বাংলা স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার নিয়ে বুয়েটের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের জবাব
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:৩৬:২৬ | অনলাইন সংস্করণ
দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন বিভাগে ২১ জানুয়ারি ‘৫ কোটি টাকার ‘স্পেলিং চেকার’ নিয়ে বুয়েট ও রিভ সিস্টেমসের হরিলুট’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান মোস্তফা আকবর স্বাক্ষরিত প্রতিবাদটি হুবহু প্রকাশ করা হলো-
আপনার বহুলপ্রচারিত জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক যুগান্তর-এর অনলাইন ওয়েবসাইটে গত ২১ জানুয়ারি ২০২০, ২১:২০ সময়ে প্রকাশিত “৫ কোটি টাকার ‘স্পেলিং চেকার’ নিয়ে বুয়েট ও রিভ সিস্টেমসের হরিলুট” শীর্ষক প্রতিবেদনটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উক্ত প্রতিবেদনে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে নিয়ে কিছু অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে; এমন কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে যা ভিত্তিহীন, তথ্য নির্ভর নয়। এমনকি সংবাদটি পড়ার সময় এমনও মনে হয়েছে যে এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই বিষয়ে সকল বিভ্রান্তি দূরকল্পে নিম্নে সুস্পষ্টভাবে উল্লিখিত প্রকল্পে বুয়েটের সংশ্লিষ্টতার পটভূমি এবং পরিবেশিত সংবাদের ভ্রান্ত অংশের অসত্যতা তুলে ধরা হল।
পটভূমি:
বাংলাদেশ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অধীনস্থ বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ১৫৯ কোটি টাকার ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ প্রকল্পের অধীনে বাংলা ভাষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৬ টি সফটওয়্যার উন্নয়নের (Development) কাজ চলছে।
প্রকল্পের শুরু থেকেই সরকারি সিদ্ধান্ত ছিল বিদেশি সফটওয়্যার কোম্পানির মাধ্যমে না করে বাংলাদেশি কোম্পানি দিয়ে সফটওয়্যারগুলো ডেভেলপ করা হবে। দেশীয় সফটওয়্যার বাজারকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রি এবং অ্যাকাডেমিয়ার মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ সূচনা করা ছিল এই প্রকল্পের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়।
প্রকল্পের সঙ্গে বুয়েটের সম্পৃক্ততা:
প্রতিবেদনের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে: “বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) হাতে রয়েছে পুরো প্রকল্পটি”– যা খুবই বিভ্রান্তিকর একটি তথ্য। প্রকৃতপক্ষে উল্লিখিত ১৬টি সফটওয়্যার এর প্রত্যেকটি উন্নয়নের কাজই নিম্নলিখিত চারটি ধাপে সম্পন্ন হচ্ছে এবং হবে-
১। উক্ত সফটওয়্যার এর স্পেসিফিকেশন তথা টেন্ডার প্রক্রিয়ার জন্য টার্মস অব রেফারেন্সেস (টিওআর) প্রস্তুতকরণ। অতঃপর প্রকল্প অফিস উন্মুক্ত টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করবে।
২। টেন্ডারে দাখিলকৃত প্রস্তাবসমূহ মূল্যায়ন
৩। মূল্যায়ন শেষে নির্বাচিত প্রস্তাব দাখিলকারী কোম্পানি কর্তৃক সফটওয়্যারটি উন্নয়ন
৪। উন্নয়নকৃত সফটওয়্যারটি মূল্যায়ন (টেস্টিং) এবং স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী বুঝে নেয়া
উল্লেখ্য যে, সিএসই, বুয়েট এর কতিপয় সম্মানীয় শিক্ষক নিয়ে গঠিত একটি টিম উপরের ১নং কাজটি ১৬টি কম্পোনেন্টের জন্যই সম্পন্ন করেন। উপরের ২নং কাজটির জন্য ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ হিসাবে বিসিসি এর একটি টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি গঠিত হয়, যাতে সরকারি নিয়মানুযায়ী বহিঃ এবং বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসাবে বুয়েট, ঢাবি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ইত্যাদি সংস্থা হতে প্রতিনিধিবৃন্দ দায়িত্ব পালন করেন।
১৬টির মাঝে কোন কম্পোনেন্টেই বুয়েট সফটওয়্যার উন্নয়ন, অর্থাৎ ৩ নং কাজে সম্পৃক্ত নেই। ১৬টির কিছু কিছু কম্পোনেন্টে (মেশিন লার্নিং সংশ্লিষ্ট গবেষণা) সিএসই, বুয়েট টেস্টিং (উপরের ৪নং কাজ) এ যুক্ত থাকলেও সবগুলোতে নেই। উল্লেখ্য যে, এইসব কম্পোনেন্ট টেস্টিং অংশে বুয়েটের যুক্ত থাকার সিদ্ধান্ত সফটওয়্যার উন্নয়ন এর জন্য প্রস্তাব দাখিলকারী কোম্পানি নির্বাচিত হবার অনেক পূর্বেই গৃহীত হয়।
কোন সফটওয়্যার কোম্পানি কাজ পাবে সেই ব্যাপারে টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তই সর্বোচ্চ, যেখানে বুয়েট প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জড়িত নয়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই একজন প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে অংশ নেন। কাজেই, “বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) হাতে রয়েছে পুরো প্রকল্পটি” এই বক্তব্যটি সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন।
তাছাড়া প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে “পরবর্তীতে বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষক টার্মস অব রেফারেন্সেস (টিওআর) লেখার নাম করে মূল্যায়ন কমিটিও নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন”– যা পুরোপুরি অসত্য এবং আশা করি উপরের আলোচনার মাধ্যমে তা আপনার নিকট পরিষ্কার হয়েছে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত যে কোনো সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ার মূল্যায়ন কমিটিতে বুয়েটের একজন প্রতিনিধি রাখা স্বীকৃত একটি ব্যাপার এবং আরও অনেক (বস্তুত, বছরে শতাধিক) মূল্যায়ন কমিটির মতো এই কমিটিতেও বুয়েট থেকে মনোনীত সদস্য বিশ্বমানের বিশেষজ্ঞ সেবা দিচ্ছেন, UT Austin, UC Berkeley, Purdue university এর মতো প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আসা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকরা এই সকল মূল্যায়নে অংশ নিচ্ছেন।
তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের ক্রয় প্রক্রিয়া সংক্রান্ত খবর পরিবেশনের সঙ্গে ন্যূনতম অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন যে কারোরই এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া এবং এই কমিটি সমূহে বুয়েটের সম্মানীয় শিক্ষক/বিশেষজ্ঞ বৃন্দের কার্যক্রম/অবদানের কথা জানার কথা। এই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক এই ব্যাপারগুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন বলেই হয়তো এই তথ্য বিভ্রাট ঘটেছে।
