Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

দৃষ্টিপাত

বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী

Icon

ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী

ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) সঙ্গে স্বাক্ষরিত ঋণ চুক্তির আওতায় অনুমোদিত ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়করণ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান ঘটেছে। আগামী জুনে অনুমোদিত ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি বাবদ ১৩০ কোটি ডলার বাংলাদেশের অনুকূলে ছাড়করণ করা হতে পারে।

আর্থিক সংকট সামাল দিতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালে আইএমএফ বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করে। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আইএমএফের ঋণ অনুমোদনকালে বলেছিলেন, বাংলাদেশ যেভাবে ঋণ চেয়েছে, সংস্থাটি সেভাবেই ঋণ অনুমোদন করেছে। তার এ বক্তব্য মোটেও সঠিক ছিল না। কারণ বাংলাদেশ নিশ্চয়ই শর্তযুক্ত ঋণ চায়নি।

কিন্তু আইএমএফ তো বাংলাদেশকে শর্তমুক্ত ঋণ অনুমোদন করেনি। আইএমএফ এমনই একটি আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থা, যারা কোনো দেশকেই শর্তহীন ঋণ দান করে না। তবে ঋণদানের শর্ত দেশভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। দুর্বল দেশগুলোর ক্ষেত্রে আইএমএফের ঋণের শর্ত তুলনামূলকভাবে কঠিন হয়। আর যেসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী, তাদের ক্ষেত্রে ঋণের শর্ত তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে থাকে।

২০২২ সালের আগ পর্যন্ত বেশ কয়েক বছর বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করেনি। ফলে সংস্থাটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেসব পরামর্শ দিয়েছে, তা পরিপালনের কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। উল্লেখ্য, আইএমএফ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঋণদানের ক্ষেত্রে যেসব শর্তারোপ করে, তার অন্যতম একটি হচ্ছে কৃষি খাতে ভর্তুকি প্রদান না করা। কিন্তু বাংলাদেশ বিগত দিনগুলোতে কৃষি খাতে বর্ধিত হারে ভর্তুকি প্রদান করে এসেছে। প্রতিবছর কৃষি ভর্তুকির পরিমাণ বেড়েছে। আইএমএফ ২০২২ সালে বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড়করণ করা হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ ২৩১ কোটি ডলার ঋণ ছাড় পেয়েছে। আরও ২৩৯ কোটি ডলার ঋণের কিস্তি ছাড়করণ বাকি আছে। আগামী মাসে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ ছাড়করণ করা হবে। অনুমোদিত ঋণের আর মাত্র ১০৯ কোটি ডলার অবশিষ্ট থাকবে।

আইএমএফের শর্তানুসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং সেক্টরের ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। খেলাপি ঋণের হার কমিয়ে আনা এবং রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির শর্ত আরোপিত হয়েছিল। সরকার রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউকে (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি পৃথক বিভাগ গঠন করেছে। এনবিআর তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছিল না, যে কারণে রাজস্ব আদায়ের হার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছিল না। বর্তমানে বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও হচ্ছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিু। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের সম্ভাবনা তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করা না গেলে শুধু এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ চালু করা হলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। একইসঙ্গে রাজস্ব নীতিমালা সহজীকরণ করতে হবে।

আইএমএফের ঋণচুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ হিসাবায়ন পদ্ধতি বাস্তবানুগ করা। বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণত গ্রস ভিত্তিতে এ হিসাবায়ন করত। অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ থেকে যে অর্থ এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে ঋণ হিসাবে দেওয়া হয়েছে, তাকেও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ হিসাবে প্রদর্শন করা হতো। কিন্তু আইএমএফের বক্তব্য হচ্ছে, যে অর্থ ফান্ডে জমা নেই এবং চাইলেই তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহার করা যায় না, তা কখনোই রিজার্ভ হিসাবে গণ্য হতে পারে না। অধিকাংশ অর্থনীতিবিদও একই মতপ্রকাশ করেন। বর্তমানে ইডিএফ এবং অন্যান্য প্রকল্পে রিজার্ভ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। বর্তমানে আইএমএফের পরামর্শ মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক নিট বেসিসে বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবায়ন করছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ কমে গেছে। আইএমএফের হিসাবায়ন পদ্ধতি (বিপিএম-৬) অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কিছু বেশি। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সনাতন পদ্ধতি অনুসারে রিজার্ভের পরিমাণ হচ্ছে ২৫ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভ থেকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। এছাড়া কাতার থেকে এলএনজি আমদানির বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং প্রবাসী আয় ইতিবাচক ধারায় থাকার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বর্তমানে অনেকটাই স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে।

আইএমএফের শর্ত পরিপালন করে স্ফীত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ স্ফীতিকরণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্স। গত বছর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ বৃদ্ধি করে। ফলে আহরিত রেমিট্যান্সের প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ক্রমেই স্ফীত হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২০২৫) প্রথম ১০ মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মোট ২৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করেছে। অতীতে কোনো পুরো অর্থবছরেও এত বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আহরিত হয়নি। এর আগে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছিল।

প্রবাসী আয় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, তা হচ্ছে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে যৌক্তিক পন্থা অবলম্বন করা। বিগত সরকার আমলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার অনেক দিন পর্যন্ত ১১০ টাকায় নির্ধারণ করে রেখেছিল। কিন্তু সেই সময় বাজারে ডলারের চাহিদা ছিল অনেক বেশি। ফলে কার্ব মার্কেটে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ব্যাংকিং চ্যানেলে দেওয়া রেটের চেয়ে অন্তত ১০/১২ টাকা বেশি ছিল। প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্থানীয় মুদ্রায় বেশি অর্থ পাওয়ার প্রত্যাশায় হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করত।

