ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপ, শুল্ক প্রত্যাহারের আহ্বান ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার দেশের পণ্যের ওপর আরোপিত বাণিজ্যিক শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার (৭ অক্টোবর) দুই নেতার মধ্যে প্রথম আনুষ্ঠানিক ফোনালাপে এ বিষয়ে আলোচনা হয় বলে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রায় ৩০ মিনিটের এ ফোনালাপ সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় লুলা আগামী মাসে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে ট্রাম্পের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাতের প্রস্তাব দেন।
অন্যদিকে, ট্রাম্প তার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লিখেছেন, খুব ভালো ফোনালাপ হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা আবার কথা বলব এবং নিকট ভবিষ্যতে ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই দেশেই সাক্ষাৎ করব।
সম্প্রতি দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা টানাপোড়েনে ছিল। ট্রাম্প তার মিত্র সাবেক প্রেসিডেন্ট জায়ার বোলসোনারোর বিচার ও দণ্ডাদেশে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্রাজিলের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন এবং কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাসহ এক সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরালদো আল্কমিন বলেন, আমরা অত্যন্ত আশাবাদী যে এই সম্পর্ক উভয় দেশের জন্যই লাভজনক পথে এগোবে। তিনি আরও জানান, ফোনালাপটি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হয়েছে এবং দুই প্রেসিডেন্ট পরস্পরের ব্যক্তিগত ফোন নম্বরও বিনিময় করেছেন।
গত মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের মধ্যে লুলা ও ট্রাম্পের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাত হয়, যা প্রথমে আকস্মিক মনে হলেও পরে জানা যায় এটি ছিল কূটনৈতিক তৎপরতার ফল। ট্রাম্প সে সময় লুলার সঙ্গে তার ‘চমৎকার বোঝাপড়া’র কথা উল্লেখ করেন।
যদিও জাতিসংঘের ভাষণে লুলা ব্রাজিলের বিচার বিভাগের ওপর ‘অগ্রহণযোগ্য আক্রমণ’-এর নিন্দা জানান, অন্যদিকে ট্রাম্প ব্রাজিলকে ‘নির্যাতন ও বিচারিক দুর্নীতি’র অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। পরবর্তীতে তিনি সুর নরম করে লুলাকেখুবই ভদ্র মানুষ বলে মন্তব্য করেন।
দুই নেতার অবস্থান বিশ্ববাণিজ্য, বহুপাক্ষিক সহযোগিতা ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে সম্পূর্ণ বিপরীত। তবুও লুলা মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য আসিয়ান সম্মেলনে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রস্তাব দেন এবং নভেম্বরে ব্রাজিলের আমাজনের শহর বেলেমে অনুষ্ঠিতব্য ‘কপ-৩০’ জলবায়ু সম্মেলনে ট্রাম্পকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
লুলা বহুবার বলেছেন, ব্রাজিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত, কিন্তু ওয়াশিংটনে কথা বলার মতো কাউকে পাওয়া যায় না বলে তিনি আক্ষেপ করেন।
ব্রাজিল সরকারের এক সূত্র জানায়, বেসরকারি খাত এই কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রে মাংস ব্যবসায়ী জোসলে বাতিস্তাসহ শীর্ষ উদ্যোক্তাদের আলোচনাও এতে ভূমিকা রাখে। ইউরোপীয় এক কূটনীতিক জানান, ব্রাজিলের বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমব্রায়েরও হোয়াইট হাউসের ওপর চাপ বাড়িয়েছে।
ট্রাম্পের শুল্ক মূলত ব্রাজিলের প্রধান রপ্তানি পণ্য—গরুর মাংস, কফি ও চিনি—কে লক্ষ্য করে আরোপ করা হয়েছে। সর্বশেষ বাণিজ্য তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে ব্রাজিলের রপ্তানি গত বছরের তুলনায় ২০.৩ শতাংশ কমে গেছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বেড়েছে ১৪.৩ শতাংশ।
তবে ব্রাজিল তার রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্যময় করতে চীন, ভারত, সিঙ্গাপুর, আর্জেন্টিনা, পেরু ও পানামাসহ এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বাড়াচ্ছে। সামগ্রিকভাবে সেপ্টেম্বরে দেশের রপ্তানি বেড়েছে ৭.২ শতাংশ।

-68e49f745813c.jpg)