টার্মস অব রেফারেন্সেস (টিওআর) প্রস্তুতকরণ এবং টেস্টিং (মূল্যায়ন) এর কাজ বুয়েট পাওয়ার পটভূমি:
আগস্ট, ২০১৭ তে প্রকল্পের এক্সপার্ট কমিটির দ্বিতীয় সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে– বুয়েট, সাস্ট, ঢাবি, ইউআইইউ এর সিএসই বিভাগের সম্মানীয় শিক্ষকবৃন্দ এবং ঢাবি, জাবি এর ভাষাতত্ত্ব বিভাগের ভাষা-বিশেষজ্ঞবৃন্দ নিয়ে ১৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হবে, যেই কমিটি টিওআর প্রস্তুত করবে।
কিন্তু, তার দৃশ্যমান অগ্রগতির অভাবে সেপ্টেম্বর, ২০১৭-তে অনুষ্ঠিত পিএসসি সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে বুয়েট, সিএসই বিভাগ এই টিওআর প্রস্তুত করবে। উল্লেখ্য যে পিএসসি সভায় সভাপতিত্ব করেন আইসিটি বিভাগের সচিব মহোদয় এবং এর সঙ্গেও বুয়েটের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই।
প্রতিবেদনে প্রশ্ন করা হয়েছে: “কারিগরি বা টেকনিক্যাল কনসাল্টেন্ট এবং মূল্যায়ন কমিটি” দুটিতেই কেন বুয়েটকে কাজ দেয়া হয়েছে। উপরেই বলা হয়েছে যে, টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি সম্পূর্ণ পৃথক, যেখানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বুয়েটের সম্পৃক্ততা নেই। কিছু কম্পোনেন্টের ক্ষেত্রে সফটওয়্যার তৈরির পর শেষ ধাপে টেস্টিং এর দায়িত্ব বুয়েটকে দেয়া হয়েছে মাত্র।
এ ধরনের কাজের টেস্টিং এর জন্য স্বতন্ত্র, বৈচিত্র্যময় (independent diversified) টেস্ট ডেটাসেট প্রয়োজন এবং প্রিসিশন, রিকল প্রভৃতি মেট্রিক নির্ণয় করতে হয়, যা মেশিন লার্নিং এ কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন টিম দিয়ে করানো অপরিহার্য।
উল্লেখ্য, সরকারি প্রজেক্টে টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন এবং টেস্টিং একই পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) কর্তৃক করানো খুবই সাধারণ চর্চা – এক্ষেত্রে যা সিপিটিইউ কর্তৃক অনুমোদিতও হয়েছে। এখানে কোনো conflict of interest হচ্ছে কিনা, প্রতিবেদকের মধ্যে সে প্রশ্ন থাকলে তিনি কোনো "নাম প্রকাশে ইচ্ছুক" প্রকিউরমেন্ট বিশেষজ্ঞের মত অথবা সিপিটিইউ-এর মতামত নিয়ে প্রকাশ করতে পারতেন।
এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে বেশ আপত্তিকরভাবে মন্তব্য করা হয়েছে যে- “বুয়েটের এই প্রজেক্টের মূল বিষয়ের (ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিংয়ে) অভিজ্ঞতা অতি সীমিত”। অথচ ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং এর মূল বিষয় অর্থাৎ সার্বিকভাবে মেশিন-লার্নিং সংক্রান্ত গবেষণা কার্যে বুয়েটের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচ্য প্রতিবেদক কোন অনুসন্ধান করেননি বলেই মনে হয়।
সিএসই, বুয়েট এর যে শিক্ষকবৃন্দ (৬ জন) এই প্রজেক্টে যুক্ত আছেন তাঁদের মেশিন লার্নিং সংক্রান্ত পাবলিশড পেপারের সংখ্যা ৮০-রও অধিক, যার প্রায় সবই উচ্চ ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরের জার্নাল এবং বিখ্যাত কনফারেন্সে প্রসিডিংসে প্রকাশিত। তাছাড়া মাইক্রোসফটে সাত বছরেরও বেশি সময় কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন (যে অভিজ্ঞতা এদেশে বিরল) শিক্ষকও এই প্রজেক্টে যুক্ত আছেন।
প্রকল্পের বাজেট সম্পর্কে:
প্রতিবেদনটিতে অভ্র, নিকষ বাংলা, অঙ্কুর, গুগল ইত্যাদি কর্তৃক দেয়া ফ্রি সার্ভিসের সঙ্গে ‘স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার’ নামক কম্পোনেন্টটিকে তুলনা করে বলা হয়েছে- “প্রায় একই জিনিস তৈরি করার জন্য নেয়া হচ্ছে সাড়ে ৫ কোটি টাকার চেয়েও বেশি” – যেই বক্তব্যটি প্রতিবেদকের আধুনিক মেশিন লার্নিং ভিত্তিক টেকনিক সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক।
‘স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার’ কম্পোনেন্টসহ যেকোনো মেশিন লার্নিং ভিত্তিক সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মূলত দুইটি পর্যায় আছে। প্রথমটি হল ডাটাসেট ডেভেলপ করা এবং দ্বিতীয়টি হল ডাটাসেট দিয়ে কোনো উপযুক্ত মডেলকে ট্রেইন করা। আধুনিক মেশিন লার্নিং ভিত্তিক প্রজেক্টগুলোর সফলতা বা ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে প্রথম পর্যায়ে ডেভেলপ করা ডাটাসেটের উৎকর্ষতার ওপরে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন গাণিতিক মডেল ও তাদের ওপেন সোর্স ট্রেনিং এলগোরিদম সহজলভ্য। একটি পরিপূর্ণ ডাটাসেট ডেভেলপ করা অনেক সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল কাজ।
‘স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার’ কম্পোনেন্টের একটি বড় অংশ হচ্ছে শুদ্ধ এবং অশুদ্ধ শব্দের এবং বাক্যের একটি বড় (১৫ মিলিয়ন বাংলা শব্দ) annotated ডাটাসেট (ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিংয়ে যাকে কর্পাস বলা হয়) প্রস্তুত করা এবং পরবর্তীতে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া যাতে যে কেউ গবেষণার উদ্দেশ্যে এসব ব্যবহার করতে পারে।
যেকোনো ডাটাসেট ডেভেলপ করার মত, অশুদ্ধ শব্দ বা বাক্যের বড় নমুনা বাস্তব উৎস থেকে তৈরি করাও বেশ কঠিন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি বড় কর্পাস পেলে তাদের গবেষণা কার্যক্রম অনেক এগিয়ে যাবে, যা এ প্রকল্পের একটি উদ্দেশ্য। অন্যদিকে প্রতিবেদনে উল্লিখিত সফটওয়্যারগুলো হয় কর্পাস ভিত্তিক নয় (আধুনিক মেশিন লার্নিং ভিত্তিক টেকনিক প্রয়োগের উপযুক্ত নয়) অথবা কর্পাস থাকলেও তা উন্মুক্ত নয়।
বাংলা ভাষার জন্য সফটওয়্যারগুলোর পারফরমেন্স কাঙ্ক্ষিত মানে এখনও পৌঁছায়নি, বিশেষত কনটেক্সচুয়াল এরোর কারেকশনের ক্ষেত্রে, যাকে প্রতিবেদক অনভিজ্ঞতার কারণে “কনফ্লিকচুয়াল এরোর” হিসাবে প্রতিবেদনে আখ্যায়িত করেছেন।
আরেকটি বিষয় হল, একটি সফটওয়্যার ফ্রি ব্যবহার করতে পারা, তার ডেভেলপমেন্ট খরচ কম হবার প্রমাণ নয়। সার্চ, জিমেইল, ইউটিউব, ফেসবুকের মত জনপ্রিয় সেবা ফ্রি হবার অর্থ এই নয় যে সেগুলো খুব কম খরচে ডেভেলপ করা হয়েছে।
আধুনিক মেশিন লার্নিং ভিত্তিক টেকনিক ডেভেলপ করার পিছনে গুগল কত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে সে বিষয়ে কি সম্মানিত প্রতিবেদকের কোনো ধারণা আছে? গুগলের সেবাগুলো ফ্রি হবার বড় কারণ তার বিজ্ঞাপনভিত্তিক বিজনেস মডেল।
