গল্প
ছোট মামার নতুন এক্সপেরিমেন্ট
রফিক মুহাম্মদ
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ছোট মামা এলেই রোহানের আনন্দ আর ধরে না। কারণ ছোট মামা এলেই নতুন কিছু ভাবনা, আর নতুন কিছু আবিষ্কার। তাই তো ছোট মামা এলে তাকে ঘিরেই রোহানের সময় কাটে। রোহান সবে ক্লাস ফোরে উঠেছে। এরইমধ্যে সে ছোট মামার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছে। এই তো গত ডিসেম্বরে স্কুলের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ছোট মামা যখন ওদের বাসায় বেড়াতে এসেছিল, তখন ওদের ছাদবাগানের গোলাপ গাছে মামা একটা এক্সপেরিমেন্ট করে গেছে। ছোট মামা ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক্স ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে পড়ে। সে সারাক্ষণ নানা ধরনের গাছ নিয়ে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। এই ছোট মামার এক্সপেরিমেন্টের ফলেই গত তিন-চার দিন হলো ওদের ছাদবাগানের গোলাপ গাছে তিনটি গোলাপ ফুটেছে। মামা এবার নতুন এক্সপেরিমেন্ট করতে যাচ্ছে। মামার পরবর্তী এক্সপেরিমেন্টটা কী? রোহান রাতেই মামাকে ঘিরে ধরে, মামা তোমার নতুন এক্সপেরিমেন্টটা কী? মামা একটু মুচকি হেসে বলেন, তা অনেক কঠিন বিষয়রে বাবা। ওটাতে যদি সফল হতে পারি তাহলে তা হবে বিশ্বের সেরা এক আবিষ্কার।-তাই নাকি! বল না মামা, সে বিষয়টা কী?-আজ থেকে একশ বছর পরের পৃথিবীর কথা চিন্তা করে আমি এ বিষয়টা নিয়ে এক্সপেরিমেন্টের কথা ভাবছি। সে বিষয়টা কী মামা? আমার পরবর্তী গবেষণার বিষয় হচ্ছে ‘অক্সিজেন ফ্যাক্টরি’। বল কি মামা! রোহান অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করে, তুমি গাছগাছড়া নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট কর, আর এখন তা রেখে অক্সিজেন ফ্যাক্টরি বানাবে, তা কীভাবে সম্ভব মামা। গাছ তো আমাদের অক্সিজেন দেয় তা তো তুই জানিস? হ্যাঁ জানি? তাহলে গাছকে আমরা অক্সিজেন ফ্যাক্টরি বলতে পারি তাই না? হ্যাঁ এক অর্থে তো তাই। গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে, আর অক্সিজেন ত্যাগ করে তাই না? হ্যাঁ মামা। বর্তমানে সারা বিশ্বে জলবায়ুর যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটছে। শিল্পায়ন অর্থাৎ কলকারখানা যে হারে বৃদ্ধি পেয়ে পরিবেশের দূষণ হচ্ছে, বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বাড়ছে। তাতে প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে দাবদাহে পুড়ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ। আবার অনেক দেশে অনাবৃষ্টি, খরা। অনেক দেশে ঝড়, প্রবল বর্ষণ, বন্যায় বিপর্যস্ত। এসব কারণে খাদ্য উৎপাদন ক্রমেই ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। গাছপালা বন উজাড় হচ্ছে। এতে আগামী শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে ফসলি জমিগুলো মরুভূমি হয়ে যাবে। তখন খাবারের অভাবে কোটি কোটি মানুষ মারা যাবে। এমন এক ভয়াবহ দুর্যোগময় সময়ের মুখোমুখি যাতে মানুষকে পড়তে না হয়, সেজন্যই আমি এ নিয়ে গবেষণা করতে চাচ্ছি। যদি এমন গাছ আবিষ্কার করতে পারি, যে গাছ বর্তমানে যে পরিমাণ অক্সিজেন ত্যাগ করে তা তার চেয়ে ১০০ গুণ ১০০০ গুণ বেশি অক্সিজেন দেবে। অর্থাৎ প্রতিটি গাছ হবে একেকটা অক্সিজেন ফ্যাক্টরি। এ ধরনের অক্সিজেন ফ্যাক্টরি শহরের প্রতিটি বাড়ির ছাদে থাকবে। গ্রামে-গঞ্জে সবখানে প্রচুর পরিমাণে থাকবে। তাহলে এ পৃথিবী থাকবে সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা। এক সুন্দর নির্মল পৃথিবীতে বাস করতে পারবে আমাদের আগামী প্রজন্ম।
