অবহেলিত ক্রীড়াবিদ আবদুল কুদ্দুস
১৯৮১ সালে সাইক্লিং খেলা দিয়ে শুরু মো. আবদুল কুদ্দুসের। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক জিতেছেন। গড়েছেন অনেক সাইক্লিস্ট। যারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন দেশের সাইক্লিং ট্র্যাক। দেশেসেরা সাইক্লিস্টদের কারিগর তিনি।
আব্দুল কুদ্দুসের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সাফল্য কুড়িয়ে এনেছেন দেশের সাইক্লিস্টরা। অনেক সময় সাইক্লিস্টদের বিদেশ যাওয়ার অর্থের জোগান দিয়েও হয়েছেন প্রতারিত। সেই অর্থ আজও পাননি ফেডারেশনের তহবিল থেকে।
সাইক্লিংয়ের জন্য এত কিছু করে দীর্ঘ চার দশকেও তার ভাগ্যে মেলেনি জাতীয় পুরস্কার। জীবনের অর্ধেক সময় ক্রীড়াঙ্গনে ব্যয় করা তৃণমূলের এই ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকের হাপিত্যেশ জাতীয় একটি সম্মাননা বা স্বীকৃতির।
ক্যারিয়ারে অনেক ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা থাকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের। সৌভাগ্যবানরা জীবিত অবস্থায় সেই সম্মান পেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেন। শান্তির আবেশে ভেসে যান। আবার অনেকে জাতীয় এই সম্মানের যোগ্য থাকলেও তা দেখে যেতে পারেন না। জীবিত থাকা অবস্থায় ক্রীড়া পুরস্কার না পাওয়ায় তাদের পরিবার এবং সংশ্লিষ্টরা আফসোসও করেন।
জীবিত থেকেই দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ এই স্বীকৃতি পেতে চান আকুল আবদুল কুদ্দুস। তার কথায়- জীবনের ৫৮ বছরের মধ্যে ৪২ বছর কাটিয়েছি ক্রীড়াঙ্গনে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অনেক সাফল্যের কারিগর; কিন্তু আজও তার স্বীকৃতি পাইনি। এই হতাশা নিয়েই কি পরপারে যেতে হবে আমাকে?
১৯৮১ সালে ঢাকায় প্রথমবার সাইক্লিং খেলতে এসেই রৌপপদক জিতেন কুদ্দুস। এরপর ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় রেকর্ডসহ ২৩টি স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জসহ ৫২টি পদক জিতেছেন। ১৯৯২ সালে ট্যুর ডি বাংলাদেশ টুর্নামেন্টে ১০০০ কিলোমিটারে প্রথমস্থান অর্জন করেন। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ট্যুর ডি পাকিস্তানে ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৮৬০ কিলোমিটারে ১০ স্টেজের খেলায় ৭ম স্থান অধিকার করে সনদ পান।
খেলোয়াড়ি জীবনের মতো বর্ণিল তার কোচিং ক্যারিয়ারও। বাংলাদেশ বস্ত্র শিল্প করপোরেশনকে জাতীয় সাইক্লিংয়ে একবার চ্যাম্পিয়ন করান। বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনকে (বিজেএমসি) জাতীয় সাইক্লিংযে ১৯ বার চ্যাম্পিয়নশিপ করিয়েছেন।
২০১৬ সালের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে আবদুল কুদ্দুসের তত্ত্বাবধানে ২০টি ইভেন্টের মধ্যে ১৯টি স্বর্ণপদক জেতে বিজেএমসি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও সমৃদ্ধ কুদ্দুসের কোচিং ক্যারিয়ার। ২০০২ সালে দিল্লি দ্বিতীয় সার্ক সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে দুটি রৌপ্য ও নয়টি ব্রোঞ্জ জিতিয়ে রানার্সআপ করান তিনি। ২০০৬ সালে নবম সাফ গেমসে সাইক্লিং প্রশিক্ষক হিসেবে শ্রীলংকার কলম্বোতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং দেশকে ব্রোঞ্জপদক এনে দেন।
২০১৩ সালে দিল্লিতে ট্র্যাক এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশকে প্রশিক্ষক হিসেবে ১টি রৌপ্য ও একটি ব্রোঞ্জপদক জিতে আসেন শিষ্যদের নিয়ে। পরের বছর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসে দলগত ইভেন্টে সাইক্লিং প্রশিক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশকে নবম স্থান অর্জন করান।
একই বছরে দিল্লিতে এশিয়ান ট্র্যাক চ্যাম্পিয়নশিপে সাইক্লিং প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে মালয়েশিয়াতে এশিয়ান ট্র্যাক চ্যাম্পিয়নশিপে সাইক্লিং প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আবদুল কুদ্দুস। সদ্য সমাপ্ত ৪১তম জাতীয় সাইক্লিংয়ে বাংলাদেশ আনসারকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন শিরোপা জেতান তিনি।
তার প্রশিক্ষণে মাঠপর্যায়ে বহু খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে। দেশের সাইক্লিংয়ে ৯৫ ভাগ সাইক্লিস্ট তার হাতেই গড়া। যাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তুলে এনে সাইক্লিস্ট বানিয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাইক্লিস্ট- ফারহানা সুলতানা শিলা (জাতীয় পুরস্কার পাওয়া সাইক্লিস্ট), আবদুর রউফ, শাহ ইফতেখার আলম নাহিদ, সেবীকা মন্ডল, সোনিয়া ইসলাম অভি, তরিকুল ইসলাম, মনোয়ারা খানম সাথী, স্বপন আলম, সমাপ্তী বিশ্বাস, মুকতাদির আল হাসান, শিল্পী খাতুন, সুবর্ণা বর্মন, তিথী বিশ্বাস ও খন্দকার মাহবুব আলম, রিয়াদ মাহমুদ, জয়নুল আবেদিন, পারুল আক্তার, এমএ মতিন বাবু, জাহিদ চৌধুরী সুমন ও রুনা লায়লা।
এছাড়া ফেডারেশনের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ এবং প্রশিক্ষক মো. সাহিদুর রহমান সাহিদেরও কোচ ছিলেন আবদুল কুদ্দুস। সাংগঠনিক জীবনেও নিজের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন আবদুল কুদ্দুস। সাইক্লিং ফেডারেশরে সবেক কমিটিগুলোর দুইবারের যুগ্ম সম্পাদক, দুইবারের কোষাধ্যক্ষ ও দুইবারের সদস্য হিসেবে থেকে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
বিজেএমসির কোচ হিসেবে তৃণমূল থেকে তিনি সাইক্লিং, নারী ভলিবল, হ্যান্ডবল, কাবাডি, ভারোত্তোলন, অ্যাথলেটিকস, পুরুষ ফুটবল, নারী ফুটবল, জিমন্যাস্টিকস, তায়কোয়ান্দো ও উশুর খেলোয়াড় সংগ্রহ করে জাতীয় দলে সরবারাহ করেছেন; যারা আজ নিজেদের অবস্থানে সমৃদ্ধ। তাইতো তিনি এখন ক্রীড়াঙ্গনের মামা হিসেবে খ্যাত।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
অবহেলিত ক্রীড়াবিদ আবদুল কুদ্দুস
১৯৮১ সালে সাইক্লিং খেলা দিয়ে শুরু মো. আবদুল কুদ্দুসের। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক জিতেছেন। গড়েছেন অনেক সাইক্লিস্ট। যারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন দেশের সাইক্লিং ট্র্যাক। দেশেসেরা সাইক্লিস্টদের কারিগর তিনি।
আব্দুল কুদ্দুসের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সাফল্য কুড়িয়ে এনেছেন দেশের সাইক্লিস্টরা। অনেক সময় সাইক্লিস্টদের বিদেশ যাওয়ার অর্থের জোগান দিয়েও হয়েছেন প্রতারিত। সেই অর্থ আজও পাননি ফেডারেশনের তহবিল থেকে।
সাইক্লিংয়ের জন্য এত কিছু করে দীর্ঘ চার দশকেও তার ভাগ্যে মেলেনি জাতীয় পুরস্কার। জীবনের অর্ধেক সময় ক্রীড়াঙ্গনে ব্যয় করা তৃণমূলের এই ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকের হাপিত্যেশ জাতীয় একটি সম্মাননা বা স্বীকৃতির।
ক্যারিয়ারে অনেক ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা থাকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের। সৌভাগ্যবানরা জীবিত অবস্থায় সেই সম্মান পেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেন। শান্তির আবেশে ভেসে যান। আবার অনেকে জাতীয় এই সম্মানের যোগ্য থাকলেও তা দেখে যেতে পারেন না। জীবিত থাকা অবস্থায় ক্রীড়া পুরস্কার না পাওয়ায় তাদের পরিবার এবং সংশ্লিষ্টরা আফসোসও করেন।
জীবিত থেকেই দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ এই স্বীকৃতি পেতে চান আকুল আবদুল কুদ্দুস। তার কথায়- জীবনের ৫৮ বছরের মধ্যে ৪২ বছর কাটিয়েছি ক্রীড়াঙ্গনে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অনেক সাফল্যের কারিগর; কিন্তু আজও তার স্বীকৃতি পাইনি। এই হতাশা নিয়েই কি পরপারে যেতে হবে আমাকে?
১৯৮১ সালে ঢাকায় প্রথমবার সাইক্লিং খেলতে এসেই রৌপপদক জিতেন কুদ্দুস। এরপর ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় রেকর্ডসহ ২৩টি স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জসহ ৫২টি পদক জিতেছেন। ১৯৯২ সালে ট্যুর ডি বাংলাদেশ টুর্নামেন্টে ১০০০ কিলোমিটারে প্রথমস্থান অর্জন করেন। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ট্যুর ডি পাকিস্তানে ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৮৬০ কিলোমিটারে ১০ স্টেজের খেলায় ৭ম স্থান অধিকার করে সনদ পান।
খেলোয়াড়ি জীবনের মতো বর্ণিল তার কোচিং ক্যারিয়ারও। বাংলাদেশ বস্ত্র শিল্প করপোরেশনকে জাতীয় সাইক্লিংয়ে একবার চ্যাম্পিয়ন করান। বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনকে (বিজেএমসি) জাতীয় সাইক্লিংযে ১৯ বার চ্যাম্পিয়নশিপ করিয়েছেন।
২০১৬ সালের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে আবদুল কুদ্দুসের তত্ত্বাবধানে ২০টি ইভেন্টের মধ্যে ১৯টি স্বর্ণপদক জেতে বিজেএমসি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও সমৃদ্ধ কুদ্দুসের কোচিং ক্যারিয়ার। ২০০২ সালে দিল্লি দ্বিতীয় সার্ক সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে দুটি রৌপ্য ও নয়টি ব্রোঞ্জ জিতিয়ে রানার্সআপ করান তিনি। ২০০৬ সালে নবম সাফ গেমসে সাইক্লিং প্রশিক্ষক হিসেবে শ্রীলংকার কলম্বোতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং দেশকে ব্রোঞ্জপদক এনে দেন।
২০১৩ সালে দিল্লিতে ট্র্যাক এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশকে প্রশিক্ষক হিসেবে ১টি রৌপ্য ও একটি ব্রোঞ্জপদক জিতে আসেন শিষ্যদের নিয়ে। পরের বছর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসে দলগত ইভেন্টে সাইক্লিং প্রশিক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশকে নবম স্থান অর্জন করান।
একই বছরে দিল্লিতে এশিয়ান ট্র্যাক চ্যাম্পিয়নশিপে সাইক্লিং প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে মালয়েশিয়াতে এশিয়ান ট্র্যাক চ্যাম্পিয়নশিপে সাইক্লিং প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আবদুল কুদ্দুস। সদ্য সমাপ্ত ৪১তম জাতীয় সাইক্লিংয়ে বাংলাদেশ আনসারকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন শিরোপা জেতান তিনি।
তার প্রশিক্ষণে মাঠপর্যায়ে বহু খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে। দেশের সাইক্লিংয়ে ৯৫ ভাগ সাইক্লিস্ট তার হাতেই গড়া। যাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তুলে এনে সাইক্লিস্ট বানিয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাইক্লিস্ট- ফারহানা সুলতানা শিলা (জাতীয় পুরস্কার পাওয়া সাইক্লিস্ট), আবদুর রউফ, শাহ ইফতেখার আলম নাহিদ, সেবীকা মন্ডল, সোনিয়া ইসলাম অভি, তরিকুল ইসলাম, মনোয়ারা খানম সাথী, স্বপন আলম, সমাপ্তী বিশ্বাস, মুকতাদির আল হাসান, শিল্পী খাতুন, সুবর্ণা বর্মন, তিথী বিশ্বাস ও খন্দকার মাহবুব আলম, রিয়াদ মাহমুদ, জয়নুল আবেদিন, পারুল আক্তার, এমএ মতিন বাবু, জাহিদ চৌধুরী সুমন ও রুনা লায়লা।
এছাড়া ফেডারেশনের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ এবং প্রশিক্ষক মো. সাহিদুর রহমান সাহিদেরও কোচ ছিলেন আবদুল কুদ্দুস। সাংগঠনিক জীবনেও নিজের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন আবদুল কুদ্দুস। সাইক্লিং ফেডারেশরে সবেক কমিটিগুলোর দুইবারের যুগ্ম সম্পাদক, দুইবারের কোষাধ্যক্ষ ও দুইবারের সদস্য হিসেবে থেকে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
বিজেএমসির কোচ হিসেবে তৃণমূল থেকে তিনি সাইক্লিং, নারী ভলিবল, হ্যান্ডবল, কাবাডি, ভারোত্তোলন, অ্যাথলেটিকস, পুরুষ ফুটবল, নারী ফুটবল, জিমন্যাস্টিকস, তায়কোয়ান্দো ও উশুর খেলোয়াড় সংগ্রহ করে জাতীয় দলে সরবারাহ করেছেন; যারা আজ নিজেদের অবস্থানে সমৃদ্ধ। তাইতো তিনি এখন ক্রীড়াঙ্গনের মামা হিসেবে খ্যাত।