সবদিক বিবেচনার পর বুয়েট-সিএসই এই বাজেট উপস্থাপন করে যা পরবর্তীতে ইসি-এর মাধ্যমে রিভিউপূর্বক অনুমোদিত হয়। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, ইতিপূর্বে এই প্রকল্পের সফটওয়্যার উন্নয়নের বাজেট আরও বড় ছিল, যা সিএসই-বুয়েটের বিস্তারিত বিশ্লেষণের পর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে বর্তমান অবস্থায় আনা হয় এবং প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ কমিটির দ্বারা অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়।
উল্লেখ্য ১৬টি প্রজেক্টের প্রায় সবগুলোতেই ডিপিপি-তে প্রাক্কলিত ব্যয় বুয়েটের অ্যানালাইসিসে কমে আসে। যেহেতু বেশিরভাগ টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান, এ ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ করা হচ্ছে না। এছাড়া টিওআর এমনভাবে করা হয়েছে যে যতটুকু পারফরমেন্স (accuracy/precision/recall) অর্জন করবে তার সমানুপাতিক অর্থ পাবে।
সুতরাং ৫.৫ কোটি টাকার কাজ পেলেও পারফরম্যান্স টি.ও.আর অনুযায়ী না হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি সেই অর্থ পাবে না। সর্বোপরি, “স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার” থেকে প্রতিবেদনের শিরোনামে “গ্রামার” অংশটি বাদ দিয়ে প্রতিবেদক পুরো বিষয়টি খণ্ডিতভাবে উপস্থাপন করেছেন যা প্রতিবেদকের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে।
রিভ সিস্টেমসের সঙ্গে সিএসই, বুয়েটের সম্পর্ক:
দুঃখজনকভাবে প্রতিবেদনটিতে মন্তব্য করা হয়েছে যে “বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) একদিকে রিভ সিস্টেমসের টেন্ডার বানানোর কাজ করছে। অন্যদিকে মূল্যায়ন কমিটিতে বসে নম্বরও দিচ্ছে” এবং “ইতিমধ্যেই সাড়ে ১৪ কোটি টাকার কাজ সফলভাবে রিভ সিস্টেমসকে দিতে সক্ষম হয়েছে বুয়েট”।
অভিযোগটি গুরুতর, অসম্মানজনক এবং সর্বোপরি ভিত্তিহীন। ইতিমধ্যেই “প্রকল্পের সঙ্গে বুয়েটের সম্পৃক্ততা” শীর্ষক অনুচ্ছেদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, কোন সফটওয়ার কোম্পানি কাজ পাবে সেই সিদ্ধান্ত হয় মূল্যায়ন কমিটিকে মাধ্যমে, তাই এক্ষেত্রে বুয়েটের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই।
বুয়েট কোন কোম্পানিকেই কাজ পাইয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে না এবং এই ধরনের অভিযোগ বুয়েটের ইতিহাসে কখনোই কেউ করতে পারেনি। কিউসিবিএস পদ্ধতিতে (প্রস্তাবের কারিগরি ও আর্থিক মান বিবেচনায়) টেন্ডার বিডসমূহ মূল্যায়নের পর যে কোন কোম্পানি কাজ পেতে পারে তা নির্ধারিত হয়।
উল্লেখ্য, ১৬টি কম্পোনেন্টের মাঝে কেবল ৫টির কাজ শুরু হয়েছে। সবকটির টিওআর বুয়েট কর্তৃক প্রস্তুতকৃত এবং একই পদ্ধতিতে টেন্ডার মূল্যায়নের পরে দুইটির কাজ পেয়েছে রিভ সিস্টেমস; বাকিগুলোর কাজ পেয়েছে বেক্সিমকো কম্পিউটার্স, সিসটেক, গিগাটেক, টিম ইঞ্জিন কনসোর্টিয়াম, ই-জেনারেশান লিমিটেড এবং একটিতে রিভ সিস্টেম ও অপূর্ব টেকনোলজিস জয়েন্ট ভেঞ্চার। এই প্রসঙ্গে সাড়ে ১৪ কোটি টাকার কাজ রিভ সিস্টেমস পেয়েছে এই তথ্য সঠিক কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলা-ভাষা-প্রকল্পে যে ৫টি কম্পোনেন্টের কাজ শুরু হয়েছে তার কোনটির ডেভেলপমেন্টেই বুয়েট কোনভাবে সম্পৃক্ত নয়। যে কোম্পানিগুলো কাজ পেয়েছে তাদের অনেকের সঙ্গেই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম-অব-আন্ডারস্ট্যান্ডিং রয়েছে, যার মাঝে ঢাবি, জাবি, কুয়েট, সাস্ট, বিইউবিটি, ইউ আই ইউ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
এ ধরনের ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া কোলাবোরেশন এই গবেষণা ভিত্তিক প্রকল্পটির একটি উদ্দেশ্যও বটে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো কোনোটির সদস্যবৃন্দ মূল্যায়ন ও নির্বাহী কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে- “কয়েকবার এসব বিষয় প্রমাণিত হয় বুয়েটের অনেক শিক্ষক রিভ সিস্টেমসের সঙ্গে প্রকাশ্যে কাজ করছেন”। উল্লেখ্য, রিভ সিস্টেমসের সঙ্গে সিএসই, বুয়েট ইতিপূর্বে কিছু সরকারি প্রজেক্টে পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) হিসেবে সম্পৃক্ত থাকায় এই ধরনের ভ্রান্ত ধারণার উদ্ভব হতে পারে।
সেসব প্রজেক্টেও বুয়েট সরাসরি সরকারকেই পরামর্শ প্রদান করে, রিভ সিস্টেমসকে নয়। এরূপ আরও সরকারি প্রজেক্টের খাতিরে রিভ সিস্টেমস ছাড়াও অন্যান্য সফটওয়ার কোম্পানির সঙ্গেও সিএসই-বুয়েটকে সংশ্লিষ্টতা বজায় রাখতে হয়েছে।
মূলত এ সকল ক্ষেত্রে বুয়েট সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়নকৃত সফটওয়্যারসমূহের ম্যান মূল্যায়ন ও নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছে। উপরন্তু, এসব কোন সরকারি প্রজেক্টেই সফটওয়ার কোম্পানি বা ভেন্ডর সিএসই-বুয়েটকে কোন অর্থ প্রদান করে না। সিএসই-বুয়েটের পরামর্শ-ফি সমূহ সরাসরি সরকারি প্রজেক্ট থেকেই আসে। কাজেই রিভ সিস্টেমসের সঙ্গে জড়িয়ে যে দৃষ্টিকটু মন্তব্য সিএসই-বুয়েটের প্রতি তোলা হয়েছে তা ভিত্তিহীন।
প্রফেসর মো. মনিরুল ইসলামের বক্তব্য:
প্রতিবেদনটিতে “স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার” কম্পোনেন্টের দায়িত্বে থাকা প্রফেসর মো. মনিরুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথোপকথনকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কথোপকথনের সময় প্রফেসর মো. মনিরুল ইসলাম একটি জরুরি কর্মশালায় ছিলেন।
প্রতিবেদকের বক্তব্যে পেশাদারিত্বের অভাব থাকায় এবং তার শব্দচয়ন আপত্তিকর হওয়াতে প্রফেসর মো. মনিরুল ইসলাম তার সাংবাদিক পরিচয়ের ব্যাপারে সন্দিহান হন। এর প্রেক্ষিতে তাকে পরে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে এবং (তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে) চিঠি নিয়ে আসতে বলেন।
এছাড়া বুয়েটের পৃথক সদস্যবৃন্দ টি.ও.আর তৈরি, মূল্যায়ন ও টেস্টিং এর কাজ করেছেন। ফলে একজনের প্রশ্নে এইসকল সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের জবাব দেয়া সম্ভব নয়। অ্যাপয়েন্টমেন্ট-নির্ধারিত মিটিং এ বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের উপস্থিতিতে আলোচনা হওয়া বাঞ্ছনীয়।
“বাংলা স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার” এর বর্তমান অবস্থা:
যদিও প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে “১৪ কোটি টাকার কাজ সফলভাবে রিভ সিস্টেমসকে দিতে সক্ষম হয়েছে বুয়েট”, যার মাঝে সাড়ে ৫ কোটি টাকা স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার এর; বাস্তবে বুয়েট কর্তৃক প্রস্তুতকৃত এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত টি.ও.আর অনুযায়ী যে কোন কোম্পানি টেন্ডারে উল্লিখিত মাইলস্টোনের কাজ শেষ করতে পারলেই কেবল ওই কাজের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ পেতে পারবে।
স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার কম্পোনেন্টটির কেবলমাত্র ইনসেপশান (প্রারম্ভিক) রিপোর্ট এর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ রিভ সিস্টেমস পেয়েছে প্রায় ১০ মাস কাজ করার পরেও। সিএসই-বুয়েটের টেস্টিং টিম পরবর্তী মাইলস্টোনগুলো সম্পন্ন করার জন্য আরও কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছে এবং সেই কাজ চলমান।
তাছাড়া, প্রতিবেদনটিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুয়েটের একজন শিক্ষককে উদ্ধৃত করে যা বলা হয়েছে তার পুরোটাই মিথ্যা। উক্ত বিবৃতি হয় বানোয়াট এবং মনগড়া অথবা অসৎ উদ্দেশ্য থেকে বলা।
সর্বোপরি, উক্ত প্রতিবেদনে কোন অভিজ্ঞ বা কারিগরি মতামত অথবা যথাযথ তথ্য প্রমাণাদি ছাড়াই বুয়েটের সিএসই ডিপার্টমেন্টকে উদ্দেশ্য করে মানহানিকর এবং অপমানসূচক বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে যা দৈনিক যুগান্তরের মত একটি জাতীয় সংবাদপত্রের কাছে কোনভাবেই কাম্য নয়।
এছাড়া প্রজেক্ট ডিরেক্টর বিদেশে থাকলেও অনলাইনে তার সঙ্গে যোগাযোগ না করে বা ফেরার জন্য অপেক্ষা না করে এবং মূল্যায়ন কমিটির সদস্য বা এক্সপার্ট কমিটির সদস্যদের মতামত না নিয়ে তড়িঘড়ি করে এরকম প্রতিবেদন প্রকাশ কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে করা বলে প্রতিভাত হয়। সম্ভবত আপনাদের সম্পাদকীয় দল এই প্রতিবেদনের অসারতা উপলব্ধি করতে পেরেই মুদ্রিত সংস্করণে এটি প্রকাশ করেননি।
উল্লিখিত প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প। দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য এ ধরনের প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এ অবস্থায় এমন মনগড়া ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকল্পের অর্জনের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।
উল্লেখ্য, সিএসই-বুয়েট সবসময়ই বস্তুনিষ্ঠ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে স্বাগত জানায়। এই ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বানোয়াট প্রতিবেদন পরিশ্রমী সাংবাদিকদের প্রচেষ্টাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। এই প্রেক্ষিতে সিএসই-বুয়েট অতি সত্বর এই প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যুগান্তর কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ করছে এবং সিএসই-বুয়েট এই বিষয়ে পরিপূর্ণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
এই অবস্থায়, উল্লিখিত প্রতিবাদপত্র অতিসত্বর আপনার সংবাদপত্রে প্রকাশিত করার এবং একই সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিবেদনটি অনলাইন ওয়েবসাইট থেকে সরানোর জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগ উক্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
নিবেদক: মোস্তফা আকবর, অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান, কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
প্রতিবেদকের জবাব:
প্রতিবেদনটি যথাযথ তথ্য-উপাত্ত ও কাগজপত্রের ভিত্তিতেই তৈরি করা হয়েছে। বুয়েট প্রতিবাদপত্রে প্রশ্ন তুলেছে- ‘সাড়ে ১৪ কোটি টাকার কাজ রিভ সিস্টেমস পেয়েছে এই তথ্য সঠিক কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’ পরবর্তী প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য সাড়ে ১৪ কোটি টাকার বিস্তারিত বিশ্লেষণ প্রকাশ করা হয়নি। তবে যে প্রতিষ্ঠান (রিভ সিস্টেমস) কাজটি পেয়েছে তাদের থেকেই কাজ প্রাপ্তির ও বাজেটের বিস্তারিত যুগান্তর সংগ্রহ করেছে।
বাংলা প্রকল্প থেকে রিভ সিস্টেমস এককভাবে দুটি এবং যৌথভাবে একটি কাজ পেয়েছে। যার মোট মূল্য সাড়ে ১৪ কোটি টাকা।
প্রফেসর মো. মনিরুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথোপকথনকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে প্রতিবাদপত্রে অভিযোগ করা হয়েছে। অথচ উনি যতটুকু বলেছেন মোবাইল রেকর্ড থেকে শুনে ঠিক ততটুকুই প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে একটি শব্দও অতিরিক্ত লেখা হয়নি।
বাংলা প্রকল্পে ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে বুয়েট নেই বলে দাবি করেছেন প্রতিবাদপত্রে। তবে ফোনে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের প্রধান মোস্তফা আকবর স্বীকার করে বলেছিলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের একটা টিম কাজ করছে। আপনি যদি আমাদের ডিপার্টমেন্টে একদিন সরাসরি আসেন তাহলে (যারা এই প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করছে) তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। ফোনে এত কথা বলা যাবে না। এখানে ২০টি মডিউল নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। প্রতিটি মডিউল নিয়ে অনেক কথা রয়েছে। আপনি আসুন আগে। এরপর কথা বলা যাবে।’
প্রতিবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তড়িঘড়ি করে এরকম প্রতিবেদন প্রকাশ কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে করা বলে প্রতিভাত হয়।’ অথচ এই প্রতিবেদনটি তৈরি করার জন্য অন্তত দুই সপ্তাহ সময় নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান রিভ সিস্টেমসের সঙ্গে কথা হয়েছে। বক্তব্য নেয়ার জন্য বুয়েটে সরাসরি যাওয়া হয়েছে (যদিও নির্ধারিত সময়ে গেলেও বিভাগীয় প্রধান দেখা না করে দ্রুত চলে গেছেন এবং পরবর্তীতে ফোনও রিসিভ করেননি)। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগেও যাওয়া হয়েছে। একজন মন্ত্রীর বক্তব্যও নেয়া হয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হলেও এটা তড়িঘড়ি করে প্রকাশ হলো কীভাবে সেটা বোধগম্য নয়।
প্রতিবাদে দাবি করা হয়েছে, ‘বুয়েট কোন কোম্পানিকেই কাজ পাইয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে না।’ বিষয়টি সত্য। তবে টেন্ডারে দাখিলকৃত প্রস্তাবসমূহ মূল্যায়ন করার ক্ষমতা রাখে বুয়েট। এই মূল্যায়নে বুয়েট প্রভাব বিস্তার করছে- এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই মূলত এই প্রতিবেদন তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। সে বিষয়ে প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বাংলা স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার নিয়ে বুয়েটের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের জবাব
দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন বিভাগে ২১ জানুয়ারি ‘৫ কোটি টাকার ‘স্পেলিং চেকার’ নিয়ে বুয়েট ও রিভ সিস্টেমসের হরিলুট’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান মোস্তফা আকবর স্বাক্ষরিত প্রতিবাদটি হুবহু প্রকাশ করা হলো-
আপনার বহুলপ্রচারিত জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক যুগান্তর-এর অনলাইন ওয়েবসাইটে গত ২১ জানুয়ারি ২০২০, ২১:২০ সময়ে প্রকাশিত “৫ কোটি টাকার ‘স্পেলিং চেকার’ নিয়ে বুয়েট ও রিভ সিস্টেমসের হরিলুট” শীর্ষক প্রতিবেদনটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উক্ত প্রতিবেদনে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে নিয়ে কিছু অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে; এমন কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে যা ভিত্তিহীন, তথ্য নির্ভর নয়। এমনকি সংবাদটি পড়ার সময় এমনও মনে হয়েছে যে এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই বিষয়ে সকল বিভ্রান্তি দূরকল্পে নিম্নে সুস্পষ্টভাবে উল্লিখিত প্রকল্পে বুয়েটের সংশ্লিষ্টতার পটভূমি এবং পরিবেশিত সংবাদের ভ্রান্ত অংশের অসত্যতা তুলে ধরা হল।
পটভূমি:
বাংলাদেশ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অধীনস্থ বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ১৫৯ কোটি টাকার ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ প্রকল্পের অধীনে বাংলা ভাষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৬ টি সফটওয়্যার উন্নয়নের (Development) কাজ চলছে।
প্রকল্পের শুরু থেকেই সরকারি সিদ্ধান্ত ছিল বিদেশি সফটওয়্যার কোম্পানির মাধ্যমে না করে বাংলাদেশি কোম্পানি দিয়ে সফটওয়্যারগুলো ডেভেলপ করা হবে। দেশীয় সফটওয়্যার বাজারকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রি এবং অ্যাকাডেমিয়ার মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ সূচনা করা ছিল এই প্রকল্পের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়।
প্রকল্পের সঙ্গে বুয়েটের সম্পৃক্ততা:
প্রতিবেদনের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে: “বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) হাতে রয়েছে পুরো প্রকল্পটি”– যা খুবই বিভ্রান্তিকর একটি তথ্য। প্রকৃতপক্ষে উল্লিখিত ১৬টি সফটওয়্যার এর প্রত্যেকটি উন্নয়নের কাজই নিম্নলিখিত চারটি ধাপে সম্পন্ন হচ্ছে এবং হবে-
১। উক্ত সফটওয়্যার এর স্পেসিফিকেশন তথা টেন্ডার প্রক্রিয়ার জন্য টার্মস অব রেফারেন্সেস (টিওআর) প্রস্তুতকরণ। অতঃপর প্রকল্প অফিস উন্মুক্ত টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করবে।
২। টেন্ডারে দাখিলকৃত প্রস্তাবসমূহ মূল্যায়ন
৩। মূল্যায়ন শেষে নির্বাচিত প্রস্তাব দাখিলকারী কোম্পানি কর্তৃক সফটওয়্যারটি উন্নয়ন
৪। উন্নয়নকৃত সফটওয়্যারটি মূল্যায়ন (টেস্টিং) এবং স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী বুঝে নেয়া
উল্লেখ্য যে, সিএসই, বুয়েট এর কতিপয় সম্মানীয় শিক্ষক নিয়ে গঠিত একটি টিম উপরের ১নং কাজটি ১৬টি কম্পোনেন্টের জন্যই সম্পন্ন করেন। উপরের ২নং কাজটির জন্য ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ হিসাবে বিসিসি এর একটি টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি গঠিত হয়, যাতে সরকারি নিয়মানুযায়ী বহিঃ এবং বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসাবে বুয়েট, ঢাবি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ইত্যাদি সংস্থা হতে প্রতিনিধিবৃন্দ দায়িত্ব পালন করেন।
১৬টির মাঝে কোন কম্পোনেন্টেই বুয়েট সফটওয়্যার উন্নয়ন, অর্থাৎ ৩ নং কাজে সম্পৃক্ত নেই। ১৬টির কিছু কিছু কম্পোনেন্টে (মেশিন লার্নিং সংশ্লিষ্ট গবেষণা) সিএসই, বুয়েট টেস্টিং (উপরের ৪নং কাজ) এ যুক্ত থাকলেও সবগুলোতে নেই। উল্লেখ্য যে, এইসব কম্পোনেন্ট টেস্টিং অংশে বুয়েটের যুক্ত থাকার সিদ্ধান্ত সফটওয়্যার উন্নয়ন এর জন্য প্রস্তাব দাখিলকারী কোম্পানি নির্বাচিত হবার অনেক পূর্বেই গৃহীত হয়।
কোন সফটওয়্যার কোম্পানি কাজ পাবে সেই ব্যাপারে টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তই সর্বোচ্চ, যেখানে বুয়েট প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জড়িত নয়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই একজন প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে অংশ নেন। কাজেই, “বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) হাতে রয়েছে পুরো প্রকল্পটি” এই বক্তব্যটি সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন।
তাছাড়া প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে “পরবর্তীতে বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষক টার্মস অব রেফারেন্সেস (টিওআর) লেখার নাম করে মূল্যায়ন কমিটিও নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন”– যা পুরোপুরি অসত্য এবং আশা করি উপরের আলোচনার মাধ্যমে তা আপনার নিকট পরিষ্কার হয়েছে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত যে কোনো সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ার মূল্যায়ন কমিটিতে বুয়েটের একজন প্রতিনিধি রাখা স্বীকৃত একটি ব্যাপার এবং আরও অনেক (বস্তুত, বছরে শতাধিক) মূল্যায়ন কমিটির মতো এই কমিটিতেও বুয়েট থেকে মনোনীত সদস্য বিশ্বমানের বিশেষজ্ঞ সেবা দিচ্ছেন, UT Austin, UC Berkeley, Purdue university এর মতো প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আসা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকরা এই সকল মূল্যায়নে অংশ নিচ্ছেন।
তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের ক্রয় প্রক্রিয়া সংক্রান্ত খবর পরিবেশনের সঙ্গে ন্যূনতম অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন যে কারোরই এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া এবং এই কমিটি সমূহে বুয়েটের সম্মানীয় শিক্ষক/বিশেষজ্ঞ বৃন্দের কার্যক্রম/অবদানের কথা জানার কথা। এই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক এই ব্যাপারগুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন বলেই হয়তো এই তথ্য বিভ্রাট ঘটেছে।
টার্মস অব রেফারেন্সেস (টিওআর) প্রস্তুতকরণ এবং টেস্টিং (মূল্যায়ন) এর কাজ বুয়েট পাওয়ার পটভূমি:
আগস্ট, ২০১৭ তে প্রকল্পের এক্সপার্ট কমিটির দ্বিতীয় সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে– বুয়েট, সাস্ট, ঢাবি, ইউআইইউ এর সিএসই বিভাগের সম্মানীয় শিক্ষকবৃন্দ এবং ঢাবি, জাবি এর ভাষাতত্ত্ব বিভাগের ভাষা-বিশেষজ্ঞবৃন্দ নিয়ে ১৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হবে, যেই কমিটি টিওআর প্রস্তুত করবে।
কিন্তু, তার দৃশ্যমান অগ্রগতির অভাবে সেপ্টেম্বর, ২০১৭-তে অনুষ্ঠিত পিএসসি সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে বুয়েট, সিএসই বিভাগ এই টিওআর প্রস্তুত করবে। উল্লেখ্য যে পিএসসি সভায় সভাপতিত্ব করেন আইসিটি বিভাগের সচিব মহোদয় এবং এর সঙ্গেও বুয়েটের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই।
প্রতিবেদনে প্রশ্ন করা হয়েছে: “কারিগরি বা টেকনিক্যাল কনসাল্টেন্ট এবং মূল্যায়ন কমিটি” দুটিতেই কেন বুয়েটকে কাজ দেয়া হয়েছে। উপরেই বলা হয়েছে যে, টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি সম্পূর্ণ পৃথক, যেখানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বুয়েটের সম্পৃক্ততা নেই। কিছু কম্পোনেন্টের ক্ষেত্রে সফটওয়্যার তৈরির পর শেষ ধাপে টেস্টিং এর দায়িত্ব বুয়েটকে দেয়া হয়েছে মাত্র।
এ ধরনের কাজের টেস্টিং এর জন্য স্বতন্ত্র, বৈচিত্র্যময় (independent diversified) টেস্ট ডেটাসেট প্রয়োজন এবং প্রিসিশন, রিকল প্রভৃতি মেট্রিক নির্ণয় করতে হয়, যা মেশিন লার্নিং এ কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন টিম দিয়ে করানো অপরিহার্য।
উল্লেখ্য, সরকারি প্রজেক্টে টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন এবং টেস্টিং একই পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) কর্তৃক করানো খুবই সাধারণ চর্চা – এক্ষেত্রে যা সিপিটিইউ কর্তৃক অনুমোদিতও হয়েছে। এখানে কোনো conflict of interest হচ্ছে কিনা, প্রতিবেদকের মধ্যে সে প্রশ্ন থাকলে তিনি কোনো "নাম প্রকাশে ইচ্ছুক" প্রকিউরমেন্ট বিশেষজ্ঞের মত অথবা সিপিটিইউ-এর মতামত নিয়ে প্রকাশ করতে পারতেন।
এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে বেশ আপত্তিকরভাবে মন্তব্য করা হয়েছে যে- “বুয়েটের এই প্রজেক্টের মূল বিষয়ের (ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিংয়ে) অভিজ্ঞতা অতি সীমিত”। অথচ ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং এর মূল বিষয় অর্থাৎ সার্বিকভাবে মেশিন-লার্নিং সংক্রান্ত গবেষণা কার্যে বুয়েটের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচ্য প্রতিবেদক কোন অনুসন্ধান করেননি বলেই মনে হয়।
সিএসই, বুয়েট এর যে শিক্ষকবৃন্দ (৬ জন) এই প্রজেক্টে যুক্ত আছেন তাঁদের মেশিন লার্নিং সংক্রান্ত পাবলিশড পেপারের সংখ্যা ৮০-রও অধিক, যার প্রায় সবই উচ্চ ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরের জার্নাল এবং বিখ্যাত কনফারেন্সে প্রসিডিংসে প্রকাশিত। তাছাড়া মাইক্রোসফটে সাত বছরেরও বেশি সময় কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন (যে অভিজ্ঞতা এদেশে বিরল) শিক্ষকও এই প্রজেক্টে যুক্ত আছেন।
প্রকল্পের বাজেট সম্পর্কে:
প্রতিবেদনটিতে অভ্র, নিকষ বাংলা, অঙ্কুর, গুগল ইত্যাদি কর্তৃক দেয়া ফ্রি সার্ভিসের সঙ্গে ‘স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার’ নামক কম্পোনেন্টটিকে তুলনা করে বলা হয়েছে- “প্রায় একই জিনিস তৈরি করার জন্য নেয়া হচ্ছে সাড়ে ৫ কোটি টাকার চেয়েও বেশি” – যেই বক্তব্যটি প্রতিবেদকের আধুনিক মেশিন লার্নিং ভিত্তিক টেকনিক সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক।
‘স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার’ কম্পোনেন্টসহ যেকোনো মেশিন লার্নিং ভিত্তিক সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মূলত দুইটি পর্যায় আছে। প্রথমটি হল ডাটাসেট ডেভেলপ করা এবং দ্বিতীয়টি হল ডাটাসেট দিয়ে কোনো উপযুক্ত মডেলকে ট্রেইন করা। আধুনিক মেশিন লার্নিং ভিত্তিক প্রজেক্টগুলোর সফলতা বা ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে প্রথম পর্যায়ে ডেভেলপ করা ডাটাসেটের উৎকর্ষতার ওপরে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন গাণিতিক মডেল ও তাদের ওপেন সোর্স ট্রেনিং এলগোরিদম সহজলভ্য। একটি পরিপূর্ণ ডাটাসেট ডেভেলপ করা অনেক সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল কাজ।
‘স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার’ কম্পোনেন্টের একটি বড় অংশ হচ্ছে শুদ্ধ এবং অশুদ্ধ শব্দের এবং বাক্যের একটি বড় (১৫ মিলিয়ন বাংলা শব্দ) annotated ডাটাসেট (ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিংয়ে যাকে কর্পাস বলা হয়) প্রস্তুত করা এবং পরবর্তীতে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া যাতে যে কেউ গবেষণার উদ্দেশ্যে এসব ব্যবহার করতে পারে।
যেকোনো ডাটাসেট ডেভেলপ করার মত, অশুদ্ধ শব্দ বা বাক্যের বড় নমুনা বাস্তব উৎস থেকে তৈরি করাও বেশ কঠিন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি বড় কর্পাস পেলে তাদের গবেষণা কার্যক্রম অনেক এগিয়ে যাবে, যা এ প্রকল্পের একটি উদ্দেশ্য। অন্যদিকে প্রতিবেদনে উল্লিখিত সফটওয়্যারগুলো হয় কর্পাস ভিত্তিক নয় (আধুনিক মেশিন লার্নিং ভিত্তিক টেকনিক প্রয়োগের উপযুক্ত নয়) অথবা কর্পাস থাকলেও তা উন্মুক্ত নয়।
বাংলা ভাষার জন্য সফটওয়্যারগুলোর পারফরমেন্স কাঙ্ক্ষিত মানে এখনও পৌঁছায়নি, বিশেষত কনটেক্সচুয়াল এরোর কারেকশনের ক্ষেত্রে, যাকে প্রতিবেদক অনভিজ্ঞতার কারণে “কনফ্লিকচুয়াল এরোর” হিসাবে প্রতিবেদনে আখ্যায়িত করেছেন।
আরেকটি বিষয় হল, একটি সফটওয়্যার ফ্রি ব্যবহার করতে পারা, তার ডেভেলপমেন্ট খরচ কম হবার প্রমাণ নয়। সার্চ, জিমেইল, ইউটিউব, ফেসবুকের মত জনপ্রিয় সেবা ফ্রি হবার অর্থ এই নয় যে সেগুলো খুব কম খরচে ডেভেলপ করা হয়েছে।
আধুনিক মেশিন লার্নিং ভিত্তিক টেকনিক ডেভেলপ করার পিছনে গুগল কত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে সে বিষয়ে কি সম্মানিত প্রতিবেদকের কোনো ধারণা আছে? গুগলের সেবাগুলো ফ্রি হবার বড় কারণ তার বিজ্ঞাপনভিত্তিক বিজনেস মডেল।
