বরিশালে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে তোলপাড়
jugantor
বরিশালে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে তোলপাড়

  আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল ব্যুরো  

২৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:৫১:৪৭  |  অনলাইন সংস্করণ

সদ্য অনুমোদন পাওয়া বরিশাল জেলা দক্ষিণ ও মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে। ত্যাগী-পরীক্ষিত অনেকের নাম বাদ পড়াসহ কমিটি গঠন প্রশ্নে নিজেদেরই করা নিয়ম ভাঙার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। বরিশাল থেকে পাঠানো প্রস্তাবে নাম নেই এমন লোকজনও এসেছেন কমিটিতে। একইভাবে ঘটেছে পাঠানো প্রস্তাবের তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার ঘটনাও। বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন জেলার বিএনপি নেতারা।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে বাদ পড়ার অভিযোগ উঠেছে সদ্য সাবেক মহানগর সভাপতি দলের যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার ঘনিষ্ঠদের। মাঠের রাজনীতি করতে গিয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলার আসামি হওয়া নেতাও রয়েছেন এ তালিকায়। যদিও এসব অভিযোগ স্বীকার করেননি জেলা ও মহানগর বিএনপির দুই আহ্বায়ক।

তাদের মতে, এটা কেবল আহ্বায়ক কমিটির পূর্ণাঙ্গ রূপ। পরিপূর্ণ জেলা ও মহানগর কমিটির তালিকা হবে এর ৪ থেকে ৫ গুণ বড়। তখন আর সমস্যা থাকবে না।

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির রাজনীতিতে একক আধিপত্য ধরে রাখা সরোয়ারকে সরিয়ে মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষিত হয় গত বছরের ৩ নভেম্বর। একই দিনে বরিশাল দক্ষিণ এবং উত্তরের কমিটিও বাতিল করে ঘোষণা হয় আহ্বায়ক কমিটি। ওইদিন ৩ কমিটিতে আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব হিসেবে যে ৭ জনের নাম ঘোষণা হয়, তারা প্রায় সবাই এখানে সরোয়ারবিরোধী পক্ষ হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৩ দশক ধরে সরোয়ারের একক আধিপত্য আর নেতৃত্ব ধরে রাখার অপকৌশলের কারণে এই ঘোষণায় বেশ খুশিও হয় দলের বড় একটা অংশ।

সেই খুশি এখন ম্লান হতে শুরু করেছে জেলা দক্ষিণ ও মহানগরের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর। এই দুই কমিটি থেকে এমন অনেকে বাদ পড়েছেন যারা আজীবন নিঃস্বার্থ বিএনপি কর্মী। দলের জন্য হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হওয়া নেতারাও রয়েছেন এ তালিকায়। সর্বোপরি মহানগর কমিটিতে বলতে গেলে জায়গাই হয়নি সরোয়ারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত নেতাদের। ২২ জানুয়ারি রাতে কমিটির তালিকা প্রকাশের পর এ নিয়েই এখন চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

মহানগরের ৪২ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিতে যারা ঠাঁই পেয়েছেন, তাদের মধ্যে সরোয়ারের ঘনিষ্ঠ অনুসারীর সংখ্যা হাতে গোনা। এরা আবার নয়া আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পরপরই পক্ষ ত্যাগ করে ভিড়ে গিয়েছিলেন নতুন নেতাদের সঙ্গে। এছাড়া আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিবসহ কমিটির প্রথম ১২ জনের ১১ জনই শুরু থেকেই ছিলেন সরোয়ার বিরোধী।

মাঠ পর্যায়ের বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে এমন অনেকে বাদ পড়েছেন যারা বিএনপির ত্যাগী পরীক্ষিত নেতা। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মহানগর কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আকবর, সহ-সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ, আহসানুল কবির, আব্বাস উদ্দিন বাবলা, আলমগীর হোসেন আলম, সহ-সাধারণ সম্পাদক সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ জামাল হোসেন নোমান এবং জলবায়ু ও পরিবশ বিষয়ক সম্পাদ সাজ্জাদ হোসেনসহ অনেকে।

অবশ্য এর বিপরীতে সরোয়ারের একাধিপত্যের আমলে কোণঠাসা হয়ে থাকা ৯০-এর গণআন্দোলনের অনেক ছাত্র নেতাসহ পরীক্ষিতরা ঠাঁই পেয়েছেন কমিটিতে।

বিষয়টি নিয়ে মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, মহানগর বিএনপির কমিটি ছিল ১৭১ সদস্যের। পক্ষান্তরে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাত্র ৪২ জন। এখানে সবাইকে রাখা যাবে না এটাই স্বাভাবিক। তারপরও এই ৪২ জনের মধ্যে ২৬ জনই ছিলেন সাবেক মহানগর কমিটিতে। কে কোন পক্ষের সেটা বিবেচনা করে কমিটি হয়নি। আন্দোলন সংগ্রামে যারা ভূমিকা রাখতে পারবে, তারাই রয়েছেন কমিটিতে।

তাছাড়া এ কমিটির প্রস্তাবনা আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছি। তারা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিয়েছেন। তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ বাদ পড়লে নিশ্চয়ই কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের বলতেন। তবু বলব এটাই শেষ নয়, পূর্ণাঙ্গ কমিটি যখন হবে, তখন আর এসব সমস্যা থাকবে না।

আহ্বায়ক কমিটির পূর্ণাঙ্গ রুপ নিয়ে জটিলতা বেধেছে বরিশালের দক্ষিণ জেলার ক্ষেত্রেও। শনিবার রাতে আসা ঘোষণা অনুযায়ী জেলা দক্ষিণের কমিটি হয়েছে ৪৭ নেতাকে নিয়ে। দক্ষিণের আওতায় থাকা ৮টি সাংগঠনিক ইউনিটের সভাপতি-সম্পাদক মিলিয়ে মোট ১৬ জনের পদাধিকার বলে আহ্বায়ক কমিটিতে আসার কথা থাকলেও বাদ পড়েছেন কেবল সরোয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল ইসলাম প্রিন্স। অথচ এই প্রিন্স উপজেলা পর্যায়ের বিএনপি নেতাদের মধ্যে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলার আসামি হওয়া ছাড়াও বহুবার হয়েছেন হামলা নির্যাতন কারাবরণের শিকার।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা যুগান্তরকে বলেন, এক নেতা দুই পদে থাকতে পারবে না নীতির আলোকে মহানগর বিএনপির কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন মজিবর রহমান সরোয়ার। অথচ দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি প্রশ্নে নিজেরাই এই নিয়ম ভেঙেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। দক্ষিণ জেলায় ১ ও ২নং সদস্য করা হয়েছে সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান ও বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি শরফুদ্দিন সান্টুকে।

অথচ এরা দুজনেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। দুজনেই দুই উপজেলা বিএনপির সভাপতি। এই পদাধিকার বলে যদি তারা জেলা কমিটিতে আসেন, তাহলে তাদের নাম থাকার কথা জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিনের নিচে। অথচ এদের তালিকার উপরে রেখে অ্যাডভোকেট শাহিনকে রাখা হয়েছে ৫ নম্বরে। একইভাবে আরও অনেক নেতার ক্ষেত্রে রক্ষা করা হয়নি সিনিয়রিটির সম্মান।

এসব অসঙ্গতির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান নান্টু বলেন, প্রিন্সের নাম কেন তালিকা থেকে বাদ পড়ল এটা আমিও জানতে চাইব কেন্দ্রের কাছে। কেননা প্রিন্স দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতার পাশাপাশি একজন দক্ষ সংগঠক। আমাদের পাঠানো প্রস্তাবে তার নাম ছিল।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ৪২ জনের নাম সম্বলিত কমিটির প্রস্তাবনা কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলাম। পরে কেন্দ্র থেকে পরিবর্তন পরিবর্ধনের জন্য বলা হলে নতুন করে কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্ত করে দ্বিতীয় দফা প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। তারপরও অবাক হয়ে দেখলাম নাম বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তালিকার ৪৭ নম্বরে থাকা মিজানুর রহমান মিলু কী করে কমিটিতে এলো সেটা তো আমিই বুঝতে পারছি না।

কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে থাকা দুজনকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিনিয়র এবং কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে তাদের রাখা হয়েছে। তাছাড়া দল পরিচালনার জন্য যেমন কিছু অলংকার থাকতে হয়, তেমনি সহযোগিতারও প্রয়োজন আছে।

দুই কমিটির এসব অসঙ্গতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দক্ষিণ এবং মহানগরের সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন এবং জিয়াউদ্দিন সিকদার (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমাদের কোনো মতানৈক্য নেই। তবে আমাদের বক্তব্য একটাই- তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা রয়েছে আহ্বায়ক কমিটির ওপর। নির্ধারিত তিন মাসেই সেটা করুক তারা। তাহলে আর কোনো প্রশ্ন কিংবা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকবে না।

বরিশালে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে তোলপাড়

 আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল ব্যুরো 
২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:৫১ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

সদ্য অনুমোদন পাওয়া বরিশাল জেলা দক্ষিণ ও মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে। ত্যাগী-পরীক্ষিত অনেকের নাম বাদ পড়াসহ কমিটি গঠন প্রশ্নে নিজেদেরই করা নিয়ম ভাঙার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। বরিশাল থেকে পাঠানো প্রস্তাবে নাম নেই এমন লোকজনও এসেছেন কমিটিতে। একইভাবে ঘটেছে পাঠানো প্রস্তাবের তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার ঘটনাও। বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন জেলার বিএনপি নেতারা। 

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে বাদ পড়ার অভিযোগ উঠেছে সদ্য সাবেক মহানগর সভাপতি দলের যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার ঘনিষ্ঠদের। মাঠের রাজনীতি করতে গিয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলার আসামি হওয়া নেতাও রয়েছেন এ তালিকায়। যদিও এসব অভিযোগ স্বীকার করেননি জেলা ও মহানগর বিএনপির দুই আহ্বায়ক। 

তাদের মতে, এটা কেবল আহ্বায়ক কমিটির পূর্ণাঙ্গ রূপ। পরিপূর্ণ জেলা ও মহানগর কমিটির তালিকা হবে এর ৪ থেকে ৫ গুণ বড়। তখন আর সমস্যা থাকবে না।

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির রাজনীতিতে একক আধিপত্য ধরে রাখা সরোয়ারকে সরিয়ে মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষিত হয় গত বছরের ৩ নভেম্বর। একই দিনে বরিশাল দক্ষিণ এবং উত্তরের কমিটিও বাতিল করে ঘোষণা হয় আহ্বায়ক কমিটি। ওইদিন ৩ কমিটিতে আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব হিসেবে যে ৭ জনের নাম ঘোষণা হয়, তারা প্রায় সবাই এখানে সরোয়ারবিরোধী পক্ষ হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৩ দশক ধরে সরোয়ারের একক আধিপত্য আর নেতৃত্ব ধরে রাখার অপকৌশলের কারণে এই ঘোষণায় বেশ খুশিও হয় দলের বড় একটা অংশ। 

সেই খুশি এখন ম্লান হতে শুরু করেছে জেলা দক্ষিণ ও মহানগরের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর। এই দুই কমিটি থেকে এমন অনেকে বাদ পড়েছেন যারা আজীবন নিঃস্বার্থ বিএনপি কর্মী। দলের জন্য হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হওয়া নেতারাও রয়েছেন এ তালিকায়। সর্বোপরি মহানগর কমিটিতে বলতে গেলে জায়গাই হয়নি সরোয়ারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত নেতাদের। ২২ জানুয়ারি রাতে কমিটির তালিকা প্রকাশের পর এ নিয়েই এখন চলছে আলোচনা-সমালোচনা। 

মহানগরের ৪২ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিতে যারা ঠাঁই পেয়েছেন, তাদের মধ্যে সরোয়ারের ঘনিষ্ঠ অনুসারীর সংখ্যা হাতে গোনা। এরা আবার নয়া আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পরপরই পক্ষ ত্যাগ করে ভিড়ে গিয়েছিলেন নতুন নেতাদের সঙ্গে। এছাড়া আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিবসহ কমিটির প্রথম ১২ জনের ১১ জনই শুরু থেকেই ছিলেন সরোয়ার বিরোধী।

মাঠ পর্যায়ের বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে এমন অনেকে বাদ পড়েছেন যারা বিএনপির ত্যাগী পরীক্ষিত নেতা। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মহানগর কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আকবর, সহ-সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ, আহসানুল কবির, আব্বাস উদ্দিন বাবলা, আলমগীর হোসেন আলম, সহ-সাধারণ সম্পাদক সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ জামাল হোসেন নোমান এবং জলবায়ু ও পরিবশ বিষয়ক সম্পাদ সাজ্জাদ হোসেনসহ অনেকে। 

অবশ্য এর বিপরীতে সরোয়ারের একাধিপত্যের আমলে কোণঠাসা হয়ে থাকা ৯০-এর গণআন্দোলনের অনেক ছাত্র নেতাসহ পরীক্ষিতরা ঠাঁই পেয়েছেন কমিটিতে। 

