প্রতিবাদে বিক্ষোভ থেকে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্টের গাড়িবহরে হামলা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫০ পিএম
ঘটনাটি ঘটেছে এমন এক সময়ে, যখন দেশজুড়ে জ্বালানি ভর্তুকি প্রত্যাহারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়ার ওপর হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দেশটির একদল বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্টের গাড়িবহরে হামলা চালায়।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গাড়িতে পাথর নিক্ষেপ ও ভাঙচুর করা হলেও প্রেসিডেন্ট নোবোয়া অক্ষত রয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ইকুয়েডরের পরিবেশ ও জ্বালানি মন্ত্রী ইনেস মানসানো জানান, এটি ছিল প্রেসিডেন্টের ওপর স্পষ্ট হত্যাচেষ্টা। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের গাড়িতে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে এবং আমরা এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’
মন্ত্রী আরও জানান, অন্তত ৫০০ বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্টের গাড়িবহর ঘিরে ধরে হামলা চালায়। এ সময় পাথর নিক্ষেপ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। হামলার পর সন্দেহভাজন পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রেসিডেন্টের দপ্তর জানায়, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করা হবে। তবে গাড়িতে আসলেই গুলি ছোড়া হয়েছিল কি না, তা এখনো স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
ঘটনাটি ঘটেছে এমন এক সময়ে, যখন দেশজুড়ে জ্বালানি ভর্তুকি প্রত্যাহারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে। ঘটনার পর দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় কুয়েঙ্কা শহরে শিক্ষার্থীদের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রেসিডেন্ট নোবোয়া বলেন, তার সরকার কোনোভাবেই সহিংসতা মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, ‘যারা এই হামলার মাধ্যমে তোমাদের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঠেকাতে চেয়েছিল, তাদের পথ অনুসরণ করো না। নতুন ইকুয়েডরে এই ধরনের সহিংসতা সহ্য করা হবে না। আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।’
মন্ত্রী ইনেস মানসানো বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের গাড়িতে গুলি ছোড়া, পাথর নিক্ষেপ বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংস—এসবই অপরাধ। আমরা কোনোভাবেই এমন কর্মকাণ্ড বরদাশত করব না।’
অন্যদিকে, দেশটির জাতীয় আদিবাসী ফেডারেশন কনাই অভিযোগ করেছে, প্রেসিডেন্ট নোবোয়ার সফর উপলক্ষে যারা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের ওপর পুলিশ ও সেনাবাহিনী ব্যাপক দমন অভিযান চালিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, বয়স্ক নারীসহ বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং অন্তত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
জ্বালানি ভর্তুকি প্রত্যাহারে বিক্ষোভের পটভূমি
ইকুয়েডরে ডিজেল ও জ্বালানির ওপর সরকারি ভর্তুকি প্রত্যাহারের প্রতিবাদে দুই সপ্তাহ আগে থেকে দেশজুড়ে ধর্মঘট ও সড়ক অবরোধ চলছে। কৃষক ও আদিবাসী সংগঠন কনাই বলছে, এই সিদ্ধান্তে জীবনযাত্রার ব্যয় মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে।
গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি প্রেসিডেন্ট নোবোয়া জ্বালানি ভর্তুকি বাতিলের একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন এবং কয়েকটি প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ভর্তুকি তুলে নিলে বছরে প্রায় ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে, যা ক্ষুদ্র কৃষক ও পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পুনর্বণ্টন করা হবে।
তবে অর্থনৈতিক সাশ্রয়ের এই পদক্ষেপ এখন প্রেসিডেন্ট নোবোয়ার রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় সংকটে পরিণত হয়েছে—যেখানে জনবিক্ষোভ ও সহিংসতার ছায়া ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে।