আইএমএফ তাদের অনুমোদিত ঋণচুক্তির আওতায় বাংলাদেশের অনুকূলে ঋণের কিস্তি ছাড়করণের শর্ত হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার পক্ষপাতী ছিল না। কারণ বৈদেশিক মুদ্রা, বিশেষ করে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হলে স্থানীয় মুদ্রা টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন ঘটার আশঙ্কা ছিল। সেই অবস্থায় আমদানি পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে, যা গণদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে পারে। এমনিতেই গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। আইএমএফ তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এ বছর মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি থাকতে পারে। আর বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। মূলত এ কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার জন্য সম্মত ছিল না।

বাংলাদেশ ব্যাংক এতদিন ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে মার্কিন ডলারের যে বিনিময় হার নির্ধারণ করছে, তা পুরোপুরি বাজারভিত্তিক ব্যবস্থা নয়। তবে এটাকে ফিক্সড রেট ও বাজারভিত্তিক রেটের মাঝামাঝি একটি পন্থা হিসাবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের একটি ‘মধ্য দর’ নির্ধারণ করে দেয়। শিডিউল ব্যাংকগুলো তার ওপর আড়াই শতাংশ পর্যন্ত দাম কমাতে ও বাড়াতে পারে। এর সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা ব্যবধানে ডলার বিক্রি করা যায়। বর্তমানে প্রতি মার্কিন ডলারের মধ্য দর নির্ধারিত রয়েছে ১১৯ টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতি ডলার ১২৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আইএমএফ চেয়েছিল প্রতি ডলারের বর্তমান মধ্য দর ১১৯ টাকার সঙ্গে ১০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়া ও কমার সুযোগ রাখা হোক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে সম্মত হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের চাহিদা মোতাবেক ডলারের মূল্য বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গৃহীত সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে। ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পর প্রথম কর্মদিবসে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার খুব একটা বাড়েনি।

ডলারের বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার পর বাজার ব্যবস্থাপনাকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্যথায় মূল্যস্ফীতির ঊর্র্ধ্বমুখী প্রবণতা আরও বেড়ে যাবে। এতে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাবে। তবে একটি বিষয় আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে, মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতির ওপর যতটা না প্রভাব ফেলে, তার চেয়ে বেশি প্রভাব সৃষ্টি করে অভ্যন্তরীণভাবে সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা করতে না পারা। বাংলাদেশ মোট ব্যবহার্য পণ্যের ২৫ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে মিটিয়ে থাকে। তাহলে অবিশষ্ট ৭৫ শতাংশ পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায় কেন? বাংলাদেশের বাজারে রাজনৈতিক সমর্থনপুষ্ট শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৎপর রয়েছে। এদের কোনোভাবেই দমন করা যাচ্ছে না। তৃণমূল পর্যায়ের একজন কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পাচ্ছে না। অথচ সেই পণ্যটিই যখন শহরে এসে বাজারজাতকরণ হয়, তখন তার মূল্য উৎপাদন পর্যায়ের চেয়ে ৪/৫ গুণ বেড়ে যায়। বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর সরকারের পুরো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা না গেলে কোনোভাবেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বর্তমানে পণ্য রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। বিশ্বব্যাংক তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগামী বছর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্য ১২ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স হুন্ডির মাধ্যমে প্রেরণের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত হবেন। তারা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক শাখা রয়েছে, সেগুলোকে আরও তৎপর করতে হবে। বিশেষ করে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি ব্যাংকের শাখাগুলো তাদের কর্মীদের দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আবাসস্থলে গিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা চাইলেই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে দেশে অর্থ প্রেরণ করতে পারেন না। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ গ্রহণ করে থাকে। তারা প্রবাসী বাংলাদেশিদের আবাসস্থলে গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে দেশে তাদের বেনিফিশিয়ারিদের কাছে পৌঁছে দেন। বাংলাদেশে যেসব ব্যাংক ব্যবসারত রয়েছে, তাদের বিদেশি শাখা খোলার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। দরকার হলে তাদের প্রণোদনা দিতে হবে। ডলারের ক্রলিং পেগ পদ্ধতির মাধ্যমে ধীরে ধীরে বাজারভিত্তিক করা হলে তা পণ্য রপ্তানি আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বর্তমানে ডলারের বিনিময় হার বাজার চাহিদার তুলনায় কিছুটা কম হওয়ায় পণ্য রপ্তানিকারকরা তাদের উপার্জিত রপ্তানি আয়ের পুরোটা দেশে নিয়ে আসেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। রপ্তানিকারকরা যদি ডলারের বিনিময়ে স্থানীয় মুদ্রায় বেশি অর্থ পেতেন, তাহলে তারা উপার্জিত রপ্তানি আয়ের পুরোটাই দেশে নিয়ে আসতেন। রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স যদি বৈধ পথে দেশে আসা নিশ্চিত করা যেত, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হতো না।

আগামীতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে। ঋণ বা বৈদেশিক আর্থিক সহায়তা দিয়ে এ চাহিদা মেটানো যাবে না। আমাদেরকে নিজস্ব সূত্র থেকেই বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তীর্ণ হলে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী : সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; বাহরাইনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত

বৈদেশিক মুদ্রা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম