টেলিযোগাযোগে রূপান্তর
বাতিল হচ্ছে পুরোনো লাইসেন্স মডেল
এক লাইসেন্সেই ভয়েস, ইন্টারনেট ও ওটিটি সেবা * আসছে ‘স্মল আইএসপি’, বিদায় নিচ্ছে আইআইজি-আইসিএক্স

নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে দেশের টেলিযোগাযোগ খাত। লাইসেন্স কাঠামোসহ পুরো নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার আনতে চলেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। যুগান্তকারী সংস্কারের উদ্দেশ্যে প্রকাশিত হয়েছে ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং কাঠামো সংস্কার নীতিমালা ২০২৫’-এর খসড়া।
মঙ্গলবার প্রকাশিত এ খসড়া নীতিমালায় পুরোনো লাইসেন্সিং ব্যবস্থার জটিলতা সরিয়ে আনা হয়েছে প্রযুক্তি-নিরপেক্ষ ও সরল কাঠামো। তিনটি মূল ক্যাটাগরিতে নামিয়ে আনা হয়েছে লাইসেন্সগুলো ‘অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার (এএনএসপি), ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (এনআইসিএসপি), ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (আইসিএসপি)। এছাড়া, স্থানীয় পর্যায়ের সেবাদাতাদের জন্য এনলিস্টমেন্ট ভিত্তিক দুটি নতুন বিভাগ প্রস্তাব করা হয়েছে : স্মল আইএসপি সার্ভিস ও স্মল টেলিকম সার্ভিস।
নীতিমালার খসড়া বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নতুন কাঠামোর অধীনে অপারেটররা একক লাইসেন্সের মাধ্যমে ভয়েস, ডেটা, ইন্টারনেট, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস এবং ওভার-দ্য-টপ (ওটিটি) ডিজিটাল সেবা প্রদান করতে পারবে। এতে প্রতিযোগিতা যেমন বাড়বে, তেমনি উদ্ভাবন ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগে তৈরি হবে নতুন দিগন্ত। এনআইসিএসপি লাইসেন্সে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ এবং আইসিএসপি লাইসেন্সে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি মালিকানা অনুমোদনের সুযোগ রাখা হয়েছে।
বাতিলের পথে পুরোনো লাইসেন্স
বর্তমান ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স), ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) এবং ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) লাইসেন্সগুলো মেয়াদ শেষে বাতিল হবে। এর বদলে অপারেটরদের মধ্যে সরাসরি সংযোগের সুযোগ তৈরি হবে, যা সেবার মান ও খরচে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
স্থানীয় অবকাঠামো ও সেবাদানেও উৎসাহ
নীতিমালায় বলা হয়েছে, কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক (সিডিএন), হাইপারস্কেলার এবং ডেটা সেন্টার স্থাপনে বিশেষ কানেক্টিভিটি সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এমএনপি (মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি) আপাতত স্বতন্ত্র লাইসেন্স হিসাবেই থাকবে, তবে ভবিষ্যতে এনআইসিএসপি-তে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ থাকবে।
তিন ধাপে বাস্তবায়ন
এ নীতিমালা অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে এবং বাস্তবায়ন হবে তিন ধাপে।
* প্রথম ধাপে, নীতিগত ও বিধিবদ্ধ পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন কাঠামোর প্রেক্ষাপট তৈরি হবে।
* দ্বিতীয় ধাপে, কেবল নতুন লাইসেন্স ক্যাটাগরিতেই আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে এবং পুরোনো লাইসেন্স রিনিউ করতে হলে রূপান্তরের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
* তৃতীয় ধাপে, ২০২৭ সালের মধ্যে সব অপারেটরকে নতুন কাঠামোর অধীনে স্থানান্তরিত হতে হবে।
মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে আইআইজিসহ মধ্যস্বত্বভোগীদের লাইসেন্স বাতিলের কথা বলে আসছি। ‘এ নীতিমালার মাধ্যমে গ্রাহকসেবার মান উন্নত হবে বলেই মনে করি। তবে ছোট অপারেটরদের রক্ষা না করলে বাজারে মনোপলি ঝুঁকি বাড়বে।’
খসড়ায় বলা হয়েছে, এ সংস্কার নীতিমালা অনুমোদনের তারিখ থেকেই কার্যকর হবে। বর্তমান লাইসেন্সধারীরা তাদের লাইসেন্সের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবেন পূর্বের ক্যাটাগরিতেই। তবে প্রতিযোগিতা, ভোক্তা সুরক্ষা এবং শিল্পের কার্যকারিতা বৃদ্ধির স্বার্থে বিটিআরসি প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন নীতিমালার আওতায় লাইসেন্সের নির্দেশনা পরিবর্তন করতে পারবে। নতুন এ নীতিমালা আইএলডিটিএস নীতিমালা ২০১০ সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নীতিমালাকে প্রতিস্থাপন করবে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, ‘নীতিমালাটি কার্যকর হলে দেশের বিদ্যমান লাইসেন্সিং কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তবে এর ফলে সেবাপ্রদান সহজতর হবে, বাজারে প্রতিযোগিতার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে এবং উদ্ভাবন ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে।’
বিটিআরসি জানায়, এ খসড়ার ওপর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মতামত দেওয়া যাবে। আগ্রহীরা telecom^reform@btrc.gov.bd ইমেইলে কিংবা কমিশনের আগারগাঁওয়ের ঠিকানায় ডাকযোগে মতামত পাঠাতে পারবেন।