মূল পরিকল্পনাকারী শাশুড়িসহ ৪ জন গ্রেফতার
যুগান্তর রিপোর্ট
০৮ আগস্ট ২০১৩, ০০:০০:০০ |
দুই লাখ টাকার বিনিময়ে খুন করা হয় ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদারকে। খুনের সাত মাস পর তার শাশুড়িসহ চার জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতারকৃতদের বুধবার রাজধানীর উত্তরায় র্যাব সদর দফতরে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে হাজির করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রফিকুলের শাশুড়ি লিপি আক্তার, ভাড়াটে খুনি আলী মহব্বত, ফজলুর রহমান ও মিজানুর রহমান মন্টু। র্যাব জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে বুধবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে হাজির করা হলেও তারা কেউ কথা বলেননি। তবে, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে লিপি আক্তার অকপটে রফিকুলকে হত্যার পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক ইউং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, লিপি আক্তার জিজ্ঞাসাবাদে লোক ভাড়া করে রফিকুলকে খুন করানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। লিপি বলেছেন, তার ছোট মেয়ের স্বামী রফিকুল অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। এ কারণে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটান তিনি। মূলত মহব্বতের সঙ্গেই এই অর্থ লেনদেন হয় বলেও র্যাবকে জানিয়েছেন লিপি।
র্যাব জানায়, ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে অপহৃত হন ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মজুমদার। ওই রাতেই কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় তার হাতকড়া পরা লাশ পাওয়া যায়। র্যাব কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, গ্রেফতারকৃত চারজনের মধ্যে ফজলুর রহমান একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য এবং তিনি র্যাবেও কাজ করেছেন। এ কারণে রফিকুল অপহৃত হলে গুজব ছড়ানো হয় যে র্যাবই তাকে তুলে নিয়ে গেছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে জমি নিয়ে বিরোধের কোনো বিষয় রয়েছে কিনা জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ করলে তা জানা যাবে।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, রফিকুল খুনের পর র্যাবের গোয়েন্দা দল বিভিন্নভাবে দিন-রাত নিরলস পরিশ্রম করে জড়িতদের খুঁজে বের করার জন্য চেষ্টা করে। র্যাব বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে রফিকের শ্বশুরবাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা এবং কুষ্টিয়ার কুমারখালী এলাকায় বিভিন্নভাবে তথ্যসংগ্রহ করতে থাকে। খুনের ঘটনায় বিশেষ করে রফিকের শাশুড়ির (লিপি আক্তার) ওপর বিশেষ নজরদারি ও তার গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন ধাপে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রফিকের শাশুড়ির কিছুটা সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। একপর্যায়ে দেশে বিদ্যমান প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে র্যাব জানতে পারে, রফিকের শাশুড়িই খুনের মূল পরিকল্পনাকারী।
র্যাবের গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, প্রযুক্তিগত ও নানা কৌশলে তদন্ত চালিয়ে রফিকুল ইসলামের শাশুড়িসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। লিপির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে কর্মকর্তারা বলেন- পাঁচ বছর আগে প্রথম স্ত্রী রিনা খাতুনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় লিপি আক্তারের মেয়ে জামাতা রফিকুল ভয়ভীতি দেখিয়ে তারই ছোট মেয়ে আয়েশা সিদ্দীকা ঝরাকে বিয়ে করে। কিন্তু রফিকুল তার শাশুড়ি লিপির দিকে নজর দেন। অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। শাশুড়ি বাধা দিলে রফিকুল মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এভাবে রফিকুলের সঙ্গে লিপির পাঁচ বছর সম্পর্ক চলতে থাকে।
লিপি আক্তার র্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন, তার জামাতার চরিত্র খুবই বাজে প্রকৃতির। জামাতা রফিকুল একপর্যায়ে তার আরেক মেয়ে স্নিগ্ধার সঙ্গেও জোর করে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে জামাতা রফিকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন লিপি। এ জন্য তিনি দুই লাখ টাকা দিয়ে আলী মহব্বত, ফজলুর রহমান, মিজানুর রহমান, খেলাফত, শিমুল, সোহেল রানা, মধু ওরফে মন্টু ও তোতাকে ভাড়া করেন। এ পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে ৫ জানুয়ারি তাকে হত্যা করা হয়।
র্যাব জানায়, হত্যাকাণ্ডের শিকার রফিকুল ঢাকা মহানগর বিএনপির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সচিব ও বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী ছিলেন। র্যাব পরিচয়ে একদল ব্যক্তি ৫ জানুয়ারি কুষ্টিয়া থেকে তাকে অপহরণের পর হত্যা করে। এ ঘটনার সঙ্গে র্যাবের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় গভীরভাবে তদন্ত শুরু করে র্যাব। নিহত রফিকুলের হাতে র্যাব লেখা হাতকড়া পরা অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা হয়। রফিকুল খুনের ঘটনায় র্যাবের হাতে গ্রেফতার ফজলুর রহমান পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কাজ করতেন। এক সময় র্যাব-৩-এ কর্মরত ছিলেন ফজলুর রহমান। হাতকড়া সেই সরবরাহ করেছিল।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
দুই লাখ টাকায় রফিকুলকে কুষ্টিয়ায় খুন করা হয়
মূল পরিকল্পনাকারী শাশুড়িসহ ৪ জন গ্রেফতার
দুই লাখ টাকার বিনিময়ে খুন করা হয় ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদারকে। খুনের সাত মাস পর তার শাশুড়িসহ চার জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতারকৃতদের বুধবার রাজধানীর উত্তরায় র্যাব সদর দফতরে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে হাজির করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রফিকুলের শাশুড়ি লিপি আক্তার, ভাড়াটে খুনি আলী মহব্বত, ফজলুর রহমান ও মিজানুর রহমান মন্টু। র্যাব জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে বুধবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে হাজির করা হলেও তারা কেউ কথা বলেননি। তবে, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে লিপি আক্তার অকপটে রফিকুলকে হত্যার পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক ইউং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, লিপি আক্তার জিজ্ঞাসাবাদে লোক ভাড়া করে রফিকুলকে খুন করানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। লিপি বলেছেন, তার ছোট মেয়ের স্বামী রফিকুল অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। এ কারণে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটান তিনি। মূলত মহব্বতের সঙ্গেই এই অর্থ লেনদেন হয় বলেও র্যাবকে জানিয়েছেন লিপি।
র্যাব জানায়, ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে অপহৃত হন ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মজুমদার। ওই রাতেই কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় তার হাতকড়া পরা লাশ পাওয়া যায়। র্যাব কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, গ্রেফতারকৃত চারজনের মধ্যে ফজলুর রহমান একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য এবং তিনি র্যাবেও কাজ করেছেন। এ কারণে রফিকুল অপহৃত হলে গুজব ছড়ানো হয় যে র্যাবই তাকে তুলে নিয়ে গেছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে জমি নিয়ে বিরোধের কোনো বিষয় রয়েছে কিনা জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ করলে তা জানা যাবে।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, রফিকুল খুনের পর র্যাবের গোয়েন্দা দল বিভিন্নভাবে দিন-রাত নিরলস পরিশ্রম করে জড়িতদের খুঁজে বের করার জন্য চেষ্টা করে। র্যাব বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে রফিকের শ্বশুরবাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা এবং কুষ্টিয়ার কুমারখালী এলাকায় বিভিন্নভাবে তথ্যসংগ্রহ করতে থাকে। খুনের ঘটনায় বিশেষ করে রফিকের শাশুড়ির (লিপি আক্তার) ওপর বিশেষ নজরদারি ও তার গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন ধাপে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রফিকের শাশুড়ির কিছুটা সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। একপর্যায়ে দেশে বিদ্যমান প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে র্যাব জানতে পারে, রফিকের শাশুড়িই খুনের মূল পরিকল্পনাকারী।
র্যাবের গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, প্রযুক্তিগত ও নানা কৌশলে তদন্ত চালিয়ে রফিকুল ইসলামের শাশুড়িসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। লিপির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে কর্মকর্তারা বলেন- পাঁচ বছর আগে প্রথম স্ত্রী রিনা খাতুনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় লিপি আক্তারের মেয়ে জামাতা রফিকুল ভয়ভীতি দেখিয়ে তারই ছোট মেয়ে আয়েশা সিদ্দীকা ঝরাকে বিয়ে করে। কিন্তু রফিকুল তার শাশুড়ি লিপির দিকে নজর দেন। অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। শাশুড়ি বাধা দিলে রফিকুল মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এভাবে রফিকুলের সঙ্গে লিপির পাঁচ বছর সম্পর্ক চলতে থাকে।
লিপি আক্তার র্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন, তার জামাতার চরিত্র খুবই বাজে প্রকৃতির। জামাতা রফিকুল একপর্যায়ে তার আরেক মেয়ে স্নিগ্ধার সঙ্গেও জোর করে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে জামাতা রফিকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন লিপি। এ জন্য তিনি দুই লাখ টাকা দিয়ে আলী মহব্বত, ফজলুর রহমান, মিজানুর রহমান, খেলাফত, শিমুল, সোহেল রানা, মধু ওরফে মন্টু ও তোতাকে ভাড়া করেন। এ পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে ৫ জানুয়ারি তাকে হত্যা করা হয়।
র্যাব জানায়, হত্যাকাণ্ডের শিকার রফিকুল ঢাকা মহানগর বিএনপির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সচিব ও বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী ছিলেন। র্যাব পরিচয়ে একদল ব্যক্তি ৫ জানুয়ারি কুষ্টিয়া থেকে তাকে অপহরণের পর হত্যা করে। এ ঘটনার সঙ্গে র্যাবের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় গভীরভাবে তদন্ত শুরু করে র্যাব। নিহত রফিকুলের হাতে র্যাব লেখা হাতকড়া পরা অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা হয়। রফিকুল খুনের ঘটনায় র্যাবের হাতে গ্রেফতার ফজলুর রহমান পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কাজ করতেন। এক সময় র্যাব-৩-এ কর্মরত ছিলেন ফজলুর রহমান। হাতকড়া সেই সরবরাহ করেছিল।