jugantor
পুবাইলে কোরআন মাহফিল

  আল ফাতাহ মামুন  

০১ জানুয়ারি ২০১৬, ০০:০০:০০  | 

আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির হেদায়াতের জন্য নসিহত স্বরূপ একটি গ্রন্থ নাজিল করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে একটি নসিহত-ওয়াজ এসেছে। এটি এমন জিনিস যা আত্মার ব্যাধি নিরাময় করে এবং যে উপদেশ গ্রহণ করে তার জন্য হেদায়াত ও রহমত।’ (সূরা ইউনুস, ১০ : ৫৭।)

শীতের হিমেল হাওয়া আমাদের দেশে ওয়াজের বার্তা নিয়ে আসে। শীত ছাড়া যেন মাহফিল জমে না। বাঙালি মুসলিম সংস্কৃতির অপরিহার্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে ওয়াজ-মাহফিল। শীতের রাতে পাড়া-মহল্লায়, গ্রাম-গঞ্জে খেটেখাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ এবং উচ্চ শিক্ষিতরাও ওয়াজ-মাহফিলে অংশগ্রহণ করে থাকেন। পবিত্র কোরআনের অন্যতম নাম ‘ওয়াজ’। অর্থ নসিহত বা উপদেশ। আল্লাহ তায়ালা কোরআনের অসংখ্য আয়াতে কোরআন থেকে উপদেশ গ্রহণের উদাত্ত আহ্বান করেছেন। সূরা কামারেই আল্লাহ তায়ালা চারবার বলেছেন, ‘আমরা কোরআনকে বোঝার ও উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি। অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?’ (সূরা আল-কামার, ৫৪ : ১৭, ২২, ৩২, ৪০।) অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আমরা এ কোরআনে নানাভাবে লোকদের বুঝিয়েছি তারা যেন সজাগ-সতর্ক হয়, কিন্তু তারা সত্য থেকে আরও বেশি দূরে সরে যাচ্ছে।’ (বনি ইসরাইল, ১৭ : ৪১।)

পবিত্র কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী ওয়াজ মানুষের আত্মার ব্যাধি দূর করে আত্মাকে প্রশান্ত ও নির্মল করে তোলে। কিন্তু আমাদের সমাজে যারা ওয়াজ করেন তারাই বেশি ব্যাধিগ্রস্ত। ওয়াজ করে জীবনযাপন, কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা না রাখা এবং সৎ কাজের আদেশ না দেয়াসহ অসংখ্য ধর্মবিরোধী আচরণের কারণে ওয়ায়েজদের ওয়াজ ফলপ্রসূ হয় না। মাহফিল কমিটি ওয়াজের নামে কোরআন প্রচারের পরিবর্তে দুনিয়াবী সুনাম-সুখ্যাতি, আধিপত্য বিস্তার ও দল-মতের প্রচারকে বেশি গুরুত্ব দেন। মাহফিলগুলোর বাইরের পরিপাটি দৃশ্য দেখে ভেতরের করুণ অবস্থা বোঝার উপায় নেই। শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমাদের দেশে অল্প কিছু তাফসির মাহফিল পরিচালিত হচ্ছে যেগুলো সমাজ ও আত্মার সংশোধনের উদ্দেশ্যে কাজ করছে। এমনই একটি মাহফিল পরিচালা করছেন ধর্মদরদি মোহম্মদ আখতার হোসেন। তিনি যুগান্তরের মালয়েশিয়া প্রতিনিধি।

গাজীপুরের পূবাইল বেপারীপাড়া জামে মসজিদের উদ্যোগে ২ দিনব্যাপী ১৪তম তাফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০০২ থেকে এখন পর্যন্ত গাজীপুরের সর্বসাধারণের জন্য কোরআনের তাফসির ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এ মাহফিল। মাহফিলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহম্মদ আখতার হোসেন বলেন, ‘গাজীপুরে আমরাই প্রথম তাফসির মাহফিল শুরু করি। তখন অনেকেই অপছন্দ এবং বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেছে। সাধারণ মানুষ কোরআনের চেয়ে গালগল্পেই বেশি আগ্রহী ছিল। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর মানুষ কোরআনের প্রতি আজ আগ্রহী হয়েছে। এখন প্রায় মাহফিলগুলোই তাফসির মাহফিল পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে।’ আখতার আরও বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা মহিলা শ্রোতাদের ওয়াজ শোনার সুব্যবস্থা করছি। অনেকে এখনও এটি গ্রহণ করতে পারছে না। আমরা ধর্মে নারীকে সম্মানের চোখে দেখি। মহিলারা মার্কেটে যেতে পারে, ঘরে বসে বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চা করতে পারে কিন্তু মসজিদ কিংবা মাহফিলে অংশগ্রহণ করতে পারে না। যতদিন মহিলারা কোরআন সম্পর্কে জানতে পারবে না, কোরআনের সংস্পর্শে আসবে না, ততদিন প্রিয় মাতৃভূমি সোনার বাংলায় কোরআনের জাতি তৈরি হবে না।’ দুনিয়াখ্যাত দার্শনিক নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সূত্র ধরে আখতার বলেন, ‘তোমরা আমাকে কোরআন জানা মা দাও আমি তোমাদের কোরআনের জাতি উপহার দেব।’

সরেজমিন দেখা গেছে, তাফসির মাহফিল উপলক্ষে এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। এলাকাবাসী জানান, ‘এ মাহফিলের জন্য আমরা বছরজুড়ে অধীর অপেক্ষায় থাকি। মূলত এর মাধ্যমেই আমরা কোরআনমুখী হতে পেরেছি।’ এলাকাবাসী আরও বলেন, ‘কোরআনে আল্লাহ কী বলেছেন- এ কথা সবার জানা জরুরি। তাই শহর-গ্রামে, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও তাফসির মাহফিলের আয়োজন করা সময়ের দাবি।’ একাধিক নারী শ্রোতা বলেন, ‘এ মাহফিলে আমরা সুন্দর ব্যবস্থাপনায় কোরআনের তাফসির শুনতে পারছি।

Email: alfatahmamun@gmail.com


 

সাবমিট

পুবাইলে কোরআন মাহফিল

 আল ফাতাহ মামুন 
০১ জানুয়ারি ২০১৬, ১২:০০ এএম  | 

আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির হেদায়াতের জন্য নসিহত স্বরূপ একটি গ্রন্থ নাজিল করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে একটি নসিহত-ওয়াজ এসেছে। এটি এমন জিনিস যা আত্মার ব্যাধি নিরাময় করে এবং যে উপদেশ গ্রহণ করে তার জন্য হেদায়াত ও রহমত।’ (সূরা ইউনুস, ১০ : ৫৭।)

শীতের হিমেল হাওয়া আমাদের দেশে ওয়াজের বার্তা নিয়ে আসে। শীত ছাড়া যেন মাহফিল জমে না। বাঙালি মুসলিম সংস্কৃতির অপরিহার্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে ওয়াজ-মাহফিল। শীতের রাতে পাড়া-মহল্লায়, গ্রাম-গঞ্জে খেটেখাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ এবং উচ্চ শিক্ষিতরাও ওয়াজ-মাহফিলে অংশগ্রহণ করে থাকেন। পবিত্র কোরআনের অন্যতম নাম ‘ওয়াজ’। অর্থ নসিহত বা উপদেশ। আল্লাহ তায়ালা কোরআনের অসংখ্য আয়াতে কোরআন থেকে উপদেশ গ্রহণের উদাত্ত আহ্বান করেছেন। সূরা কামারেই আল্লাহ তায়ালা চারবার বলেছেন, ‘আমরা কোরআনকে বোঝার ও উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি। অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?’ (সূরা আল-কামার, ৫৪ : ১৭, ২২, ৩২, ৪০।) অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আমরা এ কোরআনে নানাভাবে লোকদের বুঝিয়েছি তারা যেন সজাগ-সতর্ক হয়, কিন্তু তারা সত্য থেকে আরও বেশি দূরে সরে যাচ্ছে।’ (বনি ইসরাইল, ১৭ : ৪১।)

পবিত্র কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী ওয়াজ মানুষের আত্মার ব্যাধি দূর করে আত্মাকে প্রশান্ত ও নির্মল করে তোলে। কিন্তু আমাদের সমাজে যারা ওয়াজ করেন তারাই বেশি ব্যাধিগ্রস্ত। ওয়াজ করে জীবনযাপন, কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা না রাখা এবং সৎ কাজের আদেশ না দেয়াসহ অসংখ্য ধর্মবিরোধী আচরণের কারণে ওয়ায়েজদের ওয়াজ ফলপ্রসূ হয় না। মাহফিল কমিটি ওয়াজের নামে কোরআন প্রচারের পরিবর্তে দুনিয়াবী সুনাম-সুখ্যাতি, আধিপত্য বিস্তার ও দল-মতের প্রচারকে বেশি গুরুত্ব দেন। মাহফিলগুলোর বাইরের পরিপাটি দৃশ্য দেখে ভেতরের করুণ অবস্থা বোঝার উপায় নেই। শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমাদের দেশে অল্প কিছু তাফসির মাহফিল পরিচালিত হচ্ছে যেগুলো সমাজ ও আত্মার সংশোধনের উদ্দেশ্যে কাজ করছে। এমনই একটি মাহফিল পরিচালা করছেন ধর্মদরদি মোহম্মদ আখতার হোসেন। তিনি যুগান্তরের মালয়েশিয়া প্রতিনিধি।

গাজীপুরের পূবাইল বেপারীপাড়া জামে মসজিদের উদ্যোগে ২ দিনব্যাপী ১৪তম তাফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০০২ থেকে এখন পর্যন্ত গাজীপুরের সর্বসাধারণের জন্য কোরআনের তাফসির ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এ মাহফিল। মাহফিলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহম্মদ আখতার হোসেন বলেন, ‘গাজীপুরে আমরাই প্রথম তাফসির মাহফিল শুরু করি। তখন অনেকেই অপছন্দ এবং বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেছে। সাধারণ মানুষ কোরআনের চেয়ে গালগল্পেই বেশি আগ্রহী ছিল। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর মানুষ কোরআনের প্রতি আজ আগ্রহী হয়েছে। এখন প্রায় মাহফিলগুলোই তাফসির মাহফিল পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে।’ আখতার আরও বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা মহিলা শ্রোতাদের ওয়াজ শোনার সুব্যবস্থা করছি। অনেকে এখনও এটি গ্রহণ করতে পারছে না। আমরা ধর্মে নারীকে সম্মানের চোখে দেখি। মহিলারা মার্কেটে যেতে পারে, ঘরে বসে বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চা করতে পারে কিন্তু মসজিদ কিংবা মাহফিলে অংশগ্রহণ করতে পারে না। যতদিন মহিলারা কোরআন সম্পর্কে জানতে পারবে না, কোরআনের সংস্পর্শে আসবে না, ততদিন প্রিয় মাতৃভূমি সোনার বাংলায় কোরআনের জাতি তৈরি হবে না।’ দুনিয়াখ্যাত দার্শনিক নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সূত্র ধরে আখতার বলেন, ‘তোমরা আমাকে কোরআন জানা মা দাও আমি তোমাদের কোরআনের জাতি উপহার দেব।’

সরেজমিন দেখা গেছে, তাফসির মাহফিল উপলক্ষে এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। এলাকাবাসী জানান, ‘এ মাহফিলের জন্য আমরা বছরজুড়ে অধীর অপেক্ষায় থাকি। মূলত এর মাধ্যমেই আমরা কোরআনমুখী হতে পেরেছি।’ এলাকাবাসী আরও বলেন, ‘কোরআনে আল্লাহ কী বলেছেন- এ কথা সবার জানা জরুরি। তাই শহর-গ্রামে, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও তাফসির মাহফিলের আয়োজন করা সময়ের দাবি।’ একাধিক নারী শ্রোতা বলেন, ‘এ মাহফিলে আমরা সুন্দর ব্যবস্থাপনায় কোরআনের তাফসির শুনতে পারছি।

Email: alfatahmamun@gmail.com


 

 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র