|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ফজলুল হক সেলবর্সী ছিলেন সাংবাদিক, লেখক, বিপ্লবী রাজনীতিক। সুনামগঞ্জ জেলার ধরমপাশা উপজেলার সেলবরস গ্রামে ১৮৯৩ সালে তার জন্ম। শৈশবে পিতামাতাকে হারিয়ে ফজলুল হক অসহায় হয়ে পড়েন এবং তার পড়াশোনা ব্যাহত হয়। সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী হাইস্কুলে ১৯১৫ সালে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে ফজলুল হক কলকাতায় চলে যান। সেখানে ১৯১৬ সালে ম্যাট্রিক পাশ করে তিনি রিপন কলেজে এফএ ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু অচিরেই তিনি কলেজ ত্যাগ করে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত হন।
ফজলুল হক ১৯১৭ সালে সাপ্তাহিক মোহাম্মদী পত্রিকায় যোগ দেন। পরে তিনি সম্পাদক হিসাবে দৈনিক নবযুগ, সাপ্তাহিক মোহাম্মদী, সাপ্তাহিক আল-মুসলিম ও সাপ্তাহিক যুগভেরী পত্রিকায় কাজ করেন। তিনি ১৯৩৫ সালে দৈনিক তাকবির পত্রিকার সম্পাদক পদে যোগ দেন। কিন্তু সরকারবিরোধী ভূমিকার কারণে পত্রিকাটি অচিরেই রাজরোষে পতিত হয় এবং সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়। পরবর্তী সময়ে তিনি দৈনিক সোলতান, মুসলিম, নয়াবাংলা ও আল-এসলাম পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর ফজলুল হক ঢাকায় চলে আসেন এবং দীর্ঘকাল দৈনিক সংবাদ ও নেজামে ইসলাম পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন।
ব্রিটিশবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে কয়েকবার গ্রেফতার করা হয়। রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে ১৯২১ সালে তার নামে পর পর তিনবার গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করা হয়। কয়েক মাস আত্মগোপনে থেকে তিনি তার গোপন কার্যক্রম চালিয়ে যান। কিন্তু পরে মওলানা আবুল কালাম আজাদের প্রণোদনায় তিনি ১৯২২ সালে বাংলা ত্যাগ করে ব্রিটিশবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার নিরাপদ স্থল হিসাবে আফগানিস্তানে চলে যান। পরে একসময় আফগানিস্তান থেকে পেশোয়ার যাওয়ার পথে পেশোয়ার সীমান্তে তিনি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। পেশোয়ার সেনানিবাসে একটি অন্ধকার প্রকোষ্ঠে তাকে ৪৮ দিন অবরুদ্ধ রাখা হয়। পরে আদালতে বিচারের জন্য তাকে সিলেটে আনা হয়। রাজদ্রোহের অপরাধে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯২৪ সালে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে ফজলুল হকের বহু নিবন্ধ ও রচনা প্রকাশিত হয়। তার বৈপ্লবিক রচনাবলির অধিকাংশই প্রকাশিত হয় কাজী নজরুল ইসলামের ধূমকেতু পত্রিকায়। ছাত্রাবস্থায় তার রচিত কিছু লেখা এবং অনুবাদ সুধীমহলে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। তার রচিত দুটি গ্রন্থ অপ্রকাশিত রয়েছে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন ফজলুল হক সেলবর্সী। কবি নজরুলের বিপ্লবী মানস গঠনে তার প্রভাব ও ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুনামগঞ্জ সাহিত্য মজলিশ ১৯৬৭ সালের ২৬ এপ্রিল ফজলুল হক সেলবর্সীকে গণসংবর্ধনা প্রদান করে। তিনি ১৯৬৮ সালের ৮ নভেম্বর মারা যান।