সবদিক বিবেচনার পর বুয়েট-সিএসই এই বাজেট উপস্থাপন করে যা পরবর্তীতে ইসি-এর মাধ্যমে রিভিউপূর্বক অনুমোদিত হয়। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, ইতিপূর্বে এই প্রকল্পের সফটওয়্যার উন্নয়নের বাজেট আরও বড় ছিল, যা সিএসই-বুয়েটের বিস্তারিত বিশ্লেষণের পর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে বর্তমান অবস্থায় আনা হয় এবং প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ কমিটির দ্বারা অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়।
উল্লেখ্য ১৬টি প্রজেক্টের প্রায় সবগুলোতেই ডিপিপি-তে প্রাক্কলিত ব্যয় বুয়েটের অ্যানালাইসিসে কমে আসে। যেহেতু বেশিরভাগ টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান, এ ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ করা হচ্ছে না। এছাড়া টিওআর এমনভাবে করা হয়েছে যে যতটুকু পারফরমেন্স (accuracy/precision/recall) অর্জন করবে তার সমানুপাতিক অর্থ পাবে।
সুতরাং ৫.৫ কোটি টাকার কাজ পেলেও পারফরম্যান্স টি.ও.আর অনুযায়ী না হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি সেই অর্থ পাবে না। সর্বোপরি, “স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার” থেকে প্রতিবেদনের শিরোনামে “গ্রামার” অংশটি বাদ দিয়ে প্রতিবেদক পুরো বিষয়টি খণ্ডিতভাবে উপস্থাপন করেছেন যা প্রতিবেদকের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে।
রিভ সিস্টেমসের সঙ্গে সিএসই, বুয়েটের সম্পর্ক:
দুঃখজনকভাবে প্রতিবেদনটিতে মন্তব্য করা হয়েছে যে “বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) একদিকে রিভ সিস্টেমসের টেন্ডার বানানোর কাজ করছে। অন্যদিকে মূল্যায়ন কমিটিতে বসে নম্বরও দিচ্ছে” এবং “ইতিমধ্যেই সাড়ে ১৪ কোটি টাকার কাজ সফলভাবে রিভ সিস্টেমসকে দিতে সক্ষম হয়েছে বুয়েট”।
অভিযোগটি গুরুতর, অসম্মানজনক এবং সর্বোপরি ভিত্তিহীন। ইতিমধ্যেই “প্রকল্পের সঙ্গে বুয়েটের সম্পৃক্ততা” শীর্ষক অনুচ্ছেদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, কোন সফটওয়ার কোম্পানি কাজ পাবে সেই সিদ্ধান্ত হয় মূল্যায়ন কমিটিকে মাধ্যমে, তাই এক্ষেত্রে বুয়েটের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই।
বুয়েট কোন কোম্পানিকেই কাজ পাইয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে না এবং এই ধরনের অভিযোগ বুয়েটের ইতিহাসে কখনোই কেউ করতে পারেনি। কিউসিবিএস পদ্ধতিতে (প্রস্তাবের কারিগরি ও আর্থিক মান বিবেচনায়) টেন্ডার বিডসমূহ মূল্যায়নের পর যে কোন কোম্পানি কাজ পেতে পারে তা নির্ধারিত হয়।
উল্লেখ্য, ১৬টি কম্পোনেন্টের মাঝে কেবল ৫টির কাজ শুরু হয়েছে। সবকটির টিওআর বুয়েট কর্তৃক প্রস্তুতকৃত এবং একই পদ্ধতিতে টেন্ডার মূল্যায়নের পরে দুইটির কাজ পেয়েছে রিভ সিস্টেমস; বাকিগুলোর কাজ পেয়েছে বেক্সিমকো কম্পিউটার্স, সিসটেক, গিগাটেক, টিম ইঞ্জিন কনসোর্টিয়াম, ই-জেনারেশান লিমিটেড এবং একটিতে রিভ সিস্টেম ও অপূর্ব টেকনোলজিস জয়েন্ট ভেঞ্চার। এই প্রসঙ্গে সাড়ে ১৪ কোটি টাকার কাজ রিভ সিস্টেমস পেয়েছে এই তথ্য সঠিক কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলা-ভাষা-প্রকল্পে যে ৫টি কম্পোনেন্টের কাজ শুরু হয়েছে তার কোনটির ডেভেলপমেন্টেই বুয়েট কোনভাবে সম্পৃক্ত নয়। যে কোম্পানিগুলো কাজ পেয়েছে তাদের অনেকের সঙ্গেই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম-অব-আন্ডারস্ট্যান্ডিং রয়েছে, যার মাঝে ঢাবি, জাবি, কুয়েট, সাস্ট, বিইউবিটি, ইউ আই ইউ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
এ ধরনের ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া কোলাবোরেশন এই গবেষণা ভিত্তিক প্রকল্পটির একটি উদ্দেশ্যও বটে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো কোনোটির সদস্যবৃন্দ মূল্যায়ন ও নির্বাহী কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে- “কয়েকবার এসব বিষয় প্রমাণিত হয় বুয়েটের অনেক শিক্ষক রিভ সিস্টেমসের সঙ্গে প্রকাশ্যে কাজ করছেন”। উল্লেখ্য, রিভ সিস্টেমসের সঙ্গে সিএসই, বুয়েট ইতিপূর্বে কিছু সরকারি প্রজেক্টে পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) হিসেবে সম্পৃক্ত থাকায় এই ধরনের ভ্রান্ত ধারণার উদ্ভব হতে পারে।
সেসব প্রজেক্টেও বুয়েট সরাসরি সরকারকেই পরামর্শ প্রদান করে, রিভ সিস্টেমসকে নয়। এরূপ আরও সরকারি প্রজেক্টের খাতিরে রিভ সিস্টেমস ছাড়াও অন্যান্য সফটওয়ার কোম্পানির সঙ্গেও সিএসই-বুয়েটকে সংশ্লিষ্টতা বজায় রাখতে হয়েছে।
মূলত এ সকল ক্ষেত্রে বুয়েট সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়নকৃত সফটওয়্যারসমূহের ম্যান মূল্যায়ন ও নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছে। উপরন্তু, এসব কোন সরকারি প্রজেক্টেই সফটওয়ার কোম্পানি বা ভেন্ডর সিএসই-বুয়েটকে কোন অর্থ প্রদান করে না। সিএসই-বুয়েটের পরামর্শ-ফি সমূহ সরাসরি সরকারি প্রজেক্ট থেকেই আসে। কাজেই রিভ সিস্টেমসের সঙ্গে জড়িয়ে যে দৃষ্টিকটু মন্তব্য সিএসই-বুয়েটের প্রতি তোলা হয়েছে তা ভিত্তিহীন।
প্রফেসর মো. মনিরুল ইসলামের বক্তব্য:
প্রতিবেদনটিতে “স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার” কম্পোনেন্টের দায়িত্বে থাকা প্রফেসর মো. মনিরুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথোপকথনকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কথোপকথনের সময় প্রফেসর মো. মনিরুল ইসলাম একটি জরুরি কর্মশালায় ছিলেন।
প্রতিবেদকের বক্তব্যে পেশাদারিত্বের অভাব থাকায় এবং তার শব্দচয়ন আপত্তিকর হওয়াতে প্রফেসর মো. মনিরুল ইসলাম তার সাংবাদিক পরিচয়ের ব্যাপারে সন্দিহান হন। এর প্রেক্ষিতে তাকে পরে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে এবং (তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে) চিঠি নিয়ে আসতে বলেন।
এছাড়া বুয়েটের পৃথক সদস্যবৃন্দ টি.ও.আর তৈরি, মূল্যায়ন ও টেস্টিং এর কাজ করেছেন। ফলে একজনের প্রশ্নে এইসকল সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের জবাব দেয়া সম্ভব নয়। অ্যাপয়েন্টমেন্ট-নির্ধারিত মিটিং এ বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের উপস্থিতিতে আলোচনা হওয়া বাঞ্ছনীয়।
“বাংলা স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার” এর বর্তমান অবস্থা:
যদিও প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে “১৪ কোটি টাকার কাজ সফলভাবে রিভ সিস্টেমসকে দিতে সক্ষম হয়েছে বুয়েট”, যার মাঝে সাড়ে ৫ কোটি টাকা স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার এর; বাস্তবে বুয়েট কর্তৃক প্রস্তুতকৃত এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত টি.ও.আর অনুযায়ী যে কোন কোম্পানি টেন্ডারে উল্লিখিত মাইলস্টোনের কাজ শেষ করতে পারলেই কেবল ওই কাজের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ পেতে পারবে।
স্পেল অ্যান্ড গ্রামার চেকার কম্পোনেন্টটির কেবলমাত্র ইনসেপশান (প্রারম্ভিক) রিপোর্ট এর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ রিভ সিস্টেমস পেয়েছে প্রায় ১০ মাস কাজ করার পরেও। সিএসই-বুয়েটের টেস্টিং টিম পরবর্তী মাইলস্টোনগুলো সম্পন্ন করার জন্য আরও কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছে এবং সেই কাজ চলমান।
তাছাড়া, প্রতিবেদনটিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুয়েটের একজন শিক্ষককে উদ্ধৃত করে যা বলা হয়েছে তার পুরোটাই মিথ্যা। উক্ত বিবৃতি হয় বানোয়াট এবং মনগড়া অথবা অসৎ উদ্দেশ্য থেকে বলা।
সর্বোপরি, উক্ত প্রতিবেদনে কোন অভিজ্ঞ বা কারিগরি মতামত অথবা যথাযথ তথ্য প্রমাণাদি ছাড়াই বুয়েটের সিএসই ডিপার্টমেন্টকে উদ্দেশ্য করে মানহানিকর এবং অপমানসূচক বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে যা দৈনিক যুগান্তরের মত একটি জাতীয় সংবাদপত্রের কাছে কোনভাবেই কাম্য নয়।
এছাড়া প্রজেক্ট ডিরেক্টর বিদেশে থাকলেও অনলাইনে তার সঙ্গে যোগাযোগ না করে বা ফেরার জন্য অপেক্ষা না করে এবং মূল্যায়ন কমিটির সদস্য বা এক্সপার্ট কমিটির সদস্যদের মতামত না নিয়ে তড়িঘড়ি করে এরকম প্রতিবেদন প্রকাশ কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে করা বলে প্রতিভাত হয়। সম্ভবত আপনাদের সম্পাদকীয় দল এই প্রতিবেদনের অসারতা উপলব্ধি করতে পেরেই মুদ্রিত সংস্করণে এটি প্রকাশ করেননি।
উল্লিখিত প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প। দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য এ ধরনের প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এ অবস্থায় এমন মনগড়া ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকল্পের অর্জনের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।
উল্লেখ্য, সিএসই-বুয়েট সবসময়ই বস্তুনিষ্ঠ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে স্বাগত জানায়। এই ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বানোয়াট প্রতিবেদন পরিশ্রমী সাংবাদিকদের প্রচেষ্টাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। এই প্রেক্ষিতে সিএসই-বুয়েট অতি সত্বর এই প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যুগান্তর কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ করছে এবং সিএসই-বুয়েট এই বিষয়ে পরিপূর্ণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
এই অবস্থায়, উল্লিখিত প্রতিবাদপত্র অতিসত্বর আপনার সংবাদপত্রে প্রকাশিত করার এবং একই সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিবেদনটি অনলাইন ওয়েবসাইট থেকে সরানোর জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগ উক্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
নিবেদক: মোস্তফা আকবর, অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান, কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
প্রতিবেদকের জবাব:
প্রতিবেদনটি যথাযথ তথ্য-উপাত্ত ও কাগজপত্রের ভিত্তিতেই তৈরি করা হয়েছে। বুয়েট প্রতিবাদপত্রে প্রশ্ন তুলেছে- ‘সাড়ে ১৪ কোটি টাকার কাজ রিভ সিস্টেমস পেয়েছে এই তথ্য সঠিক কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’ পরবর্তী প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য সাড়ে ১৪ কোটি টাকার বিস্তারিত বিশ্লেষণ প্রকাশ করা হয়নি। তবে যে প্রতিষ্ঠান (রিভ সিস্টেমস) কাজটি পেয়েছে তাদের থেকেই কাজ প্রাপ্তির ও বাজেটের বিস্তারিত যুগান্তর সংগ্রহ করেছে।
বাংলা প্রকল্প থেকে রিভ সিস্টেমস এককভাবে দুটি এবং যৌথভাবে একটি কাজ পেয়েছে। যার মোট মূল্য সাড়ে ১৪ কোটি টাকা।
প্রফেসর মো. মনিরুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথোপকথনকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে প্রতিবাদপত্রে অভিযোগ করা হয়েছে। অথচ উনি যতটুকু বলেছেন মোবাইল রেকর্ড থেকে শুনে ঠিক ততটুকুই প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে একটি শব্দও অতিরিক্ত লেখা হয়নি।
বাংলা প্রকল্পে ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে বুয়েট নেই বলে দাবি করেছেন প্রতিবাদপত্রে। তবে ফোনে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের প্রধান মোস্তফা আকবর স্বীকার করে বলেছিলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের একটা টিম কাজ করছে। আপনি যদি আমাদের ডিপার্টমেন্টে একদিন সরাসরি আসেন তাহলে (যারা এই প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করছে) তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। ফোনে এত কথা বলা যাবে না। এখানে ২০টি মডিউল নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। প্রতিটি মডিউল নিয়ে অনেক কথা রয়েছে। আপনি আসুন আগে। এরপর কথা বলা যাবে।’
প্রতিবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তড়িঘড়ি করে এরকম প্রতিবেদন প্রকাশ কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে করা বলে প্রতিভাত হয়।’ অথচ এই প্রতিবেদনটি তৈরি করার জন্য অন্তত দুই সপ্তাহ সময় নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান রিভ সিস্টেমসের সঙ্গে কথা হয়েছে। বক্তব্য নেয়ার জন্য বুয়েটে সরাসরি যাওয়া হয়েছে (যদিও নির্ধারিত সময়ে গেলেও বিভাগীয় প্রধান দেখা না করে দ্রুত চলে গেছেন এবং পরবর্তীতে ফোনও রিসিভ করেননি)। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগেও যাওয়া হয়েছে। একজন মন্ত্রীর বক্তব্যও নেয়া হয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হলেও এটা তড়িঘড়ি করে প্রকাশ হলো কীভাবে সেটা বোধগম্য নয়।
প্রতিবাদে দাবি করা হয়েছে, ‘বুয়েট কোন কোম্পানিকেই কাজ পাইয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে না।’ বিষয়টি সত্য। তবে টেন্ডারে দাখিলকৃত প্রস্তাবসমূহ মূল্যায়ন করার ক্ষমতা রাখে বুয়েট। এই মূল্যায়নে বুয়েট প্রভাব বিস্তার করছে- এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই মূলত এই প্রতিবেদন তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। সে বিষয়ে প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।