বিষয়টি নিয়ে মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, মহানগর বিএনপির কমিটি ছিল ১৭১ সদস্যের। পক্ষান্তরে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাত্র ৪২ জন। এখানে সবাইকে রাখা যাবে না এটাই স্বাভাবিক। তারপরও এই ৪২ জনের মধ্যে ২৬ জনই ছিলেন সাবেক মহানগর কমিটিতে। কে কোন পক্ষের সেটা বিবেচনা করে কমিটি হয়নি। আন্দোলন সংগ্রামে যারা ভূমিকা রাখতে পারবে, তারাই রয়েছেন কমিটিতে। 

তাছাড়া এ কমিটির প্রস্তাবনা আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছি। তারা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিয়েছেন। তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ বাদ পড়লে নিশ্চয়ই কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের বলতেন। তবু বলব এটাই শেষ নয়, পূর্ণাঙ্গ কমিটি যখন হবে, তখন আর এসব সমস্যা থাকবে না।

আহ্বায়ক কমিটির পূর্ণাঙ্গ রুপ নিয়ে জটিলতা বেধেছে বরিশালের দক্ষিণ জেলার ক্ষেত্রেও। শনিবার রাতে আসা ঘোষণা অনুযায়ী জেলা দক্ষিণের কমিটি হয়েছে ৪৭ নেতাকে নিয়ে। দক্ষিণের আওতায় থাকা ৮টি সাংগঠনিক ইউনিটের সভাপতি-সম্পাদক মিলিয়ে মোট ১৬ জনের পদাধিকার বলে আহ্বায়ক কমিটিতে আসার কথা থাকলেও বাদ পড়েছেন কেবল সরোয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল ইসলাম প্রিন্স। অথচ এই প্রিন্স উপজেলা পর্যায়ের বিএনপি নেতাদের মধ্যে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলার আসামি হওয়া ছাড়াও বহুবার হয়েছেন হামলা নির্যাতন কারাবরণের শিকার। 

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা যুগান্তরকে বলেন, এক নেতা দুই পদে থাকতে পারবে না নীতির আলোকে মহানগর বিএনপির কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন মজিবর রহমান সরোয়ার। অথচ দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি প্রশ্নে নিজেরাই এই নিয়ম ভেঙেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। দক্ষিণ জেলায় ১ ও ২নং সদস্য করা হয়েছে সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান ও বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি শরফুদ্দিন সান্টুকে। 

অথচ এরা দুজনেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। দুজনেই দুই উপজেলা বিএনপির সভাপতি। এই পদাধিকার বলে যদি তারা জেলা কমিটিতে আসেন, তাহলে তাদের নাম থাকার কথা জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিনের নিচে। অথচ এদের তালিকার উপরে রেখে অ্যাডভোকেট শাহিনকে রাখা হয়েছে ৫ নম্বরে। একইভাবে আরও অনেক নেতার ক্ষেত্রে রক্ষা করা হয়নি সিনিয়রিটির সম্মান।

এসব অসঙ্গতির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান নান্টু বলেন, প্রিন্সের নাম কেন তালিকা থেকে বাদ পড়ল এটা আমিও জানতে চাইব কেন্দ্রের কাছে। কেননা প্রিন্স দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতার পাশাপাশি একজন দক্ষ সংগঠক। আমাদের পাঠানো প্রস্তাবে তার নাম ছিল। 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ৪২ জনের নাম সম্বলিত কমিটির প্রস্তাবনা কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলাম। পরে কেন্দ্র থেকে পরিবর্তন পরিবর্ধনের জন্য বলা হলে নতুন করে কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্ত করে দ্বিতীয় দফা প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। তারপরও অবাক হয়ে দেখলাম নাম বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তালিকার ৪৭ নম্বরে থাকা মিজানুর রহমান মিলু কী করে কমিটিতে এলো সেটা তো আমিই বুঝতে পারছি না। 

কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে থাকা দুজনকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিনিয়র এবং কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে তাদের রাখা হয়েছে। তাছাড়া দল পরিচালনার জন্য যেমন কিছু অলংকার থাকতে হয়, তেমনি সহযোগিতারও প্রয়োজন আছে। 

দুই কমিটির এসব অসঙ্গতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দক্ষিণ এবং মহানগরের সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন এবং জিয়াউদ্দিন সিকদার (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমাদের কোনো মতানৈক্য নেই। তবে আমাদের বক্তব্য একটাই- তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা রয়েছে আহ্বায়ক কমিটির ওপর। নির্ধারিত তিন মাসেই সেটা করুক তারা। তাহলে আর কোনো প্রশ্ন কিংবা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকবে না।
 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন