শেষ যে ইচ্ছার কথা বলে গেছেন সিরাজুল আলম খান
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্ষীয়ান রাজনীতিক সিরাজুল আলম খানের সারা জীবনটাই রহস্যে ঘেরা। তাকে বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ বলা হয়ে থাকে। তিনি বহুদিন রোগে ভুগে আজ শুক্রবার শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন।
বাংলাদেশ সৃষ্টি ও প্রগতিশীল আন্দোলনে সিরাজুল আলম খানের অবদান অনেক। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নেতা মেনেই রাজনীতি করেছেন। পরে আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে দ্বন্দ্বে দল থেকে চলে যান।
স্বাধীনতার পর জাসদ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখা সিরাজুল আলম খান পরবর্তীতে রাজনীতিকে সক্রিয় হননি। জাসদের তাত্ত্বিক গুরু হিসেবে নেপথ্যে কাজ করলেও তিনি কোনো পদ পদবি গ্রহণ করেননি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার একটা মান-অভিমান সব সময়ই কাজ করেছে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বলেননি।
তার ব্যক্তিগত জীবনও ছিল রহস্যের আবর্তে। তিনি বিয়ে না করেই জীবন কাটিয়ে দেন। দীর্ঘসময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। শেষ দিকে বাংলাদেশে যাওয়া আসার মধ্যে সময় কাটলেও তিনি রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেননি।
সিরাজুল আলম খানকে নিয়ে লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বই লিখেছেন। তার জীবন নিয়ে লেখা ‘প্রতিনায়ক সিরাজুল আলম খান’ বইয়ে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের জীবনের নানা দিক উঠে এসেছে। সেখানে সিরাজুল আলম খানের শেষ ইচ্ছার কথাও উল্লেখ আছে।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন, গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
ষাটের দশকে সিরাজুল আলম খানের উত্থান ছাত্রনেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের হাত ধরে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছায়াতলে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে ষাটের দশকের প্রথমার্ধে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়।
সিরাজুল আলমের রাজনৈতিক জীবন দীর্ঘ ৫০ বছরের। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বিরোধের পর থেকে তিনি অনেকটা আড়ালে চলে যান।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরলে তার দেখা পাওয়ার জন্য সতীর্থ ও সম সাময়িক রাজনীতিকরা ভিড় করত। তিনি কারো সঙ্গেই বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে আগ্রহ দেখাননি।
সিরাজুল আলম খান মৃত্যুর পর শেষ ইচ্ছা কী, সেটি জানিয়ে গেছেন।
‘প্রতিনায়ক সিরাজুল আলম খান’ বইটিতেই সিরাজুল আলম খান তার শেষ ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। সেটি হলো, আমার মৃত্যুর পর কোনো শোকসভা হবে না। শহিদ মিনারে ডিসপ্লে হবে না লাশ। যত দ্রুত সম্ভব নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আমার গ্রামের বাড়িতে পাঠাতে হবে মরদেহ, যা ঢাকা থাকবে একটা কাঠের কফিনে। মায়ের একটা শাড়ি রেখে দিয়েছি। কফিনটা শাড়িতে মুড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে, মায়ের কবরে।'
শেষ যে ইচ্ছার কথা বলে গেছেন সিরাজুল আলম খান
যুগান্তর প্রতিবেদন
০৯ জুন ২০২৩, ১৬:৫৩:৪৪ | অনলাইন সংস্করণ
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্ষীয়ান রাজনীতিক সিরাজুল আলম খানের সারা জীবনটাই রহস্যে ঘেরা। তাকে বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ বলা হয়ে থাকে। তিনি বহুদিন রোগে ভুগে আজ শুক্রবার শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন।
বাংলাদেশ সৃষ্টি ও প্রগতিশীল আন্দোলনে সিরাজুল আলম খানের অবদান অনেক। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নেতা মেনেই রাজনীতি করেছেন। পরে আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে দ্বন্দ্বে দল থেকে চলে যান।
স্বাধীনতার পর জাসদ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখা সিরাজুল আলম খান পরবর্তীতে রাজনীতিকে সক্রিয় হননি। জাসদের তাত্ত্বিক গুরু হিসেবে নেপথ্যে কাজ করলেও তিনি কোনো পদ পদবি গ্রহণ করেননি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার একটা মান-অভিমান সব সময়ই কাজ করেছে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বলেননি।
তার ব্যক্তিগত জীবনও ছিল রহস্যের আবর্তে। তিনি বিয়ে না করেই জীবন কাটিয়ে দেন। দীর্ঘসময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। শেষ দিকে বাংলাদেশে যাওয়া আসার মধ্যে সময় কাটলেও তিনি রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেননি।
সিরাজুল আলম খানকে নিয়ে লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বই লিখেছেন। তার জীবন নিয়ে লেখা ‘প্রতিনায়ক সিরাজুল আলম খান’ বইয়ে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের জীবনের নানা দিক উঠে এসেছে। সেখানে সিরাজুল আলম খানের শেষ ইচ্ছার কথাও উল্লেখ আছে।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন, গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
ষাটের দশকে সিরাজুল আলম খানের উত্থান ছাত্রনেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের হাত ধরে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছায়াতলে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে ষাটের দশকের প্রথমার্ধে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়।
সিরাজুল আলমের রাজনৈতিক জীবন দীর্ঘ ৫০ বছরের। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বিরোধের পর থেকে তিনি অনেকটা আড়ালে চলে যান।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরলে তার দেখা পাওয়ার জন্য সতীর্থ ও সম সাময়িক রাজনীতিকরা ভিড় করত। তিনি কারো সঙ্গেই বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে আগ্রহ দেখাননি।
সিরাজুল আলম খান মৃত্যুর পর শেষ ইচ্ছা কী, সেটি জানিয়ে গেছেন।
‘প্রতিনায়ক সিরাজুল আলম খান’ বইটিতেই সিরাজুল আলম খান তার শেষ ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। সেটি হলো, আমার মৃত্যুর পর কোনো শোকসভা হবে না। শহিদ মিনারে ডিসপ্লে হবে না লাশ। যত দ্রুত সম্ভব নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আমার গ্রামের বাড়িতে পাঠাতে হবে মরদেহ, যা ঢাকা থাকবে একটা কাঠের কফিনে। মায়ের একটা শাড়ি রেখে দিয়েছি। কফিনটা শাড়িতে মুড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে, মায়ের কবরে।'
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023