Logo
Logo
×

স্মরণীয়-বরণীয়

মীর মশাররফ হোসেন

Icon

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মীর মশাররফ হোসেন ছিলেন ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়ায় তার জন্ম। তার মায়ের নাম দৌলতুন্নেসা বেগম। পিতার নাম মীর মোয়াজ্জেম হোসেন। মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন জমিদার। নিজগৃহে মুনশির কাছে আরবি ও ফারসি শেখার মাধ্যমে মশাররফ হোসেনের লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। পরে পাঠশালায় গিয়ে তিনি বাংলা ভাষা শেখেন। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় কুষ্টিয়ার একটি স্কুলে। পরে তিনি কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করে কলকাতার কালীঘাট স্কুলে ভর্তি হন; কিন্তু লেখাপড়া আর বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। কর্মজীবনের শুরুতে মশাররফ হোসেন পিতার জমিদারি দেখাশোনা করেন। পরে তিনি ফরিদপুর নবাব এস্টেটে চাকরি নেন এবং দেলদুয়ার এস্টেটের ম্যানেজার হন। একসময় এ চাকরি ছেড়ে তিনি লাহিনীপাড়ায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং পরে ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় যান।

মশাররফ হোসেন ছাত্রাবস্থায় ‘সংবাদ প্রভাকর’ ও কুমারখালীর ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’র মফস্বল সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। সেখানেই তার সাহিত্যজীবনের শুরু। গ্রামবার্তার সম্পাদক কাঙাল হরিনাথ ছিলেন তার সাহিত্যগুরু। মশাররফ আজিজননেহার ও হিতকরী নামে দুটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি ছিলেন বঙ্কিমযুগের অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী ও উনিশ শতকের বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ।

বঙ্কিমচন্দ্রের ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার চার বছর পর মশাররফের প্রথম উপন্যাস ‘রত্নবতী’ প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি একে একে কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, আত্মজীবনীসহ বহু গ্রন্থ রচনা করেন। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনা হলো : গোরাই-ব্রিজ অথবা গৌরী-সেতু, বসন্তকুমারী নাটক, জমিদার দর্পণ, এর উপায় কি, বিষাদ-সিন্ধু, সঙ্গীত লহরী, গো-জীবন, বেহুলা গীতাভিনয়, ইত্যাদি। তার অমর কীর্তি ‘বিষাদ-সিন্ধু’ উপন্যাসে কারবালার বিষাদময় ঐতিহাসিক কাহিনি বিবৃত হয়েছে। তবে অনেক ঘটনা ও চরিত্র সৃষ্টিতে উপন্যাসসুলভ কল্পনার আশ্রয়ও নেওয়া হয়েছে। তার ‘জমিদার দর্পণ’ নাটকটি ১৮৭২-৭৩ সালে সিরাজগঞ্জে সংঘটিত কৃষক-বিদ্রোহের পটভূমিকায় রচিত। মশাররফ হোসেন গতিশীল গদ্য রচনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন। উদার দৃষ্টিকোণ থেকে ‘গোকুল নির্মূল আশঙ্কা’ প্রবন্ধ লিখে তিনি স্বসমাজ কর্তৃক নিগৃহীত হন। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ১৯১২ সালে মারা যান।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম