছরের সমানও হতে পারে।

পবিত্র কোরআনেও এমন একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। হজরত উযাইর (আ.)কে আল্লাহতায়ালা একশ’ বছর মৃত অবস্থায় রাখলেন। তারপর তাকে জীবিত করে প্রশ্ন করলেন- ‘বলত, কতদিন এভাবে ছিলে? লোকটি বলল একদিন বা একদিনের কিছু সময় আমি এভাবে ছিলাম। আল্লাহ বললেন, না। তুমি বরং একশ’ বছর এভাবে ছিলে। তোমার খাবার ও পানিয়ের দিকে তাকিয়ে দেখ সেগুলো পচে যায়নি। আর দেখ নিজের গাধাটির দিকে। (বাকারা : ২৫৯)। এ আয়াতে দেখা যাচ্ছে, হজরত উযাইর (আ.) যে সময়টাকে একদিন বা তারও কম ভাবছেন বাস্তবে তা একশ’ বছর। একদিকে তার খাবার পচে যায়নি তাতে সময়টা সামান্যই মনে হচ্ছে অপরদিকে তার মৃত গাধার গলে-পচে যাওয়া বিচূর্ণ হাড্ডি প্রমাণ করছে বহুকাল এরই মধ্যে চলে গেছে। এটাকে রিলিটিভিটি অক টাইম সময়ের আপেক্ষিকতা বলা যেতে পারে। মার্কিন নভোযান ডিসকভারির মহাশূন্যচারিরা নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসায় প্রমাণিত হয়েছে নভোভ্রমণ বাস্তবেই সম্ভব। কিন্তু হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মিরাজে গিয়েছিলেন তখন বিষয়টা কল্পনাতীত ছিল। মিরাজের ঘটনা মহাকাশ বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের বিশাল অবদান রেখেছে।

মিরাজের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কাফেররা হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে বাইতুল মাকদিস সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করেছিল। দরজা ক’টা, জানালা ক’টা ইত্যাদি। মাত্র একবার দেখে এসব খুটিনাটি বিষয়ের বিবরণ দেয়া তার জন্য কঠিনই ছিল। তখন আল্লাহতায়ালা বাইতুল মাকদিসের চিত্র তার সামনে গায়েবিভাবে তুলে ধরেছিলেন। তিনি তা দেখে কাফেরদের সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। আজকের বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ফলে এক স্থানের কোনো কিছুর চিত্র-অন্যত্র বসে দেখা সম্ভব হয়েছে। মানুষ টিভি ইত্যাদির মাধ্যমে অহরহই তা দেখছে।

প্রকৃত পক্ষে মানুষের কাছে যা অসাধারণ বা অসাধ্য আল্লাহর কুদরতের কাছে তা একেবারেই সাধারণ, সম্ভব। মিরাজের গোটা ঘটনাটিই মানুষের কাছে বিস্ময়কর হলেও বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের মাধ্যমে তার সম্ভাব্যতা প্রমাণ হয়েছে। কিয়ামত অবধি তা আরও স্পষ্ট হতে থাকবে। মিরাজ বিজ্ঞানীদের চিন্তা ও গবেষণার দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতি মিরাজের সত্যতাকেই বারবার প্রমাণ করেছে। ভবিষ্যতে আরও করতে থাকবে। মিরাজকে কেন্দ্র করে গবেষণা অব্যাহত রাখলে বিজ্ঞানীরা আরও বহুদূর এগিয়ে যাবেন নিঃসন্দেহে। তাতে ঈমানদারদের ঈমান-বিশ্বাস আরও সুদৃঢ় হবে।

লেখক : শায়েখে সানি ও প্রধান মুফতি চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসা, ঢাকা

খতিব-মুহাম্মদিয়া দারুল উলুম জামে মসজিদ, পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা


 

 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র