নিষ্প্রাণ সংসদে হঠাৎ উত্তাপ
সংসদ রিপোর্টার | প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিষ্প্রাণ সংসদ হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সোমবার। সন্ধ্যার পর পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনএফের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের বক্তব্যের সূত্র ধরে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপিদের চিৎকার, চেঁচামেচি ও হট্টগোলে অধিবেশন কক্ষ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় স্পিকারের আসনে ছিলেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। একপর্যায়ে জাতীয় পার্টির এমপিদের দাবির মুখে আজাদের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার প্রতিশ্রুতি দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ সময় ট্রেজারি বেঞ্চে ছিলেন- বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রমুখ।
মাগরিবের নামাজের বিরতির পর সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে বিএনএফ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ তার নির্বাচনী এলাকা গুলশান-বনানীর পরিবেশ শান্ত রাখতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের পাশাপাশি বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের কার্যালয়ও বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানান। আজাদ গুলশান-বনানী এলাকায় রাজনৈতিক কার্যালয় সরানোর দাবি করে বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকাতেই বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়। এ কার্যালয় থেকেই নাশকতা, অপরাজনীতি ও বোমাবাজি এবং সন্ত্রাসের রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে। আগামী ২০ ফেব্র“য়ারির মধ্যে কার্যালয় সরিয়ে না নেয়া হলে ওই বাড়ির সামনে এলাকার জনগণকে নিয়ে অবস্থান নেব, ওই বাড়িতে প্রবেশ করে অবস্থানকারীদের নিয়েই বের হব।
তিনি বলেন, গুলশান-বনানীতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদেরও রাজনৈতিক কার্যালয় আছে। তাই গুলশান-বারিধারা কূটনৈতিক এলাকা থেকে বিএনপির কার্যালয়, এরশাদের জাতীয় পার্টির কার্যালয়সহ সব রাজনৈতিক কার্যালয় অপসারণ করতে হবে। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে আবুল কালাম আজাদ জাতীয় পার্টিকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিলে সংসদে তুমুল হট্টগোল শুরু করেন জাতীয় পার্টির এমপিরা। তারা স্পিকারের কাছে আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা এবং আজাদকে সংসদে দাঁড়িয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন। এ সময় আবুল কালাম আজাদ ক্ষীপ্ত স্বরে বলেন, পোষ্য বিরোধী দলের এত বড় বড় কথা মানায় না। এ সময় জাতীয় পার্টির ক’জন এমপি আবুল কালাম আজাদকে উদ্দেশ করে নানা মন্তব্য করেন, দু-একজনকে তার দিকে তেড়ে যেতেও দেখা যায়। উত্তপ্ত এ মুহূর্তে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
তার এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য মো. শওকত চৌধুরী বলেন, কি দল তার আমি চিনি না। বিএন নাকি। এরশাদ সাহেব মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে তিনি এমপি হতে পারতেন না। তার এমপি হওয়ার জন্য এরশাদের অবদান রয়েছে। এ কথা বলায় আবার প্রতিবাদ করেন আবুল কালাম আজাদ।
এরপর স্পিকারের কাছে ফ্লোর নিয়ে কথা বলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অফিস আর এরশাদের অফিস এক নয়। খালেদা জিয়া অফিস থেকে সন্ত্রাস-বোমাবাজির নির্দেশ দিচ্ছেন। আমরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে যাচ্ছি শুধু। কিন্তু কোথায় অ্যাকশন (পদক্ষেপ)। কোনো পদক্ষেপ তো নেয়া হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, আমরাই প্রথম পেট্রলবোমা-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তির মিছিল করেছি। সারা দেশের মানুষ একটি শংকা ও আতংকের মধ্যে অবস্থান করছে। আমরা এর অবসান চাই। আজ ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারছে না। আমরা সবাই মিলে এমন সন্ত্রাস-সহিংসতার অবসান করতে চাই। ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বড় বড় দেশে সেনাবাহিনী নামিয়ে, প্রয়োজনে সন্ত্রাসীদের গুলি করে দমন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে কেন করা হচ্ছে না? হত্যার রাজনীতি রাজনীতিকে হত্যা করে। খালেদা জিয়া দেশের রাজনীতিকেই হত্যার মিশনে নেমেছেন। জিয়া উদ্দিন বাবলু বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেন তার সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। এ সময় তিনি আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য এক্সপাঞ্জের দাবি জানান এবং তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার ব্যবস্থা গ্রহণে স্পিকারের প্রতি আহ্বান জানান।