Logo
Logo
×

সকাল বেলার পাখি

জানা-অজানা

প্যাংগোলিন

Icon

মোখতারুল ইসলাম মিলন

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্যাংগোলিন

বিচিত্রময় প্রাণী প্যাংগোলিন।ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীতে এমন কিছু প্রাণী রয়েছে যারা প্রকৃতির অপার বিচিত্রতার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্যাংগোলিন তেমন একটি অনন্য প্রাণী-যার অস্তিত্ব আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রকৃতি কত রহস্যময় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। এ ছোট্ট প্রাণীটি যেন প্রাচীন যুগের কোনো জীবন্ত জীবাশ্ম, যা আজও আমাদের মধ্যে বিস্ময় জাগ্রত করে। প্যাংগোলিন একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী, যার সারা শরীর শক্ত আঁশে ঢাকা। এ আঁশগুলো কেরোটিন দিয়ে তৈরি, ঠিক যেমন আমাদের নখ বা চুল। প্রকৃতি যেন এ প্রাণীটিকে একটি জীবন্ত বর্ম পরিয়ে দিয়েছে। যখন কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়, প্যাংগোলিন নিজেকে একটি শক্ত বলের মতো গুটিয়ে নেয়, যাতে কোনো শিকারি তার নরম অংশে পৌঁছাতে না পারে। এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এতটাই কার্যকর যে, সিংহের মতো শক্তিশালী শিকারি পর্যন্ত হার মেনে যায়।

প্যাংগোলিনের আরেকটি বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য হলো তার জিহ্বা। এ ছোট্ট প্রাণীর জিহ্বা তার মাথা ও শরীরের সম্মিলিত দৈর্ঘ্যরে চেয়েও বড়। লম্বা জিহ্বা দিয়ে সে উইপোকা ও পিঁপড়ার গর্তে ঢুকে খাবার সংগ্রহ করে। একটি প্যাংগোলিন দিনে প্রায় ৭০ হাজার পিঁপড়া খেতে পারে। এ প্রাণীটির চলাফেরার ধরনও অনন্য। প্যাংগোলিন তার শক্তিশালী নখর দিয়ে মাটি খুঁড়ে গর্তে বাস করে। তার সামনের পায়ের নখগুলো এতটাই শক্তিশালী, কঠিন মাটি ভেদ করা তার কাছে খেলার ব্যাপার। হাঁটার সময় প্যাংগোলিন তার নখরগুলো ভাঁজ করে রাখে যাতে সেগুলো ভোঁতা না হয়ে যায়। 

প্যাংগোলিনের পরিবারে আটটি প্রজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে চারটি এশিয়ায় এবং চারটি আফ্রিকায় পাওয়া যায়। কিছু গাছে বাস করে, আবার কিছু মাটির নিচে। সব প্যাংগোলিনের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো-তারা অত্যন্ত শান্ত ও নিরীহ প্রকৃতির। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এ অনন্য প্রাণীটি আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি চোরাচালান হওয়া প্রাণী। তাদের আঁশের জন্য অবৈধ শিকার চলছে, কারণ কিছু ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাপদ্ধতিতে এ আঁশ ব্যবহৃত হয়। যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোনো ঔষধি গুণ প্রমাণিত হয়নি।

প্যাংগোলিনের বিলুপ্তি শুধু একটি প্রজাতি হারানো নয়, এটি প্রকৃতির ভারসাম্যের জন্যও ক্ষতিকর। পিঁপড়া ও উইপোকা নিয়ন্ত্রণে প্যাংগোলিনের ভূমিকা অপরিহার্য। এদের অনুপস্থিতিতে এ পোকামাকড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে কৃষিক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। প্যাংগোলিন সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন দেশে এদের সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চালু রয়েছে। আর এ প্রচেষ্টা সফলের জন্য প্রয়োজন সবার সম্মিলিত উদ্যোগ।

প্যাংগোলিন আমাদের শেখায়, প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণীর নিজস্ব গুরুত্ব ও সৌন্দর্য রয়েছে। এ ছোট্ট আঁশওয়ালা প্রাণীটি যেন প্রকৃতির এক জীবন্ত কবিতা। এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অমূল্য সম্পদ হিসাবে সংরক্ষণ করা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম