বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন-এর সুদীর্ঘ উপন্যাস ‘নূরজাহান’ যে-গ্রামবাংলার বাস্তব চিত্র ধারণ করে আছে, সেই গ্রাম নির্মীয়মাণ এক পাকা সড়কের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন। শহরের হাওয়া লেগে গেছে যেন গ্রামে। মানুষের মধ্যে উত্তেজনা। তবু এখনও ঢোলকলমির গাঢ় সবুজ পাতায় বসছে লাল ফড়িং, কাইত্তানি অর্থাৎ কার্তিকের বৃষ্টিতে ডাগর হচ্ছে বাকসা ঘাস, চালতা পাতার ফাঁক দিয়ে ঝরে পড়ছে অদ্ভুত উষ্ণ রোদ। এসবের মধ্যেই বড় হচ্ছে পল্লিবাীলকা নূরজাহান। শিশুর মতো সরল হাসি লেগে থাকে তার মুখে। শীতের খেজুর গাছের অপেক্ষায় বসে থাকে দবির গাছি। আর ভাবে, বড় চঞ্চল তার মেয়েটি বিয়ের পর কোন সংসারে গিয়ে খাঁচার পাখিটি হয়ে যাবে। নূরজাহানের বড়-হয়ে-ওঠা, বিয়ে, দুর্ভাগ্য, ভণ্ড ফতোয়াবাজের হাতে অপমানিত হওয়া এবং শেষমেশ আত্মহত্যার করুণ কাহিনির পাশে লেখক এক গ্রামীণ জনপদের মানুষের নিখুঁত জীবনচিত্র এঁকেছেন। যে জীবন দোয়েলের শালিখের, সে-জীবনের অনাবিল প্রবাহকে পঙ্কিল করে তোলে কারা?
অসামান্য ‘নূরজাহান’ উপন্যাসে নির্যাতিতা মেয়েটির আত্মহত্যা প্রতিটি হৃদয়ে যে-আগুন জ্বালে, সমাজের শুদ্ধিকরণে সে-আগুন চিরজাগরূক।
দুই বাংলার জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ইমদাদুল হক মিলনের এ এ উপন্যাসটি অখণ্ড সংস্করণে এবার প্রকাশিত হলো কলকাতার বনেদি প্রকাশনা সংস্থা আনন্দ পাবলিশার্স থেকে। নতুন বছরের জানুয়ারিতেই কলকাতা ও ঢাকার পুস্তক বিপণিকেন্দ্রগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে উপন্যাসটির আনন্দ সংস্করণ। সহস্রাধিক পৃষ্ঠার ঝকঝকে ছাপার উপন্যাসটির দাম ধরা হয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ৭৫০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন সৌমেন দাস।
ধর্মোন্মাদদের রুদ্ররোষে অপমানিত ও আহত তরুণী নূরজাহান বাংলাদেশে বহু আলোচনা-সমালোচনা, বেদনা ও বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। তার আত্মহত্যার ঘটনা পুরো দেশকে আলোড়িত করেছিল। নূরজাহানকে কেন্দ্র করে ঘটনাবলির উপন্যাসিত রূপও কম আলোচনার জন্ম দেয়নি। বইয়ের শেষে লেখকের বক্তব্যে ইমদাদুল হক মিলন জানিয়েছেন, মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর অঞ্চলে ফতোয়ার ঘটনা ঘটেনি। যে নূরজাহানকে পাথর ছোড়া হয়েছিল সে নূরজাহান মৌলভীবাজারের ছাতকছড়ার। ছাতকছড়া থেকে তুলে এনে বিক্রমপুরের মেদেনীমণ্ডলে নূরজাহানকে প্রতিস্থাপন করেছেন ঔপন্যাসিক। এ অঞ্চল ইমদাদুল হক মিলনের জন্মস্থান। তবু মুখ্যত এ বইয়ের দৌত্যেই নূরজাহান প্রসঙ্গটি সংবাদমূল্যের বাইরে এসে সাহিত্যের পরিধিতে একটি সমকালীন মিথ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। সমধর্মী অনেক ঘটনা কালের ধুলোয় মিশে গেলেও নূরজাহান সবার স্মৃতিতে অটুট। মেদেনীমণ্ডলের নূরজাহান যেভাবে ছাতকছড়ার নূরজাহান সেভাবে বাংলাদেশের অনেক নারীর কথাও বিবৃত হয়েছে ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস নূরজাহানে।
বইটির প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দ পাবলিশার্স থেকে ১৯৯৬ সালে। দুবছর পর বাংলাদেশের অনন্যা প্রকাশনী প্রকাশ করে প্রথম পর্বের বাংলাদেশ সংস্করণ। বিপুল পাঠকপ্রিয়তায় পর পর ১৩টি সংস্করণ এসেছে প্রথম পর্বের। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্ব প্রকাশিত একই প্রকাশনা সংস্থা থেকে। অখণ্ড নূরজাহানও প্রকাশ করেছে অনন্যা। এ উপন্যাসের জন্য ২০১১ সালে আইপিএম সুরমা চৌধুরী স্মৃতি আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন এই লেখক।
নূরজাহানের অখণ্ড আনন্দ সংস্করণ উৎসর্গ করা হয়েছে বাংলার নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার স্মৃতির উদ্দেশে। মুসাররাত নওশাবা
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বই আলোচনা
কলকাতার আনন্দ পাবলিশার্স থেকে বেরুলো ‘নূরজাহান’
বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন-এর সুদীর্ঘ উপন্যাস ‘নূরজাহান’ যে-গ্রামবাংলার বাস্তব চিত্র ধারণ করে আছে, সেই গ্রাম নির্মীয়মাণ এক পাকা সড়কের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন। শহরের হাওয়া লেগে গেছে যেন গ্রামে। মানুষের মধ্যে উত্তেজনা। তবু এখনও ঢোলকলমির গাঢ় সবুজ পাতায় বসছে লাল ফড়িং, কাইত্তানি অর্থাৎ কার্তিকের বৃষ্টিতে ডাগর হচ্ছে বাকসা ঘাস, চালতা পাতার ফাঁক দিয়ে ঝরে পড়ছে অদ্ভুত উষ্ণ রোদ। এসবের মধ্যেই বড় হচ্ছে পল্লিবাীলকা নূরজাহান। শিশুর মতো সরল হাসি লেগে থাকে তার মুখে। শীতের খেজুর গাছের অপেক্ষায় বসে থাকে দবির গাছি। আর ভাবে, বড় চঞ্চল তার মেয়েটি বিয়ের পর কোন সংসারে গিয়ে খাঁচার পাখিটি হয়ে যাবে। নূরজাহানের বড়-হয়ে-ওঠা, বিয়ে, দুর্ভাগ্য, ভণ্ড ফতোয়াবাজের হাতে অপমানিত হওয়া এবং শেষমেশ আত্মহত্যার করুণ কাহিনির পাশে লেখক এক গ্রামীণ জনপদের মানুষের নিখুঁত জীবনচিত্র এঁকেছেন। যে জীবন দোয়েলের শালিখের, সে-জীবনের অনাবিল প্রবাহকে পঙ্কিল করে তোলে কারা?
অসামান্য ‘নূরজাহান’ উপন্যাসে নির্যাতিতা মেয়েটির আত্মহত্যা প্রতিটি হৃদয়ে যে-আগুন জ্বালে, সমাজের শুদ্ধিকরণে সে-আগুন চিরজাগরূক।
দুই বাংলার জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ইমদাদুল হক মিলনের এ এ উপন্যাসটি অখণ্ড সংস্করণে এবার প্রকাশিত হলো কলকাতার বনেদি প্রকাশনা সংস্থা আনন্দ পাবলিশার্স থেকে। নতুন বছরের জানুয়ারিতেই কলকাতা ও ঢাকার পুস্তক বিপণিকেন্দ্রগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে উপন্যাসটির আনন্দ সংস্করণ। সহস্রাধিক পৃষ্ঠার ঝকঝকে ছাপার উপন্যাসটির দাম ধরা হয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ৭৫০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন সৌমেন দাস।
ধর্মোন্মাদদের রুদ্ররোষে অপমানিত ও আহত তরুণী নূরজাহান বাংলাদেশে বহু আলোচনা-সমালোচনা, বেদনা ও বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। তার আত্মহত্যার ঘটনা পুরো দেশকে আলোড়িত করেছিল। নূরজাহানকে কেন্দ্র করে ঘটনাবলির উপন্যাসিত রূপও কম আলোচনার জন্ম দেয়নি। বইয়ের শেষে লেখকের বক্তব্যে ইমদাদুল হক মিলন জানিয়েছেন, মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর অঞ্চলে ফতোয়ার ঘটনা ঘটেনি। যে নূরজাহানকে পাথর ছোড়া হয়েছিল সে নূরজাহান মৌলভীবাজারের ছাতকছড়ার। ছাতকছড়া থেকে তুলে এনে বিক্রমপুরের মেদেনীমণ্ডলে নূরজাহানকে প্রতিস্থাপন করেছেন ঔপন্যাসিক। এ অঞ্চল ইমদাদুল হক মিলনের জন্মস্থান। তবু মুখ্যত এ বইয়ের দৌত্যেই নূরজাহান প্রসঙ্গটি সংবাদমূল্যের বাইরে এসে সাহিত্যের পরিধিতে একটি সমকালীন মিথ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। সমধর্মী অনেক ঘটনা কালের ধুলোয় মিশে গেলেও নূরজাহান সবার স্মৃতিতে অটুট। মেদেনীমণ্ডলের নূরজাহান যেভাবে ছাতকছড়ার নূরজাহান সেভাবে বাংলাদেশের অনেক নারীর কথাও বিবৃত হয়েছে ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস নূরজাহানে।
বইটির প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দ পাবলিশার্স থেকে ১৯৯৬ সালে। দুবছর পর বাংলাদেশের অনন্যা প্রকাশনী প্রকাশ করে প্রথম পর্বের বাংলাদেশ সংস্করণ। বিপুল পাঠকপ্রিয়তায় পর পর ১৩টি সংস্করণ এসেছে প্রথম পর্বের। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্ব প্রকাশিত একই প্রকাশনা সংস্থা থেকে। অখণ্ড নূরজাহানও প্রকাশ করেছে অনন্যা। এ উপন্যাসের জন্য ২০১১ সালে আইপিএম সুরমা চৌধুরী স্মৃতি আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন এই লেখক।
নূরজাহানের অখণ্ড আনন্দ সংস্করণ উৎসর্গ করা হয়েছে বাংলার নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার স্মৃতির উদ্দেশে। মুসাররাত নওশাবা