গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় ওসি ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা
এসপিকে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ
ময়মনসিংহ ব্যুরো
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ০২:৫৭ পিএম
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানায় তিনদিন আটক রেখে ঝর্ণা বেগম (৪০) নামে তিন সন্তানের এক জননীকে নির্যাতনের ঘটনায় ১৫দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ময়মনসিংহের ৫নং আমলী আদালতের বিচারক হাফিজ আল আসাদ জেলা পুলিশ সুপারকে এ নির্দেশনা দেন।
২১ ডিসেম্বর হালুয়াঘাট থানার ওসি কামরুল ইসলাম মিয়াসহ ৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন ওই নির্যাতিত মহিলা ঝর্ণা বেগম। তার বাড়ি উপজেলা ধুরাইল ইউনিয়নের ধরাপন্নি গ্রামে।
বাদী পক্ষের আইনজীবী আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম সরদার জানান, ১১ আগষ্ট দুপুর ১২টার দিকে ধুরাইল বাজারে সিরাজুল ইসলামের দোকানের সামনে থেকে স্থানীয় আজগর আলীর স্ত্রী ঝর্ণা বেগমকে ধরে নিয়ে যায় ওসি কামরুল ইসলাম মিয়া।
থানায় নিয়ে তার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওইদিন রাত তিনটার দিকে ঝর্ণা বেগমকে ওসির রুমে নিয়ে আসা হয়।
এসময় ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়ারেস উদ্দিন সুমন এবং ওসি তাকে উলঙ্গ করে শারীরিক নির্যাতন করে। পরদিন রাতেও তাকে নির্যাতন করা হয়।
১৩ আগষ্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। পরদিন জেল-হাজতে বাদী অচেতন হয়ে পড়লে তাকে কারা হাসপাতালের মাধ্যমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
৮দিন চিকিৎসা শেষে তাকে পুনরায় হাজতে নেয়া হয়। পরে তার বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে হালুয়াঘাট থানায় ৪টি গরু চুরির মামলা দেয়া হয়। এরপর গত ৪ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পান ঝর্ণা বেগম।
পরে চিকিৎসা শেষে ২১ ডিসেম্বর নির্যাতনের অভিযোগ এনে হালুয়াঘাট থানার ওসি কামরুল ইসলাম মিয়া, ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়ারেস উদ্দিন সুমনসহ ৬জনের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন।
গত বুধবার নির্যাতনের বিষয়টি আদালত আমলে নিয়ে ১৫দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপারকে।
মুক্তি পেয়ে নির্যাতিতা ঝর্ণা বেগম সাংবাদিকদের জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ওয়ারেস উদ্দিন সুমনের পক্ষে কাজ না করায় আমাকে ওই নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে।
আমি দরজির কাজ করে কোন রকম সংসার চালাই। ইউপি চেয়ারম্যান সুমন আমার দিকে কয়েক বছর ধরে কু’নজর দিয়ে আসছিল। আমি তার কথা না শুনায় তিনি আমাকে গত ১১ আগষ্ট পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে হালুয়াঘাট থানায় তিনদিন আটকে রেখে রাতভর শারীরিক নির্যাতন করে।
আমার কাছে ৫ লাখ টাকাও দাবি করে। এখন আমি অন্যের বাড়িতে প্রাণ ভয়ে আত্মগোপনে আছি। চেয়ারম্যান এবং ওসি আমার পরিবারের লোকজনকেও নানাভাবে হয়রানী করছে। আমরা এই নির্যাতন থেকে পরিত্রাণ চাই।
নির্যাতিতার ভাই তাজুল ইসলাম জানান, চেয়ারম্যানের পক্ষে কাজ না করায় আমরা এখন ঘরবাড়ি ছাড়া। আমাদের দেখার মতো কেউ নেই। আমার বোনটাকে ওসি এবং চেয়ারম্যান পাশবিক নির্যাতন করেছে। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
নির্যাতিতার বাবা বাবুর হাট কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক শামসুল আলম জানান, সারাটা জীবন ধর্মীয় কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছি। আজ আমার পরিবারের উপর এমন নির্যাতন কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিনা।
আমাদের এখন মরণ ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই। চেয়ারম্যান-ওসি তারা দুই বন্ধু তাই তাদের সঙ্গে আমরা কোন ভাবেই পারছিনা। মেয়েটাকে থানায় আটকে রেখে এমন নির্যাতন কোন বাবা-মা কি সহ্য করতে পারে?
হালুয়াঘাট থানার ওসি কামরুল ইসলাম মিয়া জানান, চুরির মামলায় ঝর্ণা বেগমকে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছিল। তবে তাকে থানায় রেখে নির্যাতনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
তিনি বলেন, ঝর্ণা বেগমের নামে এলাকায় গরু চুরির অভিযোগ এবং গরুচোর চক্রের সদস্যদের যোগসাজস রয়েছে।
এব্যাপারে ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়ারেস উদ্দিন সুমন জানান, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নারী নির্যাতনের বিষয়টি তার জানা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
জেলা ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নূরে আলম বলেন,আদালতের নির্দেশ আমরা এখনও পায়নি। পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরাধী যেই হোক তাকে ছাড় দেয়া হবে না।