jugantor
নিসর্গের আলোয় মোড়া যে জীবন

  সাংস্কৃতিক রিপোর্টার  

১৯ ডিসেম্বর ২০১৫, ০০:০০:০০  | 

প্রদর্শনীর ছবিগুলোর বেশিরভাগই নিসর্গকেন্দ্রিক। পাহাড়ের কোলে সবুজ দিগন্তে মিশে যাওয়ার দৃশ্য, সমুদ্রজলে রাশি রাশি কালোরঙা নৌকা আর ওপরের দিকে সাঁটানো টি-ব্যাগ থেকে চায়ের লিকার চুঁইয়ে পড়ছে মুণ্ডু-নৌকা-জলে, রয়েছে সন্তানকে মায়ের স্তনদানের দৃশ্য, মুখে আঁচল গুঁজে নারীর খোঁপা বাঁধার দৃশ্য। অবশ্য এর কারণও আছে, প্রদর্শিত ছবিগুলো বিভিন্ন আর্টক্যাম্প থেকে নেয়া। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, মেঘনা নদী ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে অনুষ্ঠিত আর্টক্যাম্পে বসে ছবিগুলো এঁকেছিলেন দেশের বিশিষ্ট প্রবীণ-নবীন শিল্পীরা। আর্টক্যাম্পের আয়োজক প্রতিষ্ঠান ছিল ল্যাবএইড ফাউন্ডেশন। উদ্দেশ্য ছিল এই ছবিগুলো হাসপাতালের দেয়ালে সেঁটে দেয়া হবে। সেই ছবি দেখে রোগীরা পাবেন মানসিক স্বস্তি। রোগশয্যায় নিসর্গ দৃশ্য দেখে তারা হয়তো ভুলে যাবেন তাদের জরাগ্রস্ত শরীরের কথা।

হাসপাতালের দেয়াল থেকে তুলে এনে অসাধারণ সব চিত্রকর্ম নিয়ে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনের লবিতে শুরু হয়েছে ‘জীবনের জন্য শিল্প’ শীর্ষক ছয় দিনব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনী। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য-সুন্দর’ গানের তালে মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। নৃত্য পরিবেশন করে সাধনা সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র। এরপরই অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।

ল্যাবএইড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. এএম শামীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ও চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরী। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘একটি জাতিকে উচ্চমার্গে পৌঁছাতে হলে তার হাতে ধন ও অস্ত্র থাকলে চলবে না, জাতির সুন্দরবৃত্তিগুলো বিকশিত হতে হয়। আমাদের শিল্পকলা রুচির বিকাশে সহায়তা করে। আর পড়ালেখা না করে, শিল্প মাধ্যমে প্রবেশ না করে সেই উন্নত রুচি হয় না।’

‘মানুষ হিসেবে উচ্চাসনে পৌঁছাতে হলে আমাদের অবশ্যই উন্নত রুচি গড়তে হবে। যিনি শিল্পপ্রেমিক তিনি কখনও নোংরা হতে পারেন না, যুদ্ধবাজ হতে পারেন না। জাতি হিসেবে আমাদের যেন সৌন্দর্যের উপাসনা অব্যাহত থাকে’, যোগ করেন অর্থমন্ত্রী।

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘প্রকৃতি শেষ পর্যন্ত আমাদের বন্ধু, শিল্প শেষ পর্যন্ত আমাদের বন্ধু। জাতি হিসেবে আমরা ঊর্ধ্বশ্বাস, বল্গাহীন, উন্মাদের মতো ছুটছি। এই ছোটা থামাতে হবে। এজন্য সব ঘরে, সব স্কুলে, সব প্রতিষ্ঠানে যেন ‘শান্তি’ দাঁড়িয়ে থাকে। আর এই শান্তি হল চিত্রকর্ম। বাংলাদেশে অনেক বিত্তবান আছেন, তারা যেন ছবি কেনেন।’

২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনটি আর্টক্যাম্প থেকে সংগৃহীত ২০০টি চিত্রকর্ম নিয়ে এ আয়োজন। এঁকেছেন দেশের প্রথিতযশা ৫৭ জন শিল্পী। আয়োজন সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী বছরের ফেব্র“য়ারিতেই আরেকটি আর্টক্যাম্প অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবার ক্যাম্প বসবে সুন্দরবনে। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে কালিদাস কর্মকার, বীরেন সোম, মনসুর উল করিম, রণজিৎ দাস, শিশির ভট্টাচার্য, ঢালী আল মামুন, দিলারা বেগম জলি, মাহবুব রহমান, নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা, সাদিয়া শামীম মনসুর, কারু তিতাস, ইয়াসমিন জাহান নূপুরসহ অনেকের চিত্রকর্ম। আগামী ২৩ ডিসেম্বর শেষ হবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।

ছায়ানটের শুদ্ধসঙ্গীত উৎসবের সমাপ্তি : ছায়ানট আয়োজিত শুদ্ধসঙ্গীত উৎসবের সমাপনী দিন ছিল শুক্রবার। এদিন দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয় সকাল ৯টায়। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগ-রাগিনীর খেলা চলে বেলা ১টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রথমেই পরিবেশিত হয় ছায়ানটের শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠসঙ্গীত। অসিত দের পরিচালনায় শিক্ষার্থী শিল্পীরা উপস্থাপন করে রাগ গুণকেলি। তৃতীয় অধিবেশন শুরু হয় সন্ধ্যা ৬টায়। চলে রাত গড়িয়ে ভোর অবধি।

উদীচীর সাংস্কৃতিক সম্মেলনের সেমিনার : সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ- এই দুইয়ের বিরুদ্ধে একসঙ্গে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকালে ‘দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক সংগ্রাম’ বিষয়ক সেমিনারে এ মত তুলে ধরেন তারা। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। উদীচীর কেন্দ্রীয় সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. শফিউদ্দিন আহমেদ, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো প্রমুখ।

সেমিনার শেষে মধ্যাহ্ন বিরতির পর বিকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

মাহিদুল ইসলামের আবৃত্তিসন্ধ্যা : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হল বাচিকশিল্পী মাহিদুল ইসলামের আবৃত্তিসন্ধ্যা। ‘সুবর্ণ সেই আলোর রেখা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে। মাহবুবুল আলম রচিত ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ শীর্ষক কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে শুরু হয় আয়োজন। এরপর শিল্পী একে একে পাঠ করেন নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘আমি আজ কারও রক্ত চাইতে আসিনি’, আসাদ চৌধুরীর ‘শহীদদের প্রতি’, জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’সহ মোট ৩৮টি কবিতা।

খেলাঘর ঢাকা মহানগর কমিটির শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব : খেলাঘর ঢাকা মহানগর কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল ‘শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব’। শুক্রবার আরামবাগ হাইস্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণে এই সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৮টি বিষয়ে ২০টি শাখার প্রায় তিন শতাধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতা শেষে বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলায় চিত্রাংকন ও অবৃত্তি প্রতিযোগিতা : শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, পল্লীকবি জসীমউদদীন এবং বিজ্ঞান লেখক ড. আবদুল্লাহ-আল-মুতী শরফুদ্দিনের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা শুক্রবার এবং আজ শনিবার চিত্রাংকন, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ও বিজ্ঞান মেলা আয়োজন করা হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পী সাঈদা কামাল এবং কেন্দ্রীয় মেলার সহসভাপতি শিল্পী আবুল বারক আলভী। চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় প্রায় ৪০০ জন শিশু-কিশোর অংশগ্রহণ করে। আজ আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ৩ থেকে ১৫ বছরের শিশুরা অংশগ্রহণ করবে।

বিজয় উৎসব পালন করল দুরন্ত : শিশুতোষ সংগঠন ‘দুরন্ত’। পথচলার এক দশকে পা দিয়েছে সংগঠনটি। শুক্রবার সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে দিনব্যাপী পালন করল বিজয় উৎসব। আলোচনা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিজয়ের ৪৪ বছর উদ্্যাপন করা হয়। কুয়াশাভেজা সকালে শিশুদের কলকাকলির মধ্যে উৎসবের উদ্বোধন করেন বরেণ্য কবি নির্মলেন্দু গুণ।

উদ্বোধনী আলোচনা শেষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল থেকে তিন শতাধিক শিশু।

নতুন আঙ্গিকে লোকনাট্যদলের ‘সোনাই-মাধব’ : ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে দেশের প্রতিষ্ঠিত নাট্যসংগঠন ‘লোক নাট্যদল’-এর প্রযোজিত নাটক ‘সোনাই-মাধব’। এই ‘সোনাই-মাধব’ এবার নতুন রূপে-নতুন আঙ্গিকে মঞ্চায়ন হল। গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে এর মঞ্চায়ন হয়। গতকাল ছিল ৭৮তম মঞ্চায়ন।

নাটকটির পরিকল্পনা করেছেন ও নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। নাটকটির সোনাই চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকসানা আক্তার রূপসা এবং মাধব চরিত্রে মো. জাহিদুল কবির লিটন।

বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের আলোচনা সভা : বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘বিজয়, বিপর্যয় এবং অর্জন : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা বিএনপি-জামায়াত-জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।



সাবমিট

নিসর্গের আলোয় মোড়া যে জীবন

 সাংস্কৃতিক রিপোর্টার 
১৯ ডিসেম্বর ২০১৫, ১২:০০ এএম  | 
প্রদর্শনীর ছবিগুলোর বেশিরভাগই নিসর্গকেন্দ্রিক। পাহাড়ের কোলে সবুজ দিগন্তে মিশে যাওয়ার দৃশ্য, সমুদ্রজলে রাশি রাশি কালোরঙা নৌকা আর ওপরের দিকে সাঁটানো টি-ব্যাগ থেকে চায়ের লিকার চুঁইয়ে পড়ছে মুণ্ডু-নৌকা-জলে, রয়েছে সন্তানকে মায়ের স্তনদানের দৃশ্য, মুখে আঁচল গুঁজে নারীর খোঁপা বাঁধার দৃশ্য। অবশ্য এর কারণও আছে, প্রদর্শিত ছবিগুলো বিভিন্ন আর্টক্যাম্প থেকে নেয়া। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, মেঘনা নদী ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে অনুষ্ঠিত আর্টক্যাম্পে বসে ছবিগুলো এঁকেছিলেন দেশের বিশিষ্ট প্রবীণ-নবীন শিল্পীরা। আর্টক্যাম্পের আয়োজক প্রতিষ্ঠান ছিল ল্যাবএইড ফাউন্ডেশন। উদ্দেশ্য ছিল এই ছবিগুলো হাসপাতালের দেয়ালে সেঁটে দেয়া হবে। সেই ছবি দেখে রোগীরা পাবেন মানসিক স্বস্তি। রোগশয্যায় নিসর্গ দৃশ্য দেখে তারা হয়তো ভুলে যাবেন তাদের জরাগ্রস্ত শরীরের কথা।

হাসপাতালের দেয়াল থেকে তুলে এনে অসাধারণ সব চিত্রকর্ম নিয়ে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনের লবিতে শুরু হয়েছে ‘জীবনের জন্য শিল্প’ শীর্ষক ছয় দিনব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনী। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য-সুন্দর’ গানের তালে মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। নৃত্য পরিবেশন করে সাধনা সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র। এরপরই অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।

ল্যাবএইড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. এএম শামীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ও চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরী। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘একটি জাতিকে উচ্চমার্গে পৌঁছাতে হলে তার হাতে ধন ও অস্ত্র থাকলে চলবে না, জাতির সুন্দরবৃত্তিগুলো বিকশিত হতে হয়। আমাদের শিল্পকলা রুচির বিকাশে সহায়তা করে। আর পড়ালেখা না করে, শিল্প মাধ্যমে প্রবেশ না করে সেই উন্নত রুচি হয় না।’

‘মানুষ হিসেবে উচ্চাসনে পৌঁছাতে হলে আমাদের অবশ্যই উন্নত রুচি গড়তে হবে। যিনি শিল্পপ্রেমিক তিনি কখনও নোংরা হতে পারেন না, যুদ্ধবাজ হতে পারেন না। জাতি হিসেবে আমাদের যেন সৌন্দর্যের উপাসনা অব্যাহত থাকে’, যোগ করেন অর্থমন্ত্রী।

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘প্রকৃতি শেষ পর্যন্ত আমাদের বন্ধু, শিল্প শেষ পর্যন্ত আমাদের বন্ধু। জাতি হিসেবে আমরা ঊর্ধ্বশ্বাস, বল্গাহীন, উন্মাদের মতো ছুটছি। এই ছোটা থামাতে হবে। এজন্য সব ঘরে, সব স্কুলে, সব প্রতিষ্ঠানে যেন ‘শান্তি’ দাঁড়িয়ে থাকে। আর এই শান্তি হল চিত্রকর্ম। বাংলাদেশে অনেক বিত্তবান আছেন, তারা যেন ছবি কেনেন।’

২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনটি আর্টক্যাম্প থেকে সংগৃহীত ২০০টি চিত্রকর্ম নিয়ে এ আয়োজন। এঁকেছেন দেশের প্রথিতযশা ৫৭ জন শিল্পী। আয়োজন সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী বছরের ফেব্র“য়ারিতেই আরেকটি আর্টক্যাম্প অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবার ক্যাম্প বসবে সুন্দরবনে। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে কালিদাস কর্মকার, বীরেন সোম, মনসুর উল করিম, রণজিৎ দাস, শিশির ভট্টাচার্য, ঢালী আল মামুন, দিলারা বেগম জলি, মাহবুব রহমান, নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা, সাদিয়া শামীম মনসুর, কারু তিতাস, ইয়াসমিন জাহান নূপুরসহ অনেকের চিত্রকর্ম। আগামী ২৩ ডিসেম্বর শেষ হবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।

ছায়ানটের শুদ্ধসঙ্গীত উৎসবের সমাপ্তি : ছায়ানট আয়োজিত শুদ্ধসঙ্গীত উৎসবের সমাপনী দিন ছিল শুক্রবার। এদিন দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয় সকাল ৯টায়। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগ-রাগিনীর খেলা চলে বেলা ১টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রথমেই পরিবেশিত হয় ছায়ানটের শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠসঙ্গীত। অসিত দের পরিচালনায় শিক্ষার্থী শিল্পীরা উপস্থাপন করে রাগ গুণকেলি। তৃতীয় অধিবেশন শুরু হয় সন্ধ্যা ৬টায়। চলে রাত গড়িয়ে ভোর অবধি।

উদীচীর সাংস্কৃতিক সম্মেলনের সেমিনার : সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ- এই দুইয়ের বিরুদ্ধে একসঙ্গে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকালে ‘দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক সংগ্রাম’ বিষয়ক সেমিনারে এ মত তুলে ধরেন তারা। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। উদীচীর কেন্দ্রীয় সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. শফিউদ্দিন আহমেদ, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো প্রমুখ।

সেমিনার শেষে মধ্যাহ্ন বিরতির পর বিকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

মাহিদুল ইসলামের আবৃত্তিসন্ধ্যা : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হল বাচিকশিল্পী মাহিদুল ইসলামের আবৃত্তিসন্ধ্যা। ‘সুবর্ণ সেই আলোর রেখা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে। মাহবুবুল আলম রচিত ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ শীর্ষক কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে শুরু হয় আয়োজন। এরপর শিল্পী একে একে পাঠ করেন নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘আমি আজ কারও রক্ত চাইতে আসিনি’, আসাদ চৌধুরীর ‘শহীদদের প্রতি’, জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’সহ মোট ৩৮টি কবিতা।

খেলাঘর ঢাকা মহানগর কমিটির শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব : খেলাঘর ঢাকা মহানগর কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল ‘শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব’। শুক্রবার আরামবাগ হাইস্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণে এই সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৮টি বিষয়ে ২০টি শাখার প্রায় তিন শতাধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতা শেষে বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলায় চিত্রাংকন ও অবৃত্তি প্রতিযোগিতা : শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, পল্লীকবি জসীমউদদীন এবং বিজ্ঞান লেখক ড. আবদুল্লাহ-আল-মুতী শরফুদ্দিনের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা শুক্রবার এবং আজ শনিবার চিত্রাংকন, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ও বিজ্ঞান মেলা আয়োজন করা হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পী সাঈদা কামাল এবং কেন্দ্রীয় মেলার সহসভাপতি শিল্পী আবুল বারক আলভী। চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় প্রায় ৪০০ জন শিশু-কিশোর অংশগ্রহণ করে। আজ আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ৩ থেকে ১৫ বছরের শিশুরা অংশগ্রহণ করবে।

বিজয় উৎসব পালন করল দুরন্ত : শিশুতোষ সংগঠন ‘দুরন্ত’। পথচলার এক দশকে পা দিয়েছে সংগঠনটি। শুক্রবার সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে দিনব্যাপী পালন করল বিজয় উৎসব। আলোচনা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিজয়ের ৪৪ বছর উদ্্যাপন করা হয়। কুয়াশাভেজা সকালে শিশুদের কলকাকলির মধ্যে উৎসবের উদ্বোধন করেন বরেণ্য কবি নির্মলেন্দু গুণ।

উদ্বোধনী আলোচনা শেষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল থেকে তিন শতাধিক শিশু।

নতুন আঙ্গিকে লোকনাট্যদলের ‘সোনাই-মাধব’ : ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে দেশের প্রতিষ্ঠিত নাট্যসংগঠন ‘লোক নাট্যদল’-এর প্রযোজিত নাটক ‘সোনাই-মাধব’। এই ‘সোনাই-মাধব’ এবার নতুন রূপে-নতুন আঙ্গিকে মঞ্চায়ন হল। গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে এর মঞ্চায়ন হয়। গতকাল ছিল ৭৮তম মঞ্চায়ন।

নাটকটির পরিকল্পনা করেছেন ও নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। নাটকটির সোনাই চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকসানা আক্তার রূপসা এবং মাধব চরিত্রে মো. জাহিদুল কবির লিটন।

বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের আলোচনা সভা : বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘বিজয়, বিপর্যয় এবং অর্জন : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা বিএনপি-জামায়াত-জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।



 